Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সে ও নর্তকী || Humayun Ahmed » Page 14

সে ও নর্তকী || Humayun Ahmed

রুবিদের ফ্লাইট রাত আটটায়

রুবিদের ফ্লাইট রাত আটটায়। জাহিনের জিনিসপত্র গোছানো হয়েছে একদিন আগেই। যাবার দিনে তার কিছু গোছানোর নেই। সে ঠিক করে রেখেছিল যাবার দিনটা সারাক্ষণ সে বাবার সঙ্গে গল্প করবে। কিন্তু হাসনাত সকাল থেকেই স্টুডিওতে। দরজা বন্ধ করে কাজ করছে গত রাতের পুরোটাই কেটেছে স্টুডিওতে। গভীর রাতে জাহিনের ঘুম ভেঙেছে। সে দেখে বিছানা খালি। স্টুডিওতে আলো জ্বলছে। একবার সে ভাবল বাবাকে ডাকে। শেষ পর্যন্ত ডাকল না। স্টুডিওর দরজার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার পাশে কোলবালিশ। বালিশটাকে বাবা ভেবে সে জড়িয়ে ধরে থাকল।

স্টুডিও থেকে হাসনাত বের হলো দুপুরে। সে ভেবে রেখেছিল ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে মেয়েকে নিয়ে যাবে। তার হাতে তেমন সময় নেই। তার খুব ইচ্ছা প্লেনে ওঠার সময় মেয়ের হাতে একটা ছবি তুলে দেবে। বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে নষ্ট করার সময় নেই। হাসনাত বলল, টোস্ট আর ডিমভাজা খেয়ে ফেললে কেমন হয় মা?

জাহিন বলল, খুব ভালো হয়।

হাসনাত ডিম ভাজল। রুটি টোস্ট করার সময় নেই। এমি খেয়ে নিলেই হয়।

জাহিন!

জি বাবা।

আজ একটু খারাপ খেলে কিছু হবে না। প্লেনে কত ভালো ভালো খাবার দেবে। তাই না?

হুঁ।

আমি ছবিটা শেষ করতে থাকি, তুই কাপড়-টাপড় পরে তৈরি হতে থাক।

আচ্ছা।

জাহিন একা একা একা বারান্দায় হাঁটল। বাগানে কিছুক্ষণ ঘুরল। এবং মাঝে মাঝেই স্টুডিওর দরজার পাশে এসে দাঁড়াতে লাগল। একবার মনে-মনে ডাকল, বাবা। মনের ডাক কেউ শুনতে পায় না। হাসনাত শুনল না। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় ছবিতে।

সন্ধ্যায় রুবি যখন গাড়ি নিয়ে এসে হর্ন বাজাচ্ছে তখন হাসনাতের ছবি শেষ হলো। সে কাগজে মুড়ে ছবিটা মেয়ের হাতে দিয়ে হাসল।

হাসি দেখেই জাহিন বুঝেছে, বাবা খুব সুন্দর ছবি এঁকেছে। তবে ছবিটা সে এখন দেখবে না। প্লেনে উঠে দেখবে।

হাসনাত বলল, মা, তুমি তোমার পড়ার ঘরে ছবিটা টানিয়ে রেখো।

জাহিন বলল, আচ্ছা।

হাসনাত বলল, তাহলে আর খুশি করে লাভ নেই, তোমরা রওনা হয়ে যাও।

রুবি বিস্মিত হয়ে বলল, রওনা হয়ে যাও মানে? তুমি সি অফ করতে যাবে না?

ইচ্ছে করছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে।

ক্লান্ত লাগলেও চলো।

হাসনাত বিষণ্ণ গলায় বলল, বিদায়ের দৃশ্য আমার ভালো লাগে না।

কারোই ভালো লাগে না। তারপরেও তো লোকজন বিদায় দিতে যায়। যায় না?

এয়ারপোর্টে গাদাগাদি ভিড়। কী ভয়ানক ব্যস্ততা চারদিকে! কেউ যেন কাউকে চেনে না।

জাহিনের কাঁধে একটা হ্যান্ডব্যাগ, এক হাতে সে মাকে ধরে রেখেছে। অন্য হাতে কাগজে মোড়া ছবি। ছবিটা সে বুকের কাছে ব্যক্ত করে ধরে আছে।

হাসনাত এক কোনায় দাঁড়িয়ে। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। জাহিন মার হাত ধরে গটগট করে এগুচ্ছে। নতুন কেনা গোলাপি ফ্রকে তাকে লাগছে পরীদের কোনো শিশুর মতো। সে একবারও পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে না।

রুবি বলল, মা তুমি বাবার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই চলে এসেছ। আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি, তুমি যাও বাবাকে চুমু দিয়ে আসো।

জাহিন শান্ত গলায় বলল, না।

না কেন মা?”

বাবাকে চুমু খেলে বাবা কাঁদতে শুরু করবে। বাবাকে কাঁদাতে ইচ্ছা করছে না।

কিন্তু তোমার বাবা হয়তো তোমাকে চুমু দেয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। তুমি না গেলে কষ্ট পাবেন।

বাবা জানে আমি কেন যাচ্ছি না। বাবার অনেক বুদ্ধি।

বেশ চলো, আমরা তাহলে যাই। বাবাকে কি একবার হাত নেড়ে বাই বাই বলবে?

না।

ছবিটা তুমি আমার কাছে দাও। এত বড় একটা ছবি তোমার নিতে কষ্ট হচ্ছে।

আমার কষ্ট হচ্ছে না।

প্লেন আকাশে ওঠার পর জাহিন বলল, আমি ছবিটা একটু দেখব মা।

রুবি মোড়ক খুলে ছবিটা মেয়ের হাতে দিলেন। জাহিন শান্ত গলায় বলল, একবার বাবা আমাকে স্কুল থেকে আনতে ভুলে গিয়েছিল। বারোটার সময় ছুটি হয়েছে। বাবা আনতে গেছে তিনটার সময়। বাবাকে দেখে আমি ছুটতে ছুটতে গিয়েছিলাম। সেই ছবিটা বাবা একেঁছে। মা, দেখো।

ছবিতে ছোট্ট একটা মেয়ে দুহাত বাড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে। হাওয়ায় তার চুল উড়ছে, স্কুল ব্যাগ উড়ছে। মেয়েটার চোখভর্তি জল।

রুবি অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁর কাছে হঠাৎ মনে হলো অপূর্ব এই ছবিটা রঙ দিয়ে আঁকা হয় নি। আঁকা হয়েছে চোখের জলে।

জাহিন চোখ মুছছে। রুবি দুহাতে মেয়েকে কাছে টানলেন। জাহিন ফিসফিস করে বলল, এয়ারপোর্টে বাবা কি রকম একা একা দাঁড়িয়ে ছিল।

রুবি বললেন, সব মানুষই একা রে মা। তারা সংসার, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নিয়ে বাস করে। তার পরেও তারা একা।

জাহিন প্লেনের জানালা দিয়ে তাকাল। তার খুব ইচ্ছা করছে অনেক অনেক দূর থেকে বাবাকে একটু দেখবে। কিন্তু প্লেন আকাশে উঠে গেছে। শাদা মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে নিচের পৃথিবী।

জাহিন কাঁদছে। কাঁদছে ফ্রেমে বন্দী স্কুলের পোশাক পরা বাচ্চা মেয়েটি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
Pages ( 14 of 14 ): « পূর্ববর্তী1 ... 1213 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress