প্রত্যাবর্তন
আজ বসন্ত পূর্ণিমা, তাই ভোরবেলায় ফুল তুলতে গেছে মধুমিতা। নদীর ধারে বন দপ্তর প্রচুর ফুলের গাছ লাগিয়েছে , সেখানেই নানান ফুলের মেলা। ফুল তুলে ফিরে আসছিলো বাড়ীর পথে , হঠাই চোখে পড়ল হুইলচেয়ারে বসে একজন কয়েকটি ছেলেমেয়ে কে এক্সারসাইজ করাচ্ছে। মুগ্ধদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল, ফিরে গিয়েছিল তার ছোট বেলার দিনগুলোতে, সেও তখন দৌড়াতো কলেজ জীবন অবধি বহু প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে জেলা ও রাজ্যস্তরে। একটা গম্ভীর পুরুষকন্ঠ শুনে সম্বিৎ ফিরতে, দেখল কন্ঠস্বরের মালিক আর কেউ নয় , একদা দূর্ঘটনায় অবসৃত দৌড়বীর পলাশ সেন । ঘোর কাটিয়ে সে বলে উঠল আপনি? হ্যাঁ, আমি হতভাগ্য পলাশ সেন, আপনি? আমি মধুমিতা দাস , আপনার খুবই গুণমুগ্ধ ছিলাম। আপনি কোথায় থাকেন জিজ্ঞেস করল পলাশ , আমি নতুনপল্লীতে মাসীর বাড়ীতে থাকি। আপনি? নতুনপল্লী যাওয়ার আগে ফুলের বাগানওয়ালা বাড়িটা এই হতভাগ্যের। এভাবে কেন বলছেন , এভাবে বলবেন না, আপনিতো খেলা নিয়েই নিজের স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত আছেন। খুব যদি ভুল না করি তাহলে আপনি মধুমিতা দাস , যে বছর আমি রাজ্য চ্যাম্পিয়ন, সে বছরের আপনি জুনিয়র বালিকা বিভাগের চ্যাম্পিয়ন, ঠিক কিনা। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই চিনতে পেরেছেন। আমি এখন যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়াই । এইভাবেই ঘনিষ্ঠতা বেড়ে চলল। মধুমিতা শুরু করল দৌড়ানোর চর্চা । পলাশকে উদ্বুদ্ধ করল প্রতিবন্ধী ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করতে। আজ সমস্ত পারিবারিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে মধুমিতা পলাশের জীবন সঙ্গিনী এবং কৃত্রিম প্রক্রিয়ার সাহায্যে সন্তানের সুখী পিতামাতা। আজ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবন্ধী ক্রীড়ায় অর্থাৎ প্যারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে দাশ পরিবার টোকিও যাবে। মধুমিতা যুদ্ধজয়ের আনন্দে মা’কে বলল ,আমি তোমাকে বলেছিলাম , যদি বিয়ের পরে দূর্ঘটনা ঘটতো তাহলে কি করতে? আজ সবাই জানুক এভাবে ও ফিরে আসা যায়।