Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 42

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

উমিচাদের গলা শুকাইয়া গিয়াছিল—তাহার মুখ হইতে কোন কথা বাহির হইল না। সেই ব্যক্তি চুরুটটী ধরাইয়া গম্ভীরভাবে টানিতে টানিতে দিয়াশলাইয়ের বাক্সটা উমিচাঁদকে ফেরৎ দিল।

সে যেন চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল। তৎপরে উমিচাঁদের দিকে চাহিয়া মৃদুস্বরে বলিল, “আমার পত্র পাইয়াছিলেন?” বলিয়া চারিদিকে একবার সতর্ক দৃষ্টিতে চাহিল।

উমিচাঁদও সেইরূপ মৃদুস্বরে বলিল, “হাঁ, সেইজন্য আসিয়াছি। আপনি আমার সঙ্গে দেখা করিতে চাহেন কেন?”

লোকটী বলিল, “বলিতেছি, আসুন, ঐ বেঞ্চিতে বসা যাক্।”

এই বলিয়া সে বেঞ্চিতে গিয়া বসিল। পরে উমিচাদকে বলিল, “বসুন।

এবার অক্ষয়কুমার প্রভৃতি ঝোপের মধ্য হইতে লোকটীর মুখ সুস্পষ্ট দেখিতে পাইলেন। কিন্তু তাহাকে যে তাঁহারা কখনও দেখিয়াছেন, তাহা বলিয়া বোধ হইল না। তবে যে কালো দাড়ির কথা গাড়োয়ান বলিয়াছিল, উমিচাঁদও দেখিয়াছিল, তাঁহারা দেখিলেন, এই লোকটার সেই রকমই লম্বা কালো দাড়ি আছে।

যাহা হউক, লোকটী বসিতে বলিলে উমিচাঁদ স্পষ্টতই নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বে বসিল। তিনি লোকটীর নিকট হইতে একটু দূরে বসিলেন। একবার সভয়ে চারিদিকে চাহিল; তাহার সে সময়ের মনের অবস্থা বর্ণনা করা নিষ্প্রয়োজন। রঙ্গিয়ার খুনের রাত্রের সেই উদ্যত ছোরার কথা ঘন ঘন তাহার মনে পড়িতে লাগিল।

উমিচাঁদ অতি মৃদুস্বরে বলিল, “এখানটা বড় প্রকাশ্য স্থান নয়?”

লোকটী বলিল, “না, প্রকাশ্য স্থানই ভাল। আমরা বসিয়া কথাবার্তা কহিতেছি, ইহাতে আমাদের কে সন্দেহ করে?”

উমিচাঁদ কোন কথা কহিল না। তখন সেই ব্যক্তি বলিল, “এখন কাজের কথা হউক।”

“কি বলুন।”

“সেই টাকাগুলি আমি চাই।”

“কো–ন্—টা—কা?”

“তুমি বেশ জান। রঙ্গিয়া যে টাকা তোমাকে দিয়াছিল।”

“সে—সে—খুন হইয়াছে।”

“গোল করিয়ো না, তাহা হইলে তোমারও সেই অবস্থা হইবে—আমি টাকা চাই।”

“সে—সে—সে টাকা আমার কাছে নাই।

“চালাকী করিয়ো না। রঙ্গিয়া সে টাকা তোমায় দিয়াছিল—সে টাকা তোমার কাছে আছে—সে টাকা আমার চাই-ই।”

উমিচাঁদ সভয়ে চারিদিকে চাহিল; এবং এক মুহূর্ত্তে তাহার সর্ব্বাঙ্গ ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়া উঠিল, এবং তাহার হৃদয় সবলে স্পন্দিত হইতে লাগিল। সে জড়িতকণ্ঠে বলিল, “সে টাকা—আমার কাছে- নাই।”

লোকটী দৃঢ়স্বরে কহিল, “আমার সঙ্গে বদমাইসী চলিবে না।”

এবার উমিচাঁদ সাহস করিয়া বলিল, “যদি না দিই?”

লোকটা বিকটস্বরে হাসিল। বলিল, “তাহা হইলে তুমিই খুন করিয়াছ বলিয়া সকলকে প্ৰকাশ করিয়া দিব।”

উমিচাঁদ এই কথায় কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইল। পরে বলিয়া উঠিল, “আমি খুন করিয়াছি? আমি স্বচক্ষে তোমার ছুরিতে রঙ্গিয়াকে খুন হইতে দেখিয়াছি। তুমি আমার সর্ব্বনাশ করিয়াছ।”

লোকটী পুনরপি বিকট হাসি হাসিয়া বলিল, “আমি সে কথা অস্বীকার করিতে চাহি না—প্রয়োজন হয়, আরও দুই-চারিটা করিব। যদিও আমি খুনী, তুমি আমার কি করিবে? তুমি আমাকে চেন না—জান না আমি কে; পরেও কখন জানিতে পারিবে না। ভাল চাও যদি, টাকা দাও, তা না হলে তোমাকেও খুন করিব। আমি সহজ লোক নই।”

এই সমযে ঝোপের মধ্যে শব্দ হইল। লোকটা চমকিত হইয়া বিদ্যুদ্বেগে উঠিয়া দাঁড়াইল। দেখিল, চারিজন লোক লম্ফ দিয়া নিকটস্থ হইল। উমিচাঁদ তাহাকে ধরিতে যাইতেছিল, সে তাহাকে ধাক্কা মারিয়া দূরে নিক্ষেপ করিল; কিন্তু নিজে পলাইতে পারিল না। সে পকেট হইতে ছুরি বাহির করিতেছিল। এদিকে অক্ষয়কুমার সদলে গিয়া তাহাকে আক্রমণ করিলেন। বহু আয়াসে শেষে তাহাকে বাঁধিয়া ফেলিলেন। তখন অক্ষয়কুমার বলিলেন, “নগেন্দ্রবাবু, লণ্ঠনটা খুলুন দেখি। দেখি, এ মহাপ্রভু কে?”

নগেন্দ্রনাথের কাছে পুলিস-লণ্ঠন ছিল; তিনি উহার চাকা ঘুরাইয়া লন্ঠনের আলোকে লোকটার মুখ দেখিয়া বলিলেন, “চিনি না।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “এখনই চিনিবেন। না হয়ত আমার নাম অক্ষয়ই নয়।” বলিয়া তিনি সেই ব্যক্তির দাড়ি ধরিয়া সজোরে টান দিলেন। অক্ষয়কুমারের হাতে দাড়ি খুলিয়া আসিল, নগেন্দ্রনাথের লণ্ঠনের আলো তাহার মুখের উপর নিক্ষিপ্ত হইল, তখন সকলেই সমস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “কি সৰ্ব্বনাশ—এ কে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *