স্নেহলতা
আটপৌরে মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে রমেশ , কলেজ পাশ করেই সে চাকরি পায়। মধ্যবিত্ত পরিবারে যা হয় চাকরি পেয়ে গেছ, এবার বিয়ে করতে হবে । কেননা মা আর কতোদিন সংসার একার হাতে সামলাবে । তার বয়স তো হচ্ছে বাপু। এবার বিয়ে করে ফেলো বাছা। তোমার মায়ের ও এবার চাই একজন সঙ্গী। সেই মতো বাবা ছেলের পাত্রীর খোঁজ শুরু করলন। একে একে সব মেয়ে দেখা হচ্ছে তবে পছন্দ ঠিক হচ্ছে না । ওইদিকে মায়ের আর সবুর হচ্ছে না । কিন্তু ভালো পাত্রী না পেলে তো আর বিয়ে দেওয়া যায় না, এই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তাদের পাশের বাড়ি মেজ গিন্নির ঘরে তার ভাইয়ের মেয়ে স্নেহলতাকে মা দেখেন । মনে মনে ভাবে মেজ গিন্নিকে একবার কথাটা পেড়ে দেখি সে কি বলে । তর স ই ছিল না বলেই তিনি বলে ফেললন তোমার ভাইয়ের মেয়ের সাথে আমাদের খোকার বিয়ে দেবে । শুনে তো মেজগিন্নি আনন্দে আত্মহারা কারণ পরিবার হিসেবে কল্যাণীদের বেশ নাম ও ডাক আছে । একদিন সবাই মিলে পাত্রী দেখতে গেলো চুঁচুড়ায়। দুই বাড়িতে সবার পাত্র পাত্রী পছন্দ হয়।অবশেষে শুভ দিনে স্নেহলতা আর রমেশের বিবাহ হয়ে যায় বিয়ে হওয়ার কিছু দিন যেতে না যেতেই স্নেহলতা বুঝতে লাগলো তার শ্বশুর শাশুড়ি যতটা মিশুকে কিন্তু তার স্বামী ঠিক ততটা নয় । স্নেহলতা লেখাপড়া জানা মেয়ে নিজেও কিছু লেখালেখি করে তার মনের মধ্যে নানান কথা আসতে লাগলো । একদিন সন্ধ্যায় রমেশ জলদি ফিরলে চা দিতে দিতে এসে তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলো তার কি স্নেহলতা কে ভালো লাগে না ?
শুনে রমেশ বলে ভালোমন্দ বুঝি না , বাবা ও মা বিবাহ দিয়েছেন , তাদের কথায় উপর তার কথা খাটে না , তবে স্নেহলতা তাকে বিরক্ত না করে মায়ের সাথেই সময় কাটাক এটাই সে চায় । এই কথা শুনে তার মনের মধ্যে সন্দেহ হলো রমেশ হয় তো তাকে পছন্দ করে না , এই কথা শোনার কিছু দিনের মধ্যে স্নেহলতার মা অসুস্থতার জন্য সে যখন তার বাপের বাড়ি যেতে চাইলো তার শ্বশুর বাড়ির লোক অসম্মত হলো তাকে পাঠাতে , এমন কি রমেশ তার বাবা ও মার কথায় সায় দিল । এই ব্যবহারের পর স্নেহলতা মনের দিক থেকে অনেক ভেঙে পড়লো । দিন যায় রাত যায় রমেশের কথাবার্তা আর তার বাবা ও মায়ের কথা স্নেহলতার অসহ্য লাগতে লাগলো , সে ঠিক করলো সে রমেশ কে ডিভোর্স করবে এই কথা সে পাশের বাড়ি আত্মীয় কে বলাতে সে থামিয়ে বললো প্রতিবাদ করে লাভ নেই তার এই আশা পূর্ণ হবার নয় । কিন্তু স্নেহলতা নাছোরবান্দা সেও ভাবলো সে তো রমেশ কে পরিত্যাগ করবে ।এই নিয়ে সে ভাবতে লাগলো হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল উদয়কে । তার বিয়ের সময় বলেছিল যদি জীবনে কোনোদিন কোনো রকম সাহায্য দরকার হয় সে যেনো তার কাছে চায় । এইকথা ভেবে একদিন পুরানো ডাইরি ঘেঁটে উদয়ের ফোন নম্বর পেলো এবং পাওয়া মাত্রই সে তাকে ফোন করলো সৌজন্যে বিনিময় পর সে উদয়কে বললো তার তাকে খুব দরকার প্রথমে উদয় না বুঝলেও পরে সব কথা শোনার পর সে বলে সে তো ডিভোর্স পাইয়ে দেবে কিন্তু তারপর তার জীবন । স্নেহলতা বলে এখান থেকে মুক্তি পেয়ে সে তার বাপের বাড়ি যাবে না, কারণ আরোও সমাজ খুব নিষ্ঠুর একটা ডিভোর্স জন্য একজন মেয়েকে অনেক কটু কথা শুনতে হয় , , তাই সে ডিভোর্স নিয়ে কোনো হোমে থাকবে। সেখানে কাজ করে বাকী জীবন কাটিয়ে দেবে । এই কথা শোনার পর উদয় বলে সে তাকে সব রকম সাহায্য করবে । প্রথমে রমেশ তাকে ডিভোর্স দিতে চায় নি , কিন্তু অশান্তি আর সবাই সব কিছু জানতে পারবে এই কথা ভেবে সে তাকে মিউচিয়াল ডিভোর্স দেয় । এটা একটা ডিভোর্স নয় একটা অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুরুষের হাত থেকে সে মুক্তি পায় । অবশেষে উদয়ের সাহায্য একটা হোমে সে থাকতে লাগে ।
বছর ঘোরার পর উদয় একদিন তাকে তার মনের কথা বলে , শুনে প্রথমে একটু ভাবে পরে রাজি হয়ে যায় । দিনতো চলতে থাকে। আজ স্নেহলতা দুই সন্তানের মা পুরোপুরি গিন্নি , একজন সমাজ সংস্কারক । কিছুদিন পর তার বড় ছেলের বিবাহ।।