Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স‍্যান্টিং || Pradip Acharyya

স‍্যান্টিং || Pradip Acharyya

স‍্যান্টিং

সালটা ইংরেজি ১৯৮৭ আমি তখন চাকুরীসূত্রে মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলায় কৃষ্ণপুর পাওয়ার হাউসে কর্মরত। পাওয়ার হাউসের ভেতরেই কর্মীনিবাসের তিন তলায় সপরিবারে বসবাস করি, আমার আরও তিন জন সহকর্মী ছিলেন নন্দ দুলাল পাল ভবতোষ ঘোষ এবং দিলীপ নন্দী। ভবতোষ ও নন্দ দুলাল বিবাহিত এবং সপরিবারে একই কর্মীনিবাসে থাকলেও দিলীপ নন্দীর তখনও বিয়ে হয়নি ফলে বাইরের অন‍্যান্ন কয়েকজন কর্মীর সাথে মেস বানিয়ে থাকতো।
একসাথে দীর্ঘদিন পাশাপাশি কাজ করায় আমাদের ভেতরে এক গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিলো, বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে দিলীপ নন্দী সহ সকল সহকর্মীদের আমরা আমন্ত্রণ জানাতাম। প্রায় সব অনুষ্ঠানেই দিলীপ নন্দী উপস্থিত থাকতো। খাওয়ার ব‍্যাপারে দিলীপ নন্দীর কোন ঢাকঢাক গুড়গুড় ছিলো না। আটটা ডিম দিয়ে ওর খাওয়া শুরু হতো এক দেড় কেজি মাংস ওর কাছে নস‍্যি এক কেজি চালের ভাত অনায়াসে খেতে পারতো। একবার লক্ষীপূজায় তিন কেজি খিচুড়ি একাই সাবাড় করে দিয়েছিলো। সে যাই হোক একদিন দিলীপ নন্দী ওর বাড়িতে আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলো। বারবার অনুরোধ করায় আমি আর নন্দ দুলাল পাল ওর বাড়িতে যাব ঠিক করি। সেইমতো জৈষ্ঠ্যমাসের এক রবিবার ওর বাড়ি কৃষ্ণনগর নবদ্বীপের মাঝে শ‍্যামপুরে হাজির হই।
এরপর আমাদের সাথে যা ঘটলো তাকে শুধু অত‍্যাচার বললে কম বলা হবে। যাওয়ার সাথে সাথেই বড় বড় কাঁচের গ্লাসে দইয়ের সরবৎ দিয়ে শুরু হলো খাওয়ানোর সূচি। জলখাবারে লুচি, বেগুন ভাজা, ছোলারডাল, আলু ফুলকপির তরকারি, চার রকমের মিষ্টি গোটা আষ্টেক, আম লিচু আপেল আর আঙুর । জলখাবারের বহর দেখে আমরা তো হতবাক এই খাবার আমাদের মতো পাঁচ জন মিলে খেলেও শেষ হবে না। অনেক বলে কয়ে কিছুটা কমাতে পারলেও ভুক্তাবশেষ পরে রইলো বেশিরভাগটাই।
জলখাবার খেয়ে আমরা গ্রাম দেখতে বের হলাম সুবর্ণ বিহারে রাধা মাধবের মন্দিরে অনেকক্ষণ কাটিয়ে শ‍্যামপুর বাজারে দিলীপ নন্দীর পরিচিত চায়ের দোকানে খাঁটি দুধের মশলা চা খেয়ে আমেজ করে দেড়টা নাগাদ ফিরে এলাম ওর বাড়িতে । এরপর শুরু হলো সেই কুখ্যাত মধ‍্যাহ্ন ভোজন, খাদ‍্য তালিকায় কি নেই বড় কাঁসার থালায় ভাত, শুশনীশাক , আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, পটল ভাজা , মোচার ঘন্ট, পোস্তর বড়া, মাছের ডিমের বড়া, থালার চারপাশে গোটা দশেক বাটিতে মুগডাল, মুড়িঘন্ট, আলু পটলের তরকারি, ছানার ডালনা, ডিমের ডালনা, তিন রকম মাছ রুই মাছের কালিয়া,চিংড়ির মালাই আর ইলিশভাপা, সঙ্গে খাসির মাংস, দুরকম চাটনি, নবদ্বীপের দই, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়া রসগোল্লা, ক্ষীর মালাই,জলভরা সন্দেশ আম আর লিচু । আমার জানাশোনার ভেতর একমাত্র দ্বিতীয় পান্ডব ভীমসেনই এর উপযুক্ত ভোক্তা। কোন মতে ডাল আলুভাজা ইলিশ ভাপা আর তিন চার টুকরো মাংস চাটনি একটু দই একপিস সরপুরিয়া আর একপিস সন্দেশ খেয়ে উঠে পড়লাম। আমি যাও বা একটু বসে আছি নন্দ দুলাল খেয়ে উঠেই ঘুম চোখে নেতিয়ে পড়লো ওদের বারান্দায়। কিছুক্ষণ পর আমিও ঘুমিয়ে পরেছি। ঘুম ভাঙলো সাতটার পর। দিলীপ নন্দী হাসিমুখে বললো প্রদীপ দা রাতে থাকুন পোলাও আর খাসির মাংস হবে। আমাদের ফিরতেই হবে, সকালে ডিউটি আছে । রাত আটটায় কৃষ্ণনগর থেকে লালগোলার ট্রেন আমরা তখন পাগলের মতো ছুটছি বাসের আশায় ট্রেন মিস করা চলবে না।
এই ঘটনার তিন চার মাস পর দিলীপ নন্দী বাড়ি থেকে এসে হাসিমুখে জানালো ওর দাদার বিয়ে ঠিক হয়েছে কালনার দিকে। ছেলে আশির্বাদ করতে পাঁচজন এসেছিলো। আমি বললাম সব ঠিকঠাক মতো হয়েছে? দিলীপ নন্দী বললো হবে না মানে এমন স‍্যান্টিং দিয়েছি দুদিন আমাদের বাড়িতেই শুয়েছিলো যাওয়ার ক্ষমতা ছিলো না। আমি বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকাতেই দিলীপ নন্দী মুচকি হেসে বললো যাবে কি করে খাওয়ার চোটে ওদের সবার পেট ছেড়ে দিয়েছিল তো। রাতে ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল। আমি বললাম তাহলে ওই রকম ভূরি ভোজনের নাম কি স‍্যান্টিং? দিলীপ নন্দী হো হো করে হেসে উঠলো, আমি মনে মনে ভাবছি দিলীপ নন্দী কি সেদিন আমাদেরও স‍্যান্টিং দিয়েছিল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress