আলো যদি নাইবা হলে বৎস, আলোকবর্তিকা হও!
বড়ো হলঘরে গমগম করতো হারান স্যারের কন্ঠস্বর।
অনন্ত ব্রহ্মান্ড মাঝে একটা নীলাভ বিন্দু
নীরবে গতিশীল এই উন্মাথ বিশ্বচরাচরে।
কালেভদ্রে মেলে তাঁর মতো পথপ্রদর্শক
পলেস্তারা খসে পড়া শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে রঙচটা প্রাচীন ব্ল্যাকবোর্ড
তার মধ্যেই ফুটিয়ে তুলতেন জিব্রাল্টারের গোরহাম্ গুহার আদিম চিত্র
নিয়ানডার্থালদের জন্য প্রাণ কেঁদেছিল সেইদিন।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কাঠামো থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন প্রবালের অহঙ্কার,
উদাত্ত কণ্ঠে শুনিয়েছিলেন গ্রীনল্যান্ডের এস্কিমোদের কঠিন জীবনকথা।
বিষয়টা ভূগোল হলেও হারান স্যারের বিস্তার ছিল মহাজগতের গ্রহান্তরে
ব্ল্যাকহোলের তীব্র আকর্ষণের উপমা ছিলেন তিনি নিজেই
দেবোপম, বাহুল্যবর্জিত নিপাট ভদ্রলোক।
এক লহমায় শিখিয়ে দিতেন পার্থিব ভালোবাসার স্বতঃসিদ্ধি
হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ,জোয়ার-ভাটার ইতিবৃত্ত।
জীবনের বহমান স্রোতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দুচোখে আঁধার দেখি
স্নেহের উপলেপন আর সাহসী কথন এখনো সবার পাথেয়।
ভালো ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের আলামত এঁকে দিতেন
দুর্বলদের উত্তরণের আখর সাজাতেন আমাদের হারান স্যার।
বন্ধু, দার্শনিক, চিকিৎসক, গুরু, বিজ্ঞানী-একই অঙ্গে এত রূপ
সকল অজ্ঞতা দূর হয়ে জ্ঞানচক্ষূ উন্মোচন ওঁনার লক্ষ্য।
হারান স্যার বলতেন,
বিজিগীষা থাকুক, জিঘাংসা না!
বিস্ময় থাকুক, কুসংস্কার না!
ভালোবাসা থাকুক, ঘৃণা না!
ব্যর্থতার ছাই দিয়ে সাফল্যের সোপান গড়াই ছিল ওঁনার বাণী।
বৃত্ত আর শূণ্য পাশাপাশি থাকলে যেমন বিহ্বল হতে হতো,
ভয় আর সাহসের দ্বন্দ্বে তেমনি নিজেকে চিনতে শেখান উনি।
অন্ধকারের গতিরোধ করতে গড়ে তুলতেন আলোক-প্রাচীর
আলোর প্রাচীরের একটা ছিদ্রকেও তিনি হ্যান্সের মতো আগলে রাখতেন।
এখনো যখন অসংলগ্ন হয়ে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ি
রক্তের কণিকার সরণে সরণে ঝংকার ওঠে হারান স্যারের কন্ঠ
ওঠো জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।
ওঠো জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।