Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না শিখার

এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না শিখার। শরীরে বড় কষ্ট। খোলসটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, ভিতরে কতটা ফোপরা হয়ে গেছে। সয়ে যেতে হবে। আর ক’টাই বা দিন! কষ্টটা কি খারাপ লাগে শিখার? কষ্ট খারাপ ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যেও কি পরিশোধনের কাজ হয় না? হয় বলেই শিখা কষ্টের কথা কাউকে বলেন না। মনের কষ্টও কি কম? যতদিন বেঁচে থাকা ততদিন কত আপনজন পর হয়ে যাবে, কত বিশ্বাসী ভেঙে দেবে বিশ্বাস, কত স্নেহের ধন ধরবে রুদ্রমূর্তি, কত চেনা হয়ে যাবে অচেনা। এসব কি মেনেই নেননি শিখা। ঘর করেছেন এক ভৈরবের। কত খোঁচা, কত উন্মাদ রাগ, কত লাঞ্ছনা আর অপমান সইতে হয়েছে জীবনে। ছেলেরা পালিয়ে বাঁচল, মেয়ে বাঁচল বরের ঘরে গিয়ে। তার তো পথ ছিল না পালানোর। যেন বাঘের খাঁচায় নিরস্ত্র বাস করতে হল। বাঘের ছায়াটুকু সম্বল করে। এখনকার মেয়েরা নারীমুক্তির কথাটথা গলা ছেড়ে বলে। তারা পড়েনি তো কখনও এরকম মানুষের পাল্লায়। মনের কষ্টের শেষও নেই। গতকাল দুই ছেলে এসে তুমুল ঝগড়া করে গেছে তার সঙ্গে। ঝগড়া বলা ভুল, ওদের ছিল একতরফা আক্রমণ। শিখা এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তার অপরাধ, লাইফ ইনশিয়োরেন্স পলিসিটা তিনি রীণাকে দিয়ে দিয়েছেন। ঢাকুরিয়ার বাড়ির প্রমোটারের দেওয়া সাত লাখ টাকার সবটাই তিনি ভাশুরদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ছেলেদের তাই নিয়ে আক্রোশ। শিখা ওদের কী করে বোঝাবেন যে, দুনিয়ার সম্পদ দু’হাতে কেড়ে নিলেই হয় না। মানুষের শাপ লাগে। শিখা জানেন, ছেলেরা আর সহজে এমুখো হবে না। বাপের শ্রাদ্ধ করল না, শিখা মারা গেলে হয়তো শিখার শ্রাদ্ধও করবে না। তা না করে না করুক। শিখা কি তা বলে পারেন এত বড় বঞ্চনাকে মেনে নিতে?

সব খারাপের মধ্যে একটাই ভাল খবর। দিন দশেক আগে বাসুদেবের শ্রাদ্ধের দিন সন্ধেবেলায় শিখা বাইরে গিয়ে রীণাকে টেলিফোন করেছিলেন।

রীণা খুব খুশি হয়েছিল ফোন পেয়ে। বলল, দিদি, আপনি যা বলেছেন তাই করেছি।

কী করেছ?

অজুকে দিয়ে এ ক’দিন প্রায় অশৌচের মতোই পালন করিয়েছি, পুরোটা পারিনি। ধড়া বা হবিষ্যিটা হয়ে না উঠলেও নিরামিষ খেয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য কাণ্ড, কাল ঘাট কাজের দিন নিজেই গিয়ে কালীঘাটে ন্যাড়া হয়ে এসেছে। আজ কালীঘাটে গিয়ে শ্রাদ্ধও করেছে। আমি সঙ্গে গিয়েছিলাম।

বাঁচালে। জানি না বাপু শ্রাদ্ধ করলে বা না করলে কী হয়, কিন্তু মনটা বড় খচখচ করছিল। কী বলে যে তোমাকে আশীর্বাদ জানাব ভেবে পাচ্ছি না।

আপনি কি জানেন দিদি, আপনার মতো ভাল মানুষ আমি জীবনে কমই দেখেছি।

পাগল! আমি ভাল কি না তা আমিই জানি। বরাবর হয়তো তোমার এ ধারণা থাকবে না।

থাকবে দিদি। আমাদের সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে। পুলিশের লোক এসে ভীষণ অশান্তি করছে কিছুদিন ধরে। আমি আর আমার স্বামী একটুও শান্তিতে নেই। দেখা হলে সব বলব।

পুলিশ কেন যে এরকম করছে জানি না। কী লাভ হবে ওদের। শবর দাশগুপ্তই কি এসব করছে?

