স্মৃতির গ্রাম
আমার অফিসের কাজের ব্যস্ততা মাঝে মাঝেই এমন করে, যেন জীবন থেকে রোমাঞ্চ হারিয়ে যায়। সেই সময়েই একদিন সুযোগ হল আসামের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে যাওয়ার। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, সেখানে পৌঁছেই মনে হল যেন এক অন্য জগতে এসে পড়েছি।
গ্রামের কেন্দ্রে বিশাল এক পুকুর, তার চারপাশ ঘিরে সারি সারি সুপুরি গাছ। পুকুরটির জল এত স্বচ্ছ যে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন আকাশটাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। পুকুরে চাষ হচ্ছে রুই আর কাতলা মাছ, যা গ্রামের মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। এক বিকেলে হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় গ্রামের পথে ঘুরতে বেরোলাম।
পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম। চারপাশে সুপুরি গাছের পাতাগুলি বাতাসে নড়ে উঠছিল। সেই সময় পুকুরের ধারে এক মেয়ে এসে দাঁড়াল। হাতে ছোট এক ঝুড়ি, তাতে কিছু মাছ ধরা জাল। কৌতূহলবশত আমি তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম, তার নাম মেঘনা। তার চোখে ছিল গ্রামের সরলতা আর হাসিতে এক অদ্ভুত মাধুর্য।
মেঘনা আমাকে পুকুরটির গল্প বলল। শুনলাম, এই পুকুর তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষের হাতে তৈরি। বর্ষাকালে এখানে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা হয়, আর শীতে পুকুরের চারপাশে মেলা বসে। গল্প করতে করতে মেঘনার সঙ্গেই যেন বিকেলের আলো গাঢ় হয়ে এলো। পুকুরের জলে সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি পড়ল। মুহূর্তটি এত মায়াবী ছিল যে আমি নিজের ব্যস্ত জীবনকে ভুলে গেলাম।
সেদিনের সেই গ্রাম আর মেঘনার সঙ্গে কাটানো সময় আমার মনে এক গভীর ছাপ রেখে গেছে। শহরে ফিরে এসেও মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, আমি সেই পুকুরপাড়ে বসে আছি, আর মেঘনার কণ্ঠস্বর বাতাসে ভেসে আসছে।