Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হিসেবনবিশ || Shamsur Rahman

হিসেবনবিশ || Shamsur Rahman

হিসেবী সে নয় তবু নিয়ত হিসেব করে কাটে তার বেলা।
নিজের বিবর্ণ ঘরে কী কী আসবাব আছে, ক’টি ফটোগ্রাফ,
মানচিত্র কিংবা কত বই, দেয়ালে কখন ক’টি পোকা থাকে,
যায় বালিরঙ টিকটিকির জঠরে-সে হিসেব করে।
কখনোবা সিগারেট ধরিয়ে সন্ধ্যাকে আস্তেসুস্থে
পোড়ায় চিতার মতো, তৃষ্ণায় কাতর হ’লে গলা
নিমেষে ভিজিয়ে দেয় স্বপ্নের শিশিরে। অন্তরালে
সংখ্যা লেখে, সংখ্যা কাটে, স্বপ্ন লেখে স্বপ্ন কাটে হিসেবনবিশ।

হিসেবে কোথাও কোনো গরমিল থাকা ভালো নয়
ভেবে সে খাতার প্রতি আনুগত্যে ফেরেশতার পাখার মতন
জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে। আঙুলের ডগায় নাচিয়ে কী নির্মল
গণিতের গুঁড়ো, পায়ে পায়ে বাজিয়ে করোটি হরিণের কত
মহামারী ভুলে থাকে, চলে যায় পার্কে; কতিপয় এলোমেলো
নষ্ট মানুষের হর্ষধ্বনি, হৈ হৈ অশ্লীলতা শুনে কাটে ঘোর।
ফিরে আসে, ঘরে ব’সে আশা লেখে, আশা কাটে হিসেবনবিশ।
সতেজ আকাঙ্ক্ষাগুলি নিঃশব্দে জীবনপাত করে আর্ত ঘরে!
এ শহরে শতকরা কত লোক সমকামী আর প্লেটনিক
প্রেমিক ক’জন,
পৌরসভা কত ট্রাক পেলে এ শহর হবে স্বপ্নের শহর,
জীবনানন্দীয় ঘাস কতটুকু জমি কার করেছে দখল
এ শহরে, ছায়াচ্ছন্ন শহরতলিতে,
একটি সপ্রাণ বসন্তের জন্যে ক’ডজন কোকিল দরকার,
গোর খোদকের কাছে কত লাশ জমা দিলে
সড়কের মুখ রক্ষা হবে,
টি এস এলিয়টের ধূসর ওয়েস্টকোট, ভালেরির নিরঞ্জন প্রশান্ত দস্তানা,
নেরুদার চিলিময় ইতিহাসরঞ্জিত জ্যাকেট ক’হাজার
সুপার পার্কেটে লভ্য, এ হিসেব মেলাতে ব্যস্ত হিসেবনবিশ।

রাত্রিদিন একা-একা সে হিসেব করে তেরো বর্গমাইল জায়গায়
ক’জন সৈনিক কুচকাওয়াজ করতে পারে সকালের রোদে,
পঁচিশ মিনিটে ঠিক ক’টি ট্রেঞ্চ খোঁড়া যায়, বঙ্গোপসাগর
ঢেকে দিতে ক’হাজার রণতরী লাগবে এবং অকস্মাৎ
আণবিক আক্রমণ শুরু হলে তেজস্ক্রিয় ভস্ম থেকে মানব শিশুকে
বাঁচাতে প্রত্যেক দেশে কত ভূগর্ভস্থ আশ্রয় শিবির চাই,
ক’কোটি রেডিও আর্তস্বরে কেবলি রটাবে সেই
আত্মা-শুষে-নেয়া দুঃসংবাদ বিস্ময়?

পূর্ব পুরুষের হলদে জাবেদা খাতার ভাঁজে ভাঁজে
হিসেবের ঘনারণ্যে বিস্তর প্রমাদ
প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রাণীর মতন প্রকাশিত।
হিসেবের ফাঁকে ফাঁকে কেমন বেরিয়ে পড়ে তাদের ভণ্ডামি,
লোলুপতা, প্রতারণা, শঠতা ইত্যাদি,
যেমন খুনির ফেলে-আসা হত্যাচিহ্ন অকুস্থলে। পূর্ব পুরুষের সব
দলিল, জাবেদা খাতা বড় গোলমেলে। ক্লান্ত হিসেবনবিশ
এতদিনে জেনে গেছে, উল্টা-পাল্টা দলিলের শুদ্ধ পাঠোদ্ধারে
প্রকৃত আগ্রহী হ’লে পুনরায় পুরোপুরি হিসেব-নিকেশ করা চাই।
নইলে পদে পদে
প্রাক্তন ভ্রান্তির জের টেনে যেতে হবে
ক্ষেতের আইলে, ত্র্যাভেন্যুতে মগজের কোষে পুরষানুক্রমে।

নড়বড়ে ঘরে ব’সে একাকী সে সংখ্যা লেখে, সংখ্যা কাটে আর
হাতির মতন স্মৃতি নিয়ে, নিপুণ দর্জির মতো
সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দ্যাখে কোন ঘরে কত হয় জমা;
তবুও হিসেব তার খুব হিজিবিজি হয়ে যায় বারংবার।
একক দশক আর শতক সহস্র, সব কিছু মাতলামি করে করে
মুছে যায়, জাবেদা খাতায়
চোখের জলের মতো কিছু দাগ লেগে থাকে শুধু।
না, তোমাকে দিয়ে এ হিসেব মেলানো সম্ভব নয়।
কখনো, বলে সে মনে-মনে। অথচ আবার একা-একা হাতে
স্বপ্ন গুঁজে বেশ ঝুঁকে সংখ্যা লেখে, সংখ্যা কাটে। তার চতুষ্পার্শ্বে
পূর্ণিমার উজ্জ্বলতা ছাড়া কিছু নেই, চলে স্বচ্ছতা ছাড়া
কিছু নেই; দেয়ালের গর্ত এবং চৌকাঠ থেকে
ব্যর্থতা কুড়িয়ে জেনে নেয় সত্য মানে যেশাসের গাধা আর
গণিতের গুঁড়ো তার পায়ে চুমু খেয়ে খেয়ে গভীর সংগীতময় হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *