Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেদিন চৈত্রমাস || Humayun Ahmed » Page 6

সেদিন চৈত্রমাস || Humayun Ahmed

শফিকের মা মনোয়ারা বেগম

শফিকের মা মনোয়ারা বেগম বাথরুমে পা পিছলে পড়ে মাথায় ব্যথা পেয়েছেন। আঘাত তেমন গুরুতর না। মাথা ফাটেনি। তবু তিনি চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেললেন। তাঁর বড় মেয়ে সুরমা এবং মেয়ের জামাই ফরিদ দৌড়ে এসে তাকে তুলতে গেল। তিনি মেয়ে জামাই-এর দিকে তাকিয়ে, তুমি গায়ে হাত দিচ্ছ কেন? তুমি দূরে থাক।

ফরিদ বলল, মা আপনাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেই?

তিনি হতভম্ব গলায় বললেন, শাশুড়ির গায়ে হাত দিবে এটা কেমন কথা!

আপনার ছেলে এখানে থাকলে সে আপনাকে ধরত না?

মনোয়ারা বললেন, মুখে মুখে তর্ক করবে না। ছেলে আর মেয়ের জামাই এক। তর্ক করা হয়েছে তোমার স্বভাব।

আপনি বাথরুমে পড়ে থাকবেন?

হ্যাঁ বাথরুমে পড়ে থাকব তুমি সামনে থেকে যাও।

সুরমা মাকে টেনে তোলার চেষ্টা করল। মনোয়ারার পর্বতের মতো দেহ নড়ানোর সাধ্য তার নেই। মনোয়ারা মেয়েকেও ধমক দিলেন–ঢং করিস না। বিয়ে হয়েছে, ছেলে-মেয়ে হয়েছে এখন ঢং ছাড়তে পারলি না?

সুরমা বলল, ঢং কী করলাম?

হাত ধরে দড়ি টানাটানি খেলা খেলছিস, এর নাম ঢং। আমি দড়ি না।

মুখের কাছে কমোড় নিয়ে বাথরুমে পড়ে থাকবে?

হ্যাঁ থাকব। তুই যা তোর জামাইকে কফি বানিয়ে খাওয়া। বাজার থেকে পেস্ট্রি এনে দুই জনে মিলে কেক-পেস্ট্রি খা।

কেক-পেস্ট্রির ছোট্ট ইতিহাস আছে। গতকাল সন্ধ্যায় ফরিদের কিছু বন্ধুবান্ধব এসেছিল। তাদের জন্যে কেক-পেস্ট্রি আনা হয়েছে। মনোয়ারাকে দেয়া হয়নি কারণ তাঁর ডায়াবেটিস ভয়াবহ পর্যায়ের। মনোয়ারা ব্যাপারটা মনে রেখেছেন। তিনি সহজে কিছু ভুলেন না।

সুরমা বলল, মা একটু চেষ্টা করে দেখ না নিজে নিজে উঠতে পার কিনা।

মনোয়ারা বললেন, উঠতে পারলে তো উঠেই যেতাম। মুখের কাছে গু নিয়ে শুয়ে থাকতাম না। তোর ইংরেজির মহাসাগর বাপকে খবর দে। সে এসে দেখুক কি অবস্থা। শফিককে খবর দে। মনে হয় না আমি বাঁচব।

তোমার কিছু হয়নি মা।

আমার কিছু হয় নাই, টং করার জন্যে বাথরুমে শুয়ে আছি? সামনে থেকে যা। তোর চেহারা যেমন বান্দরের মতো কথাবার্তাও বান্দরের মতো কিচকিচ কিচকিচ। গলার আওয়াজ শুনলেই মাথা ধরে।

ঘটনা ঘটেছে দুপুরে এখন প্রায় সন্ধ্যা এখনো মনোয়ারা বাথরুমেই শুয়ে আছেন। ডাক্তার এসে দেখেছেন? বলে গেছেন মাথার সিটিস্ক্যান করালে ভাল হয়। সিটিস্ক্যান মেশিন ঢাকায় নতুন এসেছে। ডাক্তাররা এখন কথায় কথায় সিটিস্ক্যান করাতে বলেন।

এম্বুলেন্স খবর দেয়া হয়েছে। এখনো এসে পৌঁছায়নি। এম্বুলেন্সের লোকজন স্ট্রেচারে করে তাকে বাথরুম থেকে নিয়ে যাবে। সুরমার মনে ক্ষীণ আশা মা তাতে আপত্তি করবে না।

জয়নাল সাহেব খবর পেয়ে চলে এসেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার মতো মানসিক সাহস তিনি এখনো সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি। যতবারই মনোয়ারার সঙ্গে দেখা হয়েছে ততবারই তাকে ভয়াবহ অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। মাঝে মাঝে তার কাছে মনে হয় এই যে তিনি একা হোটেলে বাস করেন তার পিছনে আল্লাহপাকের খাস রহমত আছে। আল্লাহপাক সব কিছুই বিবেচনা করে এই ব্যবস্থা করেছেন।

সুরমা এসে বাবাকে বলল, বাবা তুমি এখনো বসার ঘরে বসে আছ? মার কাছে যাও।

তিনি বললেন, যাচ্ছিরে মা যাচ্ছি, একটু রেস্ট নিয়ে তারপর যাই। শফিককে খবর দিয়েছিস?

খবর দিয়েছি।

শফিকের জন্যে একটু অপেক্ষা করি, বাপ-বেটা একসঙ্গে যাই। আমাকে দেখলে তোর মা আবার ইয়ে হয়ে যাবে।

সুরমা বলল, মা চেঁচামেচি করবে। তুমি চুপ করে শুনবে।

জয়নাল সাহেব হতাশ গলায় বললেন, অবশ্যই অবশ্যই। এককাপ চা দে। চা খেয়ে তারপর যাই। জামাই কোথায়?

এম্বুলেন্সের জন্যে গেছে।

জয়নাল সাহেব কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেন। মনোয়ারা তাঁকে দেখে যেসব কথাবার্তা শুরু করবেন সেসব কথা জামাই বা পুত্রবধূ শ্রেণীর কারোরই শোনা উচিত না।

সুরমা বলল, চী পরে খাবে আগে র কাছে যাও।

মনোয়ারার মাথার নিচে একটা বালিশ দেয়া হয়েছে। অনেক কায়দা করে একটা টেবিল ফ্যান লাগানো হয়েছে। টেবিল ফ্যানের সমস্যা হলো একটু পরপর ফ্যান ঘুরে যাচ্ছে। সুরমার বড় মেয়ের দায়িত্ব হলো ঘুরে যাওয়া ফ্যান ঠিক করে দেয়া। মেয়েটার নাম রুনি। ক্লাস সেভেনে পড়ে। অতি ভাল মেয়ে। এই বয়সের একটা মেয়ে এক নাগাড়ে এতক্ষণ বাথরুমে বসে থাকতে পারে না। সে শান্ত ভাবেই বসে আছে। এর মধ্যে মনোয়ারা তার নাতনীর গালে একটা চড়ও দিয়েছেন। সে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কেঁদে আবার চুপ হয়ে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জয়নাল সাহেব এসে রুনির পাশে বসলেন। মনোয়ারা স্বামীর দিকে

তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন, তুমি ভাল আছ?

জয়নাল সাহেব হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন?

তোমার কাছে একশটা টাকা হবে?

অবশ্যই হবে।

তাহলে একটা কাজ কর একশ টাকা নিয়ে ওষুধের দোকানে যাও, আমার জন্যে একশ টাকার ঘুমের ওষুধ কিনে আনো।

এক্ষুণি যাচ্ছি। ওষুধের নাম বল।

নামধাম লাগবে না। ঘুমের ওষুধ হলেই হবে। এই ওষুধ আমি তোমার সামনে খাব। খেয়ে মরে যাব। স্বামীর ভাত খাওয়ার সৌভাগ্য আমার কপালে নাই। স্বামীর কিনে দেয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে মারা গেছি। এটা বলার মধ্যে আনন্দ আছে না? বিরাট আনন্দ।

জয়নাল সাহেব অপ্রস্তুত চোখে রুনির দিকে তাকালেন। শুরুটাই এ রকম শেষ কি রকম হবে কে জানে! মনোয়ারার মুখ ছুটে গেলে সর্বনাশ।

মনোয়ারা বললেন, আমাকে মেয়ের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে হোটেলে বসে মচ্ছব কর। মেয়ে জামাই আমাকে কি চোখে দেখে কোন দিন খোঁজ নিয়েছ?

জয়নাল সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, সুরমা তোমার খুবই যত্ন করে। ফরিদও অতি ভাল ছেলে।

মনোয়ারা বললেন, বিড়বিড় করে সাপের মন্ত্র কি পড়তেছ। যা বলার পরিস্কার করে বল।

রুনি তার নানাকে চোখে ইশারা করল চুপ করে থাকতে। জয়নাল সাহেব চুপ করে গেলেন।

মনোয়ারা বললেন, খেয়ে না খেয়ে যে আছি এটা কি জানো? দুপুরে পান কিনে খাব। একটা পানের দাম পঞ্চাশ পয়সা। পঞ্চাশ পয়সার জন্যে জনে জনে হাত পাততে হয়। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এরা কেক-পেস্ট্রি খায়, একবার জিজ্ঞেসও করে না— অম্মাি কেক খাবেন? বাড়িতে যখন কেউ কুত্তা পালে তার দিকেও এক টুকরা কেক বাড়ির মালিক ছুড়ে দেয়।

জয়নাল সাহেবের খুবই লজ্জা লাগছে। রুনির সামনে এইসব কথা। মেয়েটা কি লজ্জাই না পাচ্ছে। সুরমাও নিশ্চয়ই শুনছে। সে তেমন লজ্জা পাবে না। কারণ মার স্বভাব সে জানে। জয়নাল সাহেব নিচু গলায় বললেন, শান্ত হও। তোমার শরীরটা খারাপ। মনোয়ারা বললেন, আমি শান্ত হব আর তোমরা সবাই অশান্ত থাকবে। হোটেলে যখন থাক তখন শান্ত থাক, না অশান্ত থাক?

তোমার কথা বুঝলাম না।

আমার কথা কীভাবে বুঝবে? আমার হলো অশান্ত কথা। তুমি বুঝবে শান্ত কথা। শান্ত কথা তোমাকে কে বলে ঠিক করে বল তো? হোটেলে বাজারের মেয়েছেলে আসে? তোমার কী বাঁধী কেউ আছে? এইসব হোটেলে কি চলে তা আমি জানি।

জয়নাল সাহেব শরমে মরে যাচ্ছেন। বাচ্চা একটা মেয়ে পাশে বসে আছে, না জানি সে কি মনে করছে।

মনোয়ারা বললেন, এই যে ইংরেজিওয়ালী এখন সব কথা মন দিয়ে শোন— আমি যদি এই বাড়িতে থাকি তাহলে এই বাথরুমে পড়ে থাকব। আমাকে বাথরুম থেকে তুলতে হলে হয় তুমি তোমার হোটেলে নিয়ে তুলবে আর নয় তোমার গুণধর ছেলেকে বলবে তার বাসায় নিয়ে তুলতে। ছেলে শুনেছি মহাতালেবর হয়েছে। গাড়ি করে ঘুরে বেড়ায়। মেলা বেতন। বউ কোলে নিয়ে এখন বসে থাকে। বুড়া মায়ের খোঁজ নাই।

জয়নাল সাহেব ক্ষীণ গলায় বললেন, ব্যবস্থা হবে।

মনোয়ারা বললেন, ব্যবস্থা যেন আজকেই হয় তোমার গুণধর ছেলেকে বলবে সে যেন আজই আমাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করে।

বলব। অবশ্যই বলব। সে আসুক।

আর তুমিও আমার সঙ্গে থাকবে। তোমাকে আর হোটেলে থাকতে দেব না। হোটেলে থাকবে আর নটি মেয়েদের দুধ ছানাছানি করবে তা হবে না।

রুনি লজ্জা পেয়ে উঠে চলে গেল। জয়নাল সাহেব মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলেন; কারণ আল্লাহপাক মেয়েটাকে উঠে চলে যাবার মতো বুদ্ধি দিয়েছেন।

রাত দশটায় শফিক মা এবং বাবাকে তার বাসায় নিয়ে এলো। মনোয়ারার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে থাকলেই হবে।

মীরা তার শোবার ঘর শ্বশুর-শাশুড়িকে ছেড়ে দিয়েছে। তারা শুতে এসেছে বসার ঘরে। মীরা মেয়েকে নিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতেছে। শফিক পা গুটিয়ে শুয়েছে লম্বা সোফায়। সারাদিন মীরার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। শোয়ী মাত্রই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছিল। শফিক নরম গলায় তাকে ডাকল।

মীরা বলল, কিছু চাও? চা খাবে।

শফিক বলল, না। কবিতা শুনবে?

মীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

শফিক বলল, এক সময় প্রচুর কবিতা মুখস্থ করেছিলাম এখন বোধ হয় কিছুই মনে নেই। দেখি চেষ্টা করে। করব চেষ্টা?

মীরা শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল, বল। মীরার চোখে পানি এসে গেছে। বিয়ের পর পর রোজ রাতে শফিক কবিতা বলত। কি আনন্দটাই না তখন লাগত। তারপর সব বন্ধ হয়ে গেছে। আজ কত দিন পর সে কবিতা শুনাতে চাচ্ছে। আহারে কি আনন্দ!

No. Mr. Lawence. It is tot like that!
I dont mind telling you
I know a thing or two about love
Perhaps more than you do.
And what I brow is that you make it
Tod nice. Too beautiful.
It is not like that. You know; You fake it.
It is really rather dull.

মীরা মাথা নিচু করে আছে। মাথা নিচু করে থাকার কারণে টপটপ করে চোখের পানি পড়ছে তার শাড়িতে। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার বলে এই অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যটা শফিক দেখছে না।

মীরার খুব ইচ্ছা করছে শফিকের হাত ধরতে। সে ভরসা পাচ্ছে না। ইদানীং শফিকের মেজাজ খারাপ যাচ্ছে। হাত ধরলে হয়তো বলে বসবে— আহাদি করবে না। তখন মন খারাপ হবে।

মীরা কবিতাটার মানে বুঝতে পেরেছ?

না।

মানে হচ্ছে–ভালবাসা নিয়ে তোমরা যে এত মাতামাতি কর–সেটা ঠিক RI

মীরা বলল, তোমার ঐ কবি ভালবাসা কি বুঝতেই পারেনি।

তুমি বুঝেছ?

হ্যাঁ বুঝেছি।

তাহলে বল ভালবাসা কি?

মীরা লাজুক গলায় বলল, ভালবাসা হচ্ছে মাঝরাতে তোমার হাত ধরে বসে থাকা।

কই হাত ধরছ না তো।

মীর হাত ধরল। আর তখনি শোবার ঘর থেকে ঠকঠক শব্দ হতে থাকল। কেউ যেন ভারি কিছু দিয়ে মেঝেতে বাড়ি দিচ্ছে। মীরা চিন্তিত গলায় বলল, কি হচ্ছে?

শফিক বলল, মা তার পুরনো খেলা খেলছেন।

তার মানে?

বাবাকে বিরক্ত করছেন। বাবা যাতে ঘুমাতে না পারেন সেই ব্যবস্থা হচ্ছে। মা সারারাত চুক চুক করবেন। আগে অনেকবার দেখেছি।

সারারাত এ রকম চলবে?

শফিক হাই তুলতে তুলতে বলল, সারারাতই চলার কথা। এসো ঘুমুবার চেষ্টা করি।

শফিক সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। জেগে রইল মীরা। ঠুকঠুক শব্দ হয়েই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্যে থমকে আবারো শুরু হচ্ছে জোরালোভাবে।

রাত তিনটায় মবিনুর রহমানের ঘুম ভেঙেছে। এই সময়ে প্রায়ই তার ঘুম ভাঙে। তাকে বাথরুমে যেতে হয়। আজকের ঘুম ভাঙার কারণ ভিন্ন। তিনি দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।

তিনি তাঁর নিজের বাড়ির বারান্দায় মরে পড়ে আছেন। একটা লেজ লম্বা হলুদ পাখি ঠুকরে ঠুকরে তার বাঁ চোখটা তুলে নিয়েছে। মৃত মানুষের কোন ব্যথা বোধ থাকে না। থাকার কথা না অথচ স্বপ্নে তিনি বাঁ চোখে ব্যাথা পাচ্ছেন। পাখিটা এক একবার ঠোকর দিচ্ছে তিনি ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন। স্বপ্ন দ্রুত বদলায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি দেখলেন পাখিটা হলুদ না— এটা আসলে একটা কাক। কাকের ঠোঁট স্বাভাবিকের তুলনায় লম্বা। চোখ উঠিয়ে নেয়ায় যে গর্তটা হয়েছে কাক সেই গর্তে ঠোঁট চুকিয়ে দিচ্ছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বা চোখ না থাকলেও তিনি কাকের ঠোঁট দেখতে পাচ্ছেন।

মবিনুর রহমান বিছানা থেকে নামলেন। বাথরুমে ঢুকে চোখে-মুখে পানি দিলেন। দরজা খুলে বারান্দায় এলেন। বারান্দায় যেখানে তাঁর ডেডবডি পড়েছিল সেই জায়গাটা তার দেখার ইচ্ছা। বারান্দা অন্ধকার। সুইচ বোর্ডটা কোথায় তিনি মনে করতে পারলেন না। দেয়াল হাতড়ালেই সুইচ বোর্ড খুঁজে পাওয়া যাবে। তিনি দেয়াল হাতড়াতে শুরু করলেন। আর তখনি মনে হলো বারান্দার শেষ মাখা থেকে পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কে যেন আসছে। রাত তিনটায় বারান্দায় কোন লোক থাকার কথা না। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, কে?

স্যার আমি।

তুমি কে?

স্যার আমার নাম হরমুজ। আমি নাইট গার্ড।

কাছে আসো।

নাইট গার্ড তাঁর কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। তার গায়ে খাকি পোশাক। হাতে টর্চ। পায়ে বুটজুতা।

তুমি নাইট গার্ড?

জি স্যার।

তোমার ডিউটি কোথায়?

রাত বারটা থেকে আমার ডিউটি বারান্দায়।

এখন কয়টা বাজে?

জানি না স্যার।

এখন বাজে রাত তিনটা। তুমি তো বারান্দায় ছিলে না।

নিচে পিসাব করতে গিয়েছিলাম স্যার।

তোমার নাম যেন কী?

হরমুজ।

হরমুজ শোনো, তোমাকে এখন বারান্দায় থাকতে হবে না। নিচে থাক। বাবুর্চিকে ডেকে তুলে বলো আমি চা খাব।

তিনি বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসলেন। এখন আর বারান্দা অন্ধকার না। খুবই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর ডেডবডি যে জায়গায় পড়েছিল সেই জায়গাটাও দেখা যাচ্ছে। তবে স্বপ্নের বারান্দার সঙ্গে বাস্তবের বারান্দার কোন মিল নেই। স্বপ্নের বারান্দায় ছুঁচলো লোহার শিক ঘন ঘন বসানো ছিল। তার বারান্দায় সে রকম কিছু নেই।

তার ঘুম পাচ্ছে। ঠাণ্ডা বাতাস ছেড়েছে। দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে হয়তো। এই সময়ের নিয়ম দূরের বৃষ্টি এক সময় এগিয়ে আসে। মৌসুমী হাওয়ার সময় খণ্ড খণ্ড বৃষ্টি হয় না। দেশ জুড়ে বৃষ্টি হয়।

স্যার চা।

টেবিলে রেখে চলে যাও।

স্যারের কি শরীর ঠিক আছে?

আমার শরীর ঠিক আছে, ঠাণ্ডা লাগছে পাতলা একটা চাদর দিয়ে যাও। বারান্দায় গার্ডের কাজ যে করে তার নাম কি? নাম বলেছিল ভুলে গিয়েছি।

স্যার গার্ডের নাম হরমুজ।

তিনি হরমুজ নাম মনে রাখার চেষ্টা করতে লাগলেন। হরমুজের সঙ্গে মিল রেখে কয়েকটা শব্দ বলতে হবে। তাহলেই নাম মাথার ভেতর গাঁথা হয়ে যাবে। হরমুজ তরমুজ। হরমুজ তরমুজ। হরমুজ তরমুজ।

বাবুর্চি তার গায়ে পাতলা চাদর দিয়ে দিয়েছে। খুবই যত্ন করে সে চাদরটা দিয়েছে। তিনি বুঝতে চেষ্টা করছেন এই যত্নটা কতটা সে মন থেকে করছে? আর কতটা চাকরির অংশ হিসেবে করছে।

তোমার নাম তো মনসুর?

জি স্যার। এই সব খুঁটিনাটি জিনিস আমার মনে থাকে না। তোমারটা মনে আছে?

জি স্যার। স্যার আপনার পা ম্যাসেজ করে দিব?

দাও, তার আগে মোবাইল টেলিফোনটা আনো তো দেখি, আমার ম্যানেজারকে একটা টেলিফোন করি।

মনসুর টেলিফোন এনে দিল। মবিনুর রহমান টেলিফোন হাতে নিতে নিতে বললেন, তোমার কি মনে হয় এত রাতে টেলিফোনে তার ঘুম ভাঙালে সে কি রাগ করবে?

