Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাজাবো যতনে || Shipra Mukherjee

সাজাবো যতনে || Shipra Mukherjee

সাজাবো যতনে

ভীমসেন যোশী র প্রোগ্রাম টা শুনতে দেরী হয়ে গেল বাড়ি ফিরতে । দেবলীনার শুয়ে পড়তে এগারোটা বেজে গেল । বনেদি পাড়া । তাই একটু বেশি নিঝুম । হঠাৎ কানে এলো একটা মেয়ের চিৎকার । —-মুঝে ছোড় দো । এরপর একটা পুরুষ কন্ঠের কান্নার শব্দ । —-মুঝে মার ডালো,উসে ছোড় দো । ঘরের ভেতরে মেয়েকে জাপটে ধরে দম বন্ধ করে ভয়ে শুয়ে আছে দেবলীনা । কতগুলো পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে দেবলীনার জানালার কাছে । ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে দেবলীনার । ভয় পেলে চলবে না ।উঠে পড়ল বিছানা থেকে । আবার নারী কন্ঠের কান্না। এরপর শুধু মেয়েটার কোঁকানোর শব্দ । কিছু পরে তাও থেমে গেল । জানালার খড়খড়িটা দিয়ে পাড়ার ছেলে টার মুখ দেখতে পেল ।বস্তির ছেলে । দেবলীনার পেছনে মেয়েও এসেছে । কিছু বলতে যাচ্ছিল মেয়ে মিষ্টি । মেয়ের মুখ চেপে ধরলো দেবলীনা। টেনে নিয়ে গেল বিছানায় । সোমেশের অভাবটা বোধ হচ্ছে এখন। বলিহারি মেয়েদের । এতো রাতে বেড়োনোর কি দরকার? কলকাতায় এ ঘটনা অহরহ ঘটছে । রাত বাড়লে অসামাজিক কাজগুলো পাখা মেলে ওড়ে । আঁধারের খাঁজ গুলো অন্যায়ের জন্ম দেয় । এ বাড়িটা বড়ো রাস্তার থেকে একটু ভেতরে । মেইন গেট বড়ো রাস্তায় । সরু গলি পেড়িয়ে ঢুকতে হয় এ বাড়িতে । এখন ভয় পায় সে । মেয়ে বড়ো হচ্ছে তাই ভয়। অনেকগুলো জুতোর শব্দ এগিয়ে আসছে । ‘ওমা,কারা যেন আসছে ।’ –চুপ,ভয় নেই । মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আছে দেবলীনা । ঘরের বাইরে বুট্ এর শব্দ এগিয়ে আসছে । টানটান হলো দেবলীনার সত্তা। জানালার খড়খড়িটা দিয়ে টর্চের আলো এসে পড়ছে বিছানায় । সোমেসের কথা মনে পড়ছে । সামান্য একটা ব্যপারে তুমুল ঝগড়া হয়ে গেল নামি দামি পত্রিকার রিপোর্টার সোমেশ। রাত করে ফেরা নিয়ে ঝগড়া । —-‘তোমার জন্য আমার রাত জেগে থাকা সম্ভব না ।সকালে আমায় স্কুলে যেতে হয় । ভোরে উঠতে হবে । —ওঠো কেন? —তার মানে? কাজ ছেড়ে দেব? —হ্যাঁ।তাই দাও । —-বিয়ের পর যখন কাজ ছাড়ার কথা বলেছি তখন তো আপত্তি করেছিলে। —সেটা তোমার একা থাকার কথা ভেবে । —-তাই? না বউয়ের টাকাটা হাত ছাড়া করতে চাওনি। —‘টাকার তোমার এতো অহংকার? উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল সোমেশ। সারা দিনের ধকলেই হয়তো । সেদিনটাও এমন গরম ছিল । ঘামে জবজবা হয়ে ঘরে ঢুকেছিল । দেবলীনার একবারও মনে হয়নি যে সোমেশ পিপাসার্ত হতেপারে ।উল্টে গলায় বিষ ঢেলে বলেছে। —-টাকার অহংকার আমার নাতোমার? মেয়েটা সারা দিন বাবা বাবা করে,আর মাঝ রাতে তোমার ঘরে ফেরার সময় হয় । —মাঝরাতে ফিরি বেশ করি। —তাহলে আমি ও দরজা খুলবো না । দেখি তুমি কোন চুলোয় যাও।কোথায় ফূর্তি করতে যাও জানি না । সেই প্রথম সোমেশের অমন চন্ডাল রাগ দেখলো। সোমেশের চড়ে মাথা ঘুরে গেছে ।ঘরে স্তব্ধতা নেমে এসেছিল ।কেউ অনুতপ্ত হয়েছিল কিনা বোঝা যায়নি। পরদিন রাতে ফোন এসেছে । —তোমার দরজা খুলতে অসুবিধা তাই ঘরে ফিরব না ।, দেবলীনাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে রিসিভার নামিয়ে দিয়েছে ওপাশ থেকে । টর্চ লাইটের আলোয় চিন্তায় বাঁধা পড়ল। আবার মা ও মেয়ের শরীরে টর্চের আলো পড়ল। উচ্চ গ্রামে পুরুষ কন্ঠ দরজার বাইরে । —ঘরে কে আছেন? দরজা খুলুন । ভয় হয় দেবলীনার । দরজায় ধাক্কা শুরু হতেই বুঝে নিল যেআর চুপ করে থাকা যাবে না । একটা যুবতী মেয়ে নিয়ে থাকে সে । আবার টর্চের আলো এসে পড়ল বিছানায় । কি করবে? চুপ করে থাকা যাবে না । তবে দুর্বল ভাববে । নিঃশব্দে পড়ে থেকে বাঁচা যাবে না । কথায় বলে শক্তের ভক্ত ,নরমের যম। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো মেঝেতে । যতটা সম্ভব পুংশক্তির জোয়ার এনে গলা তুললো। –রাত বে রাতে কি হচ্ছে এখানে? এটা ভদ্রলোকের বাড়ি,টর্চ জ্বালাচ্ছেন কেন? অসভ্যতার ও একটা থাকা উচিত । শ্রোতের মতো,গলিত লাভার উদ্গীরণে বাইরের পুংকন্ঠ মিইয়ে গেল । —আমরা থানা আসছি। আপনার খোলা বারান্দায় একটা বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। যদি কিছু বলতে পারেন,তাই । দেবলীনা আবার ও গলা তুলে বলল । —দেখুন,ঘরের ভেতর থেকে বাইরে কি হচ্ছে তা বলা সম্ভব নয় । ওপাশ থেকে আবার বলেছে—-দরজাটা খুলুন । আরো গলা চড়িয়েছে দেবলীনা।স্বর ঝংকৃত হয়ে সারা পাড়ায় লহরী তুলেছে। —আশ্চর্য!রাত কটা সে খেয়াল আছে আপনাদের? এতো রাতে একজন মহিলাকে হেনস্থা করার জন্য আপনাদের কৈফিয়ত দিতে হতে পারে তা জানেন কি? —আহা,চটছেন কেন? নরম হয়েছে সরকারী কর্মচারী। মিহি গলায় বলেছে । —-না,আপনি কিছু জানেন কি না? –না।বাড়ি ওয়ালা খোলা বারান্দা রেখেছে। গেট্ এও কোন তালার ব্যবস্থা নেই । অতএব কে কি করছে তা দেখতে হলে দারোয়ানের কাজই করতে হবে । বেশ জোর দিয়ে বললেও গলাটা কেঁপে উঠেছে। হত্যা কর্তারা চলে গেছে । তবুও ঘুম আসছে না । বারবার ঘরের মানুষটার কথা মনে পড়ছে । সোমেশ থাকলে কি হতো বলা যায় না । পুলিশের ওপর দেবলীনার একবারে বিশ্বাস নেই । ওদের ‘আর গুন্ নেই ছাড় গুন্ আছে ‘। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই উঠে পড়েছে বিছানা থেকে । ভোরের স্কুল । অন্য দিন মিষ্টি ঘুমিয়ে থাকে । আজ মায়ের সাথে উঠে পড়েছে । —দেখলি তো,রাত করে বাইরে থাকার কতো বিপদ?কেউ আসলে হুট করে দরজা খুলবে না। —ঠিক আছে । কাল কি ভয় করছিল ।বাবা থাকলে এমন হতো না । তোমার জন্য বাবা চলে গেছে । মেয়ের ঐকথায় অভিমানে গলা বুজে গেছে । তবুও উত্তর না দিয়ে পারেনি। ———–হ্যাঁ । আমারইতো সব দোষ । আমি মারলেই সব জুড়োয়। আমায় নিয়ে তোদের বাপ বেটির যত ঝামেলা । —প্লিজ,মা তুমি রাগ করো না । মেয়ে জড়িয়ে ধরতেই রাগ জল হয়ে গেল দেবলীনার । রাস্তায় বেরিয়ে ই বাস্ পেয়ে গেল । আজকাল কেমন দুর্বল হয়ে যায় । কোন বাড়িতে না ঝগড়া হয়? তাই বলে ঘরে ফিরবেনা? —দিদিমণি আপনার টিকিটটা। দেবলীনার চিন্তা টা মাঝ রাস্তায় হোচোট্ খেল। ঘরের লোকের কথা বারবার মনে পড়ছে ।কি করে যে স্কুলের ঘন্টাগুলো পার হয়ে গেল নিজেও জানে না। স্কুল ছুটির সাথে সাথে বাস ধরেছে। আজ মেয়ে মিষ্টি র জন্য চিন্তা হচ্ছে । মেয়ের বলা কথাটা মনে হচ্ছে । দেবলীনার কি কোনো দোষ নেই? সোমেশের একটা খোঁজ ও নেয়নি । তাই সোমেশ হয়তো অভিমান করে আসেনি । সেদিন কাকে যেন মিষ্টি ফোনে বলছিল,”মা এসে গেছে । কাল ফোন করো।”তবে কি সোমেশ ফোন করে? মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিল । কিন্তু উত্তর পায়নি । –কি রে কে ফোন করেছিল? —ঐ নমিতা । –আমি তো ভেবেছিলাম তোর বাবা ফোন করেছে । অমনি মেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরেছে। —মা,বাপি ফোন করলে তুমি রাগ করোনা। –এ আবার কেমন কথা? গলায় কান্না জমেছে।ওকে কি ভাবে মেয়ে? শক্ত হয়ে উত্তর দিয়েছে। —তোর বাপি তোর সাথে কথা বলবে তাতে আমি বলার কে?আমিতো শুধু তোকে দেখা শোনা করার আয়া । ভাবতে ভাবতে বাস কখন যে স্কুল বোর্ড স্টপেজে এসে গেছে বুঝতে পারেনি। বাড়ির দরজায় এসে মেয়ের গলা পেল। মেয়ে কাঁদছে । একটু এগোলেই শোনা গেল । —ও বাপি,তুমি চলে এসো । দেবলীনা বুঝেছে ওপাশে কে আছে । কিছু না বলে -ই টয়লেটে ঢুকে গেছে । মেয়ের কান্না কোন দিন সইতে পারতো না সেই মানুষটা। টয়লেট থেকে বেরিয়ে ও মেয়েকে কাঁদতে দেখে আর চুপ করে থাকতে পারল না দেবলীনা।—- —কাকে আসতে বলছিস?ওর কি মায়া দয়া আছে? থাকলে কি তোকে ছেড়ে থাকতে পারতো? ইচ্ছে করে ই জোর দিয়ে বলেছে কথাগুলো । যাতে ঐ মানুষটার কানে যায় । কথা শেষ করতে পারল না । কান্নায় ডুবে গেছে । স্নান সেরে একটা পাট ভাংগা শাড়ি পরে,ছোট্ট একটা সিঁদূরের টীপ পড়ল। কানে এলো তাঁর গলার স্বর ।