সাহেবের বাংলা প্রেম
রহিমা শৈশবে তার বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছার হাত ধরে অভাবের তাড়নায় মেহেরপুর গ্রাম থেকে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং বাবা মুটের কাজ করে।অনেক কষ্টে সেখানে খানিকটা জমি কিনে ঘর বানিয়ে সকলে থাকতেন। ওরা কাজে চলে গেলে তের চৌদ্দ বছর বয়সী রহিমা ঘরে একা থাকত।মেয়েটির কথা ভেবেই সেখানকার’ ই এক ট্যাক্সিচালকের সাথে রহিমার বিয়ে দেন। রহিমা বিয়ের পর ই হলেন দুই সন্তানের জননী। অভাব তার সংসারেও জাঁকিয়ে বসে।অভাবের তাড়নায় প্রাক্তন স্বামী নিজের জমি বাড়ি ‘বিক্রি করে শ্বশুর বাড়ি এসে ওঠে।একদিন হঠাৎ তার স্বামী নিরুদ্দেশ। রহিমা ভেঙে না পরে ঘুরে বেড়ায় কাজের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায়। জীবিকার সন্ধানে রহিমা
এসে ওঠে মুম্বাই,তারই গ্রামের এক জানাশোনা কাকার কাছে।
একদিন সন্ধ্যায় কাজ সেরে যখন লা’ক্যাফেতে এসে বসল,হঠাৎ তার উল্টোদিকে টেবিলে এসে বসেন এক সাহেব।এক দৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তিনি তার দিকে। তাতে রহিমা লজ্জায় মুখ নীচু করে আড়ষ্ট হয়ে বসেছিল।লজ্জা লজ্জা মুখ ও আড়ষ্টতা যেন সাহেবকে আরও আকৃষ্ট করেছিল।সাহেব উঠে এসে তার সাথে পরিচয় করেন, হিন্দিতে জানায় তিনি হেগেল।
এরপর তাদের দু একবার দেখা হয়। কথায় কথায় হেগেল জানতে পারে রহিমার বাবা নেই। প্রাক্তনের সন্তানেরা, তার মায়ের কাছে গ্রামে।
হেগলও তাকে জানায় তিনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তার শখ বই পড়া ও মোটর সাইকেলে দূর ভ্রমণ।আমেরিকার মিশিগান খুব সুন্দর শহর। আমেরিকান স্ত্রীর সঙ্গে তারও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাই মায়ের কাছেই সন্তানেরা সেখানে।
এভাবে আলাপ ও প্রেম গভীর হয়। ছয় মাস পর তারা রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন। বিয়ের পর কর্মসূত্রে ক্রিস হেগল স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে চীনে যান। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে তারা মেহেরপুর গ্রামে রহিমার বাবার ভিটায় ফিরে আসেন।
ক্রিস হেগেল নিজেকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন । কৃষি কাজ করেন পরম মমতা নিয়ে। নিজেই জমিতে ধান কাটেন, বোঝা টেনে নিয়ে ধান তোলেন ভ্যানে। এই কায়িক শ্রমে মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার ক্লান্ত হয় না।
বহুদেশ ঘুরেছেন হেগেল । তবে বাংলার সবুজ প্রকৃতি, ধান ক্ষেত ও সরিষা ফুলের হলুদ রং তাকে বিমোহিত করে বারংবার। এই দেশে অনেক মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে।
আমেরিকা থেকে মা ও প্রাক্তনের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আসবেন এবং বাকি জীবনও এখানে কাটাতে চান বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে।
এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পোশাক কারখানা খুলতে চান এবং কর্মীদের সুবিধার জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পন্ন একটি চিকিৎসা কেন্দ্র খুলতে চান।
দুজনেই প্রাক্তনের ফসল নিয়েই নতুনভাবে
এই বাংলা বাঁচতে চায়।