Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ময়রা সিংহের ভূতের গল্প || Sasthipada Chattopadhyay

ময়রা সিংহের ভূতের গল্প || Sasthipada Chattopadhyay

গল্পটা শুনেছিলুম ময়রা সিংহের মুখ থেকে।

ময়রা সিংহ আমাদের গ্রামের লোক। তার আসল নাম নির্মল সিংহ। ময়রার কাজ করত বলে লোকে তাকে ময়রা সিংহ বলত। গ্রামের মধ্যে ছোটখাটো একটা মিষ্টির দোকানও ছিল তার। ময়রা সিংহ মরে যাওয়ার পর সে দোকান উঠে গেছে। তবে তার মুখে শোনা গল্পটা আজও মনে আছে আমার।

আমাদের গ্রাম থেকে বেরোবার মুখে কুলির (রাস্তা) ধারে একটা বেলগাছে নাকি এক ভূত থাকত। ভূতটা কারও কোনও অনিষ্ট করত না। কাউকে ভয় দেখাত না। শুধু সন্ধের পর গাছের ডালে বসে পা দোলাত আর সেই গাছতলা দিয়ে কেউ গেলেই তার মাথায় একটি লাথি মেরে দিত।

দিনের পর দিন এইরকম ভুতুড়ে ব্যাপার নিয়মিত ঘটত বলে ভয়ে সন্ধের পর কেউ আর সে পথে পা বাড়াত না। কেননা বেলগাছটা ছিল কুলির ধারেই এবং বেলগাছের যে ডালে ভূতটা থাকত সেই ডালটা ছিল কুলির ওপর ঝুঁকে। তাই কুলি ছেড়ে অন্য পথেই লোকজন যাতায়াত করত।

ভূতটাকে তাড়াবার জন্য গাঁয়ের লোকেরা অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ওঝা গুনিন ডেকে নানারকম ক্রিয়াকলাপ করেও তাড়ানো যায়নি ভূতটাকে। অনিষ্ট হওয়ার ভয়ে গাছটাকে কেটে ফেলতেও সাহস করেনি কেউ। এইরকম যখন অবস্থা তখন একদিন আগুরিদের একটা লোক ঠিক করল যেমন করেই হোক ভূতটাকে ফাঁদে ফেলে সে জব্দ করবে। লোকটার নাম মৃত্যুঞ্জয়। ডাকনাম মৃত্যুন। সে ছিল যেমন বলবান তেমনই সাহসী। কথায় বলে সাতটা এঁড়ে গোরুর যা শক্তি, একজন আগুরির গায়ে সেইরকম শক্তি। তাই মৃত্যুনের কথাটা হেসে উড়িয়ে দিল না কেউ। দু-একজন জিজ্ঞেস করল, “কী করে কী করবে শুনি?”

মৃত্যুন বলল, “শুনেছি গোরুর দড়িতে ভূত নাকি বাঁধা পড়ে। সেই গোরুর দড়ি দিয়েই ভূতটাকে আমি বাঁধব।” এই বলে ভূতটাকে কায়দায় ফেলবার জন্য মৃত্যুন আরও দু-একজনকে সঙ্গে নিয়ে তোড়জোড় শুরু করে দিল।

তারপর একদিন রাত্রিবেলা শুরু হল তাদের ভূত ধরার অভিযান। ময়রা সিংহের দোকানটা হল ঘাঁটি। দোকানে খাওয়াদাওয়ার জন্য লুচি মণ্ডা ইত্যাদি তৈরি হতে লাগল। মৃত্যুন বলল, “এইবার শুরু হোক আমাদের কাজ। কিন্তু এ কাজের জন্য চাই একটা শক্ত দড়ি আর দুটো তেজি বলদ।”

একজন বলল, “দড়ি তো জোগাড় হয়েছে, কিন্তু বলদ কোথায় পাব?” “কারও কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসো।”

“কিন্তু ভূতের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য বলদ দিতে কি রাজি হবে কেউ?”