সে এসেছে । মেয়ে ছুটে এসেছে রান্না ঘরে । –মা,বাপি আসছে । তুমি রাগ করো না । কেঁপে উঠল মনটা । ভাত বসেছে সবে।আরো দু,মুঠো চাল ধুয়ে দিয়ে দিল । একটু ধনে পাতা কুঁচিয়ে নিল। ডালে ধনে পাতা সোমেশের পছন্দের । দেবলীনা ভাবে,মেয়ে র বিয়ে হলে তখন বুঝবে। যে স্বামীকে অনেক দিন পর দেখলে রাগ হয় ,না অন্য কিছু হয় । বাবা মায়ের প্রেমটা তো দেখেনি।শুধু ঝগড়াটাই দেখেছে। —ওমা,বলো না ।রাগ করবে না তো? তাহলে কিন্তু বাপি আবার চলে যাবে । কষ্ট হলে ও মেয়ের আনন্দে বাধ সাধেনি। —বাপিকে খুব ভালো বাসিস তাই না? —তোমাকে ও ভালোবাসি । বলেই জড়িয়ে ধরেছে দেবলীনাকে ।– —মা তোমাকে আজ কি সুন্দর লাগছে । —হয়েছে,আর তোয়াজ করতে হবে না । মুখে ঐ কথা বললেও ঠোঁটে লজ্জার হাসি খেলে যায়।দরজায় বেল বাজতে মেয়ে ছুটে গেল । বাইরের ঘরে বাপ মেয়ের কথা হচ্ছে । কান গরম হয়ে যাচ্ছে । কে বলবে ওর একটি কিশোরী কন্যা আছে । যেন নব বিবাহিতা দেবলীনা। স্বামী ঘরে ঢোকার অপেক্ষায় মগ্ন । রক্তের জোয়ারে শরীরে তুফান । ও ঘরে মেয়ের উচ্ছ্বাস । আর কথার কলকলানি। সেই ঘরের মানুষটার গলার গমক কানে আসছে । এই না হলে ঘর?তাকে দেখার লোভটা দমন করে ভয়ে।ভয়টা মেয়ের চোখে ধরা পড়ে যাবার । ওদের স্বামী স্ত্রীর কিছু দিন অদর্শনের পরের উপলব্ধিটা মেয়ের সামনে না হওয়াই ভাল । ডালের কড়ায় পাঁচ ফোড়ন দিয়ে ডাল ছাড়তেই ঘর ভরে গেল গন্ধে। কানে এলো ঐ মানুষটার গলা— —কি দারুণ গন্ধ ।বহু দিন অমন ডাল খাইনি। কথাটা কানে যেতেই হাত থেকে জলের মগটা পড়ে গেল । ও ঘর থেকে দুজনেই ছুটে এসেছে । দেবলীনার পেছন থেকে বলে উঠল সে । —কি হলো? পায়ে লাগেনি তো? গলায় তার উৎকন্ঠা। মেয়ে ফিরে গেছে । হয়তো বা মা বাবাকে বকাবকি করবে এই ভেবে পালিয়েছে । পেছন থেকেই দেবলীনার কাঁধ ছুঁয়েছে ঐ হাত । ঘুরিয়েছে নিজের দিকে । —কই দেখি কোথায় লাগল । চিরদিনের অসাবধান তুমি । এতো বেখেয়াল!সব সময় চিন্তায় থেকেছি। কি জানি কি হয় । সোমেশের দিকে ফেরার সাথে সাথে দেবলীনার গালে লালের ছটা পড়েছে । কিন্তু সোমেশের শেষের কথায় অভিমান উথলে ওঠেছে। চোখে জল ভরে উঠেছে । —থাক,হয়েছে।কেমন চিন্তা করেছ তা বুঝেছি ।ছাড়ো।কিছু হয়নি। —‘ওঃ তাহলে আমায় ডাকার জন্য শব্দ করে জল ফেললে। গালে লালের ছটা পড়েছে দেবলীনার । সোমেশের চোখ ঘরের দিকে,উদ্দেশ্য মেয়ে ধারে কাছে আছে কি নেই তা দেখা । তারপর দেবলীনার মুখ খানা তুলে ধরেছে । আবার ও লালিমা স্ত্রীর গালে। তার সাথে চোখে জলের উচ্ছ্বাস,ঠোঁটে কম্পন।মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থেকেছে সোমেশ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress