পৌষ পাঁচালী
পৌষ মাস নতুন ধানে লক্ষ্মী পুজো হয়।তাই নতুন ধানে লক্ষ্মী পেতে আরাধনায় বসেছেন গৃহী। লক্ষ্মী ধানে বসেই আধুনিক বৌমার কান্ড দেখে আর স্থির থাকতে পারে না। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে শালগ্রামশিলাকে মুঠোফোনে সব জানাতে ব্যস্ত।বললে জানো আমায় ধানে বসিয়েই বৌমা কাকে যেন ফোনে বললে, অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ যারা অন্ধ সব থেকে বেশি আজ চোখে দেখে তারা। কার লেখা বল দেখি? শুনলাম, একদম ঠিক বলেছো জীবনানন্দ দাশ। আচ্ছা দেব তুমি এসব জানো? হ্যাঁ জানব না কেন? সব জানি। তুমি মর্ত্যধামে গেছো। বসো ধানে চুপ করে। আর কথা নয়। বুঝেছি দেব।বলছি স্বর্গে কেমন ঠান্ডা গো। এখানে বলছে আকাশ মেঘলা থাকবে।বৃষ্টি হবে। পারদ আরও নামবে।বুঝতে পারছো কি হাল হবে আমার।যে জন্য ফোন করেছিলাম, একা মানুষ। আমি এখানে। ঠিক সময় মতো খাবার গরম করে খেয়ে নিও। আচ্ছা আমার জন্য এতো ভাব কেন?আমি তোমার কে? কি মুশকিল? জানো না তুমি? না,বল একবার। তোমার মুখে শুনব। আদিখ্যেতা যত। নতুন করে বলতে হয় নাকি আর? পুরনো সুরেই বল মন ভরাই। বেশ একটা কথা, এই ঠান্ডায় স্নান করে সর্দি জ্বর বাঁধিয়ো না যেন। চিন্তা নেই, তোমার উষ্মতা যতক্ষণ পাব ততক্ষণ কিছু হবে না জানি।বেশ নৈবেদ্য সাজানো শেষ। এবার উপাসনা শুরু হবে।আসি এখন।পরে আবার জানাব সব। হ্যালো হ্যালো কোথায় তুমি নাথ? হ্যা বলো দেবী কি হয়েছে? কি আর। নৈবেদ্য রইলো পড়ে।উপাসনা শেষ হতেই বৌমা ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বল কি সখি?তুমিই বা কি কম যাও? কি যে বল পুরুষোত্তম। কি শুনলাম জানো? বললে তো শুনব। কান পেতেছি বল– বৌমাকে তার ঠাকুমা হেবলিসোনা বলে ডাকতো। বাঃ দারুণ সুন্দর নাম। বৌমা বলছে,আমায় কি নামে তুমি ডাকবে সে আমি ঠিক করে দেব কেন? কি নামে ডাকবে সে তুমিই জানো।তুমি ঠিক কর। এ’সব কি স্বামী? আমি তো কিছুই বুঝছি না। আহঃ দেবী, তুমি কান পেতে শুনে যাও। স্বর্গে এলে বুঝিয়ে বলব। বেশ বলতে শুনলাম, বৌমার দেওয়া নামে বৌমকে ডেকেই ওপারে বসে উনি শান্তি পেতে চান।বৌমাকেই ঠিক করে দিতে হবে সে নাম।বৌমা বলে তার মন যা চায় সেই নামেই তো উনি ডাকতে পারেন। নয়তো বৌমার পোশাকী নামেই ডাকতে পারেন।সেই নামে এতদিন ডেকে এসেছে বলে চিরদিন সেই নামে ডাকার কোন মানে তিনি আছে বলে মনে করেন না।বিভিন্ন নামে তাকে তার ডাকতে ইচ্ছা হয়। তাই নাকি দেবী! তো কি কি নাম শুনলে? শুনলাম বৌমা বলছে,বল গুনতে থাকি— প্রাণ পাখি! ওমা কখন সে নামে ডাকবে গো? একান্তে কাছে পেলেই। বল কি হাঁদারাম! এই নামটাই তার প্রিয়।বৌমা যেন এই নামেই তাকে ডাকে। বৌমা হাসছে আর বাকি নাম গুলো বলছে আর গুনছে– মিষ্টি সোনা, মন ভোমরা, প্রেম সোহাগী, আরও নাকি আছে,পাগলী আমার। হা হা হা। হাসছো কেন গো প্রভু?বলব বলব ওমা বৌমাও হেসে গড়িয়ে পড়ছে যে ঠাকুর। এসব কি ন্যাকাপনা ঠাকুর। ওসব বুঝবে না। তুমি তো বুদ্ধির ঢেঁকি। বৌমা বললে, বোকা পাঁঠি না হলে সে আর এমন করে হাসে? মনখারাপ না করে,আর কি নাম ভেবেছে শুনতে চাইল।সে নাকি আর বলবে না কিছু। কারণ বৌমা তাকে নাকি পাঁঠা বানিয়েছে। হা হা হা তুমিও আবার হাসছো প্রভু? কেন হাসব না বল— তোমার বৌমা বোকা পাঁঠি হলে,সে বোকা পাঁঠা ছাড়া আর কি? তুমিও তাই বুঝলে ঠাকুর। এই জন্যই নাকি বৌমা তাকে হাঁদারাম ডাকে। হা হা হা পেটে খিল ধরে গেল যে দেবী। ওদের বয়সটা পরখ করতে পেরেছো কি? তোমার আমার মতোই মনে হয়। অনেক হয়েছে এবার বিশ্রাম কর।আমি পূর্ণিমায় আসছি।