“গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে কিছু নাই,
নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ,
অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে,
ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি,”
রাত পোহালেই ভোর
তবুও ক্লান্ত পথিক নিরলস হেঁটেই চলেছে
দেহ থেকে ঘাম হয়ে ঝরছে জীবনের
উজাড় করা নীতিহীন কিছু অবজ্ঞার ফেস্টুন,
ফিকে হবে একদিন
জীবনের সকল রূপ-রঙ,বদলাবে ছন্দ,
তবুও এলোমেলো ক্লান্তির ব্যাকুল হিয়া
আজও খুঁজে চলে তোমার দেখানো বিদ্রোহী রণাঙ্গন,
নির্দ্বিধায় বুক পেতে এগিয়ে চলি
ছুড়ে ফেলা প্রগতির ঘৃণিত রাজ্যে,
তোমার কলমের পরশে তৃপ্তি খোঁজে মন
ক্ষনিকের ঝঞ্ঝার মত এসে,
ঊষর রুক্ষ বক্ষভূমিকে তুমি করে তোল শীতল স্নিগ্ধ,
অশান্ত সুনামি হয়ে এসে
তুমি ভাঙো সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষকে ,
যুগযুগান্তে তুমি থেকো ব্যাকুল প্রাণে,
থেকো তুমি সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টা হয়ে,
মানবের দুঃখে সর্বশক্তিমান তুমি গর্জে উঠেছ বারংবার,
নিত্য ধ্বংসের ছবি এঁকেছ অপলক নয়নে
যখনই ঘটেছে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার,
নয়ন বৃষ্টির অঝোর ধারায়
ভিজিয়েছ দেহ, ভিজেছে ধরাতল,
যখনই লুণ্ঠিত মানবতায় সিক্ত হয়েছে তোমার হৃদয় অঙ্গন,
ততোবারই তুমি কলমের আঁচড়ে
নিজেকে করেছ ক্ষত-বিক্ষত
গানে-গল্পে-কবিতা-নাটকে ছড়িয়েছো আগুনের দাবানল,
জ্ঞানের সৌরভে জাগিয়ে তুলেছে দেশবাসীকে,
প্রতিবাদী স্লোগানে জাগিয়েছো
অনাহারী অভুক্ত বেদনাশ্রু সিক্ত মানবজাতিকে,
তুমি বীর, বিপ্লবী মহাপ্রাণ,
সমগ্র মানবজাতির মনুষ্যত্বের অন্তঃকরণে
তুমি অমানিশার অন্ধকার ভেদ করে
উঠে আসা ঈদের চাঁদ,
খুশির মোড়কে ছাড়াও বিভেদহীন ধর্মের সুবাস,
শিশিরসিক্ত তোমার দুই নয়নে
আজও বহমান হিন্দু-মুসলমান,
সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে
আবার নতুন করে তোমার অস্তিত্বের
সাথে হতে চায় বিলীন।
ঘুনেধরা পরিত্যক্ত ভগ্নপ্রায় সমাজে
আজ নেমে এসেছে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কলুষতা,
তুমি অগ্নিবীণার ঝংকারে
সহস্র রক্তচক্ষুর প্রতিবাদী হুংকারে
শোনাও সাম্যবাদের জয়গাঁথা।
তোমার দুর্দমনীয় বিদ্রোহী সত্ত্বায়
উজ্জীবিত হোক সহস্র প্রাণ,
তোমার ক্ষুরধার কলমকে
আহ্বান করি আরও একবার,
সময়ের সকল অন্ধকার বৃত্তকে ভেঙে
তোমার উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ুক
কাঙ্খিত মানবতার ভাগ্যরেখায়,
হে সাম্যের কবি, হে প্রনম্য ব্যক্তিত্ব,
নতুন শতাব্দীর বিপ্লবী চেতনায় হও তুমি অগ্রণী,
তুমি যে সুদক্ষ নাবিক অগণিত আদর্শ ও মানবিকতার,
বিভীষিকাময় সমাজের তুমি মুক্তিপথের অগ্রদূত,
মন-মন্দির জুড়ে ছড়িয়ে থাকুক তোমার অমোঘ বাণী,
অট্টহাস্যে ফুঁসতে থাকুক অব্যক্ত কবিতার বিবেক,
অপূর্ণ থেকে যাক ডাইরির পাতাগুলো,
আজও জগৎ-সংসার মানবতার মহান মন্ত্রে
তোমার প্রত্যাবর্তনের আকুল মিনতি জানায়,
আকুল হৃদয়ে জমে থাকুক
শুধুই তোমার প্রতীক্ষা,
চেতনায় জেগে থাকুক
তোমার গর্জে ওঠা বাণী,
” মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না-
অত্যাচারীর খড়গ-কৃপাণ
ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত”