সুদর্শন চক্রের জন্ম কথা
চক্রবাণ , চক্রাস্ত্র , সুদর্শন চক্র নারায়নের শোভা, তাঁর চক্রপাণি নামের কারণ। ছোট্ট কুমুর মনে বিরাট কৌতুহল— চক্রাস্ত্র কি? তার সব প্রশ্নের উত্তর যার ঝুলিতে সেই ঠাম্মির কাছে গিয়ে হাজির—- তোমার চক্রপাণির চক্রটি কিগো? সবাই বলে সুদর্শন চক্র , চক্রাস্ত্র একটু বলো না।
ঠাম্মি শুরু করেন চক্রবাণ বা সুদর্শন চক্রের উৎপত্তির কাহিনী——
দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার মেয়ের নাম সংজ্ঞা। খুবই আদরের। এর সঙ্গে সূর্যদেবের বিয়ে হয়। কিছুদিন পর সংজ্ঞার গর্ভে শমন বা যম নামে এক পুত্রের জন্ম হয়। সূর্যের প্রচণ্ড তেজ সংজ্ঞা সহ্য করতে পারেনা। খুব কষ্ট হয় তার। সংজ্ঞা নিজের শক্তি দিয়ে ছায়া নামে নিজের মত অনুরূপ নারী তৈরি করেন। ছায়াকে সূর্যের সংসারে রেখে নিজে বাপের বাড়ি ফিরে যান। কিছুদিন পরে ছায়ার গর্ভে শনির জন্ম হয়। ছায়া সপত্নী পুত্র শমন কেএকদম দেখতে পারতেন না। সব সময় অনাদর করতেন । একদিন শমন ছায়াকে পদাঘাত করলে ছায়া শমন কে অভিশাপ দেন—- তোর পায়ে কুষ্ঠ হবে! সূর্যের সন্দেহ হয়— কোন মা তার সন্তানকে এমন অভিশাপ দিতে পারেনা! ছায়া নিশ্চয়ই শমনের প্রকৃত মা নন। যোগ প্রভাবে সূর্য সব সত্য জানতে পারেন। সূর্যদেব বিশ্বকর্মা নিবাস থেকে সংজ্ঞা কে ফিরিয়ে আনতে গেলেন। বিশ্বকর্মা মেয়ের কাছ থেকে আগেই সব কথা জানতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সূর্যদেবকে বললেন—- আপনার প্রখর তেজ সহ্য করতে না পেরে আমার মেয়ে এই কাজ করেছে! আপনি কিছু তেজ সম্বরণ করুন! সূর্য সম্মত হলেন। বিশ্বকর্মা তাঁকে কুঁদে বসিয়ে বারটি অংশে বিভক্ত করেন। এই কুঁদ ও সূর্যের অঙ্গ ঘর্ষণে যে চুর্ণ তৈরি হয়েছিল তা সংগ্রহ করে বিশ্বকর্মা একটি চক্র নির্মাণ করেন। এরই নাম সুদর্শন চক্র। সূর্য তা অধিকার করেন । এর কিছুদিন পর সংজ্ঞার গর্ভে সূর্যের এক কন্যা জন্মায়।তাঁর নাম যমুনা। সূর্যকন্যা যমুনার সাথে নারায়ণের বিবাহের যৌতুক হিসেবে সূর্যদেব এই চক্র নারায়ন কে প্রদান করেন। তাই চক্রের অধিকারী নারায়ন— চক্র স্বামী, চক্রপাণি, চক্রধর এইসব নামে পরিচিত হয়েছিলেন! সুদর্শন চক্র সূর্য তেজে নির্মিত— তেজরাশির উজ্জ্বল্যে নির্মিত বলে খুবই দৃষ্টিনন্দন— তাই সুদর্শন!—— ঠাম্মি চুপ করেন! শেষ হয় সুদর্শন এর জন্ম কথার।
তথ্যসূত্র- বৃহৎ সারাবলী
কৃত্তিবাসী রামায়ণ।