Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সৌরভ (১৯৮৪) || Humayun Ahmed » Page 8

সৌরভ (১৯৮৪) || Humayun Ahmed

সিগারেট আনতে

সকালে কাদেরকে সিগারেট আনতে পাঠিয়েছি, সে সিগারেট না নিয়ে ফিরে এল। তার মুখ অত্যন্ত গম্ভীর।

ছোড ভাই, কাম সাফা! খেল খতম পয়সা হজম!!

সে খবর এনেছে, জেনারেল টিক্কা খানকে মেরে ফেলা হয়েছে। এত বড়ো খবরের পর সিগারেটের মতো নগণ্য জিনিসের কথা তার মনে নেই। দু দিন পরপর কাদের এই জাতীয় খবর নিয়ে আসে। এক বার খবর আনল বেলুচী এবং পাঞ্জাবী এই দুই দলের মধ্যে গণ্ডগোল লেগে ঢাকা কেন্টনমেন্টে দু দলই শেষ। একদম পরিষ্কার।

আরেক বার দরবেশ বাচ্চ ভাইয়ের দোকান থেকে পাকা খবর আনল, মেজর জিয়া চিটাগং এবং কুমিল্লা দখল করে ঢাকার দিকে রওনা হয়েছে। দাউদকান্দিতে তুমুল ফাইট হচ্ছে। রাত গভীর হলেই নাকি কামানের শব্দ শোনা যাবে।

বলাই বাহুল্য, টিক্কা খানের মৃত্যুসংবাদটিও বাঙ্গু ভাইয়ের তোকান থেকেই এসেছে। আমি প্রচণ্ড ধমক দিয়ে কাদেরকে দোকানে ফেরত পাঠালাম। সিগারেট ছাড়া আমি সকালের চা খেতে পারি না। কাদের ফিরল না। ঠিক দু ঘণ্টা অপেক্ষা করে নিচে নেমে দেখি আজিজ সাহেবের ঘরে মীটিং বসেছে; নেজাম সাহেব এবং মতিনউদ্দিন সাহেব দু জনেই মুখ লম্বা করে বসে আছেন। আজিজ সাহেব পায়ের শব্দ শুনেই আমাকে ডাকালেন, শফিক, কী সর্বনাশ! আজকে বেরুবে না। কোথায়ও। খবর শোন নি?

কী খবর?

টিক্কা মারা গেছে।

কে খবর দিয়েছে? আমাদের কাদের মিয়া তো?

খবর দেওয়াদেওয়ির কিছু নেই শফিক! সবাই জানে। আমরা জানলাম সবার শেষে।

আজিজ সাহেব আকাশবাণী ধরে বসে আছেন। এরা খবর দিতে এত দেরি করছে কেন বুঝতে পারছি না। তারা শুধু বলেছে।–ঢাকা থেকে প্রচণ্ড গণ্ডগোলের খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া গেছে। বি বি সি দিনের বেলা পরিষ্কার ধরা যায় না, রাত না হওয়া পর্যন্ত সঠিক কী ঘটেছে, তা জানা যাবে না। নেজাম সাহেব বললেন, তিনি অফিসে যাওয়ার জন্যে বেরিয়েছিলেন, অবস্থা বেগতিক দেখে চলে এসেছেন। দোকানপাট যেগুলি খুলেছিল সে-সব বন্ধ করে লোকজন বাড়ি চলে গেছে। রাস্তাঘাটে রিকশার সংখ্যাও নগণ্য। মদপুর রোডে চেকপোস্ট বসেছে। রিক্সা-গাড়ি সব কিছুই থামান হচ্ছে।

আজিজ সাহেব বললেন, কলিজা শুকিয়ে শুকনা কাঠ হয়ে গেছে শফিক। বাঙালী তো চিনে নাই। এখন চিনবে। ঘুঘু দেখেছে ফাঁদ দেখে নাই।

আমাকে তারা কিছুতেই বের হতে দিল না। আজিজ সাহেব বললেন, আজকের দিনটা খুব সাবধানে থাকা দরকার। ওরা পাগলা কুত্তার মতো হয়ে আছে তো, কী করে না-করে কিছুই ঠিক নাই।

দুপুরের আগেই কী করে এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটল, তা জানা গেল। জেনারেল টিক্কা খান ফাইলপত্র সই করছিলেন। এমন সময় তাঁর ইউনিটের এক জন বাঙালী অফিসার (সে-ই একমাত্র বাঙালী, যে এখনো টিকে আছে এবং পাক আমির কথামতো সমানে বাঙালী মারছে) জেনারেল টিক্কার ঘরে ঢুকাল। তাদের মধ্যে ইংরেজিতে নিম্নলিখিত কথাবার্তা হল।

টিক্কা : কী ব্যাপার কর্নেল মইনা? এত রাত্রে কোনো প্রয়োজন আছে?

মইন : জ্বি স্যার, আছে।

টিক্কা : বেশ, বলে ফেল। আমার হাতে সময় কম। আমি খুবই ব্যস্ত।

মইন : আপনার সময় কম, কথাটি স্যার সত্যি।

এক পর্যায়ে কর্নেল মইন (নামের ব্যাপারে খানিকটা সন্দেহ আছে। কেউ কেউ বলছে মেজর সাঈদ) রিভলবার বের করে পরপর তিনটে গুলী করলেন।

মতিনউদ্দিন সাহেবকে দেখে মনে হল তিনি কিছুটা দিশাহারা, যেন বুঝতে পারছেন না ঠিক কী হচ্ছে। আমাকে বারান্দায় ডেকে নিয়ে নিচু স্বরে বললেন, টিক্কা সাহেবকে অন্যায়ভাবে মারাটা ঠিক হল না।

আমার বদ্ধমূল ধারণা, মতিনউদ্দিন সাহেবের মাথায় ছিট আছে। এখন তিনি নেজাম সাহেবের সঙ্গে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ান। যেখানে তিনি আছেন, সেখানেই মতিন সাহেব আছেন। কন্দেরের কাছে শুনলাম, নেজাম সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও নাকি ভূত দেখেছেন। সন্ধ্যাবেল বারান্দায় বসে ছিলেন, সড়সড় শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখেন, জামগাছের ডালে কে যেন বসে আছে। কোনোদিকে কোনো বাতাস নেই, শুধু জামগাছের ডালটি নড়ছে! মতিন সাহেবকে দেখি সব সময় ঘরেই থাকেন। চাকরিবাকরি কিছুই করবেন না নাকি? জিজ্ঞেস করলেই হাঁ-হাঁ করেন, পরিষ্কার কিছু বলেন না।

টিক্কা খানের মৃত্যুপ্রসঙ্গে আমার যা-কিছু অবিশ্বাস ছিল, বিকালের দিকে তা ধুয়ে-মুছে গেল। বড়ো আপার বাসায় যাবার জন্যে বেরিয়েছি, দেখি সত্যি সত্যি খুব থমথমে অবস্থা। দোকানপাট বেশির ভাগই বন্ধ, লোকজন। এখানে-ওখানে জটিল পাকাচ্ছে। ই পি আর হেড কোয়ার্টারের গেটের সামনে বালির কস্তা ফেলে দুর্গের মতো করা। বালির বস্তা আগেও ছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধের সাজসজ্জা! সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে মেশিনগান বসান দুটি কালো রঙের জীপ। সায়েন্স লাবরেটরি থেকে রিকশা নিয়ে চলে গেলাম মগবাজারে। রিকশাওয়ালাটি বৃদ্ধ। টানতে পারে না। পাক মটরস পর্যন্ত যেতেই তাকে তিন বার থামতে হল! যতক্ষণ থেমে থাকে, ততক্ষণ সে আমাকে খুশি রাখবার জন্যেই হয়তো গল্পগুজব করে। তার কাছ থেকেই জানলাম।–জেনারেল টিক্কা একা মারা যায় নি। তার বউ এবং ছেলেটাও মারা গেছে।

গুষ্টি নিকাশ হইছে স্যার। নিব্বংশ হইছে।

আমি বললাম, খবর কোথায় পেলেন চাচা মিয়া?

সে গম্ভীর হয়ে বলল, এই সব খবর কি স্যার গোপন থাকে? মুক্তিবাহিনীর লোক শহরে ঢুকছে। লাড়াচাড়া শুরু হইছে।

কী লাড়াচাড়া?

যাত্ৰাবাড়িতে দুইটা ট্রাক উড়াইয়া দিছে। হেই রাস্তায় দুই দিন ধইরা লোক চলাচল বন্ধ।

যাত্ৰাবাড়ির দিকে গেছিলেন নাকি?

কী যে কন! উদিকে কেউ যায়?

আমাকে দেখে বড়ো আপা বললেন, তুই আবার আসলি কী জন্যে? এই বৎসর আর জন্মদিনটিন কিছু করছি না।

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। দুলাভাই বললেন, তুমিও আবার জন্মদিনটিন মনে রাখ নাকি, শফিক? আমার নিজেরও কিন্তু মনে নাই। হা-হা-হা। গিফটটিফট কিছু আছে সঙ্গে, না খালি হাতে এসেছ?

তখন আমার মনে পড়ল, আজ জুলাইয়ের ৬ তারিখ–শীলার জন্মদিন। বড়ো একটা উৎসবের তারিখ।

তোর জন্যে সকালেই গাড়ি পাঠােতাম। তোর দুলাভাই বলল অবস্থা থমথমে, তাই পাঠাই নি! তুই আবার জন্মদিনের জন্যে চলে আসলি? ঘর থেকে বার হওয়াই তো এখন ঠিক না।

আমি ইতস্তত করে বললাম, জন্মদিন ভেবে আসি নি। জন্মদিনটিন আমার न् शंका न्।

আপা তার স্বভাবমতো সঙ্গে সঙ্গে গম্ভীর হয়ে গেল। দুলাভাই ঘর ফাটিয়ে হাসতে লাগলেন।

দিলে তো তোমার আপাকে রাগিয়ে। জন্মদিন ভেবে আস নি, এটা বড়ো গলা করে বলার দরকার কী? তুমি দেখি ডিপ্লেমেসি কিছুই শিখলে না। হা-হা-হা।

জন্মদিনের কোনো আয়োজন হয় নি, কথাটা ঠিক নয়। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম শীলার বান্ধবীরা আসতে শুরু করেছে। এরা আশেপাশেই থাকে। এদেরকে বলা হয়েছে। লুনা মেয়েটি একটি গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছে। তুলিতে আৗকা ছবির মতো লাগছে মেয়েটিকে। আমি আপাকে বললাম, এই মেয়েটির যে এক মেজরের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, হয়েছে?

আপা সরু গলায় বলল, তোকে কে বলেছে?

দুলাভাইয়ের কাছে শুনলাম।

তোর দুলাভাইকে নিয়ে মুশকিল। পেটে কথা থাকে না। শুধু লোক-জানাজানি করা, আর মানুষকে বিপদে ফেলা!

আপা রাগে গজগজ করতে লাগল। আমি জানলে কী-রকম বিপদ হতে পারে, তা বুঝতে পারলাম না। আপার কথাবার্তার কোনো ঠিকাঠিকানা নেই। যখন যা মনে আসে বলে। সব মেয়েরাই এ-রকম নাকি? আপা ভ্রূ কুচকে বলল, জন্মদিন ভেবে আসিস নি, তো কী ভেবে এসেছিস? তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না।

টিক্কা খান মারা যাওয়ার পর দুলাভাইয়ের পরিকল্পনা কিছু বদলেছে কি না। জানিবার জন্যে আসলাম।

টিক্কা খান মারা গেছে, তোকে বলল কে?

মারা যায় নি?

টিক্কা খান কি মাছি যে থাবা দিয়ে মেরে ফেলবো?

আপা কোনো এক বিচিত্র কারণে পাকিস্তানী মিলিটারি মারা পড়ছে–এই জাতীয় খবর সহ্য করতে পারে না। আমি আপার রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলে সঠিক জানা যেত।

আমি যে বললাম, সেটা বিশ্বাস হল না?

রাত্রে আমাকে থেকে যেতে হল। দুলাভাই আমাকে গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে রাজি হলেন না, আবার এক-একা ছাড়তেও চাইলেন না। বড়ো আপার বাসায় আমার রাত কাটাতে ভাল লাগে না। এখানে রাত কাটানর মানেই হচ্ছে সারা রাত বসার ঘরে বসে বড়ো আপা যে কী পরিমাণ অসুখী, সেই গল্প শোনা। দুলাভাই ঠিক দশটা ত্ৰিশ মিনিটে, তুমি তোমার দুঃখের কাহিনী এখন শুরু করতে পার এই বলে দাঁত মাজতে যান এবং দশটা পয়ত্ৰিশে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়েন। আপার দুঃখের কাহিনী অবিশ্যি সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় না। দুলাভাই ঘুমিয়ে পড়েছেন কি না, সেই সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জ:নো ঘণ্টাখানিক অপেক্ষা করে আকবরের মাকে চা আনতে বলে, তারপর গলার স্বর যথাসম্ভব নিচে নামিয়ে বলে, শফিক, জীবনটা আমার নষ্ট হয়ে গেছে। তুই তো বিশ্বাস করবি না। তোর দুলাভাই একটা অমানুষ।

কী যে তুমি বল আপা!

কী বলি মানে? তুই কি ভেতরের কিছু জানিস? তুই তো দেখিস বাইরেরটা।

বাদ দাও, আপা।

বাদ দেব কি? বাদ দেওয়ার কিছু কি আছে? তুই কি ভাবছিস আমি ছেড়ে দেব? নীপু যদি না ছাড়ে, আমিও ছাড়ব না।

নীপু আমার মেজো বোন। গত পনের বছর ধরে সে আমেরিকার সিয়াটলে থাকে। গত বৎসর খবর এসেছে, সে সেপারেশন নিয়ে আলাদা থাকে। আমি আপাকে বললাম, নীপুর সঙ্গে তুলনা করছ কেন?

কেন তুলনা করব না? নীপু কি আমার চেয়ে বেশি জানে না নীপুর বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি? সে যদি সেপারেশন নিতে পারে।–আমিও পারি। তুই কি ভাবছিস, আমি এমনি ছেড়ে দেব? ওর বাপের নাম ভুলিয়ে দেব না?

যেহেতু নীপু সেপারেশন নিয়েছে, কাজেই আপার ধারণা হয়েছে সেপারেশন নেবার মধ্যে বেশ খানিকটা বাহাদুরি আছে।

আজ রাত্রে বড়ো আপা তার দুঃখের কাহিনী শুরু করবার সুযোগ পেল না। ঘড়িতে এগারটা বাজল, তবু দুলাভাই ওঠবার নাম করলেন না।

আপা বলল, ঘুমাবে না?

নাহ।

শরীর খারাপ?

নাহ, শরীর ঠিক আছে।

শরীর ঠিক থাকলে ঘুমাতে যাচ্ছ না কেন? তোমার তো সব কিছ ঘড়ির কাটার মতো চলে।

এই নিয়েও তুমি একটা ঝগড়া শুরু করতে চাও?

আমি বুঝি সব কিছু নিয়ে ঝগড়া করি?

তা কর। আমি যদি এখন একটা হাঁচি দিই, এই নিয়েও তুমি একটা ঝগড়া শুকান করবে।

তুমি হাঁচি দিলেই ঝগড়া শুরু করব!

প্রথমে ঝগড়া, তারপর কানাকাটি, তারপর খাওয়া বন্ধ।

বড়ো আপা মুখ কালো করে উঠে চলে গেল! দুলাভাই হোহো করে হোসে উঠলেন।

কফি খাওয়া যাক। শফিক খাবে?

না, কফি ভালো লাগে না। চা হলে খেতে পারি।

আমি নিজে বানাচ্ছি, খেয়ে দেখ। খুব সাবধানে লিকার বের করব। সবাই পারে না, খেলেই বুঝবে।

দুলাভাইয়ের কথা শেষ হবার আগেই দক্ষিণ দিকে প্রচণ্ড একটা আওয়াজ হল। সমস্ত অঞ্চল অন্ধকার হয়ে পড়ল। দুলাভাই থেমে থেমে বললেন, খুব সম্ভব ট্রান্সমিশন স্টেশনটি শেষ করে দিয়েছে।

শীলা ঘুম থেকে উঠে। চিৎকার করতে লাগল। ঘণ্টা বাজিয়ে কয়েকটা দমকলের গাড়ি ছুটে গেল। গুলীর আওয়াজ হল বেশ কয়েক বার। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কয়েকটি ভারি ট্রাক জাতীয় গাড়ি গেল।

আমরা সবাই শোবার ঘরে দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইলাম। আমার জানা মতে সেটিই ছিল ঢাকা শহরে মুক্তিবাহিনীর প্রথম সফল আক্রমণ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress