কোথা হতে দুই চক্ষে ভরে নিয়ে এলে জল
হে প্রিয় আমার ।
হে ব্যথিত , হে অশান্ত , বলো আজি গাব গান
কোন্ সান্ত্বনার ।
হেথায় প্রান্তরপারে
নগরীর এক ধারে
সায়াহ্নের অন্ধকারে
জ্বালি দীপখানি
শূন্য গৃহে অন্যমনে
একাকিনী বাতায়নে
বসে আছি পুষ্পাসনে
বাসরের রানী —
কোথা বক্ষে বিঁধি কাঁটা ফিরিলে আপন নীড়ে
হে আমার পাখি ।
ওরে ক্লিষ্ট , ওরে ক্লান্ত , কোথা তোর বাজে ব্যথা ,
কোথা তোরে রাখি ।
চারি দিকে তমস্বিনী রজনী দিয়েছে টানি
মায়ামন্ত্র-ঘের —
দুয়ার রেখেছি রুধি , চেয়ে দেখো কিছু হেথা
নাহি বাহিরের ।
এ যে দুজনের দেশ ,
নিখিলের সব শেষ ,
মিলনের রসাবেশ
অনন্ত ভবন —
শুধু এই এক ঘরে
দুখানি হৃদয় ধরে ,
দুজনে সৃজন করে
নূতন ভুবন ।
একটি প্রদীপ শুধু এ আঁধারে যতটুকু
আলো করে রাখে
সেই আমাদের বিশ্ব , তাহার বাহিরে আর
চিনি না কাহাকে ।
একখানি বীণা আছে , কভু বাজে মোর বুকে
কভু তব কোরে ।
একটি রেখেছি মালা , তোমারে পরায়ে দিলে
তুমি দিবে মোরে ।
এক শয্যা রাজধানী ,
আধেক আঁচলখানি
বক্ষ হতে লয়ে টানি
পাতিব শয়ন ।
একটি চুম্বন গড়ি
দোঁহে লব ভাগ করি —
এ রাজত্বে , মরি মরি ,
এত আয়োজন ।
একটি গোলাপফুল রেখেছি বক্ষের মাঝে ,
তব ঘ্রাণশেষে
আমারে ফিরায়ে দিলে অধরে পরশি তাহা
পরি লব কেশে ।
আজ করেছিনু মনে তোমারে করিব রাজা
এই রাজ্যপাটে ,
এ অমর বরমাল্য আপনি যতনে তব
জড়াব ললাটে ।
মঙ্গলপ্রদীপ ধ ‘ রে
লইব বরণ করে ,
পুষ্পসিংহাসন- ‘ পরে
বসাব তোমায় —
তাই গাঁথিয়াছি হার ,
আনিয়াছি ফুলভার ,
দিয়েছি নূতন তার
কনকবীণায় ।
আকাশে নক্ষত্রসভা নীরবে বসিয়া আছে
শান্ত কৌতূহলে —
আজি কি এ মালাখানি সিক্ত হবে , হে রাজন্ ,
নয়নের জলে ।
রুদ্ধকণ্ঠ , গীতহারা , কহিয়ো না কোনো কথা ,
কিছু শুধাব না —
নীরবে লইব প্রাণে তোমার হৃদয় হতে
নীরব বেদনা ।
প্রদীপ নিবায়ে দিব ,
বক্ষে মাথা তুলি নিব ,
স্নিগ্ধ করে পরশিব
সজল কপোল —
বেণীমুক্ত কেশজাল
স্পর্শিবে তাপিত ভাল ,
কোমল বক্ষের তাল
মৃদুমন্দ দোল ।
নিশ্বাসবীজনে মোর কাঁপিবে কুন্তল তব ,
মুদিবে নয়ন —
অর্ধরাতে শান্তবায়ে নিদ্রিত ললাটে দিব
একটি চুম্বন ।