রাজা দশরথ যবে ত্যাজেন ধরাধাম।
পিণ্ডদানে গয়া যান লক্ষ্মণ ও রাম।।
সেথা পঁহুচিয়া দেরি হইলো অপার।
পিণ্ডদান সামগ্রী সকল মিলে কোথা আর?
রাম-লক্ষণ বিচরণ করে গয়ার বহু স্থানে।
জোগাড়িতে সকল দ্রব্য যা লাগে পিণ্ডদানে।।
এদিকে পিণ্ডদানের ক্ষণ অতিক্রান্ত প্রায়।
ক্ষুধার্ত দশরথ বিহ্বল তথা অশান্ত হন হায়।।
সীতা বসি ছিলা যবে তাহাদিগের অপেক্ষায়।
দশরথ সে দরশন দিলেন তারে হায়।।
দশরথ সীতারে কহেন – হে বধূমাতা –
কোথা তব পতিদেব সহিত তার ভ্রাতা?
সীতা প্রণমিয়া কহেন – হে পিতাশ্রী-
দুই পুত্র আনিতে গেছেন পিণ্ডদান সামগ্রী।।
আসিলেই পিণ্ডদান হইবেক সমাপন।
অধীর হইবার হে পিতা নাইকো কারন।।
দশরথ ক্রন্দিয়া তবু কহেন সীতারে
অন্নজল দেহ মোরে বসিতে আহারে
অতীব ক্ষুধার্ত আমি বুঝ না কি মাতা?
স্বয়ং পুত্রবধূ মোর হও মোর ত্রাতা
এই ফল্গুনদীতীরে বালুকারাশিদ্বারা
পিণ্ডদানে পূণ্য লভো হইয়ো না আত্মহারা
অতএব সীতা চলেন ফল্গুনদীতীরে।
শশ্রুপিতার পিণ্ডদান সম্পন্ন করেন ধীরে।।
বালুকারাশিদ্বারা দশরথের পিণ্ডদান।
বটবৃক্ষ – ফল্গু – তুলসী – ব্রাহ্মণ সাক্ষী রন।।
সাত্বিক নিষ্ঠায় সীতা শেষকৃত্য করিলেন।
দশরথের তৃপ্ত আত্মা বটে শান্তি লভিলেন।।
অবশেষে বিলম্বে ফিরে দাশরথিদ্বয়।
শুনিলেন সীতামুখে এ কৃত্য
আর প্রয়োজনীয় নয়।।
দশরথের আত্মা তাহার বালুকারাশি দিয়া।
সীতাদ্বারা পিণ্ডদান লহিছেন করাইয়া।।
ক্ষুব্ধ রাম কহিলেন – বলো কী প্রমাণ আছে?
মিথ্যা নাহি কহিতেছ আমাদিগ কাছে?
সীতা কহিলেন আছে সাক্ষী মোর চার।
তুলসী, ফল্গু, ব্রাহ্মণ তথা বটবৃক্ষ এক অপার।।
স্বামী তথা দেবরে লইয়া যান ফল্গুতীরে।
সাক্ষীগণে সত্যভাষণ কহিতে কন ধীরে।।
অবাক বিষ্ময়ে সীতা হায় বুঝিলেন
ফল্গু, তুলসী তথা ব্রাহ্মণ সত্য
অস্বীকার করিলেন
কেবল সত্য কহিলেন সে বটবৃক্ষ যে অক্ষয় –
প্রণমিয়া রামে কহেন -সীতা
এ কৃত্য করিয়াছেন নিশ্চয়।
ইতমধ্যে দশরথের আত্মা পুনঃ আবির্ভূত হইয়া
দুই পুত্রে তারই তৃপ্তি কহিলেন বর্ণিয়া!
সীতাদেবী মাতাসম পিণ্ডদান প্রথা
নিয়মে আচারে শাস্ত্রে করেননি অন্যথা
সীতালাগি লভিয়াছি অখণ্ড বৈকুন্ঠলোক।
পুত্রগন, আর তোমরা না করিও শোক ।।
এত বলি দশরথ সে হইলা বিলীন।
সত্য চরম প্রকাশে যে মিথ্যা করি লীন।।
সীতা অতঃপর ক্রোধে দিলেন অভিযোগ এ
ফল্গু হইবে অন্তঃসলিলা তার মিথ্যাভাষণ পাপে।।
গয়াক্ষেত্রে রহিবেনা তুলসীবৃক্ষ আর
পিণ্ডদানে তুলসীপত্র রহিবেনা তার।।
গয়াক্ষেত্রে ব্রাহ্মণকূলের দারিদ্র্যেরই কাল
কভু ঘুচিবেনা হায় রহিবে চিরকাল।।
অক্ষয় বটেরে তিনি করিলেন বরদান
গয়ায় পিণ্ডদানে বটেও হইবে পিণ্ডদান
সকলেই বটপূজা করিবে অক্ষয় স্মরণে
ছায়াদান করিবে ক্লান্ত পথিকরে সকল ক্ষণে।।
আজও তাই ফল্গু নদী অন্তঃসলিলা
তুলসীবৃক্ষ গয়ায় বিলীন এই সে অছিলা।
গয়ায় পূজারীগণ যাহারা ব্রাহ্মণ
অভাব ও অনটন বহেন সর্বক্ষণ।।
বটবৃক্ষ উচ্চশিরে সেথা রহিয়াছে আজ।
তারই তলে সমাপ্তি পায় পিণ্ডদান কাজ।।
এ কাহিনি পূরাণেরই রামায়ণে নাই?
কথক অরিন কবি পুনঃ বর্ণিলাম তাই।।