সাজানো বাগান
হাওড়া স্টেশন। সকাল দশটা সাড়ে দশটা। মানে একদম ব্যস্ততম অফিস টাইম। পিল পিল করে লোকজন ট্রেন থেকে নামছে আর সাব ওয়ের দিকে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। ঠিক এইরকম সময়েই ঘটে গেল ঘটনাটা।
প্লাটফর্ম নম্বর চৌদ্দতে এসে দাঁড়ালো মেছেদা লোকাল। লোকজন নামছে। চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। ঠিক এমন সময় ট্রেন থেকে নামলো একজন সাদা পোশাকের লোক। একেবারে ফিটবাবু। হাতে একটা ব্রিফকেস বাদামী রঙের। লোকটি নামতেই কয়েকজন চারিদিক থেকে ঘিরে ধরলো। বললো “ইউ আর আন্ডার অ্যারেষ্ট মি: আগরওয়াল”। “থ্যাঙ্ক ইউ দীপমালা ম্যাডাম। আপনি না থাকলে এই কুখ্যাত অপরাধীকে ধরা হয়তো সম্ভব হতো না”। “চলুন আমাদের সাথে লালবাজার”।
লোকটি হতভম্ব হয়ে পড়লো। কি করবে ভাবতে ভাবতেই পুলিশ অফিসার রহমান সাহেব হাতকড়া পড়িয়ে দিয়ে টেনে নিয়ে চললেন স্টেশনের বাইরে রাখা প্রিজন ভ্যানের দিকে।
দীপমালাও ওনাদের সাথে চললেন। ভ্যানে উঠে পুলিশ অফিসার বললেন” সত্যি ম্যাডাম আপনি যে ধরনের পাগলের অভিনয় করে গেলেন এতোদিন ধরে তার কোন তুলনাই হবে না”।
আসলে কলকাতা পুলিশের কাছে বেশ কয়েক বছর ধরেই খবর আসছিল হাওড়া স্টেশন ও তার আশেপাশে এক বা একাধিক অসাধু র্যাকেট কাজ করছে যারা এইসব অঞ্চল থেকে মেয়েদেরকে চোরাচালান করছে।
লালবাজারে পুলিশ কর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে কিন্তু কোন ফল আসছে না। এমন সময় একদিন দুর্নীতি দমন শাখার ইন্সপেক্টর দীপমালা বাগচী সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন উনি দায়িত্ব নিতে চান। কিন্তু এই মিশনের কথা কোনভাবেই যেন প্রকাশ না পায় এমনকি সংবাদমাধ্যমের কাছেও ।
উনি ওনার প্ল্যান সেখানে উপস্থিত গুটিকয়েক কর্তাব্যক্তিকে জানালেন ও নিজের কাজ শুরু করে দিলেন।
পরদিনই হাওড়া স্টেশনে দেখা গেল একজন মাথার চুলে জট, ছেঁড়াফাটা কাপড়, নিকশ কালো একটি অর্ধ উলঙ্গ মেয়ে বিড়বিড় করে কিসব বলছে। ঠিক এগারো নম্বর প্ল্যাটফর্মের মুখটাতে বসে আছে।
একটু পর পর এদিকে ওদিকে থু থু করে কিসব ফেