Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 6

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

নগেন্দ্রনাথ এতদিন মনের সুখে কেবল কল্পনারাজ্যে বিচরণ করিতেছিলেন। কল্পনায় উপন্যাস রচিতেছিলেন, কখনও প্রকৃত ঘটনাচক্রে পড়েন নাই। এখন এই খুন রহস্য উদ্ভেদ করিবার জন্য তিনি অতিশয় উৎসাহের সহিত নিযুক্ত হইলেন।

তিনি আহারাদি করিয়াই তাঁহার বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ করিতে চলিলেন। তিনি জানিতেন, তাঁহার বন্ধু এ- সকল বিষয়ে বিশেষ আলোচনা ও চর্চ্চা করিয়াছেন। হিন্দুশাস্ত্র ও হিন্দুর দেবদেবী এবং ভিন্ন ভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায় সম্বন্ধে তাঁহার প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা।

তিনি বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া সিন্দুররঞ্জিত শিবলিঙ্গ তাঁহার হাতে দিয়া বলিলেন, “দেখ দেখি একবার, এটার কোন অর্থ করিতে পার কি না?”

তিনি শিবটি বহুক্ষণ নাড়া-চাড়া করিয়া চিন্তিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহা তুমি পাইলে কিরূপে?”

“সে পরে বলিব। এখন এটা দেখিয়া কিছু বুঝিতে পার?”

“তুমি এটা কিরূপে পাইলে আমি জানি না। তবে এইরূপ সিন্দূরমাখা শিবলিঙ্গের বিষয় আমি এক স্থলে পাঠ করিয়াছি।”

“কি তাহাতে আছে?”

“পাঞ্জাবে একটি ধৰ্ম্ম সম্প্রদায় আছে, ইহারা যদিও শৈব, কিন্তু ইহাদের কার্য্যকলাপ প্রায় শাক্তদিগের মত। ইহাদের সাধন প্রণালী গুপ্ত বিষয়; সম্প্রদায় লোক ভিন্ন ইহাদের বিষয় অপরে কেহই কিছু জানিতে পারে না। ইহাদের সম্প্রদায়ভুক্ত হইলে সেই লোকের নিকটে এইরূপ এক- একটি সিন্দূররঞ্জিত শিবলিঙ্গ থাকে। যাহাদের নিকটে এইরূপ একটি থাকে, তাহাকেই বুঝিতে হইবে যে, সে এই সম্প্রদায়ভুক্ত লোক।”

“ইহাদের বিষয় কি জান?”

“আর বিশেষ কিছু জানি না, ইহাদের শাক্ত কাপালিকের মত কার্য্যকলাপ, আরও পড়িয়াছি যে, ইহাদের মধ্যে কেহ কোন দোষ করিলে ইহারা নাকি প্রাণদণ্ড করে, তখন সেইসকল মৃতদেহের নিকটে সর্ব্বদাই এইরূপে একটি শিবলিঙ্গ থাকে। তাহাতেই জানা যায় যে, সেই লোকটি এই সম্প্রদায়ের কোপে পড়িয়া নিহত হইয়াছে।

“কতকটা এখন বুঝিলাম।”

“কি বুঝিলে? এটা তুমি কোথায় পাইয়াছ?’

“কাল রাত্রে একটি স্ত্রীলোক ও একটি পুরুষ খুন হইয়াছে, তাহাদের দুইজনের নিকটেই এইরূপ শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়াছে।”

“বটে? তবে এরূপ সম্প্রদায় আছে, আমার পূর্ব্ব বিশ্বাস হয় নাই; কেবল ইহাদের বিষয় পড়িয়াছিলাম মাত্র, কখনও এ সম্প্রদায়ের লোক দেখি নাই। খুন কে করিয়াছে, কেহ জানিতে পারিয়াছে?”

“না, সন্ধান হইতেছে?”

তোমার কাছে এ শিবলিঙ্গ আসিল কিরূপে?”

“জানই ত আমি ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখিতেছি; এই বিষয়ে আমার বিশেষ উৎসাহ। আমি চেষ্টা করিয়া এ খুনের তদন্ত করিবার জন্য পুলিসের সঙ্গে মিশিয়া পড়িয়াছি।”

“তোমাকে কোনদিন বিপদে পড়িতে হইবে দেখিতেছি।”

নগেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিলেন, “ভয় নাই, সাবধান আছি। এখন চলিলাম, তোমার সময় নষ্ট করিব না।”

তিনি তথা হইতে বহির্গত হইয়া বসু কোম্পানীর দোকানে আসিলেন। দোকানের স্বত্বাধিকারী উপস্থিত ছিলেন। অক্ষয়কুমার তাঁহাকে—যে জামাটি লাসের গায়ে পাইয়াছিলেন—সেই জামাটি দেখাইয়া বলিলেন, “আপনাদের দোকানের নাম এই জামায় লেখা আছে, এ জামাটি কাহার জন্য তৈয়ারী করিয়াছিলেন, বলিতে পারেন?”

স্বত্বাধিকারী কিয়ৎক্ষণ জামাটি দেখিয়া বলিলেন, “এ কথা আপনি কেন জিজ্ঞাসা করিতেছেন?”

“আপনি বলিলে বোধ হয় একজন খুনী ধৃত হইতে পারে।”

‘খুনী’ বলিয়া বিস্মিতভাবে স্বত্বাধিকারী তাঁহার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “আপনি কি পুলিসের লোক?”

“কতকটা বটে।”

“আপনি এ জামাটা কোথায় পাইলেন?”

“যাহার গায়ে এ জামাটি ছিল, সে লোক কাল রাত্রে খুন হইয়াছে।”

“খুন হইয়াছে!”

“হাঁ, আপনি এ জামা কাহার জন্য প্রস্তুত করিয়াছিলেন?”

“এ কাপড়ের জামা আমাদের একজন মাত্র খরিদ্দারই ব্যবহার করিতেন, সেজন্য চিনিতে পারিতেছি তবে তিনি নিশ্চয়ই কোন চাকরকে এটা বখ্শিস করিয়াছিলেন; তিনি বড় লোক, তাঁহাকে খুন করিবে কে?”

“তিনি কে?”

“তিনি বড়বাজারের হুজুরীমলবাবু; বড়বাজারে মস্ত গদি আছে। তবে আমরা জানি, তিনি স্ত্রী পরিবার লইয়া এখন চন্দননগরে আছেন। মধ্যে মধ্যে গদিতে আসেন।”

“এতেই আমার কাজ হইবে।”

এই বলিয়া নগেন্দ্ৰনাথ গৃহাভিমুখে ফিরিলেন, তিনি দ্বারের নিকটে আসিলে দেখিলেন, অক্ষয়কুমার সেইদিকে আসিতেছেন। তিনি তাঁহার প্রতীক্ষায় দাঁড়াইলেন।

অক্ষয়কুমার তাঁহার নিকটস্থ হইবার পূর্ব্বেই নগেন্দ্রনাথকে দেখিয়া সহাস্যে বলিয়া উঠিলেন, “নগেন্দ্রনাথ বাবু, খুনী একজন নহে—দুইজন।”

নগেন্দ্রনাথ বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “দুইজন।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “হাঁ, একজন স্ত্রীলোক—আর একজন পুরুষ।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *