Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী (২০১১) || Humayun Ahmed » Page 8

হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী (২০১১) || Humayun Ahmed

বৃষ্টিতে ভেজার ফল

বৃষ্টিতে ভেজার ফল ফলেছে, জ্বরের ঘোরে শরীর ও চেতনা আছন্ন। কড়া ঘুমের অষুধ খাবার পরেও ঘুম না এলে যেমন লাগছে আমার ঠিক সে রকম লাগছে। শরীরের একটা অংশ ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্য অংশ জেগে আছে। সুপ্তি ও জাগরণের মাঝামাঝি ত্ৰিশংকু অবস্থা। স্বপ্ন দেখছি, স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রতিটি স্বপ্নেই আবহ সংগীত হিসেবে বৃষ্টির শব্দ। স্বপ্নে ফিলর হিসাবে পক্ষীমানবকে দেখছি। তিনি উদ্বিগ্ন গলায় বলছেন, আপনার কি সমস্যা?

একটা স্বপ্নে এলিতাকে দেখলাম। তার হাতে ক্যামেরা। আমার হাতে সানগান। আমি আলো ফেলছি, এলিতা ছবি তুলছে। আমরা এগুচ্ছি পিচ্ছিল সুরঙের ভেতর দিয়ে। সুরঙ্গের গায়ে প্রাচীন মানুষদের আঁকা ছবি। এলিতা ক্যামেরায় সেই সব দৃশ্য ধরছে। সে দুটা বাইসনের পেছনে একদল শিকারির ছবি তুলল। স্বপ্নে অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। যেমন বাইসনের ছবি তোলার সময় এলিতা বাইসনদের বলল, তোমরা একটু আমার দিকে ফের। আমি তোমাদের চোখ পাচ্ছি না। সঙ্গে সঙ্গে দুটা বাইসন ক্যামেরার দিকে ফিরল। স্বপ্নে ব্যাপারটাকে মোটেই অস্বাভাবিক মনে হল না।

আমার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। যে পানি ঢালছে তার মুখ দেখতে পাচ্ছি। না। শুধু কানের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া শীতল পানির স্রোত অনুভব করছি। এতে আমার সুবিধা হচ্ছে পানি যে ঢালছে তাকে কল্পনা করে নিতে পারছি। তার সঙ্গে মনে মনে কথাবার্তা বলছি।

কল্পনা করছি মাজেদা খালা পানি ঢালছেন। তার গা থেকে কড়া জর্দার গন্ধ আসছে। মাজেদা খালা বললেন, জুর কিভাবে বাধালি? বৃষ্টিতে ভিজেছিস?

হুঁ।

তোর সঙ্গে এলিতা মেয়েটা ছিল?

না।

ওকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলি না কেন?

লাভ কি?

বৃষ্টি ভিজাভিজি থেকে প্রেম হয়। হিন্দী সিরিয়েলে দেখেছি।

এলিতার প্রসঙ্গ আসতেই মাজেদা খালার জায়গায় এলিতা চলে এল। এখন সে পানি ঢালছে। একই সঙ্গে চুলে আংগুল বুলাচ্ছে।

হ্যালো হিমু।

হ্যালো।

আমার কথা শুনে হোটেলে থেকে গেলে আজ এমন জুরে কাতরাতে না।

হুঁ।

সারারাত দুজনে গল্প করতাম। আমার ঝুড়িতে অনেক গল্প।

হুঁ।

একটা লাভ হয়েছে ভুল করে শিখেছি।

সবাই ভুল থেকে শেখে না। কেউ কেউ আছে। একের পর এক ভুল করেই যায়।

এলিতা মিলিয়ে গেল। তখন চলে এলেন আমার মা। তবে তিনি এলেন। বাচ্চা একটা মেয়ে হয়ে। মেয়েটি আমার চেনা, তানিজা। মেয়েটির এক হাতে তার বাবার জুতা জোড়া তারপরেও সে আমার মাথায় পানি ঢালছে এবং চুল বিলি করে দিচ্ছে। জ্বরে অর্ধচেতন অবস্থায় সবই সম্ভব। আমার শিশু ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে আমাকে ঘুম পাড়াতে চাইছেন। তবে গানের কথা এলোমেলো। প্রতিটি লাইনের শেষে সুরেলা লম্বা টান আছে—

কে ঘুমালো রে
পাড়া জুড়ালো রে
বর্গি কোথায় রে……….

গান থামিয়ে মা বললেন, তোকে আমি একটা হলুদ। ছাতা কিনে দেব। এরপর থেকে হলুদ ছাতা মাথায় দিয়ে রোদে ঘুরবি, বৃষ্টিতে যাবি। তোর কিছু হবে না।

প্রবল জুরে কতদিন আচ্ছন্ন ছিলাম তা জানি না। কখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাও জানি না। এখন মোটামুটিভাবে হলেও বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসতে পারছি। চামুচে করে নিজে নিজে সুদৃপ খেতে পারছি। স্যুপ বিস্বাদ, এও ব্যাধির অংশ। শরীর ব্যাধি মুক্ত হলে স্যুপ তার স্বাদ ফিরে পাবে।

সকাল। আমার সামনে হাসপাতালের ব্রেকফাস্ট। ডিম সিদ্ধ, কলা, পাউরুটি জেলি।

হাসপাতালের বিছানা ঘেঁসে পেনসিল ওসি সাহেব বসে আছেন। আমি তার নাম মনে করতে পারছি না। কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে পড়বে। ব্রেইন খাতা পত্ৰ উল্টে নাম খোঁজা শুরু করেছে।

ওসি সাহেব বললেন, আপনি নাশতা খাচ্ছেন দেখে ভাল লাগছে। নিউমোনিয়ায় আপনার দুটা লাংসই আক্রান্ত হয়েছিল। একটা পর্যায়ে ডাক্তাররা পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

আমি হাসলাম। এই হাসির সঙ্গে রোগমুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। হাসার কারণ ওসি সাহেবের নাম মনে পড়েছে। তার নাম আবুল কালাম তিনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র।

ওসি সাহেব আমার দিকে সামান্য বুকে এসে বললেন, আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আপনার আমেরিকান বান্ধবী এলিতা। হাসপাতালের খরচপাতিও সে দিচ্ছে।

আমি বললাম, এলিতা কি দেখতে আলতা মেয়েটির মত?

ওসি সাহেব কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থেকে বললেন, কিভাবে বুঝলেন?

আমি বললাম, কোনো অলৌকিক উপায়ে বুঝি নি। আলতার কথা বলার সময় আপনার গলার স্বর যেভাবে কোমল হয়ে যেত এলিতার কথা বলার সময় আপনার গলা একই ভাবে কোমল হয়েছে।

ওসি সাহেব হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন। গভীর গলায় বললেন, যাই। আপনি ভালমত সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সঙ্গে কথা আছে। জরুরী কথা।

এখন বলুন।

না। এখনও বলার সময় আসে নি।

এলিতা এসেছে। তার চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। আমার রোগমুক্তি দেখে সে আনন্দিত। এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্য কোনো কারণ আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা জানা যাবে।

কারণ জানা গেল। এই ক’দিনে সে অসম্ভব ভাল কিছু ছবি তুলেছে। এর মধ্যে একটি ছবি হল, ছয় সাত বছরের একটা নগ্ন ছেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পাউরুটি খাচ্ছে। পাউরুটি যেন ভিজে না যায়। সে জন্যে একটা হাত মেলে। সে ছাতার মত পাউরুটির উপর ধরে আছে।

এলিতা বলল, তোমার অসুস্থ অবস্থায় একটা ছবি আছে। ছবিটা প্রিন্ট করে তোমাকে দেখাব। ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তোমার চোখে পানি আসবে। তানিজা মেয়েটি তার মা’কে নিয়ে তোমাকে দেখতে এসেছিল।

সে তোমাকে হলি জমজম ওয়াটার খাওয়াবে। বোতলে করে সে হলি ওয়াটার নিয়ে এসেছে। চামচে করে তোমার মুখে মেয়েটা পানি ধরেছে সেই পানি তোমার গাল বেয়ে নিচে নামছে। একই সঙ্গে মেয়েটা কাঁদছে। তোমার গালের পানি এবং মেয়েটার গালের পানি চকচক করছে। ন্যাচারাল আলোয় তোলা ছবি। অসাধারণ।

আমি বললাম, তোমার ছবির সাবজেক্ট হতে পেরেছি। এতে আমি খুশি। তুমি আমার চিকিৎসার খরচ কেন দিয়েছ ব্যাখ্যা করলে ডাবল খুশি হব।

টাকা ফেরত দেবে?

কিভাবে দেব? আমি অন্যের টাকায় প্রতিপালিত ভিক্ষুক বিশেষ।

অন্যের দয়া গ্রহণ করতে তোমার সমস্যা হয় না? সৃষ্টিকর্তার দয়া গ্রহণ করতে যদি আমার সমস্যা না হয় তাহলে অন্যের দয়া গ্ৰহণ করতে সমস্যা কেন? সব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর প্রকাশিত। কাজেই আমি শুধুমাত্র ঈশ্বরের দয়াই নিচ্ছি।

এলিতা মুখ চোখ কুঁচকে বলল, ‘Oh God!’ এই বাক্যটি বলা মনে হয় তার মুদ্রা দোষ। কারণে অকারণে বলে।

এলিতা বলল, তোমার প্রিয় রঙ কি?

নীল।

এই রঙ প্রিয় হবার পেছনে কি কোনো কারণ আছে; না এমনিতেই প্রিয়।

কারণ আছে, আমাদের দৃশ্যমান জগতের বড় অংশ আকাশ। আকাশ নীল।

এলিতা বলল, তুমি শুনলে অবাক হবে। আমি তোমার প্রিয় নীল রঙের একটা শাড়ি কিনেছি।

হঠাৎ শাড়ি কেন?

আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যেদিন তোমার রোগমুক্তি হবে। আমি নীল শাড়ি পরে উপস্থিত হব।

শাড়িতো পর নি।

শাড়ি পরতে যে এত কিছু লাগে জানতাম না। স্কার্টের মত আন্ডার গার্মেন্টস। টপস্-এর মত একটা ড্রেস, যাই হোক হোটেলের সাহায্যে দর্জি ডেকে ব্যবস্থা করেছি। শাড়ির অন্য অংশগুলি দর্জি এখনো দেয় নি।

আমি বললাম, কোনো অসুবিধা নেই। আমি কল্পনা করে নিচ্ছি। তুমি শাড়ি পরে আমার সামনে বসে আছ। আমি খুব ভাল কল্পনা করতে পারি।

Oh God.

ও গড বলে আঁৎকে উঠলে কেন?

এলিতা গভীর গলায় বলল, যে শাড়ি পরা অবস্থায় আমি বসে আছি কল্পনা করতে পারে সে নগ্ন অবস্থায় আমি বসে আছি। এই কল্পনাও করতে পারে। এ জন্যেই Oh God. বলেছি। হিমু এখন আমি উঠব। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সরি।

হঠাৎ ক্ষমা প্রার্থনা কেন?

অন্য আরেক দিন বলব। আজ না। তোমাকে রিলিজ করছে কবে?

জানি না।

সমস্যা নেই। আমি জেনে নিচ্ছি; তোমাকে রিলিজ করার দিনে আমি নীল শাড়ি পরে আসব।

আচ্ছা।

হাসপাতাল থেকে মেসে ফিরেছি। নীল শাড়ি পরে এলিতার আসার কথা ছিল সে আসে নি।

আলম সাহেব ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। আমি এসেছি জেনেও তিনি দরজা খুললেন না। আমার রোগমুক্তির জন্যে তিনি এক হাজার রাকাত নামাজ মানত করেছেন। দিনে ৭০ রাকাত থেকে ১০০ রাকাতের বেশি পড়তে পারেন না বলে মানত মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। মানত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দরজা খুলবেন না।

কাদেরের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।

আমি হাসপাতালে ভর্তির দিন থেকে না-কি সে নিখোঁজ।

দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা অনেকটা বিদেশ বাসের মত। বিদেশ ভ্ৰমণ শেষ হলে দেশে ফেরার জন্যে প্রাণ ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে।

মেসে পা দিয়েও আমার প্রাণের ঘ্যানঘ্যাননি দূর হল না। ঢাকার পথে ঘাটে ঘুরতে ইচ্ছা করল। শরীরের এই অবস্থায় হিন্টন’ প্রক্রিয়া সম্ভব না। আমি সারা দিনের জন্যে রিকশা ভাড়া করলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা নিয়ে ঘুরবে বিনিময়ে আমার সঙ্গে টাকা পয়সা যা আছে সব তাকে দিয়ে দেব। অনেকটা জুয়া খেলার মত।

রিকশাওয়ালা মধ্যবয়স্ক, নাম ইছহাক। সে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রাজি হল। মিনমিনে গলায় বলল, চা নাশতা দুপুরের খানা এইগুলা কার?

আমি বললাম সব তোমার। আমার খাওয়ার পয়সাও তুমি দেবে। রাজি আছ?

ইছহাক বলল, স্যার উঠেন।

রিকশা নিয়ে ঘণ্টাখানেক শহরে ঘুরে মাজেদা খালার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।

মাজেদা খালা বাসায় ছিলেন না। খালু সাহেব ছিলেন, তিনি আমাকে দেখেই বললেন, তোমার খালা বাসায় নেই। দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবে না।

আমি বললাম, আপনারা আছেন কেমন?

ভাল আছি। এখন বিদায় হও।

বিদায় হলাম। মাজেদা খালা এবং খালু আমার অসুখের খবর পান নি।

পরের স্টেশন বাদলদের বাড়ি। সেখানে বিরাট হৈ চৈ। মেজো খালু চার ব্যাগ বাজার নিয়ে ফিরেছেন। গাড়ি থেকে নেমেছে তিন ব্যাগ। আরেকটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খালু সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, এখন ঝামেলায় আছি, বিদায় হও তো।

আমি বললাম, দুপুরে আপনার এখানে খাব ভেবেছিলাম। সঙ্গে একজন গেস্ট আছে। আমার রিকশাওয়ালা বারান্দায় খাবার দিলেই হবে।

গোট লস্ট, গোট লস্ট।

ইছহাক আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ালো রাস্তার পাশের রেষ্টুরেন্টে। ইট বিছিয়ে খাবার দেয়া হয় বলে এইসব রেক্টরেন্টের আরেক নাম ইটালিয়ান রেস্টুরেন্ট।

আগুন গরম মোটা মোটা রুটি।

হিদুল শুটকির জিভ পুরে যাওয়ার মত ঝাল ভর্তা।

মুরগির গিলা কলিজা।

ইছহাক বলল, স্যার পেট পুরা হইছে?

আমি বললাম, আরাম করে খেয়েছি ইছহাক।

ইছহাক বলল, এখন ডাবল জর্দা দিয়ে একটা পান মুখে দিয়া একটা ছিরগেট ধরান। দেখবেন দুনিয়ার মধ্যে বেহেশত নামব। দশ পনরো মিনিট শুইয়া কি বিশ্রাম নিবেন?

বিশ্রাম নিতে পারলে ভাল হয়। রেস্টুরেন্টের সঙ্গেই নীল রঙের পলিথিনে তাবুর মত ঘর। মেঝেতে শীতল পাটি এবং বালিশ। বালিশ পরিষ্কার। আধঘণ্টার জন্যে বিশ্রামের ভাড়া দশ টাকা। ইছহাক দশ টাকা দিয়ে আমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করল।

ডবল জর্দার পান এবং সিগারেট হাতে আমি বিশ্রামে গেলাম। আধঘণ্টার জায়গায় এক ঘণ্টা কাটিয়ে ফিরলাম। ইছহাক রিকশার সীটে বসে চা খাচ্ছে। আমাকে দেখে বলল, আরাম হইছে স্যার।

আমি বললাম আরাম হয়েছে। মাঝে মাঝে এখানে বিশ্রামে আসব। ইছহাক এখন মূল কথা শোন। আমার কাছে টাকা পয়সা কিছুই নাই। চুক্তিমত তুমি আমাকে আমার মেসে নামিয়ে চলে যাবে।

ইছহাকের কোনো ভাবান্তর হল না। হাসিমুখে বলল স্যার কোনো অসুবিধা নাই। একটা ঘটনা শুনেন স্যার পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। আপনের মত চুক্তিতে এক স্যার আমার রিকশায় উঠল। সন্ধ্যাবেলা রিকশা থাইকা নাইমা বলল, এই নাও আমার কাছে এগারো হাজার টাকা আছে। নিয়ে যাও। মালিকের রিকশা আর চালাবা না। নতুন রিকশা কিনবা।

আমি নয়া রিকশা খরিদ করেছি। শাদী করেছি। ঘটনাটা কি এখন আপনার ইয়াদ হইছে?

আপনারে চিনতে আমার দেরী হয়েছে। আমার দোষ নাই। আপনার চেহারা নষ্ট। দেইখা মনে হয় ছায়ার কচু গাছ। গায়ে চাদর থাকনে হলুদ পাঞ্জাবি চোখে পড়ে নাই। স্যার ভাল আছেন?

ভাল আছি।

শহরে ঘুরতে ইচ্ছা করলেই মোবাইলে মিস কল দিবেন। চইলা আসব। নিয়া মোবাইল খরিদ করেছি।

ইছহাক আমার মোবাইল নাই।

আচ্ছা যান। ডিউটিতে বাহির হইয়া প্রথম আপনের খোঁজ নিব।

কোন প্রয়োজন নাই ইছহাক। মাঝে মাঝে দেখা হওয়াই ভাল।

ইছহাক বলল, আপনের শরীর বেশি খারাপ করেছে। শরীরের যত্ন নিবেন। গরীরের এই অনুরোধ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *