সোনাগাছির কথা
পৃথিবীর সবচেয়ে নিবিড়তম আনন্দ হল যৌনতা। আর রতিক্রিয়ার সুখ বোধহয় অনেকেই পেতে চান। তবে পাশাপাশি পৃথিবীর আদিমতম পেশা হল দেহব্যবসা! উত্তর কলকাতার সাবেক দর্জি পাড়া এলাকায় রাস্তার নাম গৌরী শঙ্কর লেন। আর এখানেই অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম গণিকালয় সোনাগাছি। এখানে টাকার বিনিময়ে পুরুষ গ্রাহকদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হন বারবণিতারা। আর সেখানে সারি সারি ঘরে রীতিমতো কাঁচা টাকা ওড়ে !
কথিত আছে, অতীতের একসময় ওই অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন সানাউল্লাহ গাজী বা সোনা গাজী নামের একজন মুসলমান সন্ত। এই সোনা গাজীর সমাধির ওপর তৈরি মাজার এখনও রয়েছে। একদা ওই অঞ্চলে সোনা গাজীর নাম ডাক ছিল বেশ। পরবর্তী সময়ে লোক মুখে ঘুরত ঘুরতেই তা সোনাগাছিতে রুপান্তরিত হয়। কয়েক বছর আগে , অর্থাৎ করোনাকালে যখন একশো দিনের ওপর লক ডাউন হয়েছিল, তখন দেহব্যবসা রীতিমতো সঙ্কটে পড়ে। যদিও দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি তখন একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করে। প্রত্যেক গ্রাহককে রীতিমতো স্নান করিয়ে এবং স্যানেটাইজ করিয়ে তবে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হত। এছাড়াও সোনাগাছির বারবণিতারা নিজেরাই তখন মাস্ক এবং স্যানেটাইজার তৈরি করতো। যদিও তখন বিকল্প হিসেবে ‘ ফোন সেক্স’ কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার অনেক মেয়েই তাতে তেমন সড়গড় ছিলেন না।
অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, পূর্বে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট ও পশ্চিমে চিতপুরের মাঝের পুরো জায়গাটা নিয়েই পতিতাদের একটা আস্ত উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। আর সেই জায়গাটার প্রকৃত মালিক ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। আর সেই উপনিবেশ স্থাপন করা হয়েছিল জমিদার বাবুর উদ্যোগেই। কারণটা কি ? আসলে তদানীন্তন সময়ে কলকাতার বিখ্যাত বাবু সম্প্রদায়ের একাধিক উপপত্নী রাখাটাই ছিল সেই সময়ের বাবু কালচার। তাঁদের বারবণিতা বিলাস ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঘরে পত্নীদের সঙ্গে তো আর উপপত্নীদের রাখা যায় না। সেইজন্য এই বেশ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। শোনা যায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নাকি কলকাতার একটি এলাকাতেই প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। আজও সেই দর্জিপাড়ার মর্জিনারা টাকার বিনিময়ে দেহ বিক্রি করেন! হ্যাঁ, সেইসব বারবণিতাদেরও পেট চালাতে হয় । হয়তোবা সেইসব বারবণিতাদের একটা সুন্দর অতীত ছিল, হয়তো স্বামী পুত্র কন্যা নিয়ে সুখে শান্তিতে ছিলেন। কিন্তু বিধি বাম !