Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 41

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

রাত্রি প্রায় সাড়ে দশটার সময়ে তাঁহারা সকলে বীড়ন-গার্ডেনের নিকটে আসিলেন। তখনও রাস্তায় বহু লোক চলাচল করিতেছে—বাগানের মধ্যেও অনেক লোক হাওয়া খাইয়া বেড়াইতেছে। এত লোকের চলাচল দেখিয়া নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “আশ্চর্য্যের বিষয় লোকটা এমন প্রকাশ্য স্থানে উমিচাঁদের সঙ্গে দেখা করিতে চাহিয়াছে।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “তাহাতেই বোঝা যায় যে, লোকটা খুব চালাক, যত প্রকাশ্য স্থান – ততই সন্দেহ কম।”

“আপনি ঠিক বলিয়াছেন।”

“প্রায়ই ঠিক বলি।”

নগেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিলেন, “এ পর্যন্ত যাহা কিছু বলিয়াছেন, তাহা ঠিক হয় নাই।” অক্ষয়কুমার হাসিয়া বলিলেন, “মানুষের ভুল-ভ্রান্তি আছেই—আমাদের বন্ধুটি কই?” নগেন্দ্রনাথ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোন্ বন্ধু?”

অক্ষয়কুমার আবার হাসিলেন। বলিলেন, “এটাও আবার বুঝাইতে হইবে? উমিচাদ—আমাদের প্রাণের বন্ধু উমিচাঁদ। তাহার মনে এমন একটা অনুতাপ উপস্থিত না হইলে আমাদের আজ খুনী ধরার কোন সম্ভাবনা ছিল না।”

“আপনি কি নিশ্চিত মনে করিতেছেন, আজ খুনীই এখানে আসিবে?”

“নিশ্চয়ই।”

তাঁহারা বাগানের পূৰ্ব্ব-দক্ষিণ কোণে আসিলেন। দেখিলেন, সেখানে তত লোক নাই—দুই- একটি লোকমাত্র সেদিকে বেড়াইতেছে।

বাগানের কোণে একখানা বেঞ্চি আছে। বেঞ্চিখানি খালি—তাহাতে কেহ বসিয়া নাই। ঐ বেঞ্চির পশ্চাতে একটা ঝোপ, ঝোপের পরেই রাস্তা, রাস্তার পর আবার একটা ঝোপ।

“এই উপযুক্ত স্থান,” বলিয়া অক্ষয়কুমার সঙ্গীদিগকে ইঙ্গিত করিলেন। ক্রমে অন্য লোকের অলক্ষ্যে তাঁহারা একে একে ঝোপের মধ্যে লুক্কায়িত হইলেন।

কিন্তু তাঁহারা দেখিলেন, তখনও উমিচাঁদ আসে নাই, প্রায় এগারটা বাজে। অক্ষয়কুমার অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছিলেন। এই সময়ে তাঁহারা দেখিলেন, উমিচাঁদ ধীরে ধীরে সেইদিকে আসিতেছে। যেখানে ঝোপের মধ্যে অক্ষয়কুমার প্রভৃতি লুকাইয়াছিলেন, উমিচাঁদ সেইদিকে আসিল। একবার চারিদিকে চাহিল; বোধহয়, অক্ষয়কুমারকে না দেখিয়া যেন ভীত হইল—সে চলিয়া যাইতেছিল, সহসা ঝোপের ভিতর হইতে একটা শব্দ হইল। উমিচাঁদ দাঁড়াইল। বুঝিতে পারিল, অক্ষয়কুমার নিকটেই আছেন। উমিচাঁদ সেইখানে পদচারণ করিতে লাগিল।

তাঁহারা যে নিকটেই আছেন, ইহা উমিচাঁদকে জানাইবার জন্য অক্ষয়কুমার তাহাকে পূর্ব্বেই বলিয়াছিলেন, ঝোপের ভিতর একটা শব্দ হইলেই জানিবে, আমরা নিকটেই আছি।

ঝোপের ভিতর নিঃশব্দে নিশ্বাস বন্ধ করিয়া অক্ষয়কুমার প্রভৃতি বসিয়া আছেন। মশকে তাঁহাদের সৰ্ব্বাঙ্গে স্বচ্ছন্দে দংশন আরম্ভ করিয়াছে—নীরবে তাহা সহ্য করিতে হইতেছে। বাহিরে উমিচাঁদ সুখে সুশীতল বাতাসে গম্ভীরভাবে পদচারণ করিতেছে। অক্ষয়কুমার তখন আর থাকিতে পারিলেন না, অতি মৃদুস্বরে বলিলেন, “জীবনে কত দুঃখই আছে। মশায় খেয়ে ফেলিল, আর বেটা রাজপুত্রের মত তোফা বেড়াচ্ছেন—আঃ! সে বেটার যে এখনও দেখা নাই।”

এইরূপে আরও কিছুক্ষণ উত্তীর্ণ হইল। অদূরে মল্লিকদের ঘড়ীতে ঢং ঢং করিয়া এগারটা বাজিল। চমকিত হইয়া উমিচাঁদ দাঁড়াইল, চারিদিকে চাহিল। এগারটা বাজিতে শুনয়া অনেকে বাগান হইতে বাহির হইয়া যাইতে লাগিল; ক্রমে বাগানের ভিতরস্থ জনতার অনেক হ্রাস হইয়া আসিল। উমিচাঁদ চারিদিকে চাহিতে লাগিল; কিন্তু কোন লোক তাহার নিকটে আসিল না। সে কি করিবে- না-করিবে ভাবিতেছে, এই সময়ে সহসা একটী লোক ধীরে ধীরে তাহার নিকটবর্ত্তী হইল। তাহার হাতে একটী চুরুট। সে উমিচাদের নিকটস্থ হইয়া বলিল, “মহাশয়ের কাছে দিয়াশলাই আছে? চুরুটটা ধরাইয়া লইব।”

উমিচাঁদ তাহাকে দিয়াশলাই দিল। ধীরে ধীরে দিয়াশলাই জ্বলাইয়া চুরুট ধরাইতে লাগিল। সেই আলোকে উমিচাঁদ দেখিল যে, এই ভদ্রলোকের লম্বা কাল দাড়ি আছে। সে মুহূর্ত্তমাত্র খুনের রাত্রে সেই ব্যক্তিকে দেখিয়াছিল, কিন্তু সে সে দাড়ি ভুলে নাই।

তাহার হৃদয় অত্যন্ত দ্রুতবেগে স্পন্দিত হইতে লাগিল। এই লোকই তাহার চোখের উপর রঙ্গি য়াকে খুন করিয়াছিল। আজ আবার এই রাত্রে তাহারই সম্মুখে সেই খুনী দণ্ডায়মান।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress