কদিন থেকে দিনরাত বৃষ্টি
কদিন থেকে দিনরাত বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে রয়েছে। দিনটাকে দিন বলে চেনা যাচ্ছে না। রাতটা হয়ে উঠেছে আরও রহস্যময়। ড়ুয়ার্সে এই সময় একবার বৃষ্টি নামলে আর রক্ষে নেই। তখন কাজকর্ম মাথায় ওঠে। গাছের পাতাগুলোও আওয়াজ করতে করতে একসময় নেতিয়ে পড়ে। তবু এই বৃষ্টি মাথায় করে অর্জুন আজ সকাল দশটা নাগাদ অমল সোমের বাড়িতে এসেছিল। কাঁহাতক আর বাড়িতে বসে থাকা যায়, এই বলে বর্ষাতি আর গামবুট পরে বেরিয়েছিল। থানার পাশ দিয়ে করলা নদীর পাশ ধরে আসার সময় দেখল রাস্তা আর নদী এক হয়ে গেছে। অল্পের জন্যে গামবুটের মধ্যে জল ঢোকেনি। হাবু দরজা খুলে দিয়েছিল। অমল সোম তাঁর ঘরে চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে কিছু দেখছিলেন। টেবিল ল্যাম্প সেই সকালবেলাতেই জ্বালিয়েছেন বাইরে রোদ নেই বলে। পেছন না ফিরে বলেছিলেন, তুমি এসে ভালই করলে। মাকে একটা টেলিফোন করে দাও। আজ দুপুরে এখানে হাবুর খিচুড়ি খেয়ে নেবে।
হাবুর হাতের রান্না মোটেই ভাল নয়। গায়ে শক্তি এবং কানে না শুনতে পাওয়া, কথা না বলতে পারা মানুষ যতটা ভাল রান্না করতে পারে হাবু ঠিক ততটাই পারে। গামবুট, বর্ষাতি খুলে বেশ কিছুক্ষণ অর্জুন ঘরে বসে ছিল। অমল সোম সেই যে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়েছেন, আর কোনওদিকে খেয়াল নেই।
সূর্য নেই বলেই বাইরে আলো নেই, ঘরেও স্যাঁতসেঁতে ছায়া। এইরকম সময়ে বিছানায় চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তে খুব ভাল লাগে। অর্জুনের মনে পড়ে, একসময় নীহার গুপ্তের কিরীটি রায় পড়তে খুব ভাল লাগত। তারপর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ। কিন্তু এদের ভাবভঙ্গি বেশ বয়স্ক বয়স্ক। ফেলুদা এসে সব্বাইকে সরিয়ে দিল। তার কাছাকাছি কাকাবাবু একটু পাল্লা দিয়েছে ঠিকই, তবে ফেলুদা একাই একশো। অর্জুনের মনে হচ্ছিল সে যদি ফেলুদার মতো হতে পারত! ফেলুদা কীরকম বেনারস থেকে রাজস্থানে কেস নিয়ে যেত। যেহেতু সে জলপাইগুড়িতে পড়ে আছে তাই ড়ুয়ার্সের বাইরে কেউ তাকে সমস্যা সমাধানের জন্যে ডাকে না।
দুপুরে হাবু খাবার দিল। খিচুড়ি, বেগুনভাজা আর ডিমভাজা। এবাড়িতে আসার পর অমল সোম আর কথা বলার সময় পাননি। এখন খেতে এসে বললেন, ফ্যান্টাস্টিক। বুঝলে, দারুণ ব্যাপার।
অর্জুনের মনে হচ্ছিল হাবু খিচুড়িতে বেশি নুন দিয়েছে। এই বস্তুকে অমল সোম কী করে দারুণ বলছেন তা তিনিই জানেন।
পুরো থালা শেষ করে মুখ ধুয়ে একটা লবঙ্গ জিভে চালান করে অমল সোম ডাকলেন, ঘরে এসো, কথা আছে।
অর্জুন অনুসরণ করল। চেয়ারে বসে অমল সোম বললেন, সেই যে গল্প আছে না! একটা বারো বছরের ছেলে সবে জন্মানো বাছুরকে কোলে নিয়ে রোজ খেলা করত। একদিনও সে খেলা বন্ধ করেনি। ছেলেটির যখন তেরো বছর বয়স তখন গেরুটা বেশ বড়সড়। কোনও মানুষ সেই গেরুটাকে কোলে তুলতে পারত না, কিন্তু ওই বালক স্বচ্ছন্দে তুলে নিত। গল্পটাকে বিশ্বাস করো?
অর্জুন বুঝতে পারছিল অমল সোম নেহাতই ভূমিকা করছেন। কিন্তু উত্তরটা কী হবে? রোজ যে গোরুটাকে তোলে সে তো প্রতিদিনই বাড়তি ওজনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য অনেক মাকে বলতে শোনা যায়, না বাবা, তোকে আর কোলে তুলতে পারব না। আমার গায়ে জোর নেই। ছেলের আবদার রাখতে না-পারা সেই মা-ও তো কোলে তুলতে অভ্যস্ত ছিলেন।
অর্জুন মাথা নাড়ল, না, একটা বড়সড় গেরুর ওজন কয়েক মন হবে। যা তোলা কোনও মানুষের পক্ষে অসম্ভব। ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই খেলাটা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
এইসময় বাইরে একটা গাড়ির আওয়াজ হল। গাড়িটা বাড়ির সামনেই এসে থামল। অমল সোম বিরক্ত হলেন, হুটহাট লোজন চলে আসে। যেন আমরা দেখা করার জন্যে হাঁ করে বসে আছি। তুমি লোকটাকে এই প্রশ্ন করে দ্যাখো তো কী উত্তর দেয়।
অর্জুন উঠল। কারণ ততক্ষণে আগন্তুক বেল বাজিয়েছে।
দরজা খুলতেই বর্ষাতি ফেল্ট হ্যাট পরা যে মানুষটিকে সে দেখতে পেল, সে পুরোদস্তুর সাহেব। গাড়ি থেকে নেমে বারান্দা পর্যন্ত আসতেই ভিজে গেছে এবং তার জন্যে বেশ লজ্জিত মনে হল।
ইংরেজিতে বলল, আমি খুব লজ্জিত বারান্দাটা ভিজিয়ে দিলাম বলে। কিন্তু আমি কি মিস্টার সোমের দেখা পেতে পারি?
আপনি কোত্থেকে আসছেন?
জয়ন্তী পাহাড়ের কাছেই আমি থাকি। মিস্টার সোমকে আমি চিঠি লিখেছিলাম।
আপনি আজকে যে আসছেন তা কি উনি জানেন?
ওয়েল, আমি তারিখ বলতে পারিনি।
আপনার নামটা!
ডেরেক মুরহেড।
আপনি কি ভারতীয়?
ওঃ, ইয়েস। আমি ভারতবর্ষের নাগরিক। কেন বলুন তো?
আপনার নাম এবং চেহারা ভারতীয়দের মতো নয়, তাই।
ভারতীয়দের চেহারা কি সবার একরকম? ডেরেক হাসল।
অর্জুন লোকটাকে ভাল করে দেখল। বছর চল্লিশেক বয়স। দূরে বৃষ্টিতে যে জিপটা ভিজছে তার দাম বেশি নয়। এই লোকটি যে আসছে তা অমল সোম জানতেন৷ তবু বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
মিস্টার নোম কি আপনাকে এখন আসতে বলেছিলেন?
ডেরেক মাথা নাড়ল, না। কয়েকদিন আগে ওঁকে আমি খাম পাঠাই। উনি যেদিন আসতে বলবেন সেদিন চলে আসব বলে জানাই। কিন্তু পর পর এমন কিছু ঘটনা ঘটল যে, আজ এমন ওয়েদারেও আমি চলে আসতে বাধ্য হলাম।
ডেরেককে বাইরের ঘরে বসতে বলল অর্জুন। বর্ষাতি বারান্দায় খুলে রেখে ডেরেক ভেতরে এল। অর্জুন দেখল লোকটার স্বাস্থ্য বেশ ভাল। একে ভারতীয় বলে ভাবতে তার অসুবিধে হচ্ছিল। জানলা খোলা যাবে না বৃষ্টির জন্যে, আলো জ্বালতে হল। এবং তখনই অমল সোম ঘরে ঢুকলেন, ডেরেক মুরহেড?
ইয়েস সার। আপনি মিস্টার নোম?
হ্যাঁ। আর এই ইয়ং ম্যানটির নাম অর্জুন।
ডেরেক দুজনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলল, মিস্টার সোম, এভাবে না জানিয়ে চলে আসার জন্যে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।
ছবিগুলো কে তুলেছে?
আমার কাকা। উনি বেশ বৃদ্ধ। একমাত্র নেশা ছবি তোলা। নিজের ডার্করুম আছে। সারাক্ষণ ক্যামেরা নিয়ে পাহাড়ে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান।
ছবিগুলো কবে তোলা হয়েছে?
গত এক বছরে। আমি ছবির পেছনে এক দুই করে নম্বর লিখে দিয়েছি।
আমার এখানে আসতে তোমার কতটা সময় লাগল?
সাত ঘণ্টা। বৃষ্টির জন্যে আমি অবশ্য স্পিড বাড়াতে পারিনি।
তার মানে এখনই রওনা হলে তুমি রাত নটার আগে ফিরতে পারবে না।
সেইরকমই মনে হচ্ছে। কিন্তু সার…।
হবে। ইন ফ্যাক্ট তোমার পাঠানো ছবিগুলো নিয়েই আমি সারা সকাল বসে ছিলাম। তুমি নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত। খিচুড়ি খাবে?
অনেক ধন্যবাদ সার। আমরা বাড়ির বাইরের খাবার খাই না। সঙ্গে যা এনেছিলাম তাই দিয়ে লাঞ্চ শেষ করেছি। ডেরেক জানাল।
সে কী! তোমাকে যদি বেশ কয়েকদিনের জন্যে বাইরে যেতে হয়–।
নিতান্ত বাধ্য না হলে আমি যাব না। আমাদের গ্রামের কেউই যাবে না। দীর্ঘকাল ধরে আমরা এই ট্রাডিশন মেনে চলছি। এবার কাজের কথায় আসা যাক। সার, আমরা আপনার সাহায্য চাইছি। গ্রামের সমস্ত মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে।
দ্যাখো ডেরেক, ড়ুয়ার্সে এতকাল বাস করেও আমি জানতাম না পাহাড়ে এমন একটা গ্রাম রয়েছে। কোনও জার্নাল বা বইয়ে খবরটা ছাপা হয়েছে বলে শুনিনি। তাই তোমার চিঠি পেয়ে অবাকই হয়েছিলাম। হ্যাঁ, আমার কথা তুমি জানলে কী করে?
একটা ইংরেজি পত্রিকা থেকে। আপনাকে নিয়ে লেখা একটা আর্টিকেল ছাপা হয়েছিল।
আচ্ছা। এখন তোমাদের সমস্যাটা কী?
বছরখানেক ধরে আমাদের গ্রামে মাঝে-মাঝেই অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে। পাহাড়ে অদ্ভুত আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। রাত বলে কেউ তখন সেখানে যেতে সাহস পায় না। দিনের বেলায় গিয়ে দেখা যায় অনেকটা জায়গা পুড়ে ছাই হয়ে আছে। কিন্তু সেগুলো যে আগুনে পুড়েছে তা আমাদের মনে হয়নি। গাছ বা ঘাস পুড়েছে প্রচণ্ড উত্তাপে। ইদানীং এই ঘটনা ঘন-ঘন ঘটছিল। যেহেতু আলোটাকে দেখা যেত গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে, তাই আমাদের কোনও সমস্যা তৈরি করেনি। লোকাল থানা মাইলপাঁচেক দূরে, পাহাড়ের নীচে। তাদের খবরটা জানিয়েছিলাম, কিন্তু কেন জানি না পুলিশ আমল দেয়নি। কয়েকদিন হল, অদ্ভুত চারজন মানুষ গ্রামে আসছে। প্রথমবার কথা বলতে গিয়ে বোঝা গেল ওরা হিন্দি বা ইংরেজি জানে না। গতকাল এসেছিল একজন দোভাষীকে নিয়ে। ওরা আগামী রবিবার আবার আসবে এবং তখন গ্রামের যত দুবছরের শিশু রয়েছে তাদের দেখতে চায়। ওরা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে, আমাদের কোনও আপত্তি শুনবে না। আপনাকে যে ছবিগুলো পাঠিয়েছি তাতে পোড়া গাছপালার সঙ্গে ওই লোকগুলোও আছে। আমরা ভয় পাচ্ছি ওই রহস্যময় আলোর সঙ্গে এই অজানা আগন্তুকদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে। ডেরেক একটানা বলে থামল।
ইন্টারেস্টিং ডেরেক। আমি ছবিগুলো ভাল করে দেখেছি। ওগুলো নিয়ে আমি পরে কথা বলব। কিন্তু তোমরা কি থানায় ডায়েরি করেছ? কিছু লোক যদি ভয় দেখিয়ে কাজ করাতে চায় তা হলে পুলিশ তোমাদের প্রোটেকশন দিতে বাধ্য। অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন।
না। মনে হয়েছে আপনার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।
পুলিশের সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক কীরকম?
ডেরেক মাথা নাড়ল, আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কখনওই পুলিশকে আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেখিনি। আজ অবধি গ্রামে এমন কোনও অপরাধ কেউ করেনি যাতে পুলিশের উপস্থিতি প্রয়োজন। এ থেকে ভেবে নিতে পারেন সম্পর্ক কীরকম?
হুম। লোকগুলোর ছবি দেখে মনে হয়েছে ওরা মধ্য এশিয়ার মানুষ। আচ্ছা, তোমার কাকাকে ওরা ছবি তুলতে দিতে আপত্তি করেনি?
কাকা একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলেন।
ও। অমল সোম ভেতরে চলে গেলেন। অর্জুন এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল। তার মাথায় অনেক প্রশ্ন একসঙ্গে ছটফট করছে। কিন্তু অমল সোম যখন কথা বলছেন তখন তার কথা বলা অশোভন বলেই চুপ করে ছিল সে।
অমল সোম ফিরে এলেন দুটো ফোটোগ্রাফ নিয়ে। প্রথমটা সামনে ধরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মনে হয় এখানেই আলো জ্বলেছিল। গাছপালা পুড়ে গেছে। কিন্তু এই জিনিসটি কী? রংটা যে কখনও সাদা ছিল তা বোঝা যাচ্ছে।
অমল সোম ছবিটা সামনে ধরতেই ওরা দেখতে পেল পোড়া জঙ্গলের একাংশ। গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ছাই হয়ে। একটু জোরে বাতাস বইলেই পড়ে যাবে। অমল সোম যে জায়গাটা আঙুল দিয়ে দেখালেন সেখানে একটা আধপোড়া মস্ত গাছি যার পেটের মধ্যে বিশাল ডিমের আকারের কোনও বস্তু রয়েছে, ওপরের রং কখনও সাদা ছিল বলে অনুমান করা যেতে পারে।
ডেরেক খুঁজে দেখল। তারপর মাথা নাড়ল, এরকম কিছুর অস্তিত্ব ওখানে আছে বলে মনে করতে পারছি না। হয়তো ওখানে আলো এমনভাবে পড়েছিল যে, ছবিতে ডিমের আকৃতি বলে মনে হচ্ছে।
দ্বিতীয় ছবিতে যেকজন মানুষের ছবি তাদের মুখ-চোখ বেশ শান্ত। অতিরিক্ত মাত্রায় শান্ত বলেই মনে হচ্ছে। অমল সোম যখন বলেছেন লোকগুলো মধ্য এশিয়ার, তখন ও নিয়ে তর্ক করার কোনও মানে হয় না। অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, এই চারজনের মধ্যে কে তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেছে?
ডেরেক খুব দ্রুত লোকটিকে দেখিয়ে দিল। অর্জুন দেখল লোকটি দলের সবচেয়ে রোগা, খাটো। নেতা হওয়ার মতো শরীর ওর নয়। অমল সোম ছবিগুলো ফেরত নিলেন, ডেরেক, আমাকে আরও ভাবতে হবে। কিন্তু তার আগে বলো তুমি ঠিক কী চাও?
ডেরেক বলল, মিস্টার সোম, আমরা খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের গ্রামে গেলেই আপনি সেটা বুঝতে পারবেন। এই ঝুট ঝামেলা থেকে আপনি আমাদের রক্ষা পেতে সাহায্য করুন। আমরা সাধ্যমতো আপনাকে পারিশ্রমিক দেব।
অমল সোম মাথা নাড়লেন, সে তো নিশ্চয়ই, বিনা পারিশ্রমিকে আমরা কেন সময় নষ্ট করব! কী বলো অর্জুন?
অর্জুন জবাব দিল না। অমল সোম টাকা রোজগার করার জন্যে সমস্যার সমাধান করেন একথা আজ জলপাইগুড়ির একটা রিকশাওলাও বিশ্বাস করবে না।
তা হলে? ডেরেক সোজা হয়ে বসল।
ডেরেক মুরহেড?
ইয়েস সার।
আমাকে আর একটু ভাবতে দাও। তবে সেইসঙ্গে আমার কিছু ভাটা দরকার। এইজন্যে আমি অর্জুনকে তোমার সঙ্গে পাঠাতে চাই। নিজেদের গ্রাম তোমরা যে চোখে দেখবে, অর্জুন নিশ্চয়ই সেটা দেখবে না। ও ফিরে আসবে শনিবারের মধ্যে। তেমন বুঝলে আমি রবিবারের সকালেই তোমাদের ওখানে পৌঁছে যাব। তুমি যদি অর্জুনের যাওয়া-আসা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারো।
শিওর। এতে কোনও প্রবলেম নেই।
ডেরেককে বসতে বলে অমল সোম অর্জুনকে ইশারা করলেন অনুসরণ করতে। ভেতরের ঘরে ঢুকে অমল সোম বললেন, তোমার যেতে আপত্তি নেই
তো?
অর্জুন হেসে ফেলল, আপনি কিছু বললে আমি কখনও আপত্তি করেছি? তা ছাড়া যা শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে গেলে নতুন অভিজ্ঞতা হবে।
গুড। শোনো, ওখানে গিয়ে চোখকান খোলা রাখবে। কোনও ইমোশনাল ব্যাপারকে প্রশ্রয় দেবে না। তোমার সঙ্গে অস্ত্র আছে?
হ্যাঁ। ওটা সঙ্গে রাখা অভ্যেস হয়ে গেছে।
যদি তুমি থাকতে-থাকতে আলোটা ওখানে জ্বলে ওঠে, তা হলে অস্ত্রটা ব্যবহার করবে। অমল সোম তাঁর টেবিলের কাছে ফিরে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা হাতঘড়ি বের করলেন, তোমার ঘড়িটা খুলে রাখো এখানে। এটা পরে
নাও।
অর্জুন ঘড়িটা নিল। একটু ভারী। নানান রকম চাবি ঘড়ির চারপাশে।
অমল সোম চাবিগুলোর ব্যবহার বুঝিয়ে দিলেন।