হ্যাঁ দিদি, উনিই। আপনি চেনেন ওঁকে?

চিনি। আমার বউমার সম্পর্কে দাদা। শবর খুব বুদ্ধিমান।

হ্যাঁ, সেটা স্বীকার করতেই হয়। কিন্তু এমন সব প্রশ্ন করেন যে—

বুঝেছি। ওরা ওরকমই। দেখা হলে ওকে আমি বলে দেব।

না, শবরের সঙ্গে দেখা হয়নি শিখার। তিনি ওর কোনও খবর জানেন না, ঠিক কোন দফতরে কাজ করে তাও জানা নেই। দেখা হলে তিনি বলতেন, ওদের আর যন্ত্রণা দিয়ো না। এবার ওদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও। পাপ করেছে বটে, কিন্তু তার শাস্তিও তো মেয়েটা কম পায়নি।

এসেছিল গোপালও। সেও বলেছে শবর দাশগুপ্ত তাকে জেরায় জেরায় জেরবার করে ছেড়েছে। এখনও জেরা চলছে। থানায় ডেকে নিয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে, একজন হুমকি দিচ্ছে। শিখার তাই মন ভাল নেই। শবরকে সে নিরস্ত করতে চায়। এসব করে আর লাভ কী?

দিন চারেক আগে রীণা তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিল এক সকালে। ছেলেটার ন্যাড়া মাথা দেখে শিখার বুক জুড়োল। হোক অবৈধ, তবু এই একটা ছেলেই তো বাসুদেবকে স্বীকার করল বাবা বলে!

শিখা তাদের বলেন, খাওয়ালেন। ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওঁর কাজ করতে তোমার কোনও কষ্ট হয়নি তো বাবা? অনিচ্ছেয় অভক্তি নিয়ে করোনি তো!

ছেলেটা অকপটে মাথা নেড়ে বলল, না। ওঁর প্রতি আমার তো একটা কর্তব্য ছিল।

ওঁকে তুমি বোধহয় চিনতে! না?

হ্যাঁ। উনি মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতেন।

শুনে আমার চোখে জল আসছে। ছেলেমেয়ের প্রতি উনি সারাজীবন তেমন কোনও কর্তব্য করেননি। তোমার সঙ্গে দেখা করতেন শুনে কত ভাল লাগছে! একটু বলবে ওঁর কথা?

অজু লজ্জা পেয়ে চোখ নামাল। তারপর বলল, আমাকে উনি রেস্তোরাঁয় মাঝে মাঝে খাওয়াতে নিয়ে গেছেন। গল্প করেছেন।

কী গল্প?

অনেক গল্প। বেশিরভাগই ওঁর খেলার জীবনের কথা।

হ্যাঁ, খেলার কথা বলতে খুব ভালবাসতেন। আর আমাদের কথা কখনও বলতেন না?

খুব একটা নয়। তবে দাদারা যে ওঁকে পছন্দ করেন না সেটা বলেছেন।

হ্যাঁ বাবা, ছেলেরা ওঁকে পছন্দ করত না। কারণ ছেলেদের দিকে উনি ফিরেও তাকাননি কখনও। রেগে গেলে এমন মার মারতেন যে ভয়ে আমার রক্ত জল হয়ে যেত। বোধহয় বুড়ো বয়সে পুত্র-ক্ষুধা জেগেছিল। নিজের ছেলেরা হাতছাড়া হওয়ায় তোমার কাছে যেতেন।

অজু চুপ করে রইল।

শুনেছি, তোমাকেও একটা জীবন তোমার বাবার অনাদর সইতে হয়েছে!

ও কিছু নয়। বাবা ভাল লোক।

তা জানি। তোমার ওই বাবার মতো ভাল লোক পৃথিবীতে বেশি নেই। এখন তোমার আসল বাবা তো মারা গেছেন, শঙ্করের সঙ্গে এখনও কি সম্পর্কটা ওরকমই আছে?

অজু একটু হাসল, আপনি ভাবছেন কেন? সব ঠিকই আছে। আমার কোনও অসুবিধে হয় না।

বুঝেছি। এখনও হয়নি। হবেই বা কী করে? ওরও তো কষ্ট কম নয়। আমি এক পাষাণের ঘর করেছি বটে, কিন্তু ভাবতে ভাল লাগছে যে, সেই পাষাণও স্নেহের কাঙাল হয়ে একদিন তোমার কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। মনুষ্যত্ব বোধহয় একেই বলে।

আমার বাবা আমার জন্য অনেক করেছেন। তাকে আমার কখনও খারাপ লাগেনি। হি ওয়াজ ভেরি গুড টু মি।

দোহাই বাবা, ইংরেজিতে বোলো না। আমি বুঝতে পারি না। সেকেলে মানুষ তো। বাংলা করে বলল।

উনি আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন।

ওঁকে বাবা বলে বলছ। কত ভাল লাগল শুনে!

অজু হাসল, উনি তো আমার বাবাই। বাবা ছাড়া কী বলব?

তাই তো!

রীণা চুপ করে একটা হাতরুমালে চোখ ঢেকে সোফার এক কোণে বসে ছিল। ধীরে জল ভরা চোখ তুলে বলল, আমার বড় পাপের ভয় হচ্ছে। কী যে করলাম জীবনটা নিয়ে।

শিখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসলেন, একটা জ্বালা-পোড়া তো আছেই ভাই। জ্বালা পোড়া ছাড়া কি শুদ্ধ হওয়া যায়? তবে তুমি ভাগ্যবতী, অমন স্বামী পেয়েছ।

রীণা মাথা নেড়ে বলল, শুদ্ধ হওয়া কাকে বলে তাই তো জানি না। এই ছেলেটাকে বুকে আগলে শুধু ভয়ে ভয়ে দিন কেটে গেছে। এখন আর কী হবে শুদ্ধ হয়ে? ছেলের কাছেই তো কিছু গোপন রইল না। ওর চোখে কি আমি আর মায়ের মতো মা?

ওসব ভেবো না। তোমার ছেলে তোমাকে আঁকড়েই তো বেঁচে থেকেছে। জীবনে যেটুকু পেয়েছ তাই নিয়ে থাকো। যা হয়নি তার কথা ভেবে কী হবে? তোমাকে বলি, তোমার স্বামীকে কিন্তু আমি চিনি। সাহস করে একবার তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম।

রীণা চমকে উঠে বলল, সে কী! কবে?

শিখা একটু হাসলেন। বললেন, তখন আমরা সদ্য এ ফ্ল্যাটে এসেছি। উনি তখন হার্ট অ্যাটাক হয়ে হাসপাতালে।

কেন ডেকে এনেছিলেন দিদি?

মানুষটা একটা জীবন বড় কষ্ট পেয়েছেন। আমার তাই ওঁকে খুব দেখার ইচ্ছে ছিল। তোমার ভয় নেই। শঙ্করবাবু আমার সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেছিলেন।

উনি আমাকে বলেননি তো!

বলার মতো ঘটনা নয়। আমি ওঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেছিলাম, দুনিয়ার কোনও পাপেরই শাস্তি বাকি থাকে না। ফল পেতেই হয়। শঙ্করবাবু বড্ড ভাল মানুষ। উনি কেঁদে ফেলেছিলেন। তার পরেও কয়েকবার এসেছেন।

আমাকে কখনও বলেননি তো উনি!

পলিসিটার গতি হল?

হ্যাঁ। ওরা আমাদের ক্লেম অ্যাকসেপ্ট করেছে। প্রসেসিং চলছে। একটু সময় লাগবে।

যাক! ওটা নিয়ে আমার চিন্তা ছিল। তোমার ছেলেটা যে বঞ্চিত হল না এটাই একটা মস্ত সান্ত্বনা।

কিন্তু আপনার ছেলেরা তো খুশি হয়নি দিদি।

শিখা ফের একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন, আমার স্বামীর বিষয়সম্পত্তির নেশা ছিল। রোজগার কম করেননি। বাপের টাকা, এই ফ্ল্যাট এসব তো ওরাই পাবে। ওদের অখুশির কারণ দেখি না। তবু যদি খুশি না হয় তা হলে সে ওদের স্বভাবের দোষ। তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না। ওদের তো অজুর মতো কষ্টের জীবন নয়। অজুর মানসিক কষ্ট যে অনেক বেশি। ওর জন্য এটুকু করে উনি মনুষ্যত্বেরই পরিচয় দিয়েছিলেন।

আপনি রক্তমাংসের মানুষ নন দিদি। আপনি যেন আকাশ থেকে আলো হয়ে নেমে এসেছেন।

শিখ মৃদু হাসলেন, অত বলতে নেই। পরে যদি ওসব কথা ফেরত নিতে হয়?

কী যে বলেন।

দু’জনেই তাকে প্রণাম করে বিদায় নিয়েছিল। ওই একটা তৃপ্তি পেয়েছিলেন শিখা। কারও ভাগে কম পড়লে তার কষ্ট হয়।

গত কিছুদিনে শিখা ছোটখাটো আরও কয়েকটা তৃপ্তি পেয়েছেন। পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এসেছিল। সামান্য কিছু টাকা খুব বিনীতভাবে চেয়েছিল তারা। আগের রুদ্রমূর্তি নেই।

শিখা তাদের বললেন, এটুকু আমি পারব। আগে যা চেয়েছিলে তা পারতাম না। আমার যে অত টাকা নেই।

সেই ছেলেরা মাঝে মাঝে তার খোঁজ নিয়ে যায়।

ঢাকুরিয়ার অপোগণ্ডগুলোও আসে। সবাই নয়। যারা একটু চালাকচতুর, যারা একটু সাহসী তারা এসে লিফটে করে আটতলায় ওঠে। বসে সুখদুঃখের কত কথা কয়ে যায়। আজও ওরা তার বন্ধু, তাঁর বড় আপনজন। কাউকে নিজের গয়না বেচে দোকান করে দিয়েছেন, কাউকে পাইয়ে দিয়েছেন ব্যাঙ্ক লোন, একে ওকে কতজনের চাকরি করে দিয়েছেন। রোগে শোকে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কতটুকু আর পারেন শিখা?

যেটুকু পেরেছেন তাতেই কত লোক কেনা হয়ে আছে তার কাছে।

আজ কি একটু মেঘলা করেছে? শরৎকাল শেষ হয়ে এল। এরপর হেমন্ত। কুয়াশা হবে। একটু একটু করে শীত পড়বে। কতকাল পৃথিবীর এই ঋতুচক্র দেখবেন শিখা?

বাতাসী!

বাতাসী সামনে এসে দাঁড়াল।

ক্লান্ত গলায় শিখা বললেন, আজ আমার শরীরটা ভাল নেই। একটু শোব। আমাকে ডাকিস না। তুই খেয়ে নিস।

তোমার তো রোজ শরীর খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারকে খবর দেব?

ডাক্তার জানে। সব জানে। দরকার হলে বলব।

শিখা সামনের ঘর থেকে ভিতরের ঘরে যাবেন বলে উঠতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় কলিংবেল বাজল। ফের বসে পড়ে বললেন, দেখ তো, কে এল!

বাতাসী দরজা খুলতেই দরজার ফ্রেমে শবর দাশগুপ্তকে দেখা গেল।

মাসিমা, আমি।

এসো বাবা, এসো। তোমার জন্য কতদিন ধরে অপেক্ষা করছি!

শবর ধীর পায়ে ঘরে এল। মুখোমুখি সোফায় বসল। বলল, কেন মাসিমা, আমার জন্য অপেক্ষা করছেন কেন?

তোমাকে বকব বলে। কেন মানুষজনকে ভয় দেখাচ্ছ? এসব করে আর কী লাভ? এবার ওদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও।

শবর মৃদু একটু বিষণ্ণ হাসি হেসে বলল, শুধু এ জন্যই?

হ্যাঁ।

শবর মাথাটা একটু নামিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল, আমার কাজটা তত ভাল নয় মাসিমা, কত মানুষের অভিশম্পাত কুড়োতেও হয়। কত প্যাটার্ন, কত ছক, কত সম্পর্ক, কত ভালবাসা অবধি ভেঙে দিতে হয়।

জানি বাপু। কী খাবে বলল। একটু কফি করুক?

ঠিক আছে।

বাতাসীকে ডেকে কফির কথা বলে দিয়ে শিখা শবরের চোখে চোখ রাখলেন, পৃথিবীর সব ছক কি উলটে দিতে পারবে বাবা?

তা বলছি না। আমি আর কতটুকু পারি? পুলিশেরই বা কতটুকু সাধ্য বলুন! পুলিশের ফাইলে কত কেস জমা আছে যেগুলোর মীমাংসা হয়নি। আনসলভড মিস্টরিজ।

ইংরিজি বোলো না। জানোই তো আমি ইংরিজি বুঝি না।

শবর হাসল, বুঝবার দরকারটাই বা কী? ইংরিজি না বুঝেও তো এত কাল চলে গেল।

তা ঠিক। এবার বলল তো, এত তদন্ত করে খেটেখুটে কী হল? কিছু পেলে খুঁজে?

শবর মাথা নেড়ে বলল, না। অনেক প্রশ্ন রয়ে গেল যার কোনও উত্তর নেই।

যেমন?

শবর মাথা নাড়ল, গোটা ব্যাপারটারই কোনও মানে হয় না। এত মানুষের রাগ ছিল বাসুদেব সেনগুপ্তর ওপর, অথচ কাউকেই আমার হত্যাকারী বলে কেন মনে হচ্ছে না বলুন তো। অ্যালিবাই নেই, তবু কেন ক্র্যাকডাউন করা যাচ্ছে না? মাসিমা, পুলিশের চাকরি করতে করতে একটা জিনিস হয়, অন্তত আমার হয়, অপরাধীর মুখোমুখি হলে ভিতরে যেন একটা কিছু টিকটিক করে। এবার তা হল না। কেন মাসিমা?

আমি তার কী জানি বাবা?

বাতাসী কফি নিয়ে এল। শবর একটা চুমুক দিয়ে শিখার দিকে তাকাল। শিখার মুখে একটু দুষ্টু হাসি। চোখে একটু চিকিমিকি।

শিখা হঠাৎ বাতাসীকে ডেকে বললেন, এই মুখপুড়ি, আমি নিরামিষ পিন্ডি গিলছি বলে তুইও কি মাছ খাওয়া ছাড়লি নাকি?

বাতাসী একটু অবাক হয়ে বলে, আমার মাছ লাগে নাকি?

লাগবে না কেন? লাগালেই লাগে। যা গিয়ে বাজার থেকে একটু মাছ নিয়ে এসে ভাল করে বেঁধে খা।

কী যে বলো তার ঠিক নেই।

শোন মা, আমি ভোররাতে স্বপ্ন দেখেছি, তুই আমার সামনে বসে মাছ-ভাত খাচ্ছিস। এসব স্বপ্ন কিন্তু সাংঘাতিক। যা মা একটু মাছ নিয়ে আয়। গড়িয়াহাটে যা, ওই সঙ্গে আমার ওষুধও নিয়ে আসিস। শোয়ার ঘরে প্রেসক্রিপশনটা আছে। নিয়ে যা।

বাতাসী একটু সময় নিল। মিনিট দশেক বাদে সে একটু ফিটফাট হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর শিখা বললেন, এবার বলল বাবা।

শবর মৃদু মৃদু হেসে বলল, কী বলব ভেবে পাচ্ছি না।

তুমি আমাকে জেরা করবে না?

না। শুধু একটা কথা।

বলো।

তেরো তারিখে সন্ধেবেলা বাতাসী কোথায় ছিল?

বাঃ, এই তো জেরা করেছ। বাতাসীকে সেদিন আমি ছুটি দিয়েছিলাম। সেদিন সকালেই ও ওর বাড়ি গোসাবায় গিয়েছিল। চোদ্দো তারিখে ফিরে আসে।

ওঃ।

আর কিছু?

না মাসিমা।

কেন ছুটি দিয়েছিলাম জানতে চাইলে না?

না।

কেন জানতে চাও না?

প্রয়োজন নেই বলে।

তেরো তারিখে দুটো লোক লিফট সারানোর নাম করে লিফটটা আটকে রেখেছিল। তাদের কি খুঁজে পেয়েছ?

না মাসিমা। মনে হয় তাদেরও খোঁজার আর দরকার নেই।

শিখা একটু পিছনে হেলে চোখ বুজে রইলেন। সেই অবস্থাতেই বললেন, তুমি কি তদন্ত থেকে সরে দাঁড়াচ্ছ শবর?

হ্যাঁ মাসিমা।

ভাল। মানুষকে আর কষ্ট দিয়ো না। মানুষের এমনিতেই কত কষ্ট!

ঠিক কথা। আমি সেই কষ্টের কথা শুনতেই আজ আপনার কাছে এসেছি।

ক্লান্ত শিখা, শরীরের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণায় কাতর শিখা আধবোজা চোখে শবরকে দেখছিলেন। তারপর ধীরস্বরে বললেন, জানো, আমার প্রথম ছেলে অর্ক কীভাবে হয়? উনি বাইরে কোথায় খেলে সেদিন সন্ধেবেলাতে ফিরলেন। আমার তখন পেইন শুরু হয়েছে। ওঁকে বললাম। উনি বললেন, আমার একটা ফাংশন আছে, যেতেই হবে। তুমি পাড়ার কাউকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যাও। উনি বেরিয়ে গেলেন। আমি একা অভিমান নিয়ে বসে রইলাম। কিন্তু অভিমান কার ওপর বলো! ব্যথা বেড়ে যাচ্ছিল। শেষে নিজেই একটা রিকশা নিয়ে একা হাসপাতালে যাই। ভরতি হই। ছেলেও হয়। ছেলে হওয়ার আনন্দ সেদিন আর কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারিনি। এ কি কষ্টের কাহিনি শবর?

সরি মাসিমা। আপনি সত্যিই সাফার করেছেন।

ও কথা বোলো না। সব কষ্টই মানুষ হাসিমুখে সইতে পারে যদি তা ভালবাসার জনের জন্য হয়। কষ্টকে তখন কষ্ট বলেই মনে হয় না। আর ভালবাসার জন্য যদি না হয় তা হলে ছুঁচটা তুলতেও যেন পাহাড় তোলার পরিশ্রম।

শবর মাথা নিচু করে রইল।

আমার ছেলেরা ভাগভিন্ন হয়ে গেছে, মেয়েও বড় একটা এমুখো হয় না। তারাও তো কিছু কম কষ্ট পায়নি। কষ্ট পাচ্ছিল শঙ্কর বসু, রীণা, আমার ভাশুর আর ভাশুরপোরা। আমি জানতাম এসব দুঃখ কষ্ট সহজে দূর করা যাবে না। আমি সামান্য মেয়েমানুষ, আমার সাধ্য কী বলল তো! অন্যায়ভাবে ঢাকুরিয়ার বাড়িটা উনি দখল করেছিলেন, অন্যায়ভাবে তা প্রমোটারকে দিয়েছিলেন।

জানি মাসিমা।

আমি ওঁকে কতবার বলেছি, এভাবে বঞ্চিত করতে নেই, তাতে ভাল হয় না। উনি তো আমার কথাকে কখনও মূল্য দেননি।

শঙ্কর বসুর কথা বলুন।

হ্যাঁ। সে বেচারাকে যখন ডেকে আনালাম তখন দেখল ম একটা জীবন স্ত্রীকে রাহুর গ্রাসে সমর্পণ করে লোকটা ভিতরে ভিতরে কেমন ক্ষয়ে গেছে। অত বড় চাকরি, অত টাকাপয়সা, কিন্তু মুখখানা যেন শোকাতাপা। বড় কষ্ট হয়েছিল মানুষটার জন্য। আর অজু! শঙ্করবাবুর কথা থেকে জেনেছিলাম, অজুকে তিনি কিছুই দেবেন না। ছেলেটার জন্য আমার চিন্তা হয়েছিল। একটা পলিসির নমিনি ছেলেটাকে করা হয়েছিল বটে, কিন্তু ওরকম খ্যাপা মানুষের তো মতিস্থিরতা ছিল না। কবে রেগে গিয়ে নমিনি বদলে দেবেন। তা ছাড়া ম্যাচুরিটিরও তো দেরি ছিল। ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাটটা নিয়েও ওই একই কথা। হয়তো কখনও সিদ্ধান্ত বদল করে ফ্ল্যাটটা বেচেই দিলেন কাউকে। ওঁর তো রাগের কোনও ঠিকঠিকানা ছিল না।

আর তাই–?

শিখা একটু চুপ করে রইলেন। তাঁর দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসছিল। মৃদু স্বলিত কণ্ঠে বললেন, ওঁর চলে যাওয়ার দরকার ছিল হয়তো। গিয়ে ভালই হয়েছে। কী বলো?

আমি কী বলব মাসিমা, আপনি বলুন।

শিখা উঠে ভিতরের ঘরে গেলেন। ফিরে এলেন একগাদা মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে। শবরের সামনে সেন্টার টেবিলের ওপর সেগুলো রেখে বললেন, দেখো। উলটেপালটে দেখো।

শবর ভ্রূ কুঁচকে বলল, এ তো আপনার মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখছি।

হ্যাঁ, প্রায় ছ’মাস আগে অসুখটা ধরা পড়ে। ডাক্তার জানে আর আমি। আর কাউকে জানাইনি। ওঁকে বা ছেলেমেয়েকে কখনও বলিনি।

কেন মাসিমা? এ তো টারমিনাল ডিজিজ।

ও কথাটা ডাক্তারদের মুখে অনেকবার শুনেছি, তাই মানে জানি৷ হ্যাঁ বাবা, মারক অসুখ।

চিকিৎসা?

শিখা হাসলেন, ক্যান্সারের আর কী চিকিৎসা বাবা? কেমোথেরাপি না কী ছাইভস্ম করতে চেয়েছিল, আমি রাজি হইনি। ওসব করে কী লাভ বলো? মরতে যে আমার একটুও অসাধ নেই।

শবর রিপোর্টগুলোয় চোখ বুলিয়ে রেখে দিল।

রোগটা হওয়ার পর বুঝেছিলাম, আমি যদি ওঁর আগে যাই তা হলে অনেক সমস্যার আর সমাধান হবে না। অনেক মানুষের বুকে জ্বালাপোড়া রয়ে যাবে। থেকে যাবে অনেক অনিশ্চয়তা। বুঝেছ?

হ্যাঁ মাসিমা। সব কিছুই মিলে যাচ্ছে।

মিলবেই তো। সবকিছু মিলে যাবে। যে দুটো লোক লিফট সারাবার অছিলায় এসেছিল তুমি তাদের জন্মেও খুঁজে পাবে না। আর যদি পেয়েও যাও, ওদের গলা কেটে ফেললেও কথা বের করতে পারবে না।

বুঝেছি।

আর সেই লোক দুটোর নাম বা পরিচয় আমার সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে, এ মুখ দিয়ে তা বেরোবে না কখনও।

আমি জানি, বুলডগের মতো অনুগত আপনার কিছু লোক আছে, যারা আপনার জন্য প্রাণ দিতে পারে।

হ্যাঁ বাবা। আমার নিঃসঙ্গ জীবনে এইসব লোকই তো আমাকে সঙ্গ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল। নিরন্ন, দুঃখী, জর্জর সব মানুষ যাদের ভালর জন্য আমি সামান্য সামর্থ্যে যতটুকু পারি করেছি।

শিখা একটু চুপ করে রইলেন। তারপর চোখের অবাধ্য ধারা আঁচলে মুছবার একটা অক্ষম চেষ্টা করে বললেন, ওদের খোঁজ ছেড়ে দিয়ে ভালই করেছ শবর। ওরা কী করেছে তা ওরা ভাল করে জানেই না। ওরা শুধু আমার হুকুম তামিল করে চলে গেছে।

বুঝেছি মাসিমা।

তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। খুবই বুদ্ধিমান। জীবনে খুব উন্নতি করবে বাবা।

কেন লজ্জা দিচ্ছেন মাসিমা। আমি আজ এসব কথা শুনতে তো আসিনি।

শিখা নিমীলিত চোখে তার দিকে চেয়ে গভীর হাহাকারের মতো একটা শ্বাস ছাড়লেন। সেই শ্বাসে কান্নার কম্পন ছিল। শিখা প্রকাশ্যেই চোখের জলে ভেসে যাচ্ছেন। একটু চুপ করে থেকে দূরাগত গলায় বললেন, কী শুনতে চাও শবর?

আপনি বলতে না চাইলে—

কান্নার মধ্যেও শিখা সামান্য একটু হাসলেন। অদ্ভুত দেখাল তখন মুখখানা।

প্রায় ফিসফিস করে বললেন, সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আমি সিঁড়িতে ওঁর চটির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। নির্জন ফাঁকা বাড়ি, সব শব্দই পাওয়া যায়। একতলা থেকে দোতলা, দোতলা থেকে তিনতলা… উনি ধীরে ধীরে উঠে আসছেন। উনি উঠছেন আর বুকের মধ্যে ওঁর পায়ের শব্দ যেন দুম দুম করে ধাক্কা মারছে। এক একবার ইচ্ছে হচ্ছিল, চিৎকার করে বলি, ওগো! উঠো না উঠো না! এ সবই আমার ষড়যন্ত্র! আমি এক্ষুনি নেমে গিয়ে লিফট চালু করছি।… নিজের মুখে হাত চাপা দিয়ে নিজেকে সামলেছি। নিজেকেও বলেছি, একটুক্ষণের জন্য পাষাণী হ… এই একটা পাপ মাথায় নে, তাতে অনেক পাপের স্খলন হবে। ও দোতলা থেকে তিনতলা উঠল… চারতলা… কার সঙ্গে যেন হাঁফধরা গলায় কথা বলল… তারপর তিনতলা পেরিয়ে চারতলা… পায়ের শব্দ অনেক শ্লথ হয়ে গেল। বুঝতে পারছিলাম সে টান ধরছে। আর পারছে না। কিন্তু জেদি, অহংকারী মানুষ। ছাড়বেও না। পাঁচতলা পেরিয়ে ছ’তলায় উঠতে যেন যুগ পেরিয়ে যাচ্ছিল। পারছে না। কিছুতেই পারছে না। আমি আটতলার চাতালে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেসে যাচ্ছি। চোখের জলে আমার বুক ভেসে যাচ্ছিল। এত জোরে দাতে দাঁত চেপে ধরেছিলাম যে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে পড়ল। রেলিং চেপে ধরেছি প্রাণপণে। আর ওদিকে ও উঠছে! কী ক্লান্ত পায়ের শব্দ। কী ভয়ংকর শ্বাসের শব্দ! পাঁচতলা থেকে ছ’তলা কতদূর শবর? কিন্তু সে যেন ওঁর কাছে এক অফুরান পথ। উঠছেন তো উঠছেনই। শেষ অবধি পৌঁছোলেন ছ’তলায়। থামলেন। হঠাৎ শুনলাম ডোরবেল বাজছে। একবার, দু’বার, তিনবার। তারপরই একটা শব্দ। উনি পড়ে গেলেন। তখনই শুনলাম, হাঁফধরা গলায় উনি প্রাণপণে আমাকে ডাকছেন। আমাকেই! শিখা… শিখা… শিখা….! অমনভাবে কতকাল ডাকেননি!

