স্বাগতা
সেদিন চলার পথটা মসৃণ ছিল না।আমরা তখন সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। ব্যারাকপুর সুরেন্দ্রনাথ এ পড়তাম। কলেজের একটা মজাই আলাদা। পরিচিত হলাম তনুশ্রী, অর্ণব ও স্বাগতার সঙ্গে। মনোরম একটা পরিবেশ, মিলিটারি এরিয়া ,ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট- সবুজ গাছপালায় ঘেরা। মাঝেমধ্যে জয়ন্তী হলে সিনেমা দেখা।
– স্বাগতা অনেক সময় বলতো, সৌরভ আমরা একটু আলাদা বসি। ওখানেও যে প্রেম নিবিড় হচ্ছে প্রথমে বুঝতে পারিনি। ধীরে ধীরে আমরা সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। নিজেদের একটা গণ্ডি তৈরি হল। পড়াশোনায় ভাটা পড়ল। তবুও সেদিন নতুন প্রেমে মনে উত্তেজনা ছিল। ক্রমে দিনগুলো পার হলাম।- –
আজ আর স্বাগতা নেই।মারন রোগ ওকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। মনের বানডাকা জোয়ারের জলে তখন এসে পড়েছিল অর্পিতা।
– ধীরে ধীরে আবার নতুন প্রেম।
– – তনুশ্রী আর অর্ণব আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদিন।
– – হয়ত অর্পিতা কে মেনে নিতে ওদের কষ্ট হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে অর্পিতা কে কয়েকবার স্বাগতা সম্বোধন করে ফেলেছিলাম।পরক্ষণেই ভুল দেখে সরি বলি।
– – আজ স্বাগতা থাকলে বড়ো মেয়ের ডাক্তারি পড়ায় কত খুশী হত।মাম চুপচাপ থাকে। আমাদের দুজনকে হয়ত ও মন থেকে স্বীকার করতে পারে না।মাম ক্ষমা করে দে। আমার যে কোন উপায় ছিল না।
– – ছোট মেয়ে মামকে খুব ভালোবাসে।একে অপরকে গিফট পাঠায়। ইলেভেনে ভর্তির সময় মাম ওকে বিষয়গুলো চুজ করে দিল।
– – যাই। অনেক বার ডাকছিল অর্পিতা।
– বাপি, কালকে দিদিভাইয়ের কাছে যাবো। অনেকক্ষণ থাকব। – হ্যাঁ যাব।মা কোথায়?
– মা শুয়ে আছে।
– অসময়ে শুয়ে কেন?
অর্পিতা অর্পিতা- কি হয়েছে? আজ আমারও মনটা ভালো নেই।মাম কোলকাতায় একা। কি প্রয়োজন সেটাও ও বলেনা।
– – তুমি আমাকে নিয়ে ওর কাছে চলো।আমিও ওর মা হয়ে উঠতে পারিনি। – যাব। আজ হবে না।
– – সৌম্য, তোমার মনে নেই।আজ স্বাগতার মৃত্যুদিন।
– – সংসারের চাপে ডেটটা ভুলে গিয়েছিলাম।মামকে একটা ফোন কোরো।
– – তুমি ওর বাবা সৌম্য। তোমার সাথে কথা বলতে ও স্বচ্ছন্দ বোধ করবে।
– – আজ কুড়ি বছর হলো।তোমায় না আনলে কেমন করে দিন কাটতো?তবু দুই মেয়েকে দেখে ভালো থাকি।
– – স্বাগতার ছবিতে রজনীগন্ধার মালা ঝুলছে। সামনে ওর প্রিয় মিষ্টি। অর্পিতা মনে রেখে সাজিয়েছে।আমাকে কতটা ভালোবাসে,নইলে এত কর্তব্য করে?আজ সংসারটা ও বাঁচাচ্ছে।নইলে আমাদের খাওয়া হত কিনা সন্দেহ।ভুলেই গিয়েছিলাম।স্নানটা সেরে স্বাগতাকে একটা মালা পড়াই।লাল গোলাপ বড়ো ভালোবাসত। নিরিবিলিতে একটু কথা বলব স্বাগতা। ভুলিনি,তোমায় ভুলিনি। অনেক কথা জমে আছে গো। একবার চলে এসো। তোমাকে স্পর্শ করি স্বাগতা।একবার,,,,র।
– ও বাপি কাঁদছ কেন।মা সেদিন স্বপ্নে এসেছিল।বলল- পপি,বাপিকে কাঁদতে দিবি না।মানুষটা সংসারের জন্য কত পরিশ্রম করে, আনন্দে রাখিস বাপি কে।