অচিন্ত্যনীয় ঘটনা
কৃপানাথ ব্রেকফাস্ট রেডি রেখেছিল। বারান্দায় বসে ব্রেকফাস্টের সময় ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি এল। রহমত কৃপানাথের সঙ্গে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় বটকৃষ্ণবাবুর খুনখারাপি নিয়ে আলোচনা করছিল।
বললাম, পুলিশ আপনাকে পাত্তা দিল?
কর্নেল বললেন, তুমি তো বরাবর দেখে আসছ, এসব ক্ষেত্রে কলকাতা। থেকে থু প্রপার চ্যানেলে আমি যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখি। এস পি ভীমগড় থানাকে রেডিও মেসেজে আমার কথা জানিয়ে রেখেছিলেন। তবে আমি কোথায় উঠব, তা বলিনি। যাই হোক এস পি ভদ্রলোক রসিক। থানাকে জানিয়েছিলেন, অসময়ে কলকাতা থেকে এক সান্তা ক্লজ আসছেন। তার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। থানার অফিসাররা অবশ্য বুঝতে পারেননি কেন কোন সান্তা ক্লজ বুড়ো এই বর্ষায় এখানে আসছে এবং তাকে কী ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এখন তারা আমাকে চর্মচক্ষে দেখে এবং এই হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার ফলে আমার বোয় তৎপর হয়ে উঠলেন। নাহ্। আমি দয়াময়ী সাঁতরার নাম করিনি, কিংবা স্বস্তিকা আঁকা শব্দছকের কথাও ওঁদের জানাইনি। শুধু বলেছি, এটা সাধারণ খুনখারাপি নয়। এর সঙ্গে একটা জটিল রহস্য জড়িয়ে আছে। আপনারা কেল্লাবাড়িতে পুলিশক্যাম্প বসান। কেল্লাবাড়িতে যেন জনপ্রাণীটি না যায় আর। যদি কাউকে সেখানে দেখা যায়, তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কি। উদ্দেশ্যে সে গিয়েছিল, জেরা করে জেনে নিতে হবে।
বৃষ্টি জোরালো না হলেও সমানে ঝিরঝিরি ধারায় ঝরছিল। সেই সঙ্গে এলোমলো হাওয়া। বাংলোটা টিলার মাথায় বলে হাওয়ার দৌরাত্ম্য বেশি। ব্রেকফাস্টের পর ঘরে গিয়ে জানালার ধারে বসলাম। ওদিকটায় ঢেউ খেলানো ঘনসবুজ অরণ্যযতদূর চোখ যায়। মাঝে মাঝে বেখাচ্চা একটা করে কালো নগ্ন পাথরের পাহাড় অতিকায় হাতির মতো দাঁড়িয়ে আছে।
কর্নেল ইজিচেয়ারে বসে চুরুট টানছিলেন। পাশের টেবিল থেকে সেই গাদা বইটা হঠাৎ তুলে নিলেন। তারপর পাতা ওল্টাতে থাকলেন। দেখলাম, একগুচ্ছ মন্দিরের ফটোয় পৌঁছে ওঁর হাত থামল। এবার আতস কাচ দিয়ে ফটোগুলোতে কিছু দেখতে মন দিলেন। কিছুক্ষণ পরে সশব্দে বইটা বুজিয়ে রেখে বললেন, ওঠ। বেরুনো যাক।
অর্কিডের খোঁজে বেরুলে আমি যাচ্ছি না।
নাহ। কেল্লাবাড়িতে পুঁতে রাখা লাশটা সত্যিই নবকুমারবাবুর কি না জানা দরকার। গত রাতে ওঁর বড় ছেলের মুখে শুনেছি, উনি দুদিন আগে কলকাতা গেছে। এদিকে বটকৃষ্ণবাবুর চিঠিতে বলে থেকে গেলেন কর্নেল। স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে ফের বললেন, স্থা, বুঝেছি। কিন্তু তা কি করে সম্ভব? ভারি অদ্ভুত তো।
ওঃ কর্নেল। আবার বটকৃষ্ণবাবুর সেই শেষ সংলাপ।
সংলাপটা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জয়ন্ত। তোমার সংলাপের শেষাংশ স্মরণ করো। তুমি বলেছিলে, ব্যাপারটা টপ সিক্রেট কি না। নামী লোক।
আপনার মুখস্থ আছে দেখছি।
হ্যাঁ, কর্নেল দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, তার উত্তরেই বটকৃষ্ণবাদত ওই তিনটি কথা। তুমি বলেছিলে নামী লোক। তাই তার হত্যাকাণ্ড পলি চেপে রেখে তদন্ত চালাচ্ছে–টপ সিক্রেট। এগুলোর জবাবে বটকৃষ্ণবাবর উক্তি, হুঁ। বুঝেছি। কিন্তু পরের বাক্যে তাঁর উক্তি–তা কি করে সম্ভব? জয়ন্ত। এখন মনে হচ্ছে, সেই নামী লোক, যার খুন হওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন বটকৃষ্ণবাবু, কি করে খুন হতে পারেন, এটাই ভারি অদ্ভুত মনে হয়েছিল বটকৃষ্ণবাবুর কাছে। কেন মনে হয়েছিল? না, না। তখন আমি ওই তিনটি কথার মানে খুঁজতে ভুল দিকে ছুটেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ঠিক দিকেই চলেছি।
ঠিক দিকটা কি?
যার খুন হওয়ার সম্ভাবনা বলে ধারণা ছিল বটকৃষ্ণবাবুর, তিনি নিশ্চয় বটকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে একই ট্রেনে কলকাতা গিয়েছিলেন, কিংবা বটকৃষ্ণবাবু তাকে একই ট্রেনে কলকাতা যেতে দেখেছিলেন। জয়ন্ত, বটকৃষ্ণবাবু আসলে নবকুমারবাবুর কথা ভেবেই ওই উক্তি করেছিলেন। সিওর। হানড্রেড পারসেন্ট সিওর।
বলে কর্নেল টাকে হাত বুলিয়ে টুপি পরলেন। বাংলোর পোর্টিকোর তলায় জিপের দিকে এগিয়ে গেলেন। রহমত ছুটে এল। বৃষ্টি এখন কমে গেছে। টিপ টিপ করে পড়ছে। সমতলে বড় রাস্তায় পৌঁছে কর্নেল বললেন, রহমত। আমরা নবকুমার সাঁতরার বাড়ি যাব।
জিজ্ঞেস করলাম; কেল্লাবাড়ি যাবেন না?
আগে ওঁর বাড়ি। তারপর কেল্লাবাড়ি।
গতরাতে এলাকাটা রহস্যময় মনে হয়েছিল। দিনের আলোয় দেখলাম মোটামুটি ভদ্র পরিবেশ। একটা করে পুরনো বাগানবাড়ি। তার পাশে একালীন ঝকমকে স্থাপত্য। প্রচুর গাছপালা, এমন কি আম বাগানও আছে। একটা সুন্দর মন্দির দেখতে পেলাম। কালীমন্দির না হয়ে যায় না। চোখে পড়ল পুরনো কিন্তু মেরামতে ভোলফোরানো একতলা একটা লাইব্রেরি এবং সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা বান্ধব পাঠাগার। স্থাপিত ১৯৩১ খৃঃ। শুধু রাস্তাটাই যা বিচ্ছিরি।
সাঁতরাবাবুর নতুন বাড়ির পেছনে পুরনো বাড়িটা বেমানান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গেটে জিপ থামলে আবার কুকুরের হাঁকডাক শোনা গেল। রহমত নেমে গিয়ে ডাকছিল, বাবুজি। বাবুজি।
কর্নেল নামার পর আমি নামলাম। দোতলার বারান্দায় গ্রিলের ভেতর আবছা দেখা যাচ্ছিল এক প্রৌঢ়কে। প্রকাণ্ড উঁড়ি। গায়ে ফতুয়া এবং পরনে লুঙি। বললেন, কে-এ-এ?
রহমত বলল, সাবলোগ কালকাত্তাসে আয়া বাবুজি। আপকা মুলাকাত মাঙতা।
একটু পরে তিনি গেটের কাছে এলেন। কর্নেল নমস্কার করে বললেন, আমি কাল সন্ধ্যায় এসেছিলাম। নবকুমার সাঁতরা মশাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
আমিই নবকুমার সাঁতরা। ভেতরে আসুন।
অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম বটে, কিন্তু একটা অস্বস্তি ঘুচে গিয়েছিল। এই ভদ্রলোকের লাশ কেল্লাবাড়িতে মাটির তলায় থাকা বরদাস্ত করতে পারছিলাম না। কেন পারছিলাম না কে জানে।
বসার ঘরে সোফা এবং আলমারিতে পুতুল আছে। একটা ডিভান আছে। কিন্তু শিক্ষা-সংস্কৃতির ছাপ নেই। বিত্তবান ব্যবসায়ীদের মতো ঐশ্বর্য প্রদর্শনেরও প্রবণতা চোখে পড়ল না। সোফায় বসে কর্নেল নিজের নেমকার্ড দিলেন। নবকুমার তা পড়ে দেখে কর্নেলকে ফেরত দিলেন। একটু আড়ষ্টভাবে হেসে বললেন, সুনীলের কাছে শুনেছি, বউদি আমার পেছনে সি আই ডি
কর্নেল বাধা দিলেন। না সাঁতরামশাই। আমি পুলিশ নই। এক সময় সামরিক অফিসার ছিলাম। এখন রিটায়ার্ড। আর আলাপ করিয়ে দিই। জয়ন্ত চৌধুরী। কলকাতার প্রখ্যাত দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সাংবাদিক।
সাঁতরামশাই আমার দিকে মন দিলেন না। বললেন, কাল রাতে কলকাতা থেকে ফিরেছি। ট্রেন দুঘণ্টা লেট। সুনীল আপনাদের কথা বলল। এদিকে সক্কালবেলা বটো খুন হয়েছে শুনলাম। আমি স্যার কোনও ব্যাপারে নেই। বউদি খামোকা আমাকে ভুল বুঝেছে। তারই হেস্তনেস্ত করতে কলকাতা গিয়েছিলাম। বউদি তার প্রপার্টির শেয়ার বেচবে না। বেচবে পাটোয়ারিজিকে। বড্ড জেদী মেয়ে স্যার।
কর্নেল বললেন, রায়বাবুর সঙ্গে আপনাদের মামলার কি অবস্থা?
মামলা হাইকোর্টে ঝুলে আছে। তবে বউদি রাজি হলেই মিটে যাবে। রায়মশাইয়ের আশি বছর বয়স হয়েছে। ছেলে নেই। একটি মাত্র মেয়ে। সে বরের সঙ্গে আমেরিকায় থাকে। রায়মশাই গঙ্গা-যমুনা আমাদের দিয়ে কেল্লাবাড়ির বাকি অংশ–
এক মিনিট। কি বললেন? গঙ্গা-যমুনা?
আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার। কেল্লাবাড়িতে দুটো পুকুর আছে। একটার নাম গঙ্গা, অন্যটার নাম যমুনা। পুকুর দুটো আর ওই অংশের জমি রায়মশাইয়ের দাদা আমাদের বিক্রি করেছিলেন। তারপর উনি সাধু হয়ে চলে গেলেন। তখন রায়মশাই মামলা ঠুকে দিলেন এজমালি সম্পত্তি। দাদা ভাইকে না জানিয়ে বেচতে পারে না। এই হল গিয়ে মামলা।
কর্নেলকে উত্তেজিত মনে হল। চুরুট ধরিয়ে বললেন, গঙ্গা-যমুনা।
আজ্ঞে স্যার। শুনেছি, ওঁর ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা নাকি দুটো পুকুর খুঁড়ে একটাতে গঙ্গার জল, অন্যটাতে যমুনার জল এনে ভরেছিলেন। লাখ লাখ জালায় জল ভরে আনা হয়েছিল নাকি প্রয়াগ সঙ্গম থেকে। সত্যিমিথ্যা ভগবান জানেন। শুকনো হাসি হাসলেন সাঁতরামশাই। তবে সেকালে রাজা জমিদারদের খেয়াল ওইরকমই ছিল। সত্যি হতেও পারে। শুনেছি, পুকুর দুটোর মধ্যিখানে মাটির তলায় সুড়ঙ্গ আছে। যমুনার জল খায় কমে গেলে গঙ্গার জল সুড়ঙ্গ দিয়ে যমুনায় ঢোকে। আমি স্যার অত কিছু দেখার সময় পাইনি কখনও। লোকের মুখে যা শুনেছি, তাই বলছি।
আপনারা গঙ্গা-যমুনা কিনেছিলেন কেন?
আসলে দাদার খেয়াল। দাদা মাছ চাষ করার জন্য কিনতে চেয়েছিল। তা দাদার ইচ্ছা আমার ইচ্ছা। বলে সাঁতরামশাই হাঁক দিলেন, বেচু। এঁদের চা-ফা নিয়ে আয়।
কর্নেল বললেন, না সাঁতরামশাই। আমরা চা খাই না। এবার একটা কথা জানতে চাই। বটকৃষ্ণবাবুর সঙ্গে কি আপনি একই ট্রেনে কলকাতা গিয়েছিলেন?
বটোর সঙ্গে? আমি? আমার মাথা খারাপ হয়েছে? বটো ছিল বউদির চর। তার ওপর মিথ্যা করে বউদির নামে আমাকে লাগাতে আসত। আবার আমার নামে বউদির কান ভারী করত। সাঁতরা মশাই খাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন। আপনি জানেন না স্যার। ওই বটোই রায়বাবুকে আমাদের নামে একইভাবে মিথ্যেমিথ্যি কি সব বলে আসত। বরাবর ওর এই স্বভাব ছিল। আমার ছোট ছেলে অনিল পোস্টমাস্টার। ওকে জিজ্ঞেস করলেই
কর্নেল বললেন, করেছি।
ও হ্যাঁ। সুনীল বলছিল বটে। আপনারা আগে অনিলের কাছে গিয়েছিলেন। সাঁতরামশাই কাঁচুমাচু মুখে হেসে চাপা স্বরে ফের বললেন, দয়া করে একটু খুলে বলুন না স্যার, কি ব্যাপার? আপনাদের সেবাযত্নের জন্য যতটা করা দরকার, আমি করব।
কর্নেল প্রায় অট্টহাসি হাসলেন। সেবাযত্ন? নাহ সাঁতরামশাই। এই যে আপনি সরল মনে কথা বলছেন, এটাই আমার কাছে যথেষ্ট সেবাযত্ন।
এবার সাঁতরামশাইয়ের মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, বটোর কোনও ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না স্যার। মা কালীর দিব্যি। বিশ্বাস করুন।, না, না। আমি ও ব্যাপারে আসিনি। আপনি নিশ্চিন্ত হোন। বলে কর্নেল একটু বললেন, আপনার ছোটছেলে অনিলবাবু দুঃখ করে বলছিলেন, বাবা আমাকে মিথ্যেমিথ্যি ভুল বোঝেন।
সাঁতরামশাই নিমেষে আবার খাপ্পা হলেন। মিথ্যেমিথ্যি? ও এবাড়ি ইদানীং যাতায়াত করছে বা কথাবার্তা বলছে বটে, কিন্তু অন্য কোনও বাবা হলে ওকে লাঠিপেটা করত। ত্যজ্যপুত্র করে ছাড়ত। ঘরের শত্রু বিভীষণ।
আমার মনে পড়ল, গতকাল সন্ধ্যায় সুনীলবাবুও এই কথাটা বলেছিলেন ছোটভাই সম্পর্কে। তাই আমিই প্রশ্নটা করে ফেললাম, অনিলবাবু কেন ঘরের শত্রু বিভীষণ সাঁতরামশাই?
কর্নেল দ্রুত বললেন, ওসব পারিবারিক ব্যাপার ওঁদের। সব পরিবারেই এটা থাকে।
সাঁতরামশাই খাপ্পা হয়েই ছিলেন। বললেন, না স্যার। কোনও পরিবারে এমন শত্রু থাকে না। ওর মা বেঁচে থাকলে অ্যাদ্দিন–হুঁ। নেহাত আমি ভালমানুষ বলেই চুপচাপ আছি।
কর্নেল অমায়িক কণ্ঠস্বরে বললেন, ব্যাপারটা খুলে বললে আমি অনিলবাবুকে শায়েস্তা করে দিতে পারি সাঁতরামশাই।
সাঁতরামশাই চাপা স্বরে বললেন, বউদির সন্তানাদি নেই। পুষ্যি নিয়েছেন। নরেনবাবুর ছেলে অচিন্ত্যকে। মহা ধড়িবাজ গুণ্ডা। বউদির শখের বেড়াল। কিন্তু বেড়ালের চেয়ে ধূর্ত স্যার। সেই হারামজাদার সঙ্গে অনিলের একসময় গলাগলি ভাব ছিল। বুঝলেন?
বুঝলাম। বলুন।
সেই বদমাসটি ওই গাধা–মানে অনিলকে দিয়ে আমার সিন্দুক থেকে একটা দলিল রেকর্ড-পরচানকশার ফাইল হাতিয়ে বউদিকে দিয়েছিল। ফাস্ট সেটলমেন্টের রেকর্ড-নকশা স্যার। সব বাবা আমার জিম্মায় রেখেছিলেন। কারণ আমার দাদা ছিল মনভোলা ধরনের লোক। খামখেয়ালি যাকে বলে।
তারপর?
তারপর আর কি? যেমনই সন্দেহ হল, অনিলকে পৃথগান্ন করে দিলাম। নাও। এবার ঠেলা বোঝ। হারামজাদা এমনই গোঁয়ার, এখনও বলে, বেশ করেছি। কিন্তু কি করব বলুন? নিজের ছেলে। ঘরের শত্রু বিভীষণ হলেও ওর মায়ের মুখ চেয়ে ক্ষমাঘেন্না করে স্যার। ওকে শায়েস্তা করে দিন তো। আপনার সেবাযত্নের ত্রুটি হবে না।
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। আসি সাঁতরামশাই।
সাঁতরামশাই গেট পর্যন্ত বিদায় দিতে এলেন। আবার চাপাস্বরে সেবাযত্নের কথা তুললেন। বুঝলাম, কথাটার মানে ঘুষ। গেটে দাঁড়িয়ে কর্নেল হঠাৎ বললেন, আর একটা কথা সাঁতরামশাই। বটকৃষ্ণবাবু কি কখনও আপনাকে বলেছিলেন কেল্লাবাড়ির গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছেন?
আচমকা এই প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সাঁতরামশাই বললেন, ধড়িবাজ ঠগ। ওইরকম কত মিথ্যা কথা বলত। ওর কথা আমি কানে নিতাম না।
তাহলে উনি বলেছিলেন আপনাকে?
সাঁতরামশাই বললেন, হ্যাঁ। মিথুকের শিরোমণি।
এইসময় এক ভদ্রলোক সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। সাইকেল থামিস উত্তেজিতভাবে বললেন, নবদা। সর্বনেশে কাণ্ড। কেল্লাবাড়িতে পুলিশ আবাদ একটা ডেডবডি পেয়েছে। মাটির তলায় পোঁতা ছিল। কার বডি জানো, তোমার বউদির পুয্যি সেই অচিত্যের বডি। বাপ। আমার মাথা বন বন কয়ে ঘুরছে।