Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সে ও নর্তকী || Humayun Ahmed » Page 13

সে ও নর্তকী || Humayun Ahmed

বিংশ শতাব্দীর সপ্তম আশ্চর্যজনক ঘটনা

বিংশ শতাব্দীর সপ্তম আশ্চর্যজনক ঘটনাটা ঘটে গেছে।

জাহেদুর রহমান আমেরিকান ভিসা পেয়েছে। সে অসম্ভব অবাক হয়ে লক্ষ করল তার কোনো রকম আনন্দ হচ্ছে না। বরং হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেছে। মনে হয় আর কিছুই করার নেই। সে গুলশান থেকে বাসায় ফিরল হেঁটে হেঁটে এবং প্রথম বারের মতো এই নোংরা দেশের সবকিছুই তার অসম্ভব ভালো লাগতে লাগল। ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে রিকশা যাচ্ছে–কী সুন্দর লাগছে দেখতে! রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফুটেছে—-আহা কী দৃশ্য! আকাশজোড়া ঘন কালো মেঘ। বর্ষা আসি আসি করছে। আসল কালো মেঘগুলো বের হবে বর্ষায়। দিনরাত বর্ষণ হবে। রাস্তায় পানি জমে যাবে। সেই পানি ভেঙে বাসায় ফেরা। এই আনন্দের তুলনা কোথায়?

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো–সমস্যার আনন্দ। চারদিকে সমস্যা কি কম? লিলির বিয়ে হচ্ছে। কত রকম ঝামেলা, রুমু ঝুমু বড় হচ্ছে, এদের বিয়ে দিতে হবে। সমস্যার কি কোনো শেষ আছে? বাড়িটা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। সেই ঝামেলাও মেটাতে হবে। সব ছেড়ে বিদেশে গিয়ে পড়ে থাকলে হবে? কী আছে শাদা চামড়ার দেশে? সমস্যাহীন ঐ দেশে থেকে হবেটা কী?

বাড়ি ফেরার পথে জাহেদুর রহমান বৃষ্টির মধ্যে পড়ে গেল। যাকে বলে ঝুম বৃষ্টি। এত ভালো লাগছে বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে। পাসপোর্টটা ভিজে জবজবে হয়ে যাচ্ছে। ভিজুক। হু কেয়ারস? শালার পাসপোর্ট।

কাকভেজা হয়ে জাহেদুর রহমান বাড়িতে ঢুকল। প্রথমেই দেখা হলো লিলির সঙ্গে। লিলি শঙ্কিত গলায় বলল, ভিসা এবারও হয় নি, তাই না?

জাহেদুর রহমান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, না।

লিলি বিষণ্ণ গলায় বলল, তুমি মন খারাপ করো না ছোট চাচা। তোমার মনটা এত খারাপ দেখে আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে।–আহারে, মেয়েটা তো সত্যি কাঁদছে।

জাহেদুর রহমানের চোখ ভিজে উঠছে–বিদেশ বিভূঁইয়ে কে তার জন্য চোখের জল ফেলবে। কেউ না।

ছোট চাচা!

কী রে!

মন খারাপ করো না ছোট চাচা, প্লিজ।

আচ্ছা যা মন খারাপ করব না।

পরের বার নিশ্চয়ই হবে।

আর এ্যাপ্লাই করব না। যথেষ্ট হয়েছে, এখন কষ্টটষ্ট করে দেশেই থাকব।

জাহেদুর রহমান তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে চিলেকোঠার দিকে যাচ্ছে। এত ভালো লাগছে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে।

.

বিয়ে উপলক্ষে অনেকদিন পর লিলিদের বাড়ি চুনকাম হচ্ছে। পুরনো বাড়ি সাজতে শুরু করেছে নতুন সাজে। বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মানুষগুলোও কি বদলাচ্ছে? নেয়ামত সাহেব মেয়ের সঙ্গে যে অস্বাভাবিক নরম গলায় কথা বলেন সেই কথায় লিলির চোখে প্রায়ই পানি এসে যায়। সেদিন হঠাৎ বললেন, মাগো কাছে বস তো একটু।

লিলি কাছে বসল। নেয়ামত সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে কিছুক্ষণ পর কাঁদতে শুরু করলেন। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, তোর ঐ বান্ধবী কি যেন নাম স্বাতী। আসে না কেন? বিয়ের সময় বন্ধুবান্ধব আশপাশে থাকলে মনটা ভালো থাকে। ওকে খবর দিয়ে নিয়ে আয়, থাকুক কয়েক দিন তোর সাথে।

লিলি বলে না যে স্বাতী অসুস্থ। স্বাতী এখন তাকে পর্যন্ত চেনে না। লিলি তাকে গত কালও দেখতে গিয়েছিল। স্বাতী তাকে দেখে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলেছে, বসুন। মা উনাকে বসতে দাও। রওশন আরা লিলির দিকে তাকিয়ে তীব্র গলায় বললেন, কেন আমার মেয়েটা এ-রকম হলো? কেন হলো? লিলি এখন নিজের মতো তার বিয়ের প্রস্তুতি দেখে। তার ভালোও লাগে না, মন্দও লাগে না।

রাতে মা তার সঙ্গে ঘুমুতে আসেন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকেন। লিলির তখনই শুধু খুব একা লাগে। তখন খুব অন্যায় একটা ইচ্ছার ছায়া মনে ভাসে। মনে হয়, ইশ কেউ একজন যদি স্বাতীর মতো একটা ছবি তার এঁকে দিত। কেউ একজন যদি তাকে দেখাতো কি করে আকাশের তারা নামিয়ে আনা যায়। সে খুব সন্তর্পণে কাঁদে। এমনভাবে কাঁদে যেন তার শরীর না কাঁপে। যেন তাঁর মা কিছু বুঝতে না পারেন। কিন্তু তিনি বুঝে ফেলেন। মেয়েকে প্রবলভাবে বুকে জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেন, মা রে তোর যদি সত্যি সত্যি মনের মানুষ কেউ থাকে তুই পালিয়ে চলে যা তার কাছে। কী আর হবে? তোর বাবা আমাকে ধরে মারবে। এটা তো নতুন কিছু না।

লিলি অস্পষ্ট স্বরে বলে, মনের মানুষ কেউ নেই মা।

লিলির মা লিলির চেয়েও নিচু গলায় বলেন, সত্যি নেই? একদিন যে কোথায় গেলি। অনেক রাত করে ফিরলি…

লিলি হাসে। বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসে। অনেকটা স্বাতীর মতো করেই হাসে। লিলির মা মেয়ের সেই হাসির মানে ধরতে পারেন না। তার বড় কষ্ট হয়।

লিলি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি এত ভালো কেন মা? তুমি, বাবা, ছোট চাচা, বড় চাচা, রুমু ঝুমু। তোমরা যদি আরেকটু কম ভালো হতে তাহলে আমার এত কষ্ট হতো না।

লিলি কাঁদে।

মা তার গায়ে-মাথায় ক্রমাগতই হাত বুলিয়ে দেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress