কাবেরীর মধ্যে গিয়ে সব জল খেয়ে গায়ে মেখে
বিভোর আচ্ছন্ন বুনো পাতাঝোপ থেকে ফুস করে
বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি এক অপূর্ব মৌমাছি
আর মনে মনে ঠিক করে নিই যাকে পাব ছোঁব
প্রথমেই যাকে চোখে পড়ে তাকে কোথাও দেখেছি
বলে মনে পড়ল না, বেশ অসভ্যতা হয়, তবু
তার গালে একবার উড়ে গিয়ে বসে খুব ভাল
লেগে গেল, আর একবার বসব বসব করে
যেই বসতে গিয়েছি সে মুহূর্তে আমি সংকটে
চরম থাপ্পড় খেয়ে ঠাস করে পড়ে যাই শানে।
শান: এক চির ঝলসানি, পড়ে দেখো, আছড়াও
হে পিছল সিমেন্ট, তুমি শ্বেত, আমাকে শাসাচ্ছ
এক বহুবর্ণ ডোরাকাটা মাছ এনে ছেড়ে দিয়ে
দুই চোখ বড় করে দেখি তুমি জলের আনন্দ
ছাড়া মরে যাও, ‘সামনের জন্মে অ্যাকোয়েরিয়মে
যদি একটু জায়গা করে দেন, নীলাভ উপল
যার পাশ দিয়ে তৃণ উঠে গেছে দুটি, ওইখানে
থাকব, কিছুই করব না শুধু বুদ্বুদ পাঠাব।’
এই বলে রেখে চলে গেল প্রাণ, সে মুহূর্তে তার
মৎস্যদেহ থেকে সব ডোরা সব কাটা তুলে নিয়ে
শাড়িতে স্থাপন করে দেখছি কেমন লাগে রং
আর যূথী আস্তে করে পড়ার টেবিল থেকে উঠে
এসে, সেই শাড়িটিই শরীরে জড়িয়ে, এমনিই
আলোকিত ফুটো দিয়ে একটি ছোটমতো কাঠি পুরে
এক এক করে ভেঙে যাচ্ছে সেই বুদ্বুদগুলোকে,
ফেটে যায়, ফেটে যাওয়ার শব্দ জড়ো হচ্ছে টিনে
দু’-একটা ঢুকে যায় বাল্বে যেটি রাত্রে জ্বালা থাকে
আর এ সময় আমি কেমন করে যে ঢুকে পড়ি
যূথীদের ঘরে, আমি নিজেই বুঝি না, একবার
ঢুকেই পড়েছি, তুমি কি চাইবে না এই এতদিন
পরে দেখা, কিছুক্ষণ থেকে যাই, আর একবার
তোমার কাপড়ে বসে উড়ে যাই আবার তখনই৷
উড়ে গিয়ে কী করব? আমাকে তো কোথাও বসতে
হবে, কোনও ডালে, কোনও পল্লবের একটু কম্পনে
যেতে যেতে দেখলাম তুমি কোনও বিশিষ্ট বিকেলে
বেড়াতে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছ ফোয়ারার কাছে
তক্ষুনি কী মনে হয় একটি কিশোর হয়ে যদি
ফিরে গিয়ে ফোয়ারাটি খুলে হাতে ধরে নিরন্তর
পিচকারি করি আর তুমি হাত কপালের কাছে
নিয়ে ফোয়ারা রুখছ, এ দৃশ্যে যে আমি কি তন্ময়
কিশোরের সব দোষ, লোভ নিয়ে বিরাজ করব
সে তো বুঝছই, তা না হলে আজ আমাকে আবার
বাড়িতে ফিরিয়ে নাও, কলাপাতা কেটে গোল করে
রবিবারের দুপুরে খেতে ডাকো, গলিপথে গিয়ে
আবার দাঁড়াতে দাও, চাঁদের ভেতর দিয়ে চলে
হে গলি, কী! কী রোমাঞ্চ, হাতে বই লাল ডটপেন
তোমার কলেজ থেকে ফেরবার পথ, সাইকেলে
করে গিয়ে নেমে পড়ি…
আজ সেই পথ ক্রমে এসে
থামে মাঠের ভেতর, যেখানে দু’খানা ছোট ছোট
অপূর্ব চেয়ার রেখে গেছে দেবদূত, এখানেই
দেখা হত আমাদের, তুমি শাড়ি আরও ভাল করে
পিঠের সবটা নিয়ে ঘুরিয়ে সামনে এনে রাখো
আর সে মুহূর্তে আমি পেছনের থেকে নির্নিমেষ
আবার মৌমাছি হয়ে উড়ে গিয়ে তোমার শরীরে
বসে আবার তক্ষুনি উড়ে যাই
এই দোষটুকু
আমি করবই, ধরে শিশিতে আটকে রাখো, আমি
শিশির ভেতর থেকে গুনগুন করে দোষ করে
যাব, যেদিন বাড়িতে কেউ থাকবে না, শুয়ে আছ
তোমার শরীর ছেড়ে আত্মা ছোট একটি নরম
বল হয়ে ঘর ছেড়ে বারান্দা উঠোন গেট সব
ছেড়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে অনন্তের দিকে
আমি টেবিলের থেকে শিশি উলটে শানে পড়ে ফেটে
দ্রুত উড়ে গিয়ে ধরে ফেলি বলটিকে, আর বসে
থাকি বলের ওপর, ভরতি ঘাস দিয়ে যেতে যেতে
বলি: চলো আত্মা চলো কোথাও সমাপ্ত নও তুমি।