Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জঙ্গলমহলে বৃষ্টির প্রার্থনায় ন্যাংটা সিনির পূজা || Manisha Palmal

জঙ্গলমহলে বৃষ্টির প্রার্থনায় ন্যাংটা সিনির পূজা || Manisha Palmal

বৃষ্টির প্রার্থনায় পশ্চিমরাডের এর অসংখ্য সিনি ঠাকুরের থানে পূজা ও বলি হয়।
জঙ্গলমহল এলাকার এমনই এক অভিনব গ্রামদেবতা হলেন ন্যাংটা সিনি। এই সিনি ঠাকুরের আরাধনা করতে হয় বিবস্ত্র হয়ে তাই এইরকম নাম। আরাধনা তথা কামনার উদ্দেশ্য বৃষ্টি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। বৃষ্টি কামনায় বাঁকুড়া ও তত্সংলগ্ন অঞ্চলে বেশকিছু সিনি ঠাকুরের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন——
খাতরা ব্লকের জঙ্গল মৌজায় আছেন “পঁদ তাড়া সিনি”! এই সিনি ঠাকুর ডাকাত পূজিত। ডাকাতদের চিন্তা ছিল বৃষ্টি না হলে তাদের ডাকাতিতে টান পড়বে। তাই বৃষ্টি কামনায় তারা এই ঠাকুরের আরাধনা করত।

ডাকাতিতে প্রাপ্ত সম্পদের একটি অংশ (সোনা দানা গয়না গাটি) এই সিনি থানের সাজান বড় বড় মাটির হাতি ঘোড়া ছলনের ফাঁপা শরীরের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখত। বাড়ির পরিজনদের এই বলে রাখত যে—-” ডাকাতিতে গিয়ে যদি আর না ফেরে তাহলে ঠাকুর থানের হাতি ঘোড়ার পঁদ ( পশ্চাত্দেশ) তেড়ে( ভেঙ্গে) খাবি!”
তাই ঠাকুরের নাম “পঁদ তাডা সিনি!”

সিমলাপাল তেঁতুল্যা মৌজায় আছেন ন্যাংটা সিনি। এই অঞ্চলের অন্তজ বিশেষত লোহার মাঝি হাড়ি ডোমের মেয়েরা বৃষ্টি কামনায় এই দেবীর পূজা করেন। ভক্তদের মতে দেবী গ্রামরক্ষয়িত্রী শস্যদাত্রী ও দয়াবতী। তার অর্চনা করলেই সব বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়।
এই পূজা হয় “এখান দিনে “অর্থাৎ পয়লা মাঘ!
ব্রতিনীরা আগের দিন নিরামিষ ভোজন করেন ও শুদ্ধাচারে থাকেন।
“এখান দিনে” সকালে স্নান করে ধোয়া কাপড় পড়ে সিনিদেবীর ভোগ সাজান। বিকেলে তেঁতুল্যার মাঠে মহিলারা হাজির হন। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা লৌকিক রীতিতে এই পূজা করেন। পূজা চলাকালীন সিনিথানের পাশের মাঠটিতে বিবাহিতা মহিলারা বৃত্তাকার দাঁড়িয়ে নাচতে থাকেন। আকাশের দিকে মুখ তুলে আদিরসাত্মক গান করেন দেবতার উদ্দেশ্যে। বৃষ্টির প্রার্থনায় এই নাচ ও গান। বৃত্তের ভেতরে কয়েকজন বিবস্ত্র হয়ে নাচছেন তাদের ঘিরে রেখেছেন বাকি মহিলারা যাতে বাইরে থেকে তাদের দেখা না যায়। শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলারা এই ব্রত পালন করতে পারে এবং মাঠের নাচ-গানে যোগ দেন। এই সময় ওই মাঠে কোন পুরুষের যাওয়া নিষেধ।

মেয়েরা কেন বসনহীন হয়েই ব্রত করে এর উত্তর অনুসন্ধানে ভারতবর্ষের মাতৃতান্ত্রিক অনার্য সভ্যতার দ্বারস্থ হতে হয়। ইন্দ্র মিত্র বলেছেন—–” নারী আর পৃথিবী এরা আদিম কৃষিনির্ভর মানুষের মনে একই সংস্কারের সুতোয় গাঁথা! আদিম যুগে সন্তান প্রসবের নারী ও শস্য প্রসবিনী ভূমিকে এক অভিন্ন রূপে কল্পনা করা হয়েছে!”
প্রাচীন সমাজে নারীর হাতেই ছিল চাষবাস কৃষিকাজের ভার। নূবিজ্ঞানীরা বলেছেন কৃষিকাজের আবিষ্কার ঘটেছিল নারীদের দ্বারাই।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কৃষিভিত্তিক সমাজ এ ছিল নারীর প্রাধান্য। এখনো এই অঞ্চলের অন্তজ সমাজে চাষবাস দেখাশোনার মুখ্য কাজগুলো মেয়েরাই করে। তাই সারা বছর যাতে ভালো বৃষ্টিপাত হয় সে উদ্দেশ্যেই এখান দিনে গ্রাম দেব-দেবীর পূজা হয়। ন্যাংটা সিনির পুজা ও ব্রত এই একই কারণে হয়ে থাকে।

এই লালমাটিয়া অঞ্চলের বিশাল জনজীবনের সাথে মিশে আছে এই লোক দেবদেবীর পরান কথা। এই রুক্ষ জঙ্গলঘেরা অহল্যা ভূমির প্রান্তরে সরল প্রান্তিক মানুষদের বিশ্বাসেই পাথর জাগ্রত হয় প্রচলিত কাহিনী ও সিঁদুরের মহিমায়। এই লোক দেবতাদের চরণে নিবেদিত হয় তাদের দৈনন্দিন সুখ-দুঃখের নৈবেদ্য। প্রকৃতিকে ঈশ্বর জ্ঞানে অর্চনা করার আবহমান ঐতিহ্যকে বজায় রেখে চলেছেন এরা। লোক দেবতারা মানুষের দিনযাপনের মাঝে মিশে গেছেন। এই জঙ্গলমহল সংলগ্ন গ্রামগুলি আজও সিনি ঠাকুরের পূজার মধ্য দিয়ে পূর্বপুরুষদের সনাতন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে। প্রকৃতি আর মানুষের এই আবহমান সম্পর্কের মিলন সেতু এই সিনি ঠাকুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *