Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 11

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

এই সময়ে উন্মত্তের ন্যায় উমিচাদ তথায় উপস্থিত হইল। তাহার মুখ পাংশুবর্ণ হইয়াছে, তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ কাঁপিতেছে। সে ভগ্নকন্ঠে বলিল, “সর্বনাশ হয়েছে।”

সকলেই আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া তাহার দিকে চাহিয়া রহিলেন। তখন পঞ্জাবী ভদ্রলোক বলিলেন, “প্রায় পনের দিন হইল, হুজুরীমলবাবুকে আমি দশ হাজার টাকার নোট রাখিতে দিই। আজ আমার টাকার দরকার হওয়ায় গদিতে আসিয়াছিলাম। গদিতে আসিয়া দেখি এই ব্যাপার।”

অক্ষয়কুমার তাঁহাকে এতক্ষণ বিশেষরূপে লক্ষ্য করিতেছিলেন। তিনি স্পষ্টই বুঝিতে পারিয়াছিলেন, এই ব্যক্তিই গুরুগোবিন্দ সিং, তিনি গম্ভীরভাবে বলিলেন, “গদিতে আসিয়া শুনিলেন, হুজুরীমলবাবু খুন হইয়াছেন?”

পঞ্জাবী ভদ্রলোকটি বিরক্তভাবে বলিলেন, “হাঁ সঙ্গে সঙ্গে আমার টাকাও গিয়াছে।” তৎপরে তিনি ললিতাপ্রসাদের দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “আপনি এখন এ গদির কর্ত্তা, আপনি নিশ্চয়ই আমার টাকা ফেরত দিবেন।“

ললিতাপ্রসাদ বলিলেন, “আমি ইহার কিছুই জানি না। আমি বাবুজীকে টেলিগ্রাম করিয়াছি। তিনি আসিলে তাঁহাকে বলিব।” পরে তিনি উমিচাঁদকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “টাকা কিরূপে হারাইল?”

উমিচাঁদ কম্পিতকণ্ঠে বলিল, “ঐ টাকা বাবুর কাছে চন্দননগরেই ছিল। তিনি আগ্রায় যাইতেছেন বলিয়া সেদিন গদিতে লইয়া আসেন। তিনি বাড়ীতে থাকিবেন না বলিয়া গদির সিন্দুকে আমাকে দেখাইয়া দশ খানা হাজার টাকার নোট রাখিয়া দেন। তাহার পর আর তিনি গদিতে আসেন নাই।” গুরুগোবিন্দ সিংহ বলিলেন, “শুনিলেন, আমার টাকা মারা যাইতে পারে না, তিনি মারা গিয়াছেন বটে, তবে উমিচাদবাবু জানেন যে, হুজুরীমলের কাছে আমার টাকা ছিল।”

উমিচাঁদ বলিল, হাঁ, তাঁহার কাছে শুনিয়াছি, এ টাকা পঞ্জাবের কোন সম্প্রদায়ের।” অক্ষয়কুমার বলিয়া উঠিলেন, “ও।” সকলেই তাঁহার দিকে চাহিলেন, গুরুগোবিন্দ সিংহ বলিলেন, “তাঁহার রসিদও আমার কাছে আছে।”

ললিতাপ্রসাদ বলিলেন, “বাবুজী আসুন। হুজুরীমল যথেষ্ট টাকাকড়ি রাখিয়া গিয়াছেন। অবশ্যই আপনার টাকা বুঝিয়া পাইবেন।”

সহসা গুরুগোবিন্দ সিংহকে অক্ষয়কুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহাশয়ের এ সম্প্রদায়ের সহিত পঞ্জাবের ধর্ম্ম-সম্প্রদায়ের কি কোন সম্বন্ধ আছে?”

গুরুগোবিন্দ সিং বিস্ফারিত নয়নে অক্ষয়কুমারের দিকে চাহিয়া বিরক্তভাবে বলিলেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে আপনার সম্বন্ধ কি?”

অক্ষয়কুমার মৃদু হাস্য করিয়া বলিলেন, “তা ত নিশ্চয়, আমি ত সিন্দুর মাখা শিব নই।”

এই কথায় গুরুগোবিন্দ চমকিত হইয়া উঠিলেন। অতিশয় বিস্মিতভাবে অক্ষয়কুমারের দিকে চাহিলেন, কিন্তু মুহূৰ্ত্ত মধ্যে আত্মসংযম করিয়া, ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, “আপনার কথা আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না।”

তিনি অনন্তর ললিতাপ্রসাদের দিকে ফিরিয়া অতি রুষ্টভাবে বলিলেন, “ললিতাপ্রসাদবাবু, আপনার পিতা ঠাকুর আসিলে তাঁহাকে বলিবেন এই সপ্তাহের মধ্যে আমি টাকা চাই।”

ললিতাপ্রসাদ যুবক মাত্র, গুরুগোবিন্দ সিংহের রূঢ় কথায় ও কথাটা অপমানজনক ভাবিয়া তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, “নতুবা আপনি কি করিবেন?”

গুরুগোবিন্দ অতি গম্ভীরভাবে বলিলেন, “তাহা হইলে আমাদের সম্প্রদায়ের সহিত আপনাদের বোঝা-পড়া হইবে।”

এই বলিয়া মুহূৰ্ত্তমধ্যে গুরুগোবিন্দ সিং গদি হইতে বাহির হইয়া গেলেন। ললিতাপ্রসাদ বিস্মিতভাবে বলিলেন, “ওর সম্প্রদায় আমাদের কি করিবে?”

অক্ষয়কুমার সংক্ষেপে কহিলেন, “খুন।”

ললিতাপ্রসাদ ও উমিচাঁদ উভয়েই শঙ্কিতভাবে বলিলেন, “কাহাকে খুন করিবে?”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “কাহাকে খুন করিবে কেমন করিয়া বলিব? তবে যে এই সম্প্রদায়ের কোপে পড়িবে, তাহারই খুন হইবার সমধিক সম্ভাবনা আছে। হুজুরীমলকে এই সম্প্রদায়ই খুন করিয়াছে।”

ললিতাপ্রসাদ নিতান্ত বিস্মিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন?”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “কেন? যেহেতু হুজুরীমল সাহেব এই সম্প্রদায়ের দশ হাজার টাকা লইয়া চম্পট দিতেছিলেন। কে জানে, যে স্ত্রীলোকটিকে লইয়া পলাইতেছিলেন, সে এ সম্প্রদায়ের নহে। সে-ও এই সম্প্রদায়ের কোপে পড়িয়াছিল। সেজন্য উভয়েই খুন হইয়াছে।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *