Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অনিলবাবুর আবির্ভাব

কেল্লাবাড়ির গড়খাইয়ের সামনে পৌঁছনো পর্যন্ত আমি বিস্ময়ে হতবাক ছিলাম। কর্নেল নির্বিকার মুখে বসে ছিলেন। সবে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ ঢোকানো হয়েছিল। কর্নেলকে দেখে একজন পুলিশ অফিসার এগিয়ে এলেন। বললেন, স্থানীয় লোকেরা লাশটা সনাক্ত করেছে, কর্নেল সরকার। এখানে একসময় থাকত সে। অচিন্ত্য দাস নাম। ডাকনাম ছিল বাচ্চু। গুণ্ডা প্রকৃতির যুবক। পরে সাঁতরা ফ্যামিলির এক মহিলা তাকে পোষ্যপুত্র নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সে কলকাতা চলে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে তার সঙ্গেই এখানে আসত।

জানি। কর্নেল আস্তে বললেন। বডি কি অবস্থায় ছিল তার মানে, পচন ধরেছিল কি না?

হ্যাঁ, জায়গায় জায়গায় চামড়া খসে গেছে। কালো হয়ে গেছে। আমার ধারণা, অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে খুন হয়েছে। একই পদ্ধতিতে খুন। মাথার পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করেছিল খুনি। খুলি ফাঁক হয়ে গেছে।

মিসেস দয়াময়ী সাঁতরাকে খবর দেওয়া দরকার। উনি কলকাতায় আছেন।

সাঁতরাবাড়িতে আমাদের অফিসার গেছেন। এখান থেকে হাঁটাপথে শর্টকাট করা যায়।

কর্নেল পকেট থেকে একটা নোটবই বের করে বললেন, আপনি বরং থানায় গিয়ে এই নম্বরে কলকাতায় ট্রাঙ্কল করুন মিঃ পাণ্ডে। মিসেস সাঁতরাকে আমাদের খুবই দরকার। ট্রাঙ্ককলে খবর পেলেই ছুটে আসবেন।

আপনি কি বড়ি দেখতে চান?

নাহ্‌। তবে মর্গে বডির পোশাক সার্চ করা জরুরি। পরনে কি পোশাক আছে।

প্যান্ট আর গেঞ্জি। পায়ে চপ্পল আছে। আশ্চর্য কর্নেল সরকার, খুনটা ওখানেই করা হয়েছে বলে মনে হল। মানে, যেখানে বডি পোঁতা ছিল, সেখানেই। বুঝতে পারছি না, ওই বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা ভাঙা ছাদের তলায় সে কি করছিল?

কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, আমি কেল্লাবাড়িতে যাচ্ছি মিঃ পাণ্ডে। তো ভেতরে পুলিশ ক্যাম্প বসাতে বলেছিলাম—

ক্যাম্প করা হয়েছে। এ এস আই আমেদকে আপনার কথা বলা আছে। আমেদ ক্যাম্পের চার্জে আছে।

ধন্যবাদ। বলে কর্নেল গড়খাইয়ের সেই পাথরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

কেল্লাবাড়ির ভেতরে আমাদের দেখে একজন সপ্রতিভ চেহারার তরুণ পুলিশ অফিসার ব্যস্তভাবে এগিয়ে এলেন। নমস্তে কর্নেলসাব। আমি আর আমেদ।

মিঃ আমেদ, কেল্লাবাড়ির চারদিকে আশা করি নজর রেখেছিলেন আপনারা।

অবশ্যই। গতরাত্রে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, তবু কনস্টেবলরা সতর্ক ছিল। কিছুক্ষণ অন্তর টর্চের আলো ফেলে জানিয়ে দিচ্ছিলাম, আমরা আছি।

মিঃ আমেদ হেসে উঠলেন। ভেঙে পড়া বাড়ির কাছাকাছি বিশাল বটগাছের তলায় দুটো তেরপলের তাঁবু দেখা যাচ্ছিল। তাবুর সামনে খাঁটিয়ায় বসে ছিল। বন্দুকধারী কয়েকজন কনস্টেবল। কয়লার উনুনে রান্নার আয়োজনও চোখে পড়ল।

কর্নেল ক্যাম্পের দিকে গেলেন না। ডানদিকের গঙ্গা নামে পুকুরটার পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঘন জলজঘাসে ঢাকা পুকুরটার বাকি তিনদিক ঝোপঝাড়ে ঢাকা। আমেদ বললেন, এনিথিং রং স্যার?

নাহ। বলে কর্নেল উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলেন। বাঁদিকের পুকুরটার পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। এই পুকুরটার নামে শুনেছি যমুনা। এটা একটু নিচুতে। বর্ষায় যমুনাও ভরা এবং ঘন ঘাসে ঢাকা। একটা পানকৌড়ি হঠাৎ উড়ে আমাদের মাথার উপর দিয়ে গঙ্গায় অবতরণ করল। যমুনায় একজোড়া জলপিপি পাখি পি পি করে ডাকতে ডাকতে ঘাসের আড়ালে গা ঢাকা দিল। কর্নেল ঘুরে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমেদ আবার জিজ্ঞেস করলেন, এনিথিং রং স্যার?

কর্নেল হসেলেন, নাহ। পুকুরদুটোর নাম জানেন কি মিঃ আমেদ?

জানি স্যার। ওটার নাম গঙ্গা, এটার নাম যমুনা। শুনেছি, দুটো পুকুরের মধ্যে নাকি একটা গোপন সুড়ঙ্গ আছে। সত্যমিথ্যা জানি না। আমি এখানে প্রায় একবছর এসেছি। অনেক গল্প শুনি। সবই আজগুবি গল্প।

কর্নেল বাইনাকুলারে কিছু দেখতে থাকলেন। তারপর বললেন, ওদিকে একটা মাউন্ড দেখছি। ওটা কি কোন ধ্বংসাবশেষ?

আমেদ বললেন, স্থানীয় লোকেরা বলে, ওখানে নাকি ভীমের মন্দির ছিল। আমার শোনা কথা স্যার।

কর্নেল একটু হেসে বললেন, মহাভারতের ভীমের মন্দির নয়, রাজা ভীম রায়ের মন্দির। বাদশা আকবরের আমলের এক সামন্ত রাজা। তার নামেই ভীমগড় নাম। তো ওই ঢিবির পেছনেই কি নদী?

হ্যাঁ স্যার। ছোট্ট পাহাড়ি নদী। তবে প্রচণ্ড স্রোত এখন।

কর্নেল ঘুরে আবার গঙ্গার দিকে তাকালেন। তারপর হঠাৎ গঙ্গার দিকে হাঁটতে থাকলেন। এবার বললাম, ব্যাপারটা কি? গঙ্গা-যমুনা খেলতে শত করলেন কেন?

কর্নেল মাঝামাঝি সেই পাথরের ইট বিছানো প্রাচীন পথের ধারে একটা পামগাছের কাছে থমকে দাঁড়ালেন। বললেন, এখানে সম্প্রতি কেউ মাটি খুঁড়েছিল দেখছি। মাটিটা উঁচু। টাটকা ঘাস গজিয়ে আছে। নাহ, খুব বেশি দিন আগে খোঁড়া নয়। মিঃ আমেদ। আপনাদের ক্যাম্পে খোঁড়ার মতো কোনও শাবল বা কিছু আছে?

আমেদ অবাক হয়ে বললেন, স্যার।

আমি উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, এখানেও আর একটা লাশ পোঁতা আছে নাকি? কর্নেল কোনও উত্তর না দিয়ে পিঠের কিটব্যাগ থেকে সেই খুদে খননযন্ত্রটা বের করলেন। তারপর উঁচু ঘাসগজানো ছোট্ট ভূপটা খুঁড়তে থাকলেন। আলগা মাটির চাবড়া বৃষ্টিতে নরম হয়ে আছে। সহজেই খোঁড়া যাচ্ছিল। একটু পরে বেরিয়ে পড়ল ভাঙা পাথরের মসৃণ একটা টুকরো। দেড়ফুট লম্বা প্রায়। অর্ধচন্দ্রাকৃতি পাথরের টুকরোটা কর্নেল উপড়ে ফেললেন। ফাটলের ভেতর জল দেখা গেল। আমেদ উত্তেজিতভাবে বললেন, আশ্চর্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে সত্যি একটা সুড়ঙ্গ আছে?

মিঃ আমেদ। প্লিজ, ওই ঝোপ থেকে একটা লম্বা ডাল ভেঙে আনুন।

আমেদ দ্রুত ডাল ভেঙে আনলেন। কর্নেল ডালটা সুড়ঙ্গে ভরে গভীরতা মেপে বললেন, প্রায় পৌনে এক মিটার গভীর। চওড়া আধ মিটার। কিন্তু এই গর্ত খুঁড়েছিল কে, এটাই প্রশ্ন।

আমেদ হাসলেন। কেউ দেখতে চেয়েছিল সুড়ঙ্গের গুজব সত্যি কি না।

কর্নেল সুড়ঙ্গের জলে তার খুন্তি ধুয়ে কিটব্যাগে ঢোকালেন। তারপর বললেন, চলি মিঃ আমেদ। আমি মিঃ পাণ্ডেকে বলব, আজই যেন ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ আর এখানে নজর রাখার দরকার নেই।

বলে উনি হন্তদন্ত গড়খাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন।

গড়খাইয়ের ওধারে পুলিশকে ভিড়ের উদ্দেশে ধমক দিতে এবং লাঠি তুলতে দেখছিলাম। অ্যামবুলেন্স চলে গেছে। মিঃ পাণ্ডেকেও দেখলাম না।

জিপে উঠে কর্নেল রহমতকে বললেন, পোস্ট অফিস।

রহমত জিপ চালিয়ে যেতে যেতে বলল, কিছু বুঝতে পারছি না কর্নিল সাব। কেল্লাবাড়ির জমি নিয়ে নাকি মামলা চলছে অনেক বছর ধরে। কিন্তু খুনখারাপি কখনও হয়নি। লোকেরা বলাবলি করছিল, খুনের বদলেই খুন হয়েছে। এবার আরও খুনোখুনি হবে। সে কণ্ঠস্বর চাপা করল। পাটোয়ারিজি কেল্লাবাড়ি কিনতে চান এই মওকায়। তাই উনি নাক গলিয়েছেন স্যার। পাটোয়ারিজির ভাতিজার হাতে ভীমগড়ের সব গুণ্ডা বাঁধা। শুনলাম, বটবাবুকে খুনের জন্য পাটোরারিজি খাপ্পা হয়ে সাঁতরাবাবুদের আসামী করতে চাইছেন! বটবাবু পাটোয়ারিজির লোক ছিল কি না।

কর্নেল বললেন, আজ যে লাশটা পাওয়া গেল, সে সম্পর্কে স্থানায় লোকেরা কি বলছে?

অনেকে অনেক কথা বলছে স্যার। এই লোকটাও নাকি একসময় পাটোয়ারিজির ভাতিজার দলের গুণ্ডা ছিল। বাচ্চুবাবু না কি যেন নাম। তো সে দল থেকে ভেগে সাঁতরাবাবুদের দলে ভিড়েছিল।

সাঁতরাবাবুদেরও গুণ্ডাদল আছে নাকি?

আছে বৈকি স্যার। গুণ্ডা না পুষলে আজকাল ব্যবসা চলে?

তা হলে স্থানীয় লোকের মতে খুনখারাপিটা দলাদলির ব্যাপার?

জি স্যার। সারাবাবুদের অত্যাচারেই জমিদারবাবু কলকাতা চলে গিয়েছিলেন। জমিদারবাবু পাটোয়ারিজির দোস্ত ছিলেন।

লোকেরা বলছে?

জি স্যার।

পোস্ট অফিসের সামনে রহমত জিপ থামাল। কর্নেল ধীরেসুস্থে নামলেন। বললেন, জয়ন্ত। তুমি বসে থাকো। আমি এখনই আসছি।

কৌতূহল চেপে বসে থাকতে বাধ্য হলাম। কর্নেল পোস্ট অফিসে ঢুকলেন এবং তারপরই বেরিয়ে এলেন। জিপে চেপে বললেন, অচিন্ত্যর লাশের খবর পেয়েই অনিলবাবু ছুটে গেছে। এখনও ফেরেননি। দুজনের মধ্যে একসময় খুব বন্ধুত্ব ছিল। কাজেই এটা স্বাভাবিক। রহমত। আমরা বাংলায় ফিরব।

রহমত আমাদের ফরেস্ট বাংলোয় পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। কর্নেল তাকে। চারটে নাগাদ জিপ নিয়ে আসতে বলেছেন।

স্নানাহারের পর কর্নেল ইজিচেয়ারে বসে মিটিমিটি হেসে বললেন, তুমি। এমন ভাবাচ্যাকা খেয়ে গেছ যে কোন প্রশ্ন তোমার মাথায় আসছে না। যাকে বলে হাল ছেড়ে দেওয়া।

ঠিক বলেছে বস্। বড্ড গোলমেলে ব্যাপার।

খেই পাওয়া গেলে সব জটই ছাড়ানো যায়। কর্নেল চুরুটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন। খেইটা ধরিয়ে দিয়েছেন সাঁতরামশাই।

বলেন কি!

হ্যাঁ। গঙ্গা এবং যমুনা। মধ্যিখানে সুড়ঙ্গ।

ওটাই কি সেই খেই?

কর্নেল টাকে হাত বুলিয়ে বললেন, উডল্যান্ড সায়েবের লেখা দা লেটার গুপ্টা আর্কিটেকচার বইটা আমাকে গণ্ডগোলে ফেলে দিয়েছিল। গুপ্তযুগের শেষভাগে মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীতে তিনটে প্রতীক ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বস্তিকা, মকর এবং কচ্ছপ। মকর হল গঙ্গার বাহন এবং কচ্ছপ যমুনার বাহন কাজেই মকর গঙ্গার এবং কচ্ছপ যমুনার প্রতীক।

চমকে উঠলাম। কর্নেল। ওই শব্দছকে–

আমাকে থামিয়ে বৃদ্ধ রহস্যভেদী বলনেল, স্বস্তিকা আছে। তার তলায় মকর, কচ্ছপ এবং রপট আছে। রপট মানে প্রবাহ। কাজেই আমি ধাঁধায় পড়েছিলাম। গুপ্তযুগের কোনও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কথা ভেবেছিলাম এবং প্রবাহ বলতে ওই নদীটাকে বুঝেছিলাম। নদীর তীরে একটা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের স্তূপও আছে। কিন্তু ওটা রাজা ভীম রায়ের তৈরি মন্দির। জেলা গেজেটিয়ারে মন্দিরটার যে বর্ণনা আছে, তা মিশ্র স্থাপত্যের। গুপ্তযুগের মন্দিরের মতো স্তম্ভ ছিল না। যাই হোক, সাঁতরামশাই গঙ্গা-যমুনা নামে দুটো পুকুর এবং মধ্যিখানে সুড়ঙ্গের কথা বলা মাত্র শব্দছকের জট খুলে গেল। রপট অর্থাৎ প্রবাহ বলতে এই সংযোগ সুড়ঙ্গই বোঝাচ্ছে। কারণ গ্রীষ্মে যমুনা পুকুরের জল কমে গেলে উঁচু জমিতে গঙ্গা পুকুরের জল সুড়ঙ্গ বেয়ে এসে যমুনাকে ভরিয়ে দেয়।

বললাম, সুড়ঙ্গ তো দেখলাম। কিন্তু ওটা খুঁড়ল কে? কেনই বা খুঁড়ল?

বুঝতে চেষ্টা করো জয়ন্ত। কেদারনাথ থেকে সংসারত্যাগী প্রশান্তবাবু একটা শব্দছক ভাইকে পাঠিয়েছিলেন। রায় বংশের পবিত্র দেবসম্পদ কোথায় আছে, তার সূত্র ওই শব্দছক।

দেব সম্পদ কি?

নাগমিথুন। যার প্রতীক স্বস্তিকা চিহ্ন। বোঝা যাচ্ছে, দামী রত্ন দিয়ে তৈরি ওই নাগমিথুন রপটে–তার মানে প্রবাহপথে লুকোনো ছিল। সুড়ঙ্গের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় ওটা ছিল। নাগমিথুন অর্থাৎ স্বস্তিকা সুড়ঙ্গপথে জলপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করত না। আবার জলের স্পর্শে তার কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটারও সম্ভাবনা ছিল না। সুড়ঙ্গের গভীরতা পৌনে এক মিটার মতো। সেই ভাঙা মসৃণ পাথরের তলায় চাপ দিয়ে স্বস্তিকা বসানো ছিল। চোর তার সন্ধান পেয়ে খুঁড়ে বের করেছিল। আমার অনুমান, এই প্রকাণ্ড স্বস্তিকা যদি সোনার হয়, তবে তার ওজন কমপক্ষে দু কিলোগ্রাম তো বটেই। কর্নেল চুপ করে গেলেন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে দাড়িতে হাত বোলানোর পর ফের বললেন, স্বস্তিকায় গঙ্গা পুকুরের ঘাস ভেসে এসে আটকে যাওয়া সম্ভব কিন্তু তাতে রপটের গতি তত কিছু ব্যাহত হওয়ার কথা নয়। কারণ দুটো পুকুরের জলের যে স্তর দেখেছি, তাতে বুঝেছি গঙ্গাপুকুরের জলের স্তর যমনাপুকুরের জলের স্তর থেকে প্রায় তিন মিটার উঁচু। রপট তীব্রই হত।

অচিন্ত্যবাবু বলেই থেমে গেলেন।

কর্নেল চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন। দয়াময়ী দেবী আমাকে বলেছেন, ওই খামটার কথা তাকে জানাননি। এদিকে দেখা যাচ্ছে, বটকৃষ্ণবাবু খামের ভেতরকার শব্দছকের কথা জানতেন। কিন্তু তিনি ধাঁধার অর্থভেদ করতে পারলে পাটোয়ারিজিকেই স্বস্তিকা বেচে দিয়ে চলে যেতেন ভীমগড় থেকে। আমি নিশ্চিত, তেনি গুপ্তধন আঁচ করছিলেন। কিন্তু সেই গুপ্তধন কি এবং কোথায় লুকানো আছে বুঝতে পারেননি।

কর্নেল, অচিন্ত্যবাবু জমিদার রায়বাবুদের কর্মচারীর ছেলে। তাঁর পক্ষে কেল্লাবাড়িতে লুকিয়ে রাখা স্বস্তিকার কথা জানা কি সম্ভব ছিল না?

ছিল। কিন্তু কোথায় ছিল, তা জানতে পারলে কবে তা হাতিয়ে নিত।

তাহলে খুব সম্প্রতি কেউ স্বস্তিকার সন্ধান পেয়ে ওটা হাতিয়েছে।

ঠিক বলেছ। কর্নেল হঠাৎ সোজা হয়ে বসলেন। সাইকেলে চেপে অনিলবাবু আসছেন। হ্যাঁ, আমি জানতাম উনি আসবেন। আসতেই হবে। এই আবির্ভাব অনিবার্য ছিল।

খোলা জানালা দিয়ে গেটের কাছে পোস্টমাস্টার অনিলবাবুকে সাইকেল থেকে নামতে দেখলাম। কিন্তু বুঝলাম না, কেন ওঁর এই আগমনকে কর্নেল আবির্ভাব বলছেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *