Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 7

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

নগেন্দ্রনাথ বিস্মিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনাকে এ কথা কে বলিল?”

“গাড়োয়ান—সেই গাড়োয়ান। আমি তাহাকে সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছি।”

“সে কি বলিল?”

“দুখানা গাড়ী চলিয়া গেলে সে একলাই কোন ভাড়া পাইবার প্রত্যাশায় দাঁড়াইয়াছিল। কিছুক্ষণ পরে একটি স্ত্রীলোক ও একটি পুরুষ সেইখানে আসিয়া তাহার গাড়ী হাবড়া ষ্টেশনে যাইবার জন্য ভাড়া করে। সে তাহাদের হাবড়া ষ্টেশনে নামাইয়া দিয়া ফিরিয়া আসে।”

“তাহারা রাণীর গলি হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল?’

“হাঁ, অত রাত্রে কে আর আসিবে? লোকটা আন্দাজ সাড়ে বারটার সময়ে খুন হয়, এরা তার পাঁচ মিনিট পরেই আসিয়াছিল।”

“কিন্তু গাড়োয়ান ঘুস খাইয়া মিথ্যাকথাও বলিতে পারে?”

“তাহারা অনর্থক তাহাকে ঘুস দিয়া সন্দেহে পড়িবে কেন? গলির ভিতরে কি হইয়াছে, গাড়োয়ান কিছুই জানিত না, সুতরাং কোন কথাই গাড়োয়ানকে তাহাদের বলিবার আবশ্যক হয় নাই।”

“গাড়োয়ান তাহাদের চেহারা দেখিয়াছিল?”

“ভাল করিয়া দেখে নাই।”

“তাহাদের ভাবভঙ্গিতে তাহারা যে খুব ব্যস্ত সমস্ত বা বিচলিতভাবে ছিল তাহা কি সে লক্ষ্য করিয়াছিল?”

“তাহাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। সে বলে স্ত্রীলোকটি অপেক্ষা পুরুষটিই যেন বেশি বিচলিতভাবে ছিল।”

“তাহা হইলে হয়ত সেই পুরুষই খুন করিয়াছে।”

“কে ছোরা চালাইয়াছিল, তাহা এখন জানিবার উপায় নাই, এখন বসু কোম্পানী কি বলে?”

“তারা বলে যে, এ জামা তাহারা বড়বাজারের হুজুরীমলের জন্য প্রস্তুত করিয়াছিল। হুজুরীমলের বড়- বাজারে মস্ত গদি আছে?”

“হুজুরীমল—তিনি খুব বড়লোক, ভারী দান ধ্যান আছে, তাঁহাকে সকলেই চিনে। তিনি খুব সদাশয় লোক বলিয়াই সকলের কাছে পরিচিত।”

“কিন্তু তিনি যদি এতই পুণ্যাত্মা লোক হন, তবে তিনি দ্বরওয়ান সেজে দুই প্রহর রাত্রে এই জঘন্য রাণীর গলিতে আসিবেন কেন?”

“পুণ্যাত্মা লোকের অপঘাত মৃত্যু—এখন বসু কোম্পানী কি বলে তাহাই শোনা যাক্।” নগেন্দ্রনাথ যাহা জানিতে পারিয়াছিলেন, সমস্তই বলিলেন, শুনিয়া অক্ষয়কুমার বলিলেন, “চলুন, একবার তাঁহার গদিতে যাইয়া সন্ধান লওয়া যাক।”

উভয়ে এই খুনের বিষয় নানা আলোচনা করিতে করিতে হুজুরীমলের গদির দ্বারে আসিলেন। হুজুরীমল বড়বাজারের মধ্যে একজন জানিত লোক।”হুজুরীমল গণেশমল” নামীয় গদি সকলেই চিনিত। ইঁহারা দুইজনে একত্রে কারবার করিতেন। উভয়েই বড়লোক বলিয়া বিখ্যাত।

অক্ষয়কুমার ও নগেন্দ্রনাথ একটু বিস্মিত হইয়া দেখিলেন, গদিতে কাজ-কারবার সমভাবে চলিতেছে। একজন অংশীদার, বিশেষতঃ বড় অংশীদারের মৃত্যু হইলে গদির এরূপ ভাব থাকে না। অক্ষয়কুমার বলিলেন, “বোধহয়, ইহারা এখনও হুজুরীমলের কথা শুনিতে পায় নাই অথবা সে লোক মোটেই হুজুরীমল নহে।”

উভয়ে গদিতে প্রবিষ্ট হইলেন। সকলেই তাঁহাদিগের দিকে চাহিতে লাগিল। একজন জিজ্ঞাসা করিল, “আপনারা কি চান?”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “আমরা হুজুরীমলবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

একটি হিন্দুস্থানী যুবক একখানি তক্তপোষের উপর বাক্স পরিবেষ্টিত হইয়া বসিয়াছিলেন। তিনি বলিলেন, “বোধহয়, আপনারা বাবাজী সাহেবের সঙ্গে দেখা করিতে চান। কিন্তু তিনি ত এখানে নাই। তিনি এক সপ্তাহ হইল কাশী গিয়াছেন। হুজুরীমল সাহেবও এখানে নাই, তিনি কাল রাত্রে কাজের জন্য আগ্রায় গিয়াছেন। সেখানেও আমাদের গদি আছে। আমিই এখানকার কাজ-কৰ্ম্ম দেখিতেছি, আপনাদের যাহা বলিবার আছে, আমাকে বলিতে পারেন।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “আপনি নিশ্চিত বলিতে পারেন যে হুজুরীমলবাবু আগ্রায় গিয়াছেন?”

“আমি নিশ্চিত জানি।”

“বোধ হয় না।”

“কেন? আপনি কি জানেন?”

“তিনি কাল রাত্রে খুন হইয়াছেন।”

“খুন হইয়াছেন। আপনি কে।”

“আমি ডিটেক্‌টিভ ইন্‌সপেক্টর অক্ষয়।”

যুবকের মুখ শুকাইয়া গেল। যুবক কম্পিতস্বরে কহিলেন, “ডিটেক্‌টিভ—ডিটেক্‌টিভ—এখানে কেন?”

এই সময়ে চারিদিক হইতে অনেক লোক আসিয়া সেখানে সমবেত হইল। সকলেই উদ্‌গ্রীব হইয়া ব্যাপার কি হইয়াছে, শুনিবার জন্য ব্যগ্র হইল। লোকের ভিড় দেখিয়া অক্ষয়কুমার যুবককে বলিলেন, “আপনার সঙ্গে কথা আছে,—আপনি অন্য ঘরে চলুন।”

কম্পিতদেহে বিশুষ্কমুখে যুবক উঠিলেন, অক্ষয়কুমার ও নগেন্দ্রনাথকে পার্শ্বের এক গৃহে লইয়া গেলেন। অন্যান্য সকলকে তথায় আসিতে নিষেধ করিলেন।

অক্ষয়কুমার তাঁহার মুখের দিকে কিয়ৎক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। তৎপরে বলিলেন, “আপনার নাম কি?”

যুবক শুষ্ককণ্ঠে কম্পিতস্বরে বলিলেন, “আমার—আমার—আমার নাম ললিতাপ্রসাদ।”

ললিতাপ্রসাদ প্রথমে হুজুরীমলের হত্যা সংবাদ পাইয়া যেরূপ বিচলিত হইয়া উঠিয়াছিলেন, এখন আর তাঁহার সে ভাব নাই। আত্মসংযম করিয়াছেন। বলিলেন, “কে তাঁহাকে খুন করিল? সে কি ধরা পড়িয়াছে?”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “না তবে একজন স্ত্রীলোক তাঁহাকে খুন করিয়াছে।”

ললিতাপ্রসাদ চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিলেন “স্ত্রীলোক—কোন্ স্ত্রীলোক। অসম্ভব,—আমি মনে-“

তিনি কি বলিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু আত্মসংযম করিলেন। বলিলেন, “সেই স্ত্রীলোক ধরা পড়িয়াছে কি?”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “না—তাহাকেও কে খুন করিয়াছে।”

“সেও খুন হইয়াছে! সে কে?”

“তাহা এখনও সনাক্ত হয় নাই। তবে একজন পুরুষ খুন করিয়াছে।”

‘সে ধরা পড়িয়াছে?”

“না, সেজন্যই আপনার নিকট আসিয়াছি।“

“আমার নিকট—আমি কি জানি—আমি এর কিছুই জানি না।”

“কিছু কিছু জানিতে পারেন, হুজুরীমলবাবুর বিষয় আপনি যাহা জানেন, আমাদিগকে বলিলে বোধহয়, আমরা তাঁহার হত্যাকারীকে ধরিতে পারিব।”

“আমি তাহার কি জানি, কিছুই জানি না—তিনি খুব ভাল লোক ছিলেন, কেবল ইহাই জানি।”

“বোধহয়, আপনি জানেন যে, এইসকল ব্যাপার যখনই ঘটে, তখনই ইহার ভিতরে কোন না কোন স্ত্রীলোক থাকেই থাকে।”

“ইহার ভিতরে কোন্ স্ত্রীলোক আছে?”

“তাহারই সন্ধান আমরা করিতেছি।”

“সে কে?”

“এই যে আপনি কাহার কথা বলিতে গিয়া থামিয়া গেলেন।”

“কই—কই–না আমি আবার কি বলিতে যাইব?”

“বেশ—হুজুরীমলের স্ত্রী আছেন?”

“হাঁ, তাঁহার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় তিনি তিন-চার বৎসর হইল পঞ্জাবে গিয়া আবার বিবাহ করিয়া আসিয়াছেন।”

পঞ্জাবের নাম শুনিয়া অক্ষয়কুমার নগেন্দ্রনাথ উভয়ই উভয়ের দিকে চাহিলেন।

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “তাঁহার পুত্র কন্যা আছে?”

“না তাঁহার শ্যালীর এক মেয়ে আছেন। তাহাকেই তিনি কন্যারূপে লইয়াছেন।”

“তাঁহার স্ত্রীর বয়স কত?”

“বেশী নহে—ত্রিশ-বত্রিশ হইবে।”

“আর যাহাকে তিনি কন্যারূপে লইয়াছিলেন?”

“পনের বৎসর হইবে।”

“বিবাহ হইয়াছে?”

“না।”

“কেন?”

ললিতাপ্রসাদ এই প্রশ্নে যেন নিতান্ত বিচলিত হইলেন, বলিলেন, “মহাশয় তাহা আমি কিরূপে জানিব? তাঁহার নিজ কারপরদার উমিচাঁদ এই আসিয়াছে। ইহাকে জিজ্ঞাসা করিলে আপনারা হুজুরীমলবাবুর সব কথাই জানিতে পারিবেন।

এই বলিয়া তিনি উঠিয়া যাইতেছিলেন। কিন্তু অক্ষয়কুমার বলিলেন, “যাইবেন না, আপনাকে আমাদের প্রয়োজন আছে।”

তিনি ভীতভাবে বলিলেন “আমাকে।”

“হাঁ আপনাকে। আপনাকে আমাদের সঙ্গে যাইতে হইবে। যিনি খুন হইয়াছেন, তাঁহাকে সনাক্ত করা চাই।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *