পরিচর্যার পরিণাম
ভাগ্যের এমনই পরিহাস সাত দিনের মাথায় মালতি বিধবা।তার বর ট্রাকের চাকায় পিষে মারা গেছে খবরটা শুনেই সে জ্ঞান হারায়।লাল বেনারসি পড়ে, কপালে চন্দন, সিঁদুর, গা ভর্তি গয়না পরে, আরও সুন্দর লাগছিল। বেশ খুশি খুশি মনে, সবাইকে কাঁদিয়ে, নিজেও খানিক কেঁদে চলে গিয়েছিল শ্বশুরবাড়ি।জ্ঞান ফিরতে সবাই তাকে স্বান্তনা দিলেও সেদিন সে খুব কেঁদেছিল স্বামীর জন্য। যার স্বামী মারা যায় সেই বোঝে বৈধব্যের যন্ত্রণা কী! আটদিনের মাথায় তার দেওয়া সিঁদুর মুছে যাবে সে ভাবেনি। শাঁখাখুলে সিঁদুর মুছে সাদা থান পরে নিতে হল তাকে।সাথে সাথে তার জীবনের সব রঙ মুছে গেল। তার মনটা যেন ধীরে ধীরে শক্ত পাথর হয়ে গেল । তারপর শ্বশুরবাড়ির সাথে তার পাকাপাকি সম্পর্ক ছিন্ন করে বাবার ইচ্ছায় সে বাপের বাড়িতে থেকে যায়। চার ভাই ও বৌদিদের সঙ্গে তাকে মানিয়ে নিয়ে থাকতে হয়। কেউ তার বড়ো, কেউ প্রায় সমবয়সী, কেউবা তার থেকে ছোটো। সবাই রঙবেরঙের শাড়িতে নিজেদের সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে। ওরা সবাই সিঁদুর পরে, লাল টিপ পরে, আলতা পরে, চোখে কাজল পরে।শুধু মালতি এসব পড়ার অধিকার নেই। সে পড়ে সরু পাড়ের সাদা শাড়ি।কপালে চন্দনের টিপ। একদিন তার বৌদিদের মতোন সেজে নিজেকে দেখার ইচ্ছে হওয়ায় নিজের ঘরে খিল তুলে ছোট ভাইয়ের বৌয়ের লালা শাড়ি পরে সিঁথিতে সিঁদুর কপালে লালটিপ চোখে কাজল পড়ে বাহারি করে চুল বেঁধে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। চোখে তার আশ্চর্য বিস্ময়। ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বারবার নিজেকে দেখতে লাগলো আয়নায়। তারপর বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। মা এসে ডাকতে তার ঘুম ভাঙে। খেয়াল ছিল না মা ডাকতেই দরজার খিল খুলে দেয়। মা মেয়ের কান্ড দেখে চুলেরমুঠি ধরে বলল মুখপুড়ি মরতে পারিস না? মরণ হয় না কেন তোর? মায়ের কথা শুনে মালতি কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি তো মরতেই চাই।তুমি আমার গলা টিপে মেরে ফেল মা।বলে সে মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মা কাঁদতে কাঁদতে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলেন লোকে যাই বলুক যাই ভাবুক আমি তোর আবার বিয়ে দেব।