মাসিমা! আপনি চুপ করুন! আপনি বড় ভেঙে পড়ছেন!

বাবা, না। বলতে দাও। নিজের মুখে সব বলতে দাও আমাকে।

প্লিজ মাসিমা।

না শবর, আজই তো আমার পরীক্ষা। শোনো, মন দিয়ে শোনো।

বলুন শুনছি।

ওঁর ওই প্রাণঘাতী ডাক এখনও আমার কানে লেগে আছে। শিখা… শিখা… শিখা…! ওই ডাক শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারিনি। আসছি গো, আসছি’ বলে চিৎকার করলাম, গলা দিয়ে স্বরই বেরোল না। দৌড়ে নেমে গেলাম ছ’তলায়। উনি সিঁড়ির গোড়াতেই পড়ে ছিলেন। মুখ টকটক করছে লাল। হাঁফ ধরে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হাঁ করে প্রাণপণে শাস টানার চেষ্টা করছেন। ঘোলাটে চোখ। আমাকে দেখে একটা অসহায় হাত বাড়িয়ে দিলেন। হাতটা নেতিয়ে পড়ে গেল।

শিখা একটু থামলেন। কাঁদতে কাঁদতে তার হাঁফ ধরে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ মুখে আঁচল চাপা দিয়ে রইলেন। তারপর আঁচলটা সরিয়ে খুব ধীর গলায় বললেন, আমি কী করলাম জানো?

বলুন মাসিমা।

আমি ওঁর পায়ের কাছে বসে, দু’খানা পা বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ছাড়ো, এই পাপ-দেহ ছেড়ে যাও। ওগো, মুক্ত হও, মোচন করো পার্থিব বন্ধন। দেহের দাস, কর্মফলে ক্লেদাক্ত মন জীর্ণ বসনের মতো ফেলে যাও বিমুক্ত আত্মা। নীড় ছাড়ো অনিকেত, দেহ ছাড়ো অশরীরী, মায়া ছাড়ো মোহাতীত। চোখের জলে ভেসে সেই আমার শেষ পুজো তাকে। ধীরে ধীরে শরীরের সব কম্পন থেমে গেল। আমি ওঁকে প্রণাম করে উঠে এলাম। তারপর ঘরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ওঁর মৃত্যুসংবাদের জন্য।

ঘরে অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এল। কিছুক্ষণ কেউ কোনও কথা বলল না। শিখা অনেকক্ষণ আঁচলে মুখে ঢেকে রইলেন। তারপর ধীরে মুখের ঢাকনাটা সরিয়ে একটু হাসলেনও, তোমাদের পেনাল কোড আমাকে আর কী সাজা দিতে পারে শবর?

শবর একটু হাসল।

শিখা মৃদুস্বরে বললেন, সাজা কাকে বলে তা কি জানো শবর? জানো জ্বালা? জানো গ্লানি?

শবর উঠে দাঁড়াল। মৃদুস্বরে বলল, আসি মাসিমা।

এসো বাবা।

শবর দরজাটা খুলে বাইরে পা দিয়ে একবার মুখ ফিরিয়ে দেখল। যেন নিজের ধ্বংসস্তৃপের মধ্যে বসে আছেন শিখা।

শবর দরজাটা খুব সাবধানে বন্ধ করে দিল। তারপর ধীর পায়ে লিফটের দরজা পেরিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে আনমনে নামতে লাগল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress