স্বপ্ন হলেও সত্যি
ভূতচতুর্দশীর রাত –ঘড়িতে তখন প্রায় ২টো বাজছে।বৃথি খেয়াল করেনি কখন এতো রাত হয়ে গেলো।আসলে বৃথির সামনে এক্সাম থাকায় ও প্রতিদিন রাত জেগে পড়ে। তাই আজ ও পড়তে পড়তে ওর দেরি হয়ে গেছে।বৃথি বি.এন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।ওর বাড়ি কলেজ থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় ও হোস্টেলে থাকে।ওরা ৩ জন একটা রুমে থাকে।টিনা আর মিষ্টি ওর রুমমেট। কলেজ ছুটি থাকায় হোস্টেলে প্রায় কেউ নেই বললেই চলে,মাত্র ১০জন আছে।তার মধ্যে বৃথিদের ফ্লোরে ৪জন আছে,আর বাকি ৬জন বৃথিদের নীচের ফ্লোরে থাকে। মিষ্টি দের বাড়িতে কালীপুজোর জন্য ও আজ সকালেই হোস্টেল থেকে বাড়ি গেছে।বৃথি আর টিনার সন্ধ্যাবেলায় কোচিং ক্লাস থাকার জন্য ওরা সবাই পরের দিন বাড়ি যাবে।
এইদিকে রাত হয়ে যাওয়ায় টিনা ঘুমিয়ে গেছে আর বৃথি পড়েছে মুশকিলে ।রাতের বেলায় ওয়াশরুমে একা একা কীভাবে যাবে !এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে সে হোয়াটসঅ্যাপটা অন করে স্টেটাস চেক করছে,এমন সময় বাইরে একটা কীসের আওয়াজ পেল। হঠাৎ কী একটা ভেবে ও ভয় পেয়ে গেল।তারপর আস্তে আস্তে গিয়ে দরজার কাছে কান পাতল,ও শুনতে চেষ্টা করছিল বাইরে সত্যি কি কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছে কি না।
কিন্তু ও মা! ও প্রায় ১৫মিনিট দরজার কাছে কান পেতে শুনার চেষ্টা করছে ,কোথাও কিছু শুনতে পাই না। তাই ও আবার বিছানায় গিয়ে বসে , আস্তে আস্তে পাশের টেবিল এ রাখা জলের বোতল টা প্রায় খালি করে ফেলে । ও ফোন টা যেই হাতে নিয়েছে আবার হটাৎ করে বাচ্চা কান্নার আওয়াজ আসে। ও তো প্রায় ভেবেই পাচ্ছে না এই বাচ্চা আবার কাদের, ও আজ পর্যন্ত কোনদিন বাচ্চা কান্নার আওয়াজ তো পায়নি,যতদূর জানে আশেপাশে কোনো বাচ্চাও নেই।
এরপর ও আর দরজার কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। তাই ও ভাবে টিনা কে ঘুম থেকে তুলে ওর সাথে ওয়াশরুম যাবে। সেই ভেবে যেই টিনা কে তুলতে যাবে তখন টিনার মুখের দিকে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে যাই,”ইসস্ মেয়েটা একদম বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে, মুখটা কী মায়াময়।”
তাই ও আর টিনাকে ডাকল না।বৃথি বরাবরই একটু ভীতু প্রকৃতির । তবুও সে দিন ও মনে সাহস নিয়ে একাই ওয়াশরুমে যাবে বলে দরজার দিকে গেল। তারপর আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে ফেলে বাইরে বেরিয়ে এল। চারিদিকটা কেমন শুনশান লাগছে,গাঢ় অন্ধকার, আজকে যেন একটু বেশি গা ছমছমে ভাব মনে হচ্ছে বৃথির।তবুও ও মনে একপ্রকার সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়াশরুমের দিকে।বৃথি বারবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছে,ওর মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সেই মুহূর্তে ও পিছন ঘুরে ঘুরে দেখছে কিন্তু কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। অবশেষে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো, তখনই ও অনুভব করল একটা ঠান্ডা হাওয়ায় ওর সারা শরীর কেঁপে উঠলো। বাঁ দিকে তাকাতেই ওর মনে হলো কিছু একটার কালো ছায়া সরে গেল।বৃতি এসব আর সহ্য করতে পারছে না, ভয়ে ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন ওর পা গুলো ওখানেই আঁটকে গেছে।ও মনে মনে ভগবানকে ডাকছে আর বলছে,”ভগবান আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও,আর কোনদিন একা একা ওয়াশরুমে আসব না।”আর ভগবান ওর কথা শুনতে না পেলেও হোস্টেলের পেত্নী গুলো ঠিকই শুনেছে মনে হয়, তাইতো হঠাৎ করেই ওয়াশরুমের লাইটগুলো একসাথে দপদপ করতে করতে নিভে গেল। এবার আর বৃথি কে কে দেখে,ও একছুটে ওর রুমে পৌঁছে গেল।ও এতো তাড়াতাড়ি ছুটেছে তাতে এরোপ্লেনের গতিকে হার মানাবে ।
হঠাৎ করে বৃথির ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।তার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।ও চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল, আসলে পড়তে পড়তে ও কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। তারমানে ও এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল ,এটা ভেবে ও মনে মনে হেঁসে উঠল।নিজেই নিজেকে বলছে,”দূর্…আমি কী বোকা!”এসব ভাবতে ভাবতেই ও দরজার বাইরে একটা আওয়াজ পেল… তাহলে কি বৃথির স্বপ্ন সত্যি হবে?…