সাতপেয়ে গরু
সাতপেয়ে গরু বাজারে ঘর ভাড়া কল্লেন, দর্শনী দু পয়সা রেট হলো; গরু রাখবার জন্য অনেক গরু একত্র হলেন। বাকি গরুদের ঘণ্টা বাজিয়ে ডাকা হতে লাগলো, কিছুদিনের মধ্যে সাতপেয়ে গরু বিলক্ষণ দশ টাকা রোজগার করে দেশে গেলেন!
দরিয়াই ঘোড়া
দরিয়াই ঘোড়াও ঐ রকম রোজগার কত্তে লাগলেন; বেশীর মধ্যে বিক্রী হবার জন্যে দু-চার মাথালো মাখালো থামওলা সেপাইপাহারা ও গোরা কোচম্যান (যেখানে অন্দর মহলেও ঘোড়ার সর্ব্বদা সমাগম) ওয়ালা বাড়ীতে গমনাগমন কল্লেন। কে নেবে? লাখ টাকা দর! আমাদের সহরের কোন কোন বড়মানুষের যে ত্রিশ চল্লিশ লাখ টাকা দর, পিঁজরেয় পূরে চিড়িয়াখানায় রাখবারও তাঁরা বিলক্ষণ উপযুক্ত; কিন্তু কৈ? নেবার লোক নাই। এখন কি আর সৌখীন আছে? বাঙ্গালাদেশে চিড়িয়াখানার মধ্যে বর্দ্ধমানের তুল্য চিড়িয়াখানা আর কোথাও নাই—সেথায় তত্ত্ব, বৃত্ন, লস্কার, উল্লুক, ভাল্লুক, প্রভৃতি নানা রকম আজগুবি কেতার জানোয়ার আছে, এমন কি, এক আধটির জোড়া নাই।
লক্ষ্ণৌয়ের বাদসা
দরিয়াই ঘোড়া কিছুদিন সহরে থেকে, শেষে খেতে না পেয়ে দরিয়ায় পালিয়ে গেলেন। লক্ষ্ণৌয়ের বাসা দরিয়াই ঘোড়ার জায়গায় বসলেন—সহরে হুজুক উঠলো, লক্ষ্ণৌয়ের বা মুচিখোলায় এসে বাস করচেন, বিলাতে যাবেন; বাদসার বাইয়ানা পোষাক, পায়ে আলতা।” কেউ বল্লে, “রোগা ছিপছিপে, দিব্বি দেখতে ঠিক যেন একটা অপ্সরা।” কেউ বল্লে, “আরে না, বাদসাটা একটা কূপোর মত মোটা, ঘাড়ে গদ্দানে, গুণের মধ্যে বেশ গাইতে পারে!” কেউ বল্লে, “আঃ।–ও সব বাজে কথা, যে দিন বাদসা পার হন, সে দিন সেই ইষ্টিমারে আমিও পার হয়েছিলেম, বাদশাহ শ্যামবর্ণ, একহারা, নাকে চসমা ঠিক আমাদের মৌলবী সাহেবের মত।” লক্ষ্ণৌয়ে বাদসা কয়েদ থেকে খালাস হয়ে মুচিখোলায় আসায় দিনকতক সহর বড় গুলজার হয়ে উঠলো। চোর বদমাইসেরাও বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় করে নিলে; দোকানদারদেরও অনেক ভাঙ্গা পুরোণো জিনিষ বেধড়ক দামে বিক্রী হয়ে গেল; দুই এক খ্যামটাওয়ালী বেগম হয়ে গেলেন! বাদসা মুচিখোলার অৰ্দ্ধেকটা জুড়ে বসলেন। সাপুড়েরা যেমন প্রথম বড় বড় কেউটে সাপ ধরে হাঁড়ির ভেতর পূরে রাখে, ক্রমে তেজ-মরা হয়ে গেলে খেলাতে বার করে, গবর্ণমেণ্টও সেই রকম প্রথমে বাদসাকে কিছু দিন কেল্লায় পূরে রাখলেন, শেষে বিষ-দাত ভেঙ্গে তেজের হ্রাস করে, খেলতে ছেড়ে দিলেন। বাদসা ডম্বরু তালে খেলতে লাগলেন; সহরের রুদ্দর, ভদ্দর, সেখ, খাঁ, দাঁ প্রভৃতি ধড়িবাজ পাইকো মাল সেজে কাঁদুনী গাইতে লাগলেন–বানর ও ছাগলও জুটে গেল।
লক্ষ্ণৌয়ের বাসা জমি নিলেন, দুই এক বড়মানুষ ক্ষ্যাপলা জাল ফেল্লেন—অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু শেষে জলখানা পর্যন্ত উঠলো না–কেউ বল্লে, “কেঁদো মাছ।” কেউ বল্লে, হয় “রাণা’ নয় ‘খোঁটা’!
শিবকৃষ্ট বন্দ্যোপাধ্যায়
হুজুক রঙ্গে শিবকেষ্ট বাঁড়ুয্যে দেখা দিলেন। বাবু দিন কত বড় বেড়েছিলেন; আজ একে চাবুক মারেন, পাঠান ঠেকিয়ে জুতো মারেন, আজ মেডুয়াবাদী খোট্টা ঠকান, কাল টুপিওয়ালা সাহেব ঠকান-শেষ আপনি ঠকলেন! জালে জড়িয়ে পড়ে বাঙ্গালীর কুলে কালি দিয়ে, চোদ্দবছরের জন্য জিঞ্জির গেলেন। কোন কোন সায়েব পয়সার জন্য না করেন হেন কর্ম্মই নাই; সেটা শিবকেষ্টবাবুর কল্যাণে বেরিয়ে পড়লো–একজন “এম, ডি, এফ, আর, সি, এস” প্রভৃতি বত্রিশ অক্ষরের খেতাবওয়ালা ডাক্তার ঐ দলে ছিলেন।