Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 49

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

যে কারণেই হউক, নগেন্দ্রনাথ এক্ষণে হুজুরীমলের পরিবারের একরূপ অভিভাবকরূপে পরিণত হইয়াছিলেন। তিনি এক্ষণে প্রায়ই তাঁহাদের দেখিতে যাইতেন, তিনি কোনদিন না গেলে তাঁহারা তাঁহাকে ডাকাইয়া পাঠাইতেন।

প্রকৃতপক্ষেই তাঁহাদের দেখিবার কেহ ছিল না। হুজুরীমলের স্ত্রী স্বামীর দুর্ব্যবহারের কথা শুনিয়া একেবারে মুহ্যমান হইয়া পড়িয়াছিলেন। এইসকল ঘটনায় তিনি পীড়িত হইয়া পড়িলেন।

যমুনা একাকিনী বড়ই বিপদে পড়িল। বিশেষতঃ তাহারা পঞ্জাববাসী হওয়ায় এখানে তাহাদের আত্মীয়-স্বজন কেহ ছিল না। এখন নগেন্দ্রনাথই তাঁহাদের একমাত্র সহায়।

নগেন্দ্রনাথই প্ৰাণপণে চেষ্টা করিয়া হুজুরীমলের সম্পত্তি হইতে কিছু তাহাদের জন্য রক্ষা করিতে বিশেষ চেষ্টা পাইয়াছিলেন, সফলও হইলেন। দেনার জন্য হুজুরীমলের সমস্ত সম্পত্তি বিক্ৰয় হইয়া গেল; কিন্তু নগেন্দ্রনাথের চেষ্টায় যাহা বাঁচিল, তাহাতে হুজুরীমলের স্ত্রীর ও যমুনার সুখে স্বচ্ছন্দে চলিয়া যাইতে পারিবে।

নগেন্দ্রনাথ যমুনার কোন ভাল পাত্রের সহিত বিবাহ দিবারও চেষ্টা করিতেছিলেন; গোলযোগ একরূপ মিটিয়া গেলে তাহার বিবাহ দিবেন, এইরূপ স্থির হইয়াছিল।

যমুনাদাস ধরা পড়িবার পূর্ব্বেই গঙ্গা হুজুরীমলের বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছিল। কোথায় গিয়াছিল, কিছুই বলিয়া যায় নাই। তবে নগেন্দ্রনাথ জানিতে পারিয়াছিলেন, সে ললিতাপ্রসাদের আশ্রয়েই আছে। যমুনাদাসকে হারাইয়া এক্ষণে ললিতাপ্রসাদের স্কন্ধে ভর করিয়াছিল।

যমুনাদাস সেসনে প্রেরিত হইবার কয় দিবস পরে নগেন্দ্রনাথ একদিন নিজ ঘরে বসিয়া লিখিতেছেন, এমন সময়ে তথায় অক্ষয়কুমার সহাস্যে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি বহুদিন আর এদিকে আসেন নাই। তিনি হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “গ্রন্থকার মহাশয়, আর গোয়েন্দাগিরি করিবার সখ আছে?”

নগেন্দ্রনাথও হাসিয়া বলিলেন, “আবার খুন নাকি?”

“সখ আছে কি না, তাই আগে বলুন।”

“না, মাপ করুন—একটাতেই যথেষ্ট সখ মিটিয়া গিয়াছে।”

‘একটাতেই? আর প্রত্যহ আমাদের এই কাজ করিতে হইতেছে।”

“যাহার যে কাজ, তাহার তাহাই ভাল লাগে।”

“রাণীর গলির খুনটা লইয়া একখানা উপন্যাস লিখুন—আপনার অনুগ্রহে এ অভাগার নামটাও সেই সঙ্গে অমর হইয়া যাক্।”

“উপন্যাস অপেক্ষাও ব্যাপারটা রহস্যময়। তবে—”

“তবে কি নায়িকার অভাব নাকি? সে অভাব নাই।”

“গঙ্গার মত নায়িকা আর যমুনাদাসের ন্যায় নায়ককে উপন্যাস কি ভাল দাঁড়াইবে? চরিত্রে সৌন্দৰ্য্য চাই।”

“আপনার উপন্যাসে উহারা নায়ক-নায়িকা হইলে চলিবে কেন?”

“কেন—আর কে হইবে?”

“বটে? নায়িকা যমুনা, আর নায়ক? মহাশয় স্বয়ং।“

নগেন্দ্রনাথের মুখ রক্তাভ হইয়া উঠিল। তিনি হাসিয়া বলিলেন, “আপনার ত সব সময়েই উপহাস। যমুনার বিবাহ হইতেছে।”

“কাহার সঙ্গে?”

“আমি একটি ভাল পাত্র স্থির করিয়াছি।”

“ইহারই নাম কি আপনাদের উপন্যাসের নিঃস্বার্থ প্রেম।”

“আপনার ঠাট্টার জ্বালায় আমি অস্থির।”

“তবে আর কিছু বলিব না। এ গরীবকে অমর করিতেছেন কি না, এখন তাহাই বলুন।”

“এই রাণীর গলির খুনের একখানা ডিটেটিভ উপন্যাস লিখে।”

“যথার্থই আমি এ বিষয়টা লিখিতেছি। এটা সত্য ঘটনা হইলেও উপন্যাস অপেক্ষা বিস্ময়কর।”

“সব ত এখনও শুনেন নাই।”

“আর কি আছে?”

“তাহাই বলিতে আসিয়াছি। হুজুরীমলদের গদিতে আর একটা চুরি হইয়াছে।”

“আবার চুরি! কে চুরি করিল?”

“তাহাই বাহির করিবার জন্য গোয়েন্দার প্রয়োজন। সখ থাকে ত আর একবার উঠে-পড়ে লাগুন।”

“কে চুরি করিল? কত টাকা চুরি গিয়াছে?”

“সেই দশ হাজার টাকা।”

“কিছু সন্ধান পাইলেন?”

“এবার আর আগেকার মত কষ্ট পাইতে হয় নাই।”

“তবে চোর ধরা পড়িয়াছে?”

“না, সরিয়া পড়িয়াছে।”

“কে সে? উমিচাঁদ নয় ত?”

“না, স্বয়ং ললিতাপ্রসাদ।”

“ললিতাপ্রসাদ—আশ্চর্য্য! নিজের টাকা নিজে চুরি?”

“এইরকম প্রায় হয়। আর একজন এতদিনে সত্য সত্যই সরিয়াছে।”

“সে আবার কে?

“আপনার গঙ্গা।”

অতিশয় বিস্মিত হইয়া নগেন্দ্ৰনাথ বলিলেন, “আমার গঙ্গা!“

অক্ষয়কুমার হাসিয়া বলিলেন, “এই আপনার উপন্যাসের।”

“আমাকে সকল খুলিয়া বলুন।”

“গুণবান্ ললিতাপ্রসাদের স্কন্ধে গঙ্গাদেবী বহুকাল হইতে অধিষ্ঠান করিতেছিল, বিশেষতঃ যমুনাদাস প্রবাসে গেলে পুরামাত্রায় তাহাকেই ভর করিয়াছিল।”

“তাহা ত আগেই শুনিয়াছিলাম।”

“হাঁ, আর এদেশে থাকা চলে না—ক্রমেই দেশটা অত্যধিক উষ্ণ হইয়া উঠিতেছিল, তাহাই ললিতাপ্রসাদ বাপের সিন্দুকে যাহা কিছু ছিল, লইয়া গত রাত্রে লম্বা দিয়াছে।”

“গঙ্গাও তাহা হইলে তাহার সঙ্গে গিয়াছে?”

“হাঁ, এবার সত্য সত্যই একজনের সঙ্গে গিয়াছে—ভগবান্ আমাদের মত গরীবদের ত্রাণ করিয়াছেন।”

নগেন্দ্ৰনাথ হাসিয়া বলিলেন, “কেন?”

অক্ষয়কুমার গম্ভীরভাবে বলিলেন, “কেন? এ সহরে থাকিলে লক্ষ্মী আরও কত লীলা-খেলা করিতেন, আর আমাদের প্রাণান্ত হইত।”

“ললিতাপ্রসাদের বাপ কি করিতেছেন?”

“প্রথমে পুলিসে খবর দিয়াছিলেন, কিন্তু যখন তিনি শুনিলেন যে এ তাহার গুণবান্ পুত্রেরই কার্য্য, তখন মোকদ্দমা তুলিয়া লইয়াছেন, নতুবা আমাদেরই দেশ-বিদেশে ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে হইত।”

“কোথায় গিয়াছে, কোন সন্ধান পাইলেন?”

“হুজুরীমলেরই পথানুসরণ করিয়াছেন; আমরা অনুসন্ধান করিয়া জানিয়াছি, তাহারা বোম্বের দুইখানা টিকিট কিনিয়াছে, বোম্বেবাসীদিগের উপরে মায়া হইতেছে।”

“কেন?”

“গঙ্গার মত রত্ন সাম্‌লান সাধারণ ব্যাপার নহে—পুলিস ত্রাহি ত্রাহি ডাক্‌ ছাড়িবে।” নগেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিলেন, “অন্ততঃ আপনার ত্রাহি ত্রাহি ডাক্ ছাড়াইয়াছিল।” অক্ষয়কুমার বলিলেন, “স্বীকার করি—দু’ হাজারবার।”

“উপন্যাসখানা লেখা হইলে সংবাদ চাই।” বলিয়া অক্ষয়কুমার হাসিতে হাসিতে উঠিয়া নগেন্দ্রনাথের করমর্দন করিয়া চলিয়া গেলেন।

নগেন্দ্রনাথ সংসারে নর-নারী কতদূর রাক্ষসভাবাপন্ন হইতে পারে, ভাবিয়া প্রাণে আঘাত পাইলেন। স্ত্রীলোকমাত্রকেই তিনি দেবী ভাবিতেন; সেই স্ত্রীলোকের মধ্যে গঙ্গার ন্যায় স্ত্রীলোক আছে দেখিয়া তাঁহার প্রাণে নিদারুণ কষ্ট হইল। তাঁহার মন সেদিন নিতান্ত বিমর্ষ হইয়া রহিল।

তিন-চারিদিন পরে একদিন অক্ষয়কুমার আবার আসিলেন, হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “উপন্যাসের উপসংহার হয় নাই ত?”

নগেন্দ্রনাথ মৃদুহাস্য করিয়া বলিলেন, “কেবল আরম্ভ করিয়াছি।”

“ভালই হয়েছে।”

“কেন?”

“লেখা শেষ হইয়া গেলে, উপসংহারটা কাটাকুটী হইত।”

“কেন, আবার কি হইয়াছে?”

“যমুনাদাস ফাঁসী-কাঠ লইল না।

নগেন্দ্রনাথ বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “কেন?”

“এরূপ মহাপাপীকে ফাঁসী-কাঠ লইতেও নারাজ হইল।”

‘কেন, কি হইয়াছে?”

“কাল রাত্রে কলেরায় তাহার মৃত্যু হইয়াছে।”

“ভগবান্ তাহাকে নিজের দরবারে সাজা দিতে লইয়া গিয়াছেন।”

“এরূপ লোকের সেখানেও বোধহয়, উপযুক্ত দণ্ড নাই।”

রাণীর গলির খুন অবলম্বন করিয়া শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথবাবু একখানি উপন্যাস প্রকাশ করিলেন। দুইদিনের মধ্যে প্রথম সংস্করণ দুই হাজার পুস্তক নগেন্দ্রনাথের হাত হইতে ফুরাইয়া গেল। সহরের প্রধান প্রধান পুস্তক বিক্রেতাগণ যতদিন পুস্তক ছাপা চলিতেছিল, ততদিন গ্রাহকদিগের তাগীদে অস্থির হইয়া উঠিয়াছিলেন। এক্ষণে পুস্তক প্রকাশ হইবামাত্র তাঁহারা যাঁহার যত সংখ্যক আবশ্যক, লইয়া গেলেন। দুই-তিন মাসের মধ্যে সকলেরই সকল পুস্তক বিক্রয় হইয়া গেল। তখন নগেন্দ্ৰনাথবাবু অত্যন্ত উৎসাহের সহিত দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপাইতে আরম্ভ করিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49
Pages ( 49 of 49 ): « পূর্ববর্তী1 ... 4748 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress