Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 20

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

অক্ষয়কুমার চন্দননগর ষ্টেশনে নামিয়া হুজুরীমলের বাড়ীর দিকে চলিলেন। দেখিলেন, আর একটি লোকও গাড়ী হইতে নামিয়া দ্রুতপদে হুজুরীমলের বাড়ীর দিকে ছুটিয়াছে। তাহার হাতে একখানি চিঠি।

অক্ষয়কুমার মনে মনে বলিলেন, “দেখিতেছি, ললিতাপ্রসাদ গাধা নহে। আগে হইতে গঙ্গাকে সাবধান করিয়া দিবার জন্য চিঠী লিখিয়া লোক পাঠাইয়াছে? দেখা যাক্—কতদূর দৌড়।”

তিনি হুজুরীমলের বাড়ীতে আসিয়া গঙ্গার সহিত দেখা করিতে চাহিলেন। ভৃত্যগণ পূৰ্ব্বেই তাঁহাকে পুলিসের লোক বলিয়া জানিত, সুতরাং তাঁহার হুকুম অমান্য করিতে কাহারও সাহস হইল না।

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “আমি যে আসিয়াছি, আর কাহাকেও বলিয়ো না, বলিলে সব বেটাকে ধরিয়া লইয়া যাইব।”

তাহারা গঙ্গাকে ডাকিয়া দিল। গঙ্গা তাঁহার নিকটস্থ হইয়া সলজ্জভাবে মৃদু হাসিয়া বলিল, “ খুনী বুঝি এবার ধরা পড়িয়াছে, তাহাই আমাদিগকে বলিতে আসিয়াছেন!”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “না, খুনী এখনও ধরা পড়ে নাই—সেইজন্যই তোমার কাছে আসিয়াছি।”

“আমার কাছে! আমার কাছে কেন?”

“তুমি কি জান যে, হুজুরীমলবাবুর উপরে কাহার রাগ ছিল?”

“আমি কেমন করিয়া জানিব?”

“তুমি লুকাইয়া তাঁহার সঙ্গে রাত্রে দেখা করিতে।”

“আমি?”

“হাঁ—তুমি। তুমি যদিও ঘোমটায় মুখ ঢাকিয়া যাইতে, তবুও তোমাকে লোকে চিনিতে পারিয়াছে, তোমার ঐ আংটীটাই তোমাকে ধরাইয়া দিয়াছে।”

গঙ্গা বিস্মিতভাবে আংটীর দিকে চাহিল। তৎপরে ধীরে ধীরে বলিল, “এই আংটী—কেন এই আংটী—এ ত আমি দুই-একদিন হাতে পরিয়াছি মাত্র।”

তাহার কথায় অক্ষয়কুমার বিস্মিত হইলেন। ভাবিলেন, তবে কি যথার্থই এ হুজুরীমলের নিকট যায় নাই। বলিলেন, “একটি স্ত্রীলোক, হুজুরীমল যে রাত্রে খুন হয়, সেইদিন রাত্রি নটার পরে তাঁহার সঙ্গে দেখা করিয়াছিল।”

“সে আমি নই—আপনি অপেক্ষা করুন—আমি যমুনাকে ডাকি।”

অক্ষয়কুমার বাধা দিবার পূর্ব্বেই গঙ্গা তীরবেগে গৃহ হইতে বহির্গত হইয়া গেল। অক্ষয়কুমার ভাবিলেন, “পলাইল না ত। পলাইবে কোথা? এখন দেখিতেছি, এ খুন না করুক—যে খুন করিয়াছে জানে। অনেক মামলা তদন্ত করিলাম—এমন গোলযোগে মাম্‌লা আর দেখি নাই। সে বুড়ো বেটা নিজেও মরলো, আর আমাদেরও হাড়মাস কালি করিয়া গেল।”

এই সময়ে গঙ্গা যমুনাকে সঙ্গে লইয়া সেখানে ফিরিয়া আসিল। বলিল, “যমুনা জানে যে, প্ৰায় দুই-তিন-মাস এ আংটা আমার হাতে ছিল না।”

যমুনা বিস্মিতভাবে একবার গঙ্গার মুখের দিকে চাহিল—পরে অক্ষয়কুমারের মুখের দিকে চাহিল। ক্ষণপরে ধীরে ধীরে বলিল, “কেন আংটীর কি হইয়াছে?”

গঙ্গা বলিল, ইনি বলিতেছেন, এ আংটা আমার হাতে ছিল।”

যমুনা মৃদুস্বরে বলিল, “না, আংটীটা গঙ্গার হাত হইতে বাগানে পড়িয়া গিয়াছিল। প্রায় দু’মাস ঘাসের মধ্যে পড়িয়াছিল, কেহ খুঁজিয়া পায় নাই। আমি দশ-পনের দিন হইল, খুঁজিয়া পাইয়াছিলাম। পাছে আবার হারাইয়া যায় বলিয়া নিজের হাতে পরিয়াছিলাম। গঙ্গাকে দিতে গেলে সে বলিল, তোমার হাতে বেশ মানাইয়াছে, তোমার হাতেই থাক্।’ সেই পৰ্যন্ত আমার হাতেই ছিল। তিনি- চারিদিন হইল, তাহাকে দিয়াছি। এ আংটীর কি হইয়াছে?”

অক্ষয়কুমার অতি গম্ভীরভাবে বলিলেন, “যে রাত্রে হুজুরীমলবাবু খুন হন, সেইদিন একটি স্ত্রীলোক তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিল। তাঁহার একজন ভৃত্য সেই স্ত্রীলোকের হাতে এই আংটী দেখিতে পায়। তাহা হইলে কি আপনি সে রাত্রে কলিকাতায় গিয়া হুজুরীমলবাবুর সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলেন?”

যমুনা কোন উত্তর না দিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। অক্ষয়কুমার অতি কঠোরভাবে বলিলেন, “চুপ্ করিয়া থাকিলে চলিবে না—তোমাকে ইহার ঠিক জবাব দিতে হইবে।”

যমুনা কম্পিতকণ্ঠে বলিল, “আমি–আমি—হাঁ আমি—”

“কি আমি? স্পষ্ট বল।”

“আমি গিয়াছিলাম।”

“তুমি একবার আমাকে মিথ্যাকথা বলিয়াছিলে, ঠিক করিয়া বল।”

যমুনার চক্ষুদ্বয় সজল হইল। সে বাষ্পরুদ্ধ কম্পিতকণ্ঠে বলিল, “হাঁ, আমি—আমিই সে রাত্রে তাঁহার সঙ্গে দেখা করিয়াছিলাম।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *