Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ষষ্ঠী যখন চোখ মেলল

ষষ্ঠী যখন চোখ মেলল, তখন তার কপালে মস্ত একটা ট্যাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। চোখে সর্ষেফুলও দেখতে পাচ্ছে ষষ্ঠী। ওই অবস্থাতেই নিজের ট্যাঁকটা একটু হাতিয়ে দেখল সে। ফাঁকা।

কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে আবার চোখ খুলে সে দেখল, টিকে এখনও গন্ধমাদনের মতো পড়ে আছে সামনে। দেখে ফিক করে একটু হেসে ফেলল ষষ্ঠী। তার মোটে পাঁচশো, টিকের গেছে দশ হাজার। উচিত শিক্ষা হয়েছে। ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। কপালের ফের না হলে টিকের যাওয়ার কথা পাঁচশো, আর ষষ্ঠীর দশ

হাজার।

দশ হাজার তার ট্র্যাক থেকে গেলে ষষ্ঠী শোকে আর উঠে দাঁড়াতে পারত না।

পাঁচশোর শোক অনেক কম। ষষ্ঠী তাই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল, গন্ধমাদনটার দিকে তাকিয়ে আবার ফিকফিক করে হাসল সে। পাগলবেশী ডাকাতটা টিকে-কে একটা ল্যাং আর একটা বিরাশি সিক্কার রদ্দা কষিয়েছে। সেই তুলনায় ষষ্ঠীর ভাগে পড়েছে মাত্র একটা গাঁট্টা, ভগবানই চিরকাল গরিবকে দেখেন।

নিজের কপালের ট্যামটায় একটু হাত বোলাল ষষ্ঠী। তারপর টিকের টাকা হাতিয়ে দেখল। দেখে রাখা ভাল। টাকাটা যে সত্যিই গেছে সে-বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ষষ্ঠী টিকের কোমর থেকে ভোজালিখানা খুলে নিল। সাবধানের মার নেই।

তারপর ষষ্ঠী বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “বিশ্বাসঘাতক! শয়তান!” বলে ক্যাঁত ক্যাঁত করে কয়েকটা লাথি কষাল টিকের কোমরে। টিকে অবশ্য লাথি-টাথি টের পেল না। তবে একবার গোঙানির শব্দ করে উঠতেই ষষ্ঠী দু’ পা পিছিয়ে এল সভয়ে। দূর থেকেই আরও কিছুক্ষণ টিকের উদ্দেশে গালমন্দ বর্ষণ করে সে রণে ভঙ্গ দিল। আংটি গেছে, টাকা গেছে, তবু ষষ্ঠীর একরকম আনন্দই হচ্ছিল। তার মোটে পাঁচশো গেছে, কপালে মাত্র একটা ছোট্ট ট্যাম। আর টিকেটার গেছে দশ হাজার, হাঁটুতে ল্যাং, ঘাড়ে রদ্দা। ওঃ, যা আনন্দ হচ্ছে ষষ্ঠীর!

একটু জিরিয়ে এক ঢোঁক জল খাবে বলে ষষ্ঠী আবার কালী স্যাকরার দোকানে ফিরে এল। স্যাকরার পো আংটিটা জোর দাঁও মেরেছে। রাত জেগে বসে সোনা গলাচ্ছে নিশ্চয়ই।

ষষ্ঠী মৃদু স্বরে ডাকল, “কালীদা! ও কালীদা! ওঃ, যা হুজ্জোতটাই গেল। দেখগে গন্ধমাদনটা কেমন দাঁত ছরকুটে পড়ে আছে গলির মাথায়। হিঃ হিঃ…”

কিন্তু কালী স্যাকরার বন্ধ ঘর থেকে কোনও জবাব এল না। ষষ্ঠী দরজাটা ঠেলতেই খুলে গেল। সন্তর্পণে ঘরে ঢুকল ষষ্ঠী। তারপর হাঁ হয়ে গেল। কালী স্যাকরা কেতরে পড়ে আছে মেঝেয়। আংটি হাওয়া। গুপ্ত সিন্দুক হাঁহাঁ করছে।

জিব দিয়ে একটু চুকচুক করে আফসোসের শব্দ করল ষষ্ঠী। এঃ, কালীদাকে একেবারে ফর্সা করে দিয়ে গেছে! গুপ্ত সিন্দুকের খবরটা আগে জানত না ষষ্ঠী। আজ রাতেই প্রথম দেখল, যখন কালী তাদের টাকা বের করে দিল।

ষষ্ঠী আপনমনেই বলল, “দুঃখটা কেন হয়েছ জানো কালীদা? নিল তো একটা অজ্ঞাতকুলশীল নিয়ে গেল সব। এ কাজ তো আমারই করা উচিত ছিল। এঃ, টাকায় গয়নায় হিরের আংটিতে কয়েক লাখ বেরিয়ে গেল গো!”

দুঃখ করতে করতে আবার একটা খুশি-খুশি ভাবও এসে পড়ল ষষ্ঠীর। কালী স্যাকরা তার বন্ধু লোক হলে কী হয়, এক নম্বরের হাড়কেল্পন। হাজার টাকার মাল নিয়ে দুশো টাকা ঠেকায়। লোকটা ঠকবাজ, জোচ্চোর তো বটেই, বাটপাড় বললে কম বলা হয়। পাপে দুনিয়াটাই ভরে গেল। কলিকাল আর বলে কাকে!

তা ভগবান সাজাটাও দিলেন বড় কম নয়। কথায় বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। ভাবতে-ভাবতে ষষ্ঠী ফিক করে হেসে ফেলল। কালী স্যাকরার মাজা নির্ঘাত মচকেছে। চোখের নীচে কালশিটে। কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে। পাপের শাস্তি।

ষষ্ঠী খুব আদরের সঙ্গে নিজের কপালের ট্যামটাতে হাত বোলাল। তার কপালে মোটে একটা ট্যাম! তাও খুব বেশি হলে একটা সুপুরির সাইজ। আর ট্যাঁক থেকে গেছে মোটে পাঁচশো টাকা। ছোট পাপের ঘোট শাস্তি। আর কালীদাকে দ্যাখো।

ফিকফিক করে কিছুক্ষণ খুব হাসল ষষ্ঠী।

তারপর হাসি থামিয়ে ষষ্ঠী খুব তাড়াতাড়ি ঘরটা খুঁজে দেখে নিল, নাঃ, কিছু নেই। পাগলটা সব নিয়ে গেছে।

পাগল! আরে, এতক্ষণে পাগলটার কথাই তো সে ভাল করে ভেবে দেখেনি! ষষ্ঠী খুব মন দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে দৃশ্যটা মনে করার চেষ্টা করল। একটা পাগল গলির মুখে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিল আর. আপনমনে হাসছিল।

হ্যাঁ, ষষ্ঠী এবার পরিষ্কার পাগলটাকে মনে করতে পারল। অন্ধকার

ছিল বটে, কিন্তু পাগলটা কতটা লম্বা, হাত-পায়ের গড়ন কীরকম, নড়াচড়া কীরকম, এগুলোর একটু আন্দাজ পেয়েছিল সে। আর আশ্চর্যের বিষয়, পাগলটাকে তার খুব চেনা লাগছে। খুব চেনা-চেনা।

হুঁ হুঁ বাবা, ষষ্ঠীর চোখকে ফাঁকি দেবে, এমন এলেম তোমার পেটে নেই। একটু ভাবতেই ষষ্ঠী ধরে ফেলেছে লোকটা কে। কিন্তু সে ভেবে অবাক হল, এতখানি বয়সে সে নিজে আজও যে-বিদ্যে বাগাতে পারেনি, ওইটুকু একরত্তি ছেলে এর মধ্যেই এত শিখে ফেলল কী করে? ষষ্ঠী নিজে পাকা চোর, টিকে দুর্দান্ত গুণ্ডা, কালী স্যাকরা শেয়ালের মতো ধুরন্ধর। অথচ এই তিনজনকে একই দিনে দু দুবার ঘোল খাইয়ে গেল ওই দুধের খোকা?

ভাবতে ভাবতে লজ্জায় ঘেন্নায় শরীরটা শক্ত হয়ে গেল ষষ্ঠীর। মান-ইজ্জত সবই গেল তার। এর একটা বিহিত না করলেই নয়।

শক্ত করে ভোজালিটা চেপে ধরে ষষ্ঠী আরও খানিকক্ষণ ভাবল। কাজটা শক্ত সন্দেহ নেই। একে রতন বাঁড়ুজ্যের বাড়িতে দ্বিতীয়বার ঢোকা। তার ওপর ওই তুখোড় ছোঁকরার সঙ্গে গায়ের জোর, বুদ্ধি আর বদমাইসিতে পাল্লা টানা। কাজটা খুবই শক্ত।

তবে যদি কোনওরকমে কাজটা হাসিল করে ফেলতে পারে ষষ্ঠী, তবে এক রাতেই সে রাজা হয়ে যাবে। কালী স্যাকরার কয়েক লাখ টাকা আর সোনার গয়না, লাখ টাকার হিরের আংটি মিলিয়ে যা হবে তা কল্পনাও করা যায় না। একটা নয়, দুটো ডাকাতের দল খুলবে ষষ্ঠী। একশোটা বন্দুক কিনে ফেলবে। রোজ শুধু পোলাও কালিয়া খাবে। বারোটা গামছা কিনবে। দুটো গাই-গোরু। একটা মোটরগাড়ি। একটা পাহাড়। একটা জাহাজ…

ভাবতে ভাবতে চোখ চকচক করতে লাগল ষষ্ঠীর। বিড়বিড় করে বলল, “জয় মা কালী। বুকে সাহস দে মা। মাথায় বুদ্ধি দে মা। গায়ে জোর দে মা।”

বলে ষষ্ঠী কালী স্যাকরার দোকান থেকে বেরিয়ে হনহন করে হেঁটে বাঁশবন পেরিয়ে শর্টকাট ধরে আমবাগানে এসে ঢুকল।

হঠাৎ একটা ক্রুদ্ধ ‘গর আওয়াজ পেয়েই ষষ্ঠী একলাফে নিচু একটা গাছের ডাল ধরে ঝুল খেয়ে ভোজালি সমেত ঝটপট গাছে উঠে পড়ল। ৫৬

বুকে ধাঁই-ধপাধপ শব্দ হচ্ছে। এই আমবাগানে বাঘ থাকার কথা নয়। তবে এল কোত্থেকে?

তবে কিনা ষষ্ঠীর পাকা কান। একটু শুনেই বুঝল, বাঘ নয়। নাক ডাকছে।

সাহসে ভর করে ষষ্ঠী নেমে এসে দরোয়ানদের ঝোঁপড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল দুই মুশকো ভোজপুরী মাটিতে কুমড়ো-গড়াগড়ি খেয়ে ঘুমোচ্ছে। নাকের কী ডাক রে বাবা!

ষষ্ঠী খুব আহ্বাদের সঙ্গে ফিকফিক করে হাসল। ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই। এই দুটো দরোয়ান প্রায়ই রাতবিরেতে “কে রে? কৌন হ্যাঁয় রে?” বলে এমন চেঁচায় যে, ষষ্ঠীর পিলে চমকে যায়। একবার তো একজনের লাঠি খেতে খেতে দৌড়ে পালিয়ে কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছিল সে। দু’জনের সামনে দুটো লোটা দেখে ষষ্ঠী আর লোভ সামলাতে পারল না। তুলে নিল। পুকুরে ডুবিয়ে দেবে। পরে তুলে নিলেই হবে।

মা লক্ষ্মী এভাবেই তো দেন। হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা কি ঠিক? এক হাতে দুটো লোটা আর অন্য হাতে ভোজালিটা বাগিয়ে ধরে ষষ্ঠী ঘুটঘুট্টি অন্ধকারে রতন বাঁড়ুজ্যের বাড়ির দিকে এগোল। পথেই পুকুরটা পড়বে।

বেশ নিশ্চিন্ত মনেই এগোচ্ছিল ষষ্ঠী। মনটায় একটু স্ফুর্তিও আছে। ধর্মের কল যে বাতাসে নড়ে তা এই একটু আগে নিজের চোখেই দেখেছে ষষ্ঠী। তার মনে হচ্ছে ভগবান যখন এতটাই দেখলেন, আর একটু কি দেখবেন না? ওই এঁচোড়ে-পাকা ছোঁড়াটার কাছ থেকে হিরের আংটি সমেত কালীদার চুরি-যাওয়া গয়না আর টাকা হাতাতে পারলে তাকে আর পায় কে?

কিন্তু একটা খটকাও লাগছে ষষ্ঠীর। ছোঁড়াটা যখন ঘুমোচ্ছিল তখন সে নিজে হাতে ঘরের মধ্যে ঘুমের ওষুধ স্প্রে করেছে। সে এমনই তেজালো ওষুধ যে হাতিরও সে ঘুম সহজে ভাঙার কথা নয়। কিন্তু ছোঁকরা সেই ওষুধের ক্রিয়া এমন চট করে কাটিয়ে উঠল কী করে? তার ওপর তারা দু’ দুটো হুমদো তোক বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢোকার পরও রতন বাঁড়ুজ্যের বাঘা কুকুরটা একবারও ডাকল না কেন?

ষষ্ঠী আমবাগান পার হয়ে ফাঁকা জমিতে পা রাখতেই মুখে ঝপাস করে একটা টর্চের আলো এসে পড়ল।

“আরে! কানাইবাবু যে?”

গলার স্বরটা এক লহমায় চিনে ষষ্ঠী খুব বিনয়ের সঙ্গে একটু হাসল, “হেঃ হেঃ, এই একটু ঘুরে-টুরে দেখছি আর কি। বড্ড গরম কিনা ঘরে।”

“তা ভাল। তবে হাতে ও দুটো কী? পেতলের ঘটি দেখছি…!”

ষষ্ঠী শশব্যস্তে বলল, “আর বলবেন না, লোকের বড় ভুলো মন হয়েছে আজকাল। কে যেন ফেলে গেছে আমবাগানে। হোঁচট খেয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম পুকুরে ফেলে দিয়ে আসি।”

“কিন্তু কানাইবাবু, আপনার ডান হাতে একটা ভোজালিও দেখছি না?”

ষষ্ঠী জিব কাটল। তারপর অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ভোজালিটার দিকে একটু চেয়ে থেকে চোখ মিটমিট করতে করতে বিগলিত মুখে বলল, “আজ্ঞে, আমিও দেখছি। কিন্তু কোত্থেকে যে জিনিসটা এল, তা বুঝতে পারছি না। এই ছোরা-টোরা খুব খারাপ জিনিস, আমি লোককে সেকথা বলিও।”

টর্চের আলোয় তাকে আপাদমস্তক ভাল করে দেখে নিয়ে ছোঁকরাটা বলল, “ছোরায় সব সময় কাজও হয় না। তাই না?”

ষষ্ঠী বিগলিত মুখে বলল, “আজ্ঞে, সে আর বলতে?”

“কিন্তু আপনার কপালটা যে বেশ ফুলে আছে কানাইবাবু? পড়ে-উড়ে যাননি তো?”

ষষ্ঠী খুবই উদার স্বরে বলল, “সে আর বিচিত্র কী? কোথাও অন্ধকারে ঢুসোটুসো লেগে থাকবে। তবে আমার এ আর কী দেখছেন? অন্যদের আরও কত হয়ে আছে তার হিসেব কে জানে।”

“তা বটে।” বলে ছোঁকরা একটু হাসল। তারপর টর্চের আলোটা নিবিয়ে দিয়ে বলল, “আপনি বেশ ভাল লোক কানাইবাবু। এ অঞ্চলে আমি আর আপনার চেয়ে ভাল লোক দেখিনি।”

“আজ্ঞে কথাটা আমারও মাঝে-মাঝে মনে হয়। একটু-আধটু যা করে ফেলি তা ওই কুসঙ্গে পড়ে।”

“তা বটে। আপনার ওই স্যাকরা লোকটিও বেশ ভাল। আমার তো ধারণা ছিল আংটিটার জন্য পঞ্চাশ টাকাও পাব না। কিন্তু স্যাকরার দয়ার শরীর বলে আমার দুর্দশা দেখে চারশো টাকা দিয়েছেন। ভারী ভাল লোক কালী-স্যাকরা। এখানে দেখছি ভাল লোকের সংখ্যাই বেশি।”

এই কথায় ষষ্ঠী একটু বিনয় দেখাতে গিয়ে মাথা হেঁট করে ঘাড় চুলকোতে গেল। বে-খেয়ালে ভোজালিসুষ্ঠু হাত ঘাড়ে তুলে জিব কেটে হাতটা তাড়াতাড়ি নামিয়ে বলল, “যে আজ্ঞে। তা হলে এবার আমি আসি গিয়ে। বাড়িটা ফাঁকা পড়ে আছে। ইদিকে বড় চোর-ছ্যাঁচড়ের উপদ্রব কিনা।”

“চোর-ছ্যাঁচড়ও আছে নাকি এখানে? ওরে বাবা, তা হলে তো আপনার এক্ষুনি বাড়ি যাওয়া উচিত।”

“আজ্ঞে হ্যাঁ, যদি অনুমতি করেন।”

“আর এক দণ্ডও আপনার বাড়ির বাইরে থাকা উচিত নয়। যান, তাড়াতাড়ি বরং একটু জোর–পায়েই চলে যান।”

বলতে বলতে ছেলেটা এগিয়ে এসে ষষ্ঠীর ঘাড়ে বন্ধুর মতো হাত রেখে, কিন্তু বেশ একটু চাপ দিয়ে ষষ্ঠীকে ঠেলে দিল। ওইটুকু চাপেই ষষ্ঠীর দম বেরিয়ে চোখ ডেলা পাকিয়ে উঠল ব্যথায়। ছোঁকরার হাতে যেমন বাঘের জোর তেমনি আঙুলেও ভেলকিবাজি আছে। রগ, শিরা, হাড়ের জোড় বুঝে গিয়ে মোক্ষম জায়গায় মোলায়েম করে চাপ দিয়ে প্রাণখানা টেনে বার করে দেয় আর কি।

ষষ্ঠী একবার “আঁক” শব্দ করেই বেশ দৌড়-পায়েই পালাল।

কিন্তু তার নাম ষষ্ঠীচরণ। আজ তার বড় অপমান গেছে। ছোঁকরাটা তিন-তিনবার তাকে ঘোল খাইয়েছে। টিকে অপমান করেছে না-হোক দু’বার। এর একটা পালটি না নিলে নিজের কাছেই তার ইজ্জত থাকে না। তার ওপর নিজের জহুরির চোখ দিয়ে টর্চের আলোয় ছোঁকরার আঙুলের আংটিখানা সে একঝলক দেখে নিয়েছে। সেই আংটিটাই। দিব্যি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ষষ্ঠী তাই পালিয়েও পালাল না। বিশাল আমবাগান, দেদার গাছ, অমাবস্যার ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। কে কার ওপর নজর রাখবে। ষষ্ঠী একটা নধর গাছের গোড়ায় ভোজালি দিয়ে নিপুণ হাতে একটা গর্ত খুঁড়ে লোটাদুটো পুঁতে রাখল। তারপর বানরের মতো গাছ বেয়ে উঠে একটা বেশ হেলানো ডালে পা ঝুলিয়ে বসল। তার মন বলছে, একটা ঘটনা কিছু ঘটতে চলেছে। সে গন্ধ পায়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress