Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্বাধীনতা একটি বিদ্রোহী কবিতার মতো || Shamsur Rahman

স্বাধীনতা একটি বিদ্রোহী কবিতার মতো || Shamsur Rahman

সে এক সময় ছিল আমাদের, সন্ত্রাসের কণ্টকিত হাতে
সমর্পিত সারাক্ষণ। আমরা কখনো
আহত পশুর মতো নিজস্ব গুহায় স্বেচ্ছাবন্দি, কখনোবা
পলাতক গ্রাম-গঞ্জে, মফস্বলে, নদীতীরে, রাইফেল আর
বেয়নেট থেকে দূরে। গেরস্ত কুটিরে, স্কুলঘরে গাদাগাদি
অনেক সংসার একাকার। দুর্বিপাকে
হয়তো এমনই হয়। কোথাও নিস্তার নেই; খাকি
সন্ত্রাসে আচ্ছন্ন হয় নদীতীর, সর্ষেক্ষেত, তাল-সুপুরির
গাছ, বাঁশবন, বেতফল আর বাবুইপাখির বাসা। প্রহরে প্রহরে
রাইফেল গর্জে ওঠে, যেন বদমেজাজী মোড়ল
ভীষণ শাসাচ্ছে অধস্তন পাড়া-পড়শিকে। আবার গুটিয়ে
পাততাড়ি ফিরে আসি বিকলাঙ্গ শহরেই যূথচারী লেমিং যেমন
ছুটে যায় দুর্নিবার ধ্বংসের চূড়ায়।

সে এক সময় ছিল আমাদের। লুপ্ত স্বাভাবিক
কথোপকথন, হাসি তামাশা ইত্যাদি।
কেবল ভয়ার্ত চোখে চাওয়া,
কড়িকাঠ গোনা,
অন্ধকার ঘরে
কখনো নিঃশব্দ ব’সে থাকা, কখনোবা
রুলিপরা একটি হাতের
বন্দরে ভিড়িয়ে
ঝঞ্ঝাহত নিজের একলা হাত আবার চমকে ওঠা অভ্যাসবশত-
সে এক সময় ছিল আমাদের ভয়ানক আহত ঢাকায়।
তখন খেলার প্রতি ছিল বড় বেশি উদাসীন
বালক-বালিকা;
করাল বেলায় নিমজ্জিত
আপাদমস্তক
সন্ত্রাসে ওরাও যেন আমাদের সমান রয়সী!
আমাদের দিনগুলি, আমাদের রাত্রিগুলি শেয়াল-শকুন
ক্রমাগত খেল চেটেপুটে
দিব্যি সভ্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

একটি গণ্ডার, শিং যার রক্তমাখা, বারবার
হানা দেয় ঘরে,
দরজা-জানালা ভাঙে; আসবাবপত্র
করে তছনছ,
চালায় ধারালো শিং উদরে আমার;
বন্য পদতলে, হায়, দলিত সন্তান,
দ্বিখণ্ডিতা জীবন-সঙ্গিনী।
পরদিন সে গণ্ডার আবার উদিত হয় সগৌরবে সব
সংবাদপত্রের
প্রথম পৃষ্ঠায় চমৎকার ফটোরূপে,
ফটোর তলায় নামাঙ্কিত টিক্কা খান।

কখনো নিঝুম পথে হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে কেউ গুলির আঘাতে,
মনে হয়, ওরা গুলিবিদ্ধ করে স্বাধীনতাকেই।
দিনদুপুরেই জিপে একজন তরুণকে কানামাছি করে
নিয়ে যায় ওরা;
মনে হয়, চোখ-বাঁধা স্বাধীনতা যাচ্ছে বধ্যভূমিতে।
বেয়নেটবিদ্ধ লাশ বুড়িগঙ্গা কি শীতলক্ষ্যায় ভাসে;
মনে হয়, স্বাধীনতা লখিন্দর যেন,
বেহুলাবিহীন,
জলেরই ভেলায় ভাসমান।
যখন শহরে ফাটে বোমা, হাতবোমা, অকস্মাৎ
ফাটে ফৌজি ট্রাকের ভেতর,
মনে হয়, স্বাধীনতা গর্জে ওঠে ক্রোধান্বিত দেবতার মতো।
এরই মধ্যে মৃত্যুগন্ধময় শহরে যখন খুব
কুঁকড়ে থাকা কোনো শীর্ণ গলির ভেতর
আঁধারের নাড়ি ছেঁড়া নবজাতকের
প্রথম চিৎকার জেগে ওঠে,
মনে হয়, স্বাধীনতা একটি বিদ্রোহী
কবিতার মতো
তুমুল ঘোষণা করে অলৌকিক সজীব সংবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress