Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 33

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

উমিচাদ যে খুন করিয়াছে, ইহা নগেন্দ্রনাথ একবারও মনে করেন নাই। সে যে খুন করিতে পারে না, তাহা ‘অক্ষয়কুমারও অনেকবার বলিয়াছেন; সুতরাং আজ সহসা তাহার নামে ওয়ারেন্ট দেখিয়া নগেন্দ্রনাথ বিশেষ আশ্চর্যান্বিত হইলেন। তাহার তখনও বিশ্বাস যে, উমিচাঁদ ইহার কিছুই জানে না। বলিলেন, “আপনি হঠাৎ মত পরিবর্ত্তন করিলেন কিসে? কিসে জানিলেন যে, উমিচাঁদ খুন করিয়াছে?”

অক্ষয়কুমার হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “গ্রন্থকার মহাশয়ের এ কেবল ডিটেক্‌টিভ উপন্যাস লেখা নয়—আমার বরাবরই উমিচাঁদের উপর নজর ছিল। আমি জানিতাম, এ খুন ঈৰ্ষাবশেই হইয়াছে; তাহাই এতদিন সন্ধান করিতেছিলাম যে, রঙ্গিয়ার কে ভালবাসার পাত্র ছিল।”

“সে সন্ধান ত অনেকদিন হইতে হইতেছিল; কিন্তু কিছুই সন্ধান হয় নাই। কেহ এ সন্ধান দিতে পারে নাই।”

“তাহাতেই বুঝা যায়, রঙ্গিয়া খুব চতুরা ছিল।”

“তাহা হইলে এখন কিরূপে জানিলেন?”

“একেই গোয়েন্দাগিরি বলে। রঙ্গিয়া কোথায় কোথায় যাইত, প্রথমে তাহারই সন্ধান করিতে আরম্ভ করি। ক্রমে জানিতে পারিলাম, সে গোপনে প্রায়ই একটা বাড়ীতে যাইত; তখন কে তাহার ভালবাসার পাত্র ছিল, তাহা জানা কি বড় কঠিন?”

“ভাল, তাহার পর কি জানিলেন?”

“তাহাও বলিতে হইবে? জানিলাম, উমিচাঁদ ও রঙ্গিয়া দুইজনে গোপনে এই বাড়ীতে প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ করিত।”

“উমিচাঁদ যে খুন করিয়াছে, তাহার প্রমাণ কি? আমি ত একটিও দেখিতে পাইতেছি না। সত্য উমিচাঁদ আর রঙ্গিয়ার মধ্যে ভালবাসা ছিল; কিন্তু রঙ্গিয়ার সঙ্গে সে-রাত্রে উমিচাঁদ ছিল, তাহার প্রমাণ কি? এ কথা রঙ্গিয়া আর হুজুরীমল বলিতে পারিত, কিন্তু তাহারা দুইজনেই ইহলোকে নাই

“এখনও কোন কোন প্রমাণের অভাব আছে, স্বীকার করি; কিন্তু উমিচাঁদ যে ভীরু, তাহাকে ভয় দেখাইলে—কেবল এই ওয়ারেন্টখানা দেখাইলে সে সব স্বীকার করিয়া ফেলিবে।”

“যদি সে এতই দুর্বল হয় যে, ভয়ে সব স্বীকার করিয়া ফেলে, তাহা হইলে তাহাতেই বুঝিতে পারা যাইতেছে, তাহার মত ভীরু এরূপভাবে দুইটা খুন করিতে পারে না।”

“ওর চেয়েও ভীরু লোকে ইহা অপেক্ষাও ভয়ানক কাজ করিয়াছে।”

“সে কিরূপে খুন করিল? আপনি এ বিষয়ে কি মনে করেন?”

“সে কোনরকমে জানিতে পারে যে, রঙ্গিয়া গোপনে রাত বারটার সময়ে রাণীর গলিতে হুজুরীমলের সঙ্গে দেখা করিবে—তাহার সঙ্গে পলাইবে। সে জানিত না যে, গঙ্গা নিজে না গিয়া তাহাকে নিজের কাপড় পরাইয়া হুজুরীমলের নিকটে পাঠাইয়াছিল। তাহার দৃঢ় বিশ্বাস হইয়াছিল যে, রঙ্গিয়াই হুজুরীমলের সঙ্গে পলাইতেছে। এরূপ অবস্থায় লোকের যাহা হয়, উমিচাদেরও তাহাই হইল। সে ক্ষোভে দ্বেষে উন্মত্তপ্রায় হইল, একখানা ছোরা সংগ্রহ করিল; আগেই গিয়া রাণীর গলিতে লুকাইয়া রহিল। তাহার পর রঙ্গিয়া হুজুরীমলের সঙ্গে দেখা করিল, অমনি সে গিয়া হুজুরীমলের বুকে ছোরাখানা বসাইয়া দিল। দেখিয়া রঙ্গিয়া হতজ্ঞান হইল, তখন তাহাকে সঙ্গে লইয়া উমিচাঁদ গাড়ীতে আসিয়া উঠিল। রঙ্গিয়া কলের পুতুলের মত তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল। এরূপ অবস্থায় সে কেন—অনেকেই এইরূপ করিত। তখন উমিচাঁদের খুন চাপিয়াছে, বুকের ভিতর ঈর্ষার আগুন জ্বলিতেছে, সে যাহাকে এতদিন প্রাণ দিয়া ভালবাসিয়া আসিতেছে তাহার এই কাজ, এরূপ অবিশ্বাসিনীর দণ্ডই—মৃত্যু। ভয়ে রঙ্গিয়ার কন্ঠরোধ হইয়া গিয়াছিল; সে সত্য ব্যাপারের কিছুই উমিচাদকে বলিতে পারিল না। উমিচাদ তাহাকে গঙ্গার ধারে আনিয়া সেখানে কোন লোক নাই দেখিয়া নানা গালি দিয়া তাহার বুকে ছোরা বসাইল।

নগেন্দ্রনাথ চিন্তিতভাবে বলিলেন, “ইহা কি সম্ভব?”

“সম্ভব নহে—ঠিক। তাহার পর লাস গঙ্গার জলে ফেলিয়া দিতেছিল, এরূপ সময়ে কোন লোকের পায়ের শব্দ শুনিয়া পলাইয়াছিল। ইহা ব্যতীত এ খুনের দ্বিতীয় কারণ নাই।”

“এসকলই খুব সম্ভব বলিয়া জানিলাম, কিন্তু ইহার প্রমাণ নাই, যে প্রমাণ দিবে, সে-ও নাই। উমিচাদের সঙ্গে রঙ্গিয়ার ভালবাসা ছিল বলিয়াই যে, সে তাকে ও হুজুরীমলকে খুন করিবে এমন কি কথা! এ সমস্তই অনুমান ব্যতীত আর কিছুই নয়। তাহার পর

“তাহার পর আর কি?”

“তাহার পর আপনি সিঁদুরমাখা শিবের কথা একেবারেই ভুলিয়া যাইতেছেন। উমিচাদ পঞ্জাবের সম্প্রদায়ের কেহ নয়, সে খুন করিয়া সিঁদুরমাখা শিব লাসের নিকটে রাখিবে কেন? আরও একটা কথা হইতেছে, সে টাকা লইয়া আবার ফেরৎই বা দিবে কেন।”

অক্ষয়কুমার কোন উত্তর না দিয়া সত্বর উঠিয়া কক্ষমধ্যে চিন্তিতভাবে দ্রুতবেগে পরিক্রমণ করিতে লাগিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *