হোপ ক্লিনিক
হোপ ক্লিনিক থেকে যে তিনজনকে বের করে আনা হয়েছে তাদের একজন ডা. আবু করিম। দ্বিতীয়জনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম ইসমাইল হোসেন। তিনি হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রিজের মালিক। তার ব্যবসায়ের পার্টনার বাল্যবন্ধু সোবাহান এবং স্ত্রী জাহানারা এই দুজন শলাপরামর্শ করে ভাঁকে হোপ ক্লিনিকে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সঙ্গত কারণেই ইসমাইল তার স্ত্রীর কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না। ইসমাইল হোসেনের সন্ধান চেয়ে সব বড় বড় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বের হচ্ছে। সন্ধানদাতাকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
নরুন্দ সন্ধান জানেন? জিনিস তাঁর বাড়িতেই আছে। সন্ধান দিয়েই টাকাটা হাতিয়ে নেয়া যায়। তিনি অপেক্ষা করছেন। তার ধারণা পুরস্কারের টাকা আরো বাড়বে। তার ধারণা মিথ্যা না।
তৃতীয়জনের জবুথবু ভাব এখনো কাটছে না। তিনি তার নামও বলছেন না। তবে তিনিও যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তা তাঁর হাভভাবে বুঝা যাচ্ছে।
আজ নরুন্দের বাড়িতে প্রেতচক্রের আসর বসেছে। মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে আহ্বান করা হবে। তার বিশেষ কারণ আছে। আইনুদ্দিনের অংক খানিকটা জট পাকিয়ে গেছে। সমাধান এসেছে ভূত হলো ০ গুণন ০ গুণন দশমিক ০০.
তিনি মানুষের একটি সমীকরণও করেছিলেন। তার উত্তর এসেছে ০০ গুণন দশমিক ০.
আইনস্টাইনকে কাগজপত্রগুলি দেখালে যদি কিছু হয়।
অল্পসময়ের মধ্যেই চক্র সরব হলো। নরুন্দ গোঁ গোঁ করা শুরু করলেন। নরুন্দের অ্যাসিসটেন্ট তৃপ্তির গলায় বলল, স্যার এসে গেছেন প্রশ্ন করুন। সানাউল্লাহ বললেন, স্যার! আপনি কি এসেছেন।
হুঁ।
মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আপনাকে আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। আমরা একটা ভূতের অংক শেষ করেছি। কাগজপত্রগুলি আপনাকে একটু দেখাব।
নরুন্দ গোঁ গোঁ করতে করতে বললেন, কাগজপত্র আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। আমি আইনস্টাইন না। আমি তাঁর ছোট ভাই। আমার নাম রাইনস্টাইন।
সানাউল্লাহ বললেন, জনাব আপনার পড়াশোনা কোন লাইনে?
কোনো লাইনেই না। আমি মানসিক প্রতিবন্ধী। গোঁ গোঁ গোঁ।
নরুন্দের পাশেই বসেছিলেন আবু করিম। তিনি বললেন, ফাজলামির জায়গা পাও না। ভূতের ব্যবসা শুরু করেছে। গোঁ গোঁ বন্ধ। বন্ধকরলেথাবড়ায়াবিন্ন করাইলের বাচ্চা
নরুন্দ বলল, গালাগালি করছেন কেন? পরকাল, চক্র এইসব বিশ্বাস না করার অধিকার আপনার আছে কিন্তু চক্রে বসে মিডিয়ামের মাধ্যমে আত্মানি অতিপ্রাচীন এক পদ্ধতি।
আবু করিম নিজেকে সামলাতে পারলেন না। আচমক এক চড় লাগিয়ে দিলেন। ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, তুই তোর ঘরে যা। কাল তোকে আমরা পুলিশে ধরিয়ে দেব। ব্যাটা বদের বাচ্চা।
দুঃখিত, ব্যথিত এবং আহত নরুন্দ চক্র ছেড়ে দিয়ে নিজের শোবার ঘরে ঢুকে দেখেন দুটি বাচ্চা তাঁর বিছানায়। একটছলো একটা মেয়ে মেয়ে বিছানায় বসে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ছেলেটা বিছানা থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচুতে ভাসছে।
নরুন্দ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, তোমরা কে?
শূন্যে ছেলেটি বলল, আমার মামাহমড়া আর আমার বোন এর নাম ডমরু। আমরা ভূতের বাচ্চা।
জীবনে প্রথম ভূত দেখে নরুন্দ মুর্চ্ছিত হয়ে পড়ে গেলেন। গোঁ গোঁ শব্দ করতে লাগলেন। এই গোঁ গোঁতে ভেজাল নেই। একশ পারসেন্ট আসল।
এখন কথা হচ্ছে নরুন্দ কি আসলেই কিছু দেখেছেন? না-কি এটা তার কল্পনা? বলা অত্যন্ত মুশকিল। নরুন্দের অ্যাসিসটেন্ট আসগর তার গুরুকে হোপ ক্লিনিকে ভর্তি করেছে। গুরু চিকিৎসায় আছেন। আসগর তাঁর গুরুকে নিয়ে বেকায়দায় আছে। ক্লিনিকে তিনি বেশির ভাগ সময় সুস্থ থাকেন, তবে মাঝে মাঝে তাঁর উপর ‘বাংলা ভাই’য়ের প্রেতাত্মার ভর হয়। তখন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে।
সবচেয়ে বেকায়দায় আছে মাসুদকে নিয়ে পুলিশ। রিমান্ডে গিয়ে মাসুদ শুধু যে তার স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করছে তা-না। শ্বশুর হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে। একজনের ডেডবড়ি সে না-কি বুড়িগঙ্গায় ফেলেছে, আরেকজনেরটা শীতলক্ষায়। এখানেই শেষ না, মাসুদ দশট্রাক অস্ত্রমামলায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। উদিচি গ্রেনেড হামলায় সে নিজে অংশগ্রহণ করেছে এরকমও বলেছে।
একমাত্র আনন্দে আছেন হামিদ সাহেব। তিনি ঠিক করেছেন একজীবনে তিনি যা উপার্জন করেছেন তার সবই কাকদের সেবায় ব্যয় করবেন। কারণ তার সব অর্থই অসৎ অর্থ। ভালো কোনো কাজে এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না। বরং কাকদের জন্যে কিছু করা দরকার। তিনি তার কলাবাগানের তিনতলা বাড়ির নাম দিয়েছেন কাককুঠির। তিনি তাঁর অ্যাসিসটেন্ট রব্বানিকে ডেকে বলেছেন তার মুত্যুর পর যেন কবরে লেখা হয়—
এখানে শুয়ে আছেন
কাকদের নয়নের মণি
দেশখ্যাত কাকদরদী নেতা
হামিদুর রহমান
পরিশিষ্ট
মাসুদ স্ত্রী এবং শশুর হত্যার দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েও জেলে আছে। কারণ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং ঊদিচি গ্রেনেড হত্যা মামলায় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পত্রিকায় খবর আসছে বিদেশী নাগরিক জনাব মাসুদ দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং উদিচি গ্রেনেড হামলা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সানাউল্লাহ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে কোথায় আছেন কেউ জানে না। একদিন শুধু জাবিন টেলিফোন পেল–মা, মহাবিপদে আছি। আগে শুধু ডমরু বাবা ডাকতো এখন হমডুও বাবা ডাকা শুরু করেছে। এবং দুই ভাইবোনই ঘোষণা দিয়েছে তাদের বাবা-মা ফিরে এলেও তার বাবা-মার কাছে যাবে না। কী যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না। মহাবিপদে পড়েছি।