ও পরাণ মাঝি, তুমার মনে পড়ে,
আমাদের পেত্থম পরিচয়ের কথা?
সেই যিবারে পলাশ শিমুলগাছগুলো আগুন রঙে লাল ,
আমি বাঘছাপা শাড়ি পইড়া ফুলেশ্বরীর ঘাটে কলসী লইয়া জল ভরতে গেছি তখন তুমার সাথে দেখা।
আমি কলসী রাইখ্যা তখন কাঁকড়া তুলতে ব্যস্ত বাবার জন্য,বাবা কাঁকড়া খুব ভালবাসে।
বেশি কইরা ঝাল মশলা দিয়া ঘন মাখা মাখা কাঁকড়া ঝোল পাইলে কেমুন সোনা মুখ কইরা চাইট্যা পুইট্যা খায়।
তুমি পাড়ে নৌকা বাইন্দা দাঁড়াইয়া ছিলায়,আমি ঠাহর করিনি পেত্থমে,
চোখ তুইল্যা দেখি একদিষ্টে আমার দিকে ড্যাবড্যাব কইরা দেখতাছো ওমা!
ইসস, কিমুন শরম,লাগতেআছিল,তোমার তাগড়া শরীর,ঝাকড়া চুল,পুরুষ্টু যৈবন
আমার বুকের ভেতর শিরশিরানি।
চোখ তুলতেই চারচক্ষুর মিলন!
কিযে আমার অইল,কিছুতেই নজর ফিরেনা ,
ও মাঝি,তুমার ওই মুচকি হাসি যে আমার হুশ উড়াইয়া পীরিতের কাজল মাইখ্যা দিলগো,আর,সেই দিন থেইকা রোজ আমার জল নিতে আসা,আর, তুমি
ঠিক দাড়াঁইয়া থাকতা,আমারে দেখলেই কাছে আসতা,চুড়ি,টিপ,কানের ঝুমকা, আলতা আইন্যা দিতা,ও মাঝি,মনে পড়ে তুমার ?
তারপর, ফুলেশ্বরীর বুকে নৌকা ভাসাইয়া আমারে লইয়া ঘুরতে যাইতা।
মনে দুজনের ঘর বান্ধনের সপোন,
কি সুখের দিন আছিল গো পরাণ মাঝি।
আর,তারপর দেশে আইলো করোনা নাম লইয়া মড়ক,কি সাংঘাতিক কান্ড! মনে অইলে বুকটা হিম অইয়া যায়।
কোন মানুষ ঘর থাইক্যা বাইরে যায় না,তবু,রোজ শুনি মানুষ মরতাছে,এমুন তাজ্জব অসুখের নাম আগে কেউ শুনিনি।
কতদিন,! ও পরাণ মাঝি,
কতদিন তুমার দেখা নাই, তুমি কইগো মাঝি?
আমার বুকটা ছটফট করে তুমার লাইগ্যা,তুমি কিমুন আছো ?
ভালা থাইক্যো মাঝি,তুমি ভালা থাইক্যো।