মৃত্যুন কিছুক্ষণ চুপ করে কী যেন ভাবল, তারপর বলল, “কেউ না দেয়, কোথাও থেকে চুরি করেও আনতে হবে।”

তাই হল। চুরি করেই আনা হল। পুবপাড়া থেকে লুকিয়ে একজনের বলবান দুটো বলদ নিয়ে আসা হল।

তারপর শুরু হল আসল কাজ।

একটা দড়ির মাঝখানে ফাঁস তৈরি করে দড়ির দু’দিকের খুঁট দিয়ে বলদ দুটোকে বেঁধে ফাঁসটা মাথার ওপর ধরে মৃত্যুন একা চলল কুলি ধরে সেই গাছতলার দিকে। ভূতটা তখন নিজের মনে গাছের ডালে বসে পা দোলাচ্ছিল।

এমন সময় মৃত্যুন এসে পড়ল সেই গাছতলায়।

যেই না এসে পড়া অমনই মাথার পোকা নড়ে উঠল ভূতটার। সে করল কি, স্বভাবমতো মৃত্যুনের মাথার ওপর মেরে দিল এক লাথি।

মৃত্যুন তো এইরকমই চেয়েছিল। ভূতটা তার মাথায় লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসটা টেনে দিল সে। তারপর আর কোনওদিকে না তাকিয়ে চোঁচা দৌড় দিয়ে উঠল এসে ময়রা সিংহের দোকানে।

সেখানে মৃত্যুনের জন্য যারা অপেক্ষা করছিল, মৃত্যুন তাদের নিজের কীর্তির কথা বলল। বলে সকলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে খেতে লাগল লুচি, মণ্ডা ইত্যাদি।

ওদিকে ভূতটাও তখন গোরুর দড়িতে বাঁধা পড়ে বেশ রীতিমতো জব্দ হয়ে গেছে।

গোরুতে ভূত চেনে। ওরা নাকি অশরীরী হলেও ভূতকে দেখতে পায়। তাই তাদের দড়িতে একটা আস্ত ভূতকে বাঁধা পড়তে দেখে বলদ দুটো তো ভয়ানক হাঁকডাক করে ছুটোছুটি করতে লাগল। একই দড়ির দু’দিকের খুঁটে বলদ দুটো বাঁধা। মাঝের ফাঁদে আটকে রইল ভূত। বলদ দুটো ভয় পেয়ে যত ছোটে, তাদের টানাটানিতে ভূতের বাঁধনটা তত বেশি শক্ত হয়।

এইভাবে প্রায় সারারাত ধরেই হাঁকডাক ও ছুটোছুটি চলতে থাকে। সারা গ্রাম তোলপাড় হয়।

মৃত্যুন ও তার লোকজনেরা ময়রা সিংহের দোকানে বসে সব শোনে।

বলদ দুটো কখনও এ পাড়ায়, কখনও ও পাড়ায় ছুটোছুটি করে বেড়ায়। তাদের ডাক কখনও খুব কাছ থেকে শোনা যায়, কখনও বা শোনা যায় দূর থেকে। ক্রমে একসময় আর শোনাই যায় না তাদের ডাক।

রাত্রি তখন শেষ হয়ে আসছে।

মৃত্যুন তার লোকেদের বলল, “এবার তো একবার দেখতে হয়। কেননা ভূতটা কী অবস্থায় আছে দেখে যাদের বলদ তাদের ফেরত দিয়ে আসত হবে তো! নাহলে কাল সকালে জানাজানি হয়ে গেলে পাড়ায় পাড়ায় দাঙ্গা বেঁধে যাবে।”

একজন বলল, “এই অন্ধকারে কোথায় খুঁজব?”

“একটা আলো নিয়ে চলো না দেখি সবাই মিলে।”

মৃত্যুনের কথামতো একটা লণ্ঠন নিয়ে সবাই চলল বলদ খুঁজতে। এদিক-সেদিক করে নানাদিক খুঁজে একসময় তারা গ্রামের প্রান্তে গিয়ে হাজির হল। গ্রামের প্রান্তে চাঁদের পুকুর নামে একটা পুকুর আছে।

ওরা দেখল সেই পুকুরের পাড়ে একই ভাবে বাঁধা অবস্থায় বলদ দুটো শুয়ে শুয়ে হাঁপাচ্ছে আর তাদের দড়ির ঠিক মাঝখানের ফাঁসে বাঁধা রয়েছে একটা আধপোড়া কাঠ। এই কাঠটার মধ্যেই যে ভূতটা ভর করে ছিল তাতে আর সন্দেহ রইল না কারও। তাই সকলে মিলে তক্ষুনি ভাল করে পুড়িয়ে ফেলল কাঠটাকে। তারপর কাঠপোড়ার সমস্ত ছাই চাঁদের পুকুরের জলে বিসর্জন দিয়ে বলদ দুটোকে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে এল।

ভূতের উৎপাতও বন্ধ হয়ে গেল সেদিন থেকে। গাঁয়ের লোকেরা আবার নিশ্চিন্ত হয়ে সেই পথে চলাফেরা করতে লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress