কুয়াশার অন্ধকারে মুড়ে থাকা কিছু ছোট গল্প , কবিতা
অথবা পলেস্তারা খসেপরা নাটক, উপন্যাসের শরীর
যেখানে শব্দেরাও থাকে নিশ্চুপ
কিছু মুহূর্তরা দাঁড়ায় এসে গভীর নিরবতায়,
স্বপ্নেরাও যেখানে খানিকটা দমবন্ধ রুদ্ধ বাতায়নে,
সভ্যতা যেখানে শূন্যতার হাহাকারে
দাঁড়িয়ে দুঃস্বপ্নের মোহনায়,
কিছু চেনা সুখ পলিথিনে মোড়া
স্তূপাকারে জমা থাকে আবর্জনায়,
যেখানে অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র দানবতায়,
যেখানে ফোটেনা কোন নতুন ভোর
খেলা করেনা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য,
ঘুনে ধরা অব্যক্ত কান্নাগুলো
যেখানে হারিয়ে যাওয়া অতীত আধুলির মত
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে বাক্স বন্দী
জাদুঘরের ভাষাহীন নিয়তির ফ্রেমে,
যেখানে নিষ্প্রাণ জ্যোৎস্না, রাতের দ্বি-প্রহরে
শহরের কোন বন্ধ্যা গলির স্যাঁতস্যাঁতে বস্তিতে
উঁকি দেয় এক চিলতে অতীতের
হারানো স্বপ্ন ছোঁয়ার অভিলাষে,
যেখানে এক টুকরো মন খারাপের মেঘ
দেশ হতে দেশান্তরে ঘোরে একমুঠো ক্ষুধার তাড়নায়,
যেখানে দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় সভ্যতার ছাউনি,
বস্তায় আবদ্ধ কয়েকটা কান্নার ইতিহাস ঘাঁটলে
খুঁজে পাওয়া যায় দরিদ্রতার অমানবিক দলিল,
যেখানে বিষাক্ত মৌনতার গন্ধে ঢাকা পড়ে আদিগন্ত,
যেখানে একটা পেরেকে অবলীলায়
ঝুলে থাকে আত্মবোধহীন শত শত মৃতদেহ,
যেখানে সৌভাগ্যের সূর্য
কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি
দুর্নীতি ও অত্যাচারের তেজরাশি ভেদ করে,
তেমনই এক ছিন্ন হওয়া অতীত দলিলের
পাতা থেকে উঠে আসা শিলমোহর লাগানো
কিছু অমানবিক রক্তক্ষরণের প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা
চলছে আজ সর্বব্যাপী
পৃথিবী নামক ক্রীড়াভূমিতে,
যা কালের বিবর্তনে
শক্ত পাথরের জীবাশ্মে হয়েছে রূপান্তরিত,
যে সভ্যতার প্রদীপ জ্বলতে শেখার আগেই
ডুবে গেছে মহাকালের গর্ভে,
পরিণত হয়েছে ফসিলে,
আজ হারিয়ে গেছে সভ্যতা, মানবিকতা
পৃথিবীর অস্তিত্ব হয়েছে বিপন্ন
সে অতল আটলান্টিক মহাসাগরের
তলদেশ ছুঁয়েছে ,
তবুও সে নিরবধি খুঁজে চলেছে
তার স্বাধীনতার পদক ,
সভ্যতাকে বাঁচানোর অদম্য স্পৃহায়
আজও পৃথিবী নীরবে লড়াই করে
চলেছে নিয়তির রণাঙ্গনে,
আজও সে খুঁজে চলেছে সৃষ্টির ইতিহাস
যে জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে সভ্যতার পোশাক,
সভ্যতার নিত্য-ব্যবহার্য্য প্রাণরত্ন,
আজও পৃথিবী খোঁজে সেই অমূল্য সভ্যতা
যে মেটাতে পারে বুভুক্ষের হাহাকার, নিপীড়িতের ক্রন্দন,
যে সংগ্রামী হাতে ভাঙ্গে সকল দুর্ভাগ্যের হাড়,
যে সভ্যতার মোড়কে গচ্ছিত থাকবে
পৃথিবীর চিরউজ্জ্বল ভবিষ্যৎ,
দু-চোখে থাকবে আগামীর মহীরুহ হয়ে ওঠার দুর্বার স্বপ্ন।