জি না স্যার।

রাগ করবে না কেন? আমি তার অন্নদাতা এই কারণে?

জি স্যার।

তুমি তো ভালই ম্যাসাজ করতে পারো। ঘুম এসে যাচ্ছে?

জি স্যার।

মবিনুর রহমান টেলিফোন হাতে বসে আছেন। বাবুলের ঘুম ভাঙাবেন কিনা এখনো বুঝতে পারছেন না। হয়তো ভাঙাবেন। হয়তো ভাঙাবেন না। সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনো আছে। এখন মনসুরের সঙ্গে কথা বলে আরাম পাচ্ছেন। সে যদিও জি স্যার ছাড়া আর কিছুই বলছে না। এটা খুবই আশ্চর্য ব্যাপার যে রাতে তার কোমল গলায় জি স্যার শুনতে তার ভাল লাগছে।

মনসুর।

জি স্যার।

মানুষ হিসেবে আমাকে তোমার কেমন মনে হয়?

আপনের মতো মানুষ স্যার আমি আমার এই জীবনে দেখি নাই।

তুমি কি এই কথাটা আমাকে খুশি করার জন্য বলেছ?

জি না স্যার। আমার বড় মেয়েটার চিকিৎসার সব খরচ আপনি দিয়েছিলেন। তারে আপনি ইন্ডিয়াতে পাঠায়েছিলেন।

লাভ তো হয় নাই। তোমার মেয়ে মারা গেছে।

জি স্যার।

তোমার মেয়েটার নাম যেন কী ছিল? আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে বলতে হবে দেখি আমি বলতে পারি কিনা, রুমা, তার নাম রুমা। হয়েছে?

জি স্যার।

তুমি বলেছিলে তোমার মেয়ের মৃত্যুর পর তার মা পাগল হয়ে গিয়েছিল–এখন তার অবস্থা কি?

মনসুর জবাব দিল না। মাথা নিচু করে পা মালিশ করতে লাগল। মবিনুর রহমান নড়েচড়ে বসলেন। হালকা গলায় বললেন, আমি এক সময় শুনেছিলাম তুমি তোমার পাগল স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার বিবাহ করেছ। এটা কি সত্যি?

জি স্যার।

তোমার মেয়ের মৃত্যু শোকে যে মেয়ে পাগল হয়ে গেছে তাকে তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করাটা দুষ্ট লোকের লক্ষণ। তুমি যে দুষ্টু লোক এটা জানো?

মনসুর জবাব দিল না। তার হাত কাঁপতে লাগল। মবিনুর রহমান ঘুম ঘুম গলায় বলল, আমি অবশ্য আমার আশপাশে দুষ্টু লোক রাখতে পছন্দ করি। কেন করি জানো?

জি না স্যার।

আশপাশে দুষ্টু লোক দেখতে পেলে আমার মন ভালো থাকে। তখন আমার মনে হয় ওদের তুলনায় আমি তো অনেক ভালো। আমি যদি সাধু সন্ন্যাসীদের নিয়ে থাকতাম তাহলে নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হতো। মনুসর ঠিক বলেছি?

জি স্যার।

তোমার পরিচিত কেউ আছে যে খুন করেছে? খুনের ব্যাপারটা প্রকাশ হয়নি বলে তার শাস্তি হয়নি। সেরকম কেউ থাকলে আমি তাকে একটা পার্মানেন্ট চাকরি দিতাম। তাকে সব সময় রাখতাম আমার আশপাশে। তোমার চেনাজানার মধ্যে এরকম কেউ আছে?

জি না স্যার।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে না?

জি স্যার।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি চলে যাও।

আরেক কাপ চা এনে দিব স্যার?

না। আমার ক্যাপটা এনে দাও। মাথায় ঠাণ্ডা লাগছে।

মাথায় ক্যাপ পরায় খুবই আরাম লাগছে। ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়লে আরামটা চলে যাবে। ঘুমন্ত শরীর আরাম টের পায় না। মবিনুর রহমান জেগে থাকার চেষ্টা করতে লাগলেন। যখন ঘুম পায় অথচ ঘুমুতে ইচ্ছা করে না তখন জেগে থাকার জন্যে মবিনুর রহমান তার নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করেন। পদ্ধতির নাম পত্ৰলেখা পদ্ধতি। তিনি মনে মনে চিঠি লেখেন। বেশির ভাগ চিঠি বাবুপুরী এতিমখানায় সুপারিনটেন্টনকে লেখেন। এই মানুষটা মারা গেছেন। তাতে চিঠি লিখতে তার সমস্যা হয় না। হঠাৎ হঠাৎ লায়লাকে লেখেন। লায়লাকে চিঠি লেখার সময় তার সামান্য লজ্জাবোধও হয়। লায়লাকে চিঠি লেখার সময় তিনি এমন ভাব করেন যে লায়লা তারই স্ত্রী। কোনো কারণে সে ছেলেমেয়ে নিয়ে আলাদা বাস করছে। লায়লাকে লেখা চিঠিতে প্রেম-ভালবাসা জাতীয় কিছু থাকে না। প্রয়োজনের চিঠির মতো হয়।

মবিনুর রহমান চোখ বন্ধ করে চিঠি শুরু করলেন—

লায়লা,

আমার ম্যানেজারকে দিয়ে কিছু আম পাঠিয়েছিলাম। পেয়েছ তো? তোমার মেয়ে কি আম পছন্দ করে? তোমার মেয়েকে আমার স্নেহাশিস দিও। তোমার স্কুলের চাকরি কেমন চলছে? শরীরের ওপর বেশি চাপ পড়লে চাকরি ছেড়ে দাও। অবসর নাও। আমি যেমন অবসর জীবনযাপন করছি সেরকম অবসর। কাজ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। অবসরও কিন্তু এক ধরনের কাজ এবং বেশ জটিল কাজ।

আমার কথাই বলি– নিজের অবসরটা কিভাবে কাটাব তা নিয়ে আমাকে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়। প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর চিন্তা করতে হয় আজকের দিনটা কিভাবে কাটাব। আমার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। স্মৃতিশক্তির সমস্যা হচ্ছে। অনেক কিছু পুরোপুরি মনে করতে পারি না।

ভালো কথা, স্বপ্ন সম্পর্কে তুমি কি কিছু জানো। নিজেকে মৃত স্বপ্নে দেখলে কী হয়? বাবুপুরা এতিমখানার সুপার মুন্সি ইদরিস স্বপ্ন বিষয়ে অনেক কিছু জানতেন। কেউ কোনো কিছু স্বপ্ন দেখলেই বলে দিতেন স্বপ্নের অর্থ কি। একবার আমি স্বপ্নে দশ-বারোটা সাপ দেখেছিলাম। আমি একটা ডোবার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, আমার চারদিকে সাপ কিলবিল করছে। স্যারকে স্বপ্নের কথা বলতেই তিনি বললেন–তোর কোনো বড় অসুখ-বিসুখ হবে। সত্যি সত্যিই আমার টাইফয়েড় হয়েছিল।

চিঠি অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আর লম্বা করা ঠিক না। ভালো কথা, তোমাদের ঐদিকে কি বৃষ্ট পড়ছে? এদিকে ভালো বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হয় এ বছর বন্যা হবে।

তুমি ভালো থেকো।

মবিনুর রহমান

পুনশ্চ : মেয়েদের আমার স্নেহ চুম্বন দিও।

লায়লাকে লেখা চিঠিতে সামান্য মিথ্যা বলা হলো— এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে না অথচ তিনি লিখেছেন বৃষ্টি হচ্ছে। চিঠি যদি সত্যি সত্যি লেখা হতো তাহলে এই মিথ্যা তিনি ঠিক করতে পারতেন। যে চিঠি মনে মনে লেখা হয় সেই চিঠি ঠিক করা যায় না। মনের কোনো লেখাই নষ্ট করা যায় না। মস্তিষ্কের কোনো ইরেজ সিস্টেম নেই।

মবিনুর রহমান সিগারেট ধরালেন। মুন্সি ইদরিসকে চিঠি লেখার জন্যে তৈরি হলেন। এই চিঠি সাবধানে লিখতে হবে। এখানে ভুলভাল থাকলে চলবে না। সিগারেট টানতে টানতেও এই চিঠি লেখা যাবে না। এটা বেয়াদবি হবে। মবিনুর রহমান আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দিলেন। চোখ বন্ধ করলেন। মুন্সি ইদরিসকে লেখার সময় চিঠির ওপর সংখ্যা লিখতে হবে ৭৮৬-এর অর্থ বিসমিল্লাহ হির রহমানুর রহিম। সম্বোধন হতে হবে পোশাকি—

৫৭১

বড় হুজুর সমীপেষু

আসসালামু আলায়কুম।

দ্বিতীয় কোনো লাইন মাথায় আসছে না। এটা কেমন কথা? আর কিছু মাথায় আসছে না কেন? মবিনুর রহমান অস্থিরবোধ করছেন। একটু আগে শীত শীত লাগছিল। এখন লাগছে না। তাঁর কপাল কি ঘামছে। তিনি চাদরের নিচ থেকে হাত বের করে কপালে রাখলেন। কপাল ঘামছে। তিনি ভীত গলায় ডাকলেন, বাবুল, বাবুল। ম্যানেজার।

বাবুর্চি গনি মিয়া বলল, স্যার কিছু লাগবে? বাবুর্চি গনি মিয়াকে তিনি চলে যেতে বলেছিলেন। সে যায়নি। এতক্ষণ পিছনে দাঁড়িয়েছিল। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মুন্সি ইদরিসের সঙ্গে কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হতো। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে তাকে কানে ধরে উঠবোস করতে হতো।

মুন্সি ইদরিস বলতেন, আমি কোনো অপরাধ ক্ষমা করি না। ক্ষমা করবেন আল্লাহপাক। তিনি রহমানুর রহিম। যে যত অপরাধই করুক ক্ষমা পেয়ে যাবে; কারণ আল্লাহর রহমতের চেয়ে বেশি অপরাধ কেউ করতে পারবে না।

গনি মিয়া।

জি স্যার।

পানি খাব। পানি আনো।

স্যার এই নিন পানি।

এই নিন পানি মানে? তুমি কি পানির গ্লাস হাতে আমার পিছনে দাঁড়িয়েছিলে?

জি স্যার।

কেন?

আমার মনে হচ্ছিল আপনি পানি চাইবেন।

মবিনুর রহমান এক চুমুকে পানির গ্লাস শেষ করে গ্লাস ফেরত দিতে দিতে বললেন, গ্লাস হাতে ঘাপটি মেরে এতক্ষণ আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকার কাজটা তুমি করেছ আমাকে চমকে দেবার জন্যে। তুমি ভেবেছ আমি চমকে যাব এবং খুশি হব। আমি চমক পছন্দ করি না। বায়েজীদ বোস্তামী তার মার জন্যে পানি গ্লাস হাতে সারারাত জেগেছিলেন। তুমি বায়েজীদ বোস্তামী না। তুমি বাবুর্চি গনি মিয়া।

স্যার আমার ভুল হয়েছে। আপনার কাছে ক্ষমা চাই।

আমি কাউকে ক্ষমা করি না। ক্ষমার মালিক আল্লাহপাক। তুমি তোমার ভুলের জন্যে কানে ধরে দশবার উঠবোস করো।

গনি মিয়া উঠবোস করছে। তার কোমরে কিংবা হাঁটুতে বোধ হয় কোনো সমস্যা আছে। এক একবার উঠবোস করছে কটকট শব্দ হচ্ছে।

দশবার কি শেষ হয়েছে?

জি স্যার।

কানে ধরে উঠবোস করানোর শাস্তি দেয়ার পদ্ধতি আমি কার কাছ থেকে শিখেছি জানো?

জানি স্যার। আপনি বলেছিলেন মুন্সি ইদরিস।

ঠিক বলেছ। আমরা তাঁকে বড় হুজুর ডাকতাম। অতি কঠিন লোক। কেউ অন্যায় করেছে আর তিনি তাকে শাস্তি দেন নাই এরকম হয় নাই। একবার তাকে খুশি করার জন্যে এতিমখানার দারোয়ান বলল, বড় হুজুর আপনি ফেরেশতার মতো আদমি। বড় হুজুর বললেন, তুমি তো অন্যায় কথা বলেছ, সব মানুষের অবস্থান ফেরেশতার ওপরে। তুমি আমাকে ফেরেশতার মতো বলে ছোট করেছ। পশ্চিম দিকে ফিরে কানে ধরে উঠবোস করো। উনি কেমন মানুষ ছিল বুঝতে পারছ গনি মিয়া?

জি স্যার।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress