হাঁদারাম
এক জেলে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। দূরে নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারে না। তাই পরিবারের খাওয়াদাওয়ার কষ্ট হচ্ছিল। একদিন বড় ছেলেকে ডেকে নদীতে যেতে বলল। বাবার কথা মত বড় ছেলে জাল কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। তার মা সঙ্গে ঝোলায় গুড় ও কিছু রুটি দিয়ে বলল ‘বাবা সময় করে খেয়ে নিস।’
নদীর ধারে এক গাছ তলায় ঝিমচ্ছিল এক বুড়ো । সে ছেলেটিকে দেখে বলল, খুব খিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দেবে আমায়? ছেলেটি বলল, এতে যা আছে তাতে আমারই পেট ভরবে না। আমি না খেয়ে তোমাকে কি দেব? এই বলে সে চলে গেল নদীতে। নৌকায় চরে নদীতে জাল ফেলে বসে আছে। বেলা বাড়তেই জালে টান পড়ল। সে জাল টেনে নৌকায় তুলে দেখল, জালটা ছেড়া, একটাও মাছ তাতে উঠল না। বিষন্ন মনে সে বাড়ি ফিরে এল। পরের দিন ভোরে দ্বিতীয় ছেলেকে মা ঝোলনায় গুড় আর রুটি সঙ্গে দিল। ছেলে কাঁধে জাল নিয়ে বেড়িয়ে গেল। সে’ও ওই বুড়োর কথায় কোন রকম কান দিল না। বলল, আমার বয়ে গেছে তোমাকে দিতে। সে নদীর দিকে এগিয়ে গেল আর নৌকায় চেপে জাল নদীতে ফেলতেই কোথায় যেন জাল তলিয়ে গেল। সেও বিষন্ন মনে জাল ছাড়াই বাড়ি ফিরে এল। দুই নিষ্কর্মা ছেলের কান্ড দেখে মা বাবা চিন্তিত। কি হবে এদের আগামী দিন। এবার ছোট ছেলে পরের দিন ভোরে উঠে জাল কাঁধে নিতেই মা তার সাথে শুধু শুকনো বাসি রুটি ঝোলনায় ভরে দিল।ছোট ছেলেটি একটু বোকা বোকা। ওকে সবাই হাঁদারাম বলেই জানে। ওই বুড়ো তার কাছেও খেতে চাইল।ছেলেটির দয়া হল। তারা দুজনে একসঙ্গে বসে খাবার ভাগ করে খেল। বুড়ো খুশি হয়ে বলল তুমি বাড়ি ফেরার পথে হাঁসটি নিয়ে যেও।তোমাদের মঙ্গল হবে। সে সেই হাঁস নিয়ে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে এল। হাঁসটিকে নিয়ে বাড়ি ঢুকেই সে কাঁধ থেকে হাঁসটিকে নামাতে চায়। কিছুতেই সে নামাতে পারে না। ছেলেটি চিৎকার করে গান ধরে, ‘বাঁচাও কে আছ ফেঁসেছি যে হাঁস ঘরে এনে।
কেউ রাগ কোরো না আমায় ভুল বুঝ না মেরো না হাঁস মেরো না শুধু নামিয়ে দাও না। জেনে শুনে এমন বিপদ ঘরে কে আর আনে। কাছে এসে তাকে কেউ আদর কর না কাঁধ থেকে তাকে কেউ নামিয়ে দাও না। কে আছ ভালবেসে আমায় বাঁচাতে পার না। ভুল বুঝনা আমায় হাঁস মেরো না।’
ছেলের গান শুনে মা হাঁসের গায়ে হাত বোলাতেই দুই হাত হাঁসের গায়ে আঁটকে যায়।এরপর বাবা আসে ছাড়াতে সেও মায়ের সাথে যায় আঁটকে।একইভাবে বড় ছেলে বাবার সাথে দ্বিতীয় ছেলে দাদার সাথে আটকে হৈচৈ পড়ে যায়। হৈচৈ শুনে পাড়ার সবাই ছুটে আসে আর যেই ছাড়াতে যায় সেই আঁটকে যায় অন্যের সাথে। এভাবেই বিরাট লাইন হয় জমিদার বাড়ির সদর পর্যন্ত।ঠিক সেই সময় জমিদার তার বউ ও মেয়েকে নিয়ে বাগানে ঘুরছিলেন।
প্রত্যেকের মুখে একই গান শুনে তারা বাইরে আসে আর খুবই হাসতে থাকে। জমিদার সেদিন প্রথম তার মেয়েকে হাসতে দেখে জেলের বাড়ি ছুটে যায় আর হাঁসটিকে খুব আদর করে। হাঁসটি লাফিয়ে জমিদারের কোলে বসতেই সকলে সকলের থেকে আলাদা হয়ে যায় গান থেমে যায়। ছেলেটি জমিদারকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই তার হাতদুটি ধরে বলে আমি আজ খুবই খুশি। তুমি এই হাঁসটিকে এনেছ বলে। তাই তো আমার মেয়েকে খুশিতে হাসতে দেখলাম প্রথম। আজ থেকে তাই আমার জমিদারির অর্ধেক ও আমার মেয়েকে তোমায় দিলাম। সেই থেকে তাদের দুঃখ মুছে গেল।