Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 11

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

বিন্ধ্য পর্বতে নিবন্ধ্যার নদীর তীরে গভীর অরণ্য ছিল। সেখানে শবরদের বাস ছিল। তাদের প্রধান জীবিকা ছিল শিকার। কিন্তু গভীর জঙ্গলের পথ ধরে কোন তীর্থ্যাত্রী কিংবা পথচারী গেলে তাদের সব লুটপাট করে নিয়ে পালাত। অনেক সময় তাদের প্রাণেও মেরে ফেলত।

এই শবররা এক সঙ্গে থাকত। তাদের মধ্যে পিঙ্গা নামে এক শবর ছিল ভয়ানক দুর্ধর্ষ। তার শক্তির কাছে কেউ এঁটে উঠতে পারত না। সেজন্য সকলে তার কথামত চলত।

একদিন সেই পিঙ্গাক্ষের মনে পরিবর্তন এল। লুঠতরাজ সে বন্ধ করে দিল। শিকার করতেও তার মন নেই। যদি মাঝে মাঝে শিকার করত তাও বেছে বেছে! সব পশুর ওপরে তার মায়া হতো। তারা নিরীহ সব জীব। কেমন মনের আনন্দে তারা বনের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা ও তাদের সন্তানদের আদর করে খাবার এনে খাওয়ায়। দুধ খাওয়ায়। কোন পশু হয়ত নদীতে জল খাচ্ছে তখন অন্য কোন ব্যাধ তাকে মরাবার চেষ্টা করলে পিঙ্গাক্ষ তাকে বাধা দেয়। বলে বেচারা তৃষ্ণার্ত জল খাচ্ছে, ওকে এই অবস্থায় মারা উচিত হবে না। কোন পশু হয়ত তার সন্তানকে স্তন দিচ্ছে। কেউ তাকে মারতে চাইলে তাকেও একই ভবে সে বাধা দিত। বলত দেখো কত সুন্দর দৃশ্য, বাচ্চাটা মায়ের কোলে বসে দুধ খাচ্ছে আর তার মা তাকে কত আদর করছে। আচ্ছা ওরা কি দোষ করেছে যে, আমরা ওদের মারব।

পিঙ্গাক্ষের এই পরিবর্তন দেখে সকল ব্যাধ অবাক হল। তারা বলে, এ আবার বলে কি? আমরা তো ব্যাধ। শিকার করা আমাদের পেশা। শিকার না করলে আমরা বাঁচব কেমন করে?

একদিন পিঙ্গাক্ষ সবাইকে ডেকে বলল– এই বন দিয়ে যত তীর্থযাত্রী কিংবা পথিক যাবে তাদের যেন কোন ক্ষতি না করা হয়, তারা যেন এখান দিয়ে নির্ভয়ে যেতে পারে। কেউ যদি আমার আদেশ না মানে তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে না।

পিঙ্গাক্ষের আদেশ শুনে সব ব্যাধ মুস্কিলে পড়ে গেল। সাহস করে কেউ তার প্রতিবাদ করতে পারল না। ব্যাধেরা আর আনন্দ করবার সুযোগ পেল না। তারা অন্যভাবে জীবনধারণ করার চেষ্টা করল।

তীর্থযাত্রীরা ধীরে ধীরে বুঝল ব্যাধরা আর নেই। তারা এখন ধার্মিক। অরণ্য অভ্যন্তরস্থ বনপথে আর কারো কোনো ভয় নেই। সবাই নির্ভয়ে চলতে লাগল। যদি কখনও কোন পশু জন্তুদের দ্বারা বিপদ আসে, পিঙ্গাক্ষ ছুটে এসে তাদের বিপদমুক্ত করে দেয়। যাত্রীরা সন্তুষ্ট হলো। বেশির ভাগ ব্যাধ পিঙ্গাক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াল। তারা মানল না আর গোপনে তারা অন্য একটা দল গড়ল, সেই দলের নেতা হল তারা। সেই তারাক্ষ হল পিঙ্গক্ষের কাকা। ভাইপোকে সে কোনদিনই সহ্য করতে পারত না। সবাই তাকে মেনে চলত বলে। তাই এতোদিন সে চুপ করেছিলো। মনে মনে সে সবসময় ভাবত যেমন করেই হোক পিঙ্গাকে শেষ করে দিতে হবে।

তারা তাদের খুশিমতো পশু-পাখি শিকার করতে লাগল। কিন্তু তা যখন পিঙ্গাক্ষের নজরে আসত তখন সে ধমক দিত। তখন তারা একটু সাবধান হয়ে যেত। কিন্তু সেও যেই চলে যেত আবার যেই কে সেই।

একদিন এক শিবভক্ত তীর্থযাত্রীর দল কাশীধামে চলেছে, মণিকর্ণিকার ঘাটে স্নান করে বাবা বিশ্বেশ্বরের পূজা দেওয়ার জন্য। তারা নির্বিন্ধ্য নদীর পাড় ধরে চলেছে। হঠাৎ তারাক্ষর দল তাদের উপর চড়াও হয়ে মারধর করতে লাগল। পিঙ্গাক্ষ অনেক দূরে ছিল কিন্তু তবু সে তাদের চিৎকার শুনতে পেয়েছিল। চিৎকার শুনে সে ছুটে এল। এসে দেখল তারাক্ষের দল তীর্থযাত্রীদের কাছে থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মারধরও করেছে তাদের। পিঙ্গাক্ষ রেগে আগুন হয়ে গেল। গর্জন করে বলল– পিঙ্গাক্ষ এখনো মরেনি। যদি তোমরা ভাল চাও তো ওদের জিনিস ফিরিয়ে দাও। এবং বল যে আমরা আর এমন কাজ করব না। যদি না মানে তাহলে আমার হাত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।

পিঙ্গাক্ষের কথা শুনে তারাক্ষের দল ঘাবড়ে গেল। কিন্তু তারাক্ষ গর্জন করে বলতে লাগল, কে রে তুই? তোর কথা মানতে হবে। আমি এখানকার অধিপতি। আমরা যা ইচ্ছা তাই করব। তুই বলার কে? যদি ভাল চাস তো সরে পড়, তা না হলে তোকে আজ আমার হাতে প্রাণ হারাতে হবে। তারাক্ষের এই কথা শুনে পিঙ্গাক্ষ আরো আগুনের মতো জ্বলে উঠল। বলে আগে তোরা এই তীর্থযাত্রীদের জিনিসপত্র, টাকা-কড়ি ফিরিয়ে দে, তারপর আমি যাব। যদি না ফিরিয়ে দিস, তাহলে আমি জোর করে তোদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ওদেরকে দিয়ে দেব।

তারাও আর স্থির থাকতে পারল না। তার অনুচরদের আদেশ করল পিঙ্গাক্ষকে বিনাশ করতে। হুকুম পাওয়া মাত্র তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল পিঙ্গাক্ষের উপর। একদিকে পিঙ্গাক্ষ আর একদিকে তারাক্ষের দলের বহু লোক। তির ছোঁড়া শুরু হল। কিন্তু একা পিঙ্গাক্ষ কতক্ষণ লড়বে তাদের সঙ্গে। পিঙ্গাক্ষের দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। তবু সে তীর্থ্যাত্রীদের আগলে রাখল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, পিঙ্গাক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হল। সারা দেহ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এদিকে পিঙ্গাক্ষের অস্ত্রে ইতিমধ্যে তারাক্ষের দলের বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারাও আর এগোতে সাহস করল না।

রাত্রিতে পিঙ্গাক্ষের কুটিরে সব তীর্থযাত্রীরা থাকল। ভোর হতেই তারা আবার রওনা দিলেন কাশীর উদ্দেশ্যে।

পিঙ্গাক্ষ তখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়। তখন সে মনে মনে ভাবছে আমি যদি সর্বশক্তিমান হতাম, তাহলে অধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারতাম। পাপীদের শেষ করে দিতাম।

মরার সময় যে যেই ভাব নেয়, পরজন্মে সে সেই ভাব নিয়েই জন্মলাভ করে। শিবের প্রসাদে পিঙ্গা হল তাই। সেই ব্যাধ পিঙ্গাক্ষ দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ অর্থাৎ নৈঋত কোণের অধিপতি হল পরজন্মে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *