ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “হাঁ, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। এই কলিকাতারই একটা বড় গদিতে ভাঙাইয়াছে; তাহারা ললিতাপ্রসাদকে বেশ চেনে।”
অক্ষয়কুমার বলিলেন, “শীঘ্র আসুন, আমরা এখনই ললিতাপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করিব।” নগেন্দ্রনাথ বলিলে, “আপনি তাহাকে গ্রেপ্তার করিবেন নাকি?”
“নিশ্চয়ই, যদি কারণ দেখি।”
“জানি না, সে কি বলিবে।”
“দু’হাজার মিথ্যাকথা বলিবে।”
“নাও বলিতে পারে।”
“ফাঁসী-কাঠ হইতে গৰ্দ্দান সরাইতে অনেকে অনেক মিথ্যাকথা বলে।”
“তবে কি আপনি মনে করেন, সে-ই খুন করিয়াছে?”
“আমি এখন কিছুই বিবেচনা করি নাই। দেখি, তাহার কি বলিবার আছে।”
উভয়ে সত্বর আসিয়া ললিতাপ্রসাদের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। তাঁহারা মনে করিয়াছিলেন যে, ললিতাপ্রসাদকে এ কথা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি ইতস্ততঃ করিবেন, কি হয়ত একেবারে অস্বীকার করিবেন—নিশ্চয়ই তাঁহার ভাব-ভঙ্গির পরিবর্ত্তন হইবে; কিন্তু ললিতাপ্রসাদের ভাবে তাঁহারা উভয়েই বিশেষ আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলেন। তাঁহাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করিবামাত্র তিনি এ কথা স্বীকার করিলেন। তিনি বিন্দুমাত্র ইতস্ততঃ করিলেন না। বলিলেন, “হাঁ, আমিই নোট ভাঙাইয়াছিলাম।’
অক্ষয়কুমার তাঁহাকে সন্দেহ করিয়াছেন বলিয়া তিনি মহারুষ্ট হইলেন। বলিলেন, “আমি নোট ভাঙাইয়াছিলাম বলিয়া আপনি মনে করিয়াছেন যে; আমি এই খুনের মধ্যে আছি। আপনি অদ্ভুত লোক, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।”
অক্ষয়কুমার মৃদুস্বরে বলিলেন, “অনেক সময়ে আমাদিগকে অদ্ভুত হইতে হয়। তবে শুনিতে পাই কি, আপনি এ নোট কিরূপে ভাঙাইলেন। নোট হইল গুরুগোবিন্দ সিংহের, তিনি জমা রাখিলেন হুজুরীমলের কাছে, নোট ভাঙাইলেন আপনি—কেন?”
ললিতাপ্রসাদ ক্রুদ্ধভাবে বলিলেন, “হাঁ, আমি নোট ভাঙাইয়াছিলাম।” হুজুরীমলবাবু অনুরোধ করিয়াছিলেন বলিয়া ভাঙাইয়াছিলাম।”
অক্ষয়কুমার সেইরূপ মৃদুস্বরে বলিলেন, “কেন?”
ললিতাপ্রসাদ বলিলেন, “গুরুগোবিন্দ সিংহ হুজুরীমলকে নোট বদ্লাইয়া রাখিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন।”
অক্ষয়কুমার নগেন্দ্রনাথের দিকে চাহিলেন। নগেন্দ্রনাথও কিছু বুঝিতে না পারিয়া তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিলেন। উভয়েই অবাক্।