আমি নিহারিকা
ছোট বেলা থেকেই আমার সবকিছুই ছিল নারীসুলভ,যদিও আমি ছিলাম তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোটভাই। আমি মাঝেমাঝেই দিদির জামা পোরতাম, টিপ, লিপস্টিক দিয়ে সাজতাম।
একবার দূর্গাপুজোর পর বারোয়ারীর কাকুরা আমাকে ছোট্টমেয়ে ভুমিকায় অভিনয় করিয়েছিল। মা প্রথমটায় আপত্তি করলেও পরে রাজি হয়েছিল।
এভাবেই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। আর সেখান থেকেই হল জীবনের পরিবর্তনের সূচনা। যেহেতু আমার চুল ঘাড় অবধি বড়ছিল তাতে একটু মেয়েলি ভাব আসত,গলার স্বরছিল মিহি। কিছু ছেলেরা বিরক্তিকর মন্তব্য করত। এরপর দিদির বিয়ের কথাশুরু হতে মা আমাকে তুতোমাসীর বাড়িতে পাঠিয়দিল। সেখানে আলাপহল মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে তারকাছেই জানলাম সে আসলে পুরুষসুলভ মেয়েছিল,পরে এক রূপান্তরকামী সেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে নিজে রূপান্তরিত হয়। ঈশ্বর যেন বাঁচবার দিশা দেখাল। যেহেতু ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল শুধু স্নাতক হওয়ার অপেক্ষা। নিজেকে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা শুরু হল। পাশে দাঁড়াল মৃত্যুঞ্জয়, সেই হাতধরা,দুটি জীবনকে প্রজাপ্রতির বন্ধনে আবদ্ধ করল। আজ আমি একজন সুপ্রতিষ্ঠিতা কর্পোরেট আধিকারিক। মৃত্যুঞ্জয় আমার নাম দিয়েছে নীহারিকা।
আমার এই জীবন যন্ত্রণায় যখন আমি সবসময় নতুন দিশার সন্ধান করতাম, তখন একদিন মাসী স্কুলে যাওয়ার পর, মাসী জামাকাপড়ে নিজেকে সাজালাম, তখনই কে যেন বলে উঠল অন্তরে তুই একজন নারী। সেই শুরু হল নিজেকে নারী হিসাবে ভাবার, একদিন সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম মাসীর কলিংবেলে ঘুম ভাঙল, মাসী আমার মধ্যে নিজের অকালেহারানো মেয়ের ছবি দেখল।
তখনই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে, রূপান্তরিত হবার যাকিছু আর্থিক দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত্য পৌঁছে দিয়ে মায়ের কর্তব্য পালন করেছিল।
মা দাদা-দিদিদের কথায় আমাকে ত্যাজ্য করেছিল।
আজ আমার মা, দাদা-দিদির কাছে অবহেলার শিকার হয়ে সেই মাসীর কাছে আসে। মৃত্যুঞ্জয়ের প্রচেষ্টায় তারা দুজনেই আমাদের কাছে সুখেশান্তিতে অভিভাবক হয়ে
যদিও সে নিজের বিধবা মাকে মানাতে পারেনি। আজ আমার প্রচেষ্টা একটা শাশুড়িকে একছাদের তলায় এনে আমাদের “শান্তিনীড়” অর্থাৎ বাড়ির নাম সার্থক করব। নিহারিকার গল্প এটুকুই থাক।