Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্বপ্নচূর্ণ || Sankar Brahma

স্বপ্নচূর্ণ || Sankar Brahma

“হাট্টিমা টিম্ টিম্
তারা মাঠে পাড়ে ডিম্!
তাদের খাড়া দুটো শিং,
তারা হাট্টিমা টিম্ টিম্।”

ছড়াটি পড়তে গিয়ে বাবলি একবার ভাবল, আচ্ছা হাঁস, মুরগি তো মাঠে ডিম পাড়ে। কাক কোকিল এরা সবও ডিম পাড়ে। কিন্তু এদের কারও মাথায় তো শিং নেই। ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’ তাহলে এমন কী প্রাণী? যার মাথায় শিং আছে, আবার তারা মাঠে গিয়ে ডিম পাড়ে?

যাদের মাথায় শিং আছে, যেমন গরু, মহিষ, ছাগল, হরিণ এরা তো ডিম পারে না। বাচ্চার জন্ম দেয় এরা। যারা বাচ্চার জন্ম দেয়, তাদের বলে জন্তু- জানোয়ার। এক কথায় পশু।
আর যারা ডিম পাড়ে, তারা সবাই পাখি জাতীয় প্রাণী, পশু নয়।

বাবলির এখন সাত বছর বয়স। ক্লাস টু-তে পড়ে সে। স্কুলের নাম ‘বীণাপানিদেবী প্রাথমিক বিদ্যালয়’। সেখানে ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে পড়াশুনা করে। ছুটির আগের পিরিয়ডে লীনা আন্টি তাদের গল্প শোনান, বাংলা ছড়া পড়ে শোনান। স্কুলে লীনা আন্টির মুখেই ছড়াটা শুনেছে বাবলি। তাই সে ভাবল লীনা আন্টির কাছেই জানতে হবে, ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’ কী প্রাণী?
সেদিন রাতেই বাবলি, স্বপ্নে দেখা পেল, একটি অদ্ভূত কিমাকার জাতীয় প্রাণীর। বড় বড় ডানা মেলে তাদের স্কুলের মাঠে এসে নামল। তারা তখন বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা খেলছিল। পাখিটার মাথায় বড় বড় তিনটে শিং যা দেখেই তারা সকলে ভয় পেয়ে গেল। সবাই তখন খেলা থামিয়ে ভয়ে একসঙ্গে এসে এক জায়গায় জড়ো হলো। তা দেখে পাখিটা হেসে বলে উঠল –

“ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না—
সত্যি বলছি কুস্তি ক’রে তোমার সঙ্গে পারব না ।
মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই !
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না—
জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না ?”

বাবলি ভাল করে লক্ষ্য করে দেখল,

পাখিটার পিছনের পা দু’টি মুরগীর মতো। তবে তার নখগুলি শকুনের মতো খুব ধারাল। সামনের পা দু’টি মানুষের হাতের মতো। হয়তো ওই দু’টি তার হাতই হবে, বাবলি মনে মনে ভাবল। মুখটা তার ঈগল পাখির মতো। ঠোঁট দু’টি ছুঁচোলো। মুখে ভিতরের দাঁত রাক্ষসের মতো ধারালো। গা টা তার বড় বড় পালকে ঢাকা থাকলেও লেজের কাছে ঝাঁটার শলার মতো সজারুর ধারাল কাঁটা। তার বাঁ হাতে একটা গাছের ডালের মোটা মুগুর। যা দেখে, সত্যিই খুব ভয় লাগে।
বাবলি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল, – কে তুমি?

  • হা হা হা, আমি, হিং টিং ছট’।
  • তুমি ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’- নও?
  • না, ও তো আমার ছোট ভাই।
  • কে?
  • ওই ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’।
  • তাই নাকি? ওকে একদিন এখানে নিয়ে আসবে তোমার সঙ্গে করে।
  • ও এখন আসতে পারবে না।
  • কেন?
  • ডিমে তা দেবে।
  • কি হবে তা দিয়ে?
  • ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে।
  • কার বাচ্চা?
  • কার আবার? ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’-য়ের।
  • আমাকে একটা ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’-য়ের বাচ্চা এনে দেবে?
  • কেন, কি করবে তুমি বাচ্চা দিয়ে?
  • ঘরে নিয়ে গিয়ে পুষবো।
  • বেশ, তবে এনে দেবো।

বলেই সে তার বড় বড় ডানা দু’টি খুলে ঝারা দিয়ে বলল, বেশ আমি এখন চলি তবে।
বলেই সে তার ডানা দু’টি নেড়ে উড়ে চলে গেল।
বাবলি দেখল, সত্যি সত্যিই ‘হিং টিং ছট’ তার হাতের মুগুর দিয়ে কাউকে মারল না। রাক্ষসের মতো বড় বড় দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খেলো না, শিং দিয়েও কাউকে গুঁতোলো না।
‘হিং টিং ছট’-য়ের মাথার ব্যামোর কথা ভেবে, মনে মনে বাবলির খুব কষ্ট হলো। পাখিদের সমাজে তো কোনও ডাক্তার কবিরাজ নেই। সে তবে আর কার কাছে, তার মাথার ব্যামোর কথা জানাবে? তাই সে কথা বাবলিদের জানিয়েছে।

মায়ের ডাকে বাবলির ঘুমটা ভেঙে গেল। কিরে বুলি উঠবি না। আর কত ঘুমাবি? ওঠ এখন। না হলে, স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাবে কিন্তু। মা তাকে বুলি বলে ডাকে। বাবলি বলে ডাকে না।
বাবলি ঘুম থেকে উঠে চোখ রগরাতে রগরাতে বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে, চোখ মুখ ধুয়ে এলো। স্কুলে যাওয়ার আগে দুধ রুটি খেতে খেতে ভাবলো, স্কুলে গিয়ে তপুকে কথাটা বলতে হবে। তপুর ভাল নাম তপন। বন্ধুরা অনেকেই তাকে তপু বলে ডাকে। কিন্তু দিদিমণি বা মাষ্টার মশাইরা অবশ্য তপন বলে ডাকে।
তার পাশে জায়গা খালি থাকলে, তপন এসে প্রায়ই বসে। আজ সে আগে স্কুলে গিয়ে, তপনের জন্য তার পাশে জায়গা রাখবে।
তার বাড়ি থেকে বীণাপানিদেবী প্রাথমিক বিদ্যালয় যেতে আম বাগান পেরিয়ে একটা মাঠ পড়ে। মাঠ পেরিয়ে গেলে তার স্কুল। আজ স্কুলে যাওয়ার সময় সে মাঠে একটা ডিম পড়ে আছে দেখতে পায়। ডিমটা দেখতে হাঁসের ডিমের মতো দেখতে। উপরের খোসার রঙটা বাহারি বাদমী লাল। হয়তো এটা ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’-য়ের ডিম। মনে মনে ভাবলো বাবলি।

ছড়ায় তো বলাই আছে –
“হাট্টিমা টিম্ টিম্”
তারা মাঠে পাড়ে ডিম্!
এই ভেবে সে ডিমটা তুলে নিয়ে বইয়ের ব্যাগে সাবধানে রাখল। যাতে না ভেঙে যায়। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এটা থেকে বাচ্চা করতে হবে ‘তা’ দিয়ে।
যদিও সে জানে না, ‘তা’ কিভাবে দিতে হয? লীনা আন্টির কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে।
তপু ডিমটা দেখলে, আশ্চর্য হয়ে যাবে, এই ভেবে, বাবলি অন্যমনস্কভাবে স্কুলের দিকে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ পিছনে ধুপ-ধাপ আওয়ার শুনে তাকিয়ে দেখে, তার কমলা রঙের স্কুল ড্রেস দেখে একটা ষাঁড় তার দিকে ছুটে আসছে। সে দৌড়তো গিয়ে সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। ব্যাগটা আছড়ে পড়ে রাস্তায়। ষাঁড়টা তা দেখে, তাকে পেরিয়ে সামনের দিকে চলে যায়। বাবলি মাটি থেকে উঠে বসে, জামার ধূলো ঝারে। তারপর রাস্তার ধূলো থেকে ব্যাগটা কাছে টেনে এনে, ব্যাগের চেন খুলে দেখে, ঠিক সে যা ভেবেছে তাই। ডিমটা ভেঙে কুসুমটা এবং লোদ লোদ সাদা অংশটা বই খাতায় লেগে গেছে। সে ব্যাগ থেকে আলগোছে বইখাতাগুলি বের করে নেয়। ব্যাগের চেনটা টেনে ব্যাগের মুখটা আটকে দেয়। তারপর বইখাতাগুলি ডান হাতে নিয়ে, ব্যাগটা বাঁ হাতে ঝুলিয়ে, স্কুলে যাওয়ার বদলে বাড়ি ফিরে আসে। ব্যাগের মধ্যে তার স্বপ্ন, শিশু ‘হাট্টিমা টিম্ টিম্’ চুরমার হয়ে পড়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *