Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 10

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

পূর্বে গালব নামে এক মহর্ষি ছিলেন, সত্যবাদী, শুচিব্রত ব্রহ্মধ্যান যুক্ত মহর্ষি নিজের আশ্রমে বসেই তপঃসাধনা করতেন। তাঁর কন্যা কান্তমতী মহারূপবতী। সে বাবার কাছে থাকত, বাবার কাজে সে সাহায্য করত। ফুল তোলা, বেদীর মার্জনা, হোমের কাঠ সংগ্রহ করত, বাবার সেবাও করত।

একদিন কান্তমতী ফুল তুলতে বনে গেল। ফুল তুলে সে বাড়ি ফেরার সময় সুদর্শন আর সুকর্ণ নামে দুজন বিদ্যাধর কুমার বিমান থেকে সেই কান্তমতাঁকে দেখতে পেলেন।

তাঁরা মনে ভাবলেন, মদনের স্ত্রী রতির মতো সুন্দরী এই কন্যা দেখতে। সুদর্শন তাকে দেখে বিমান থেকে নেমে জিজ্ঞেস করল, তুমি কার কন্যা? তোমার রূপ দেখে আমি মোহিত হয়েছি। তোমাকে রতির মত দেখে কামানলে দগ্ধ হয়েছি। আমি সুকুণ্ঠ। বিদ্যাধরপতির পুত্র, নাম সুদর্শন। তুমি যদি আমাকে পতিরূপে গ্রহণ কর, তাহলে তুমি সকল ভোগই পাবে।

কান্তমতী বলল– আমি মহর্ষি গালবের কন্যা, পিতাকে সাহায্য করার জন্য আমি ফুল তুলতে এসেছিলাম, এখন সময় হয়ে গেছে। যদি আমি যেতে দেরি করি তাতে পূজার সময় অতীত হয়ে যাবে। তাতে আমার প্রতি পিতা কুপিত হবেন। কাজেই আমি এখনই ফিরে যাব। বর্তমানে আমি কুমারী, পিতার অধীন। যদি আমাকে একান্তই কামনা করেন, তাহলে আমার পিতার কাছে গিয়ে আমাকে প্রার্থনা করুন।

এই কথা বলে কান্তমতী আশ্রমের দিকে চলল, তখন সুদর্শন কামতাড়িত হয়ে পেছনে থেকে ছুটে এসে তার এলোকেশ ধরে টানলেন।

মুনিকন্যা কাঁদতে লাগল, — হে পিতা, এই বিদ্যাধরের পুত্রের হাত হতে আমাকে রক্ষা কর, এই দুরাত্মা আমাকে ধরেছে।

গন্ধমাদন পর্বতবাসী মুনিগণ মুনিকন্যার কান্না শুনে গালবকে জানালেন, তারপর সকলেই সেই কন্যার কাছে এলেন। দেখলেন কান্তমতীর হাত ধরে এক যুবক আর তার কিছুদূরে আর এক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। তখন মহর্ষি গালব কুপিত হয়ে বললেন– হে বিদ্যাধরাধম, তুই যখন এমন কুকর্ম করেছিস, তখন তুই মনুষ্যজন্ম লাভ করবি, তারপর বেতাল ভাব ধরে রক্ত মাংসাদি খাবি। রাক্ষস প্রায় বেতালমন সকলে নারীগণকে গ্রহণ করে, তুই তেমন বেতালবৎ বাধ্য করেছিস, তাই তুই মানুষ হয়ে পরে বেতালত্ব লাভ করবি। আর তোর সঙ্গের এই যুবক তোকে যখন পাপ কর্ম করতে নিষেধ করেনি, একেও মানুষ জন্ম লাভ করতে হবে, তবে এর দ্বারা দুষ্কর্ম হয় নি। তাই একে বেতাল জন্ম নিতে হবে না।

দুই বিদ্যাধর কুমারকে অভিশাপ দিয়ে মহর্ষি কন্যাকে নিয়ে নিজের আশ্রমে ফিরে গেলেন। মুনির শাপ শুনে সুদর্শন ও সুকর্ণ অতিশয় চিন্তিত হয়ে পড়লেন, এবং তাঁরা তাঁদের কর্তব্য স্থির করে যমুনা তীরে বসবাসকারী গোবিন্দস্বামী নামে এক ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম নিলেন। তাঁদের নাম হল বিজয় ও অশোক, ক্রমে ক্রমে তাঁরা যৌবন লাভ করলেন।

সেই সময় স্থানটিতে সারাবছর ধরে অনাবৃষ্টি চলে, এর ফলে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন গোবিন্দস্বামী পত্নী ও পুত্রদের নিয়ে কাশীধামে গেলেন। পথে প্রয়াগে তারা এক সন্ন্যাসীকে দেখে প্রণাম করলেন। তখন সেই সন্ন্যাসী ব্রাহ্মণকে আশীর্বাদ করে বললেন– হে ব্রাহ্মণ, তোমার এই জ্যেষ্ঠ পুত্র বিজয়ের সঙ্গে তোমার বিয়োগ হবে।

ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীর কথায় খুব দুঃখ পেলেন। সন্ধ্যাকালে সান্ধ্যপসানাদি করলেন। তারপরে রাত্রিতে এক শূন্য দেবালয়ে শুয়ে থাকলেন। গোবিন্দস্বামীর স্ত্রী আর তার ছোট পুত্র অশোক পথশ্রমের জন্য মাটিতে একটা কাপড় বিছিয়েই তাঁরা শুয়ে পড়লেন। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লেন। বিজয়কে । গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে তার শীত দূর করার চেষ্টা করল তারা, কিন্তু বিজয় সুস্থবোধ করলেন না।

বিজয় তার বাবাকে জানান তার খুব শীত করছে। তার জন্য একটু আগুনের ব্যবস্থা করতে। তাই নিকটবর্তী গ্রামে গিয়ে গোবিন্দস্বামী আগুনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও পেলেন না। শেষ পর্যন্ত ফিরে এসে পুত্রকে বললেন, আমি অনেক বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু এতো রাত্রিতে কেউ দরজা খুলল না।

বিজয় পিতার কথা শুনে বললেন– বাবা তুমি মিথ্যা কথা বলছ, ওই তো সমানে এক ভীষণ অগ্নিশিখা দেখা যাচ্ছে। ওখান থেকে তুমি আমার জন্য আগুন এনে দাও, এই ভীষণ শীত আমি সহ্য করতে পারছি না। গোবিন্দস্বামী পুত্রের কথা শুনে বললেন– বিজয় আমি মিথ্যা বলছি না। তুমি যে আগুন দেখতে পাচ্ছ সেটা মড়াপোড়ানোর আগুন, ওই চিতা থেকে আগুন নিলে আয়ুঃক্ষয় হয়, আমি সেই ভয়ে ওখান থেকে আগুন নিই নি।

বিজয় বললেন– ওই আগুন চিতার হোক বা যজ্ঞের তোক আমাকে বাঁচাবার জন্য তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন, আগুন ছাড়া আমি বাঁচব না।

গোবিন্দস্বামী কোন উপায় না দেখে ওই চিতার আগুন আনতে চললেন। বিজয়ও সঙ্গে গেলেন। চিতার কাছে গিয়ে বিজয় সেই চিতাকে আলিঙ্গন করতে গেলেন, কিন্তু সহসা কি এক কথা ভেবে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর বাবাকে বললেন–বাবা, এই আগুনের মধ্যে রক্তের কি একটা জিনিস খুব উজ্জ্বল ভাবে জ্বলছে।

বস্তুটি গোবিন্দস্বামী ভালোভাবে দেখে বললেন–ওটা একটা মানুষের মাথা, রক্ত মাংসে ভরা।

তখন বিজয় একটা কাঠ নিয়ে সেই নরকঙ্কালের উপর আঘাত করলেন, তখন সেই নরকঙ্কালের মাথাটি ফেটে গিয়ে তার থেকে রক্ত ছিটকে এসে বিজয়ের মুখে পড়ল। বিজয় সেই রক্ত জিভ দিয়ে চাটতে লাগলেন। তখন সে অতি ভয়ঙ্কর বিরাট আকার ধারণ করলেন। সেই রাত্রিতেই তাঁর দুটো দাঁত মুখের বাইরে বেরিয়ে এল। তিনি পিশাচ হয়ে গেলেন, তখন ভয়ঙ্কর শব্দে হাসতে লাগলেন। তারপর সে তার নিজের পিতাকেই আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন।

ঠিক সেই সময় আকাশবাণী হল–ওরে বেতাল তুই এমন কাজ করিস না।

তখন সেই বেতালরূপী বিজয় বাপকে ছেড়ে দেয়। এবং তারপরে আকাশ পথে চলে যায়। সেখানে গিয়ে অন্যান্য বেতালের সঙ্গে মিলিত হয়। নরকপাল ফাটিয়েই পিশাচ হয়েছিল বলে, সবাই তার নাম দিল কপালস্ফোটন। তারপরে অন্যান্য পিশাচরা তাকে নিশাপতি নরাস্থিভূষণের কাছে নিয়ে যায়। তাকে সেনাপতি পদে বরণ করে নেয়। একদিন এক যুদ্ধে গন্ধর্ব চিত্রসেন নরাস্থিভূষণকে বিনাশ করে। তখন পিশাচপতি হলেন কপালস্ফোটন।

এইভাবে বিদ্যাধরের পুত্র সুদর্শন মহর্ষি গালবের শাপে প্রথমে মনুষ্য জন্মলাভ করার পরে পিশাচত্ব লাভ করলেন।

দেবালয়ে ফিরে এসে গোবিন্দস্বামী তার স্ত্রী ও কনিষ্ঠ পুত্রকে সব কথা বললেন। এই ঘটনা শুনে সকলে কাঁদতে লাগলেন। তাদেরকে এভাবে কাঁদতে দেখে সমুদ্র দত্ত নামে এক বণিক তাদেরকে নিয়ে গেলেন এবং আশ্রয় দিলেন।

গোবিন্দস্বামীর কনিষ্ঠ পুত্র অশোক দত্ত নানা শাস্ত্রে পণ্ডিত হয়ে উঠল। এবং বীর নামে খ্যাতি লাভ করল।

একদিন কাশিধামের অধিপতি প্রতাপমুকুটের কাছে এক মল্লবীর রাজা এলেন। সেই মল্লবীরকে পরাজিত করবার জন্য দ্বিজপুত্র অশোককে ডাক দিলেন। বললেন– মল্লযুদ্ধে তোমাকে দাক্ষিণাত্যের অধিবাসী মল্লবীরকে হারাতে হবে। যদি তুমি তাকে পরাজিত করতে পারো তাহলে তুমি আশানুরূপ পুরস্কার পাবে।

রাজার কথামত অশোক দাক্ষিণাত্যের সেই মহামল্লরাজকে ভীষণভাবে আক্রমণ করল। অল্পক্ষণের মধ্যেই মল্লরাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তার দেহ থেকে প্রাণবায়ু বের হয়ে গেল। যে দক্ষতার সঙ্গে দ্বিজপুত্ৰ মল্লযুদ্ধে জয়লাভ করল, তা দেবতাদের পক্ষেও সম্ভব ছিল না। এতে রাজা প্রতাপমুকুট খুব খুশি হলেন। তিনি অশোককে বহু ধন ও বহু গ্রাম দিলেন। একদিন অশোকের সঙ্গে রাজা প্রতাপমুকুট ঘোড়ায় চড়ে নির্জন অরণ্যের মধ্যে বেড়াতে বেরিয়েছেন। পথে তাঁরা শুনলেন, কে যেন বলছে- হে রাজা, আমি অল্প অপরাধ করেছি। আমার এক শত্রুর ইচ্ছায় এক নিষ্ঠুর দণ্ডপাল আমাকে শুলে চড়িয়েছে। আজ চারদিন হয়ে গেল, আমি শূলের উপরে আছি। কিন্তু এখনো আমার প্রাণ বেরোচ্ছে না। আসলে দুষ্কৃতীকারীদের প্রাণ কখনই সুখে বের হয় না।

আমার এখন খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। আপনি আমার তৃষ্ণা মেটান।

এই কথা শুনে রাজা অশোককে বললেন–শূলের ওপরে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে, তুমি তাকে জল দাও। অশোক একপাত্র জল নিয়ে সেই তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির কাছে গেল। গিয়ে দেখতে পেল এক নব যুবতী শূলের নীচে বসে আছে। সেই যুবতাঁকে দেখে অশোক জিজ্ঞাসা করল– তুমি কে? এখানে এই নির্জন শ্মশানে বসে আছো কেন? তখন নারীটি বলল- এই পুরুষটি আমার স্বামী। রাজা একে শূলে চড়িয়েছেন। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যাব। তাই এখানে বসে ওর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা স্বামী শূলের উপর ঘাড় তুলে জল চাচ্ছে। কিন্তু আমি নীচে থেকে জল খাওয়াতে পারছি না।

অশোক নারীর কথা শুনে বলল– তুমি আমার কাঁধে চড়ো, এবং তারপরে তোমার স্বামীকে জল খাওয়াও।

অশোক ঘাড় নীচে করল। তখন সেই নারী তার কাঁধে চড়ে বসল। অশোক দেখতে পেল নতুন রক্ত মাটিতে পড়ছে। অবাক হয়ে উপরদিকে চেয়ে দেখল সেই নারী শূলে চড়ে লোকটিকে খাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে অশোক সেই নারীর নূপুর পরা পা দুটিকে দেখে চেপে ধরল। তখনই সেই নারী নূপুর ছেড়ে পালিয়ে গেল। তারপর অশোক সেই একখানি নূপুর নিয়ে রাজার কাছে এলো, এবং শ্মশানের সব কথা রাজাকে জানাল। সেই নূপুরটি রাজার হাতে তুলে দিল।

অশোকের বীরত্বব্যঞ্জক কাজ দেখে রাজা খুব খুশি হলেন। তিনি নিজ কন্যার সঙ্গে তার বিবাহ দিলেন। একদিন রাজা প্রতাপমুকুট সেই দিব্য নুপুর দেখে ভাবছেন এই নূপুরের আর একগাছি কোথায় পাওয়া যাবে? রাজাকে চিন্তিত দেখে অশোক ভাবল, এই নূপুরটি শ্মশানে যার কাজ থেকে পাওয়া গেছে, দ্বিতীয়টিও তার কাছে পাওয়া যেতে পারে। তখন সে ঠিক করল শ্মশানে গিয়ে মাংস বিতরণ করলে তা খেতে ভূত, নিশাচর, বেতাল সবাই আসবে। তখন সেই রাক্ষসীকে দেখতে পাওয়া যাবে। আর সে রাক্ষস, পিশাচ, বেতালদের বিন্দুমাত্র ভয় পাই না।

এই কথা স্থির করে সে প্রচুর মাংস নিয়ে শ্মশানে গেল। রাক্ষস, পিশাচ, বেতালদি আনন্দে সেখানে এসে মাংস খেল, অনেক রাক্ষস কন্যাও এল তাদের মায়েদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে এক রাক্ষসীকে দেখে সে চিনতে পারল, এই সেই রাক্ষসী যে কাঁধে চড়ে মাংস খেয়েছিল, যার একটা নূপুর নিয়েছিল। অশোক তাকে দেখে বলল- হে রাক্ষসী, তোমার অপর নূপুরটিও আমাকে দাও। সেই রাক্ষসীটির নাম ছিল বিদ্যুৎ, সে অপর নূপুরটাও দিয়ে দিল। সেই সঙ্গে নিজের কন্যা বিদ্যুৎপ্রভাকেও দান করল, বিদ্যুৎপ্রভা ছিল অতীব সুন্দরী, তাকে লাভ করে অশোক খুব আনন্দিত হল। বিদুৎকেশী আপন জামাতাকে একটি স্বর্ণপদ্মও দেয়।

অশোক নূপুর এবং স্বর্ণপদ্ম এবং বিদ্যুৎপ্রভাকে নিয়ে রাজার কাছে এল। রাজা নূপুর পেয়ে উৎফুল্লিত হলেন। এবং অশোকের প্রশংসা করলেন।

অশোক একদিন নির্জনে বিদ্যুৎ প্রভাকে জিজ্ঞাসা করল– তোমার মা এই স্বর্ণপদ্ম কোথায় পেল? আমার ইচ্ছা করছে এমন অনেক পদ্ম আমি সংগ্রহ করি। বিদ্যুৎপ্রভা বলল– কপালস্ফোটন নামে এক বেতালপতি আছে। তার একটি সরোবর আছে। সেই সরোবরে সোনার কমল ফোটে। আমার মা সেই সরোবরে জলক্রীড়া করতে করতে ওই পদ্মটি তুলে এনেছে।

অশোক তার কথায় খুব আনন্দিত হল। সে বলল তুমি আমাকে ওখানে নিয়ে চল। তখন অশোককে বিদ্যুৎপ্রভা সেই কাঞ্চন সরোবরে নিয়ে গেল। অশোক সেই সোনার পদ্মফুল তোলার চেষ্টা করল। তখন সেখানকার বেতালরা তাকে বাধা দিল। তখন অশোক অস্ত্র দিয়ে তাদের সবাইকে বিনাশ করল। তারপর সেখানে এল বেতালপতি কপালস্ফোটন, তাকেও মারার জন্য অশোক উদ্যত হল, তখন আকাশবাণী হল- অশোক আকাশের দিকে তাকাল। সে দেখতে পেল বিমানের মধ্যে বিদ্যাধরপতি। তাঁকে দেখা মাত্রই অশোক শাপমুক্ত হল এবং সে মানুষের রূপ ছেড়ে দিব্যরূপ ধরল।

তখন সুকর্ণকে বিদ্যাধর নিজের বিমানে তুললেন। তাকে বললেন– সুকর্ণ, তোমার ভাই সুদর্শন মহর্ষি গালবের শাপে এই ভাবে বেতালরাজ হয়ে কাল যাপন করছে, আর তুমিও অপরাধের জন্য মানুষের ঘরে জন্মে ছিলে, কিন্তু সুদর্শন মুনি কন্যার কেশ ধরেছিল, তাই জন্য মুনিবর এর শাপমোচনের ব্যবস্থা করেননি। তাই চল আমরা স্বর্গে ফিরে যাই।

তখন সুকর্ণ বলল- না, আমি সুদর্শনকে ছেড়ে একা স্বর্গে সুখভোগ করতে চাই না। যেমন করেই হোক তাকে আমি উদ্ধার করে নিয়ে যাব। এখন আমাকে আপনি বলুন, কেমন করে ভাই-এর শাপমোচন হবে?

বিদ্যাধরপতি বললেন– এই মুনির শাপ কিন্তু দুর্নিবার। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু আমি বলতে পারব না। এ কথা ব্রহ্মা পূর্বে ঘনকাদি মুনিগণকে বলেছিলেন। দক্ষিণ সমুদ্রের তীরে চক্ৰতীর্থের কাছে এক মহৎ তীর্থ রয়েছে। সেই তীর্থ দর্শন করলে মহা পাপরাশি নষ্ট হয়। কিন্তু সেখানে স্নান করলে যে কত পুণ্য হয়, তা আমার জানা নেই। সুকর্ণ, তুমি যদি সুদর্শনকে ওই তীর্থে স্নান করাতে পার, তাহলে মহর্ষি গালবের শাপ নাশ হতে পারে।

সুকর্ণ তখন সেই বেতালপতি কপালস্ফোটনকে নিয়ে সেই তীর্থের জলে স্নান করাল, সঙ্গে সঙ্গে তার বেতালত্ব দূর হল এবং সে দিব্যরূপ লাভ করল। তারপর বিদ্যাধরপতি দুইপুত্রের সঙ্গে বিমানে চড়ে স্বর্গধামে চলে গেলেন। সেই তীর্থের নাম বেতালবরনদ তীর্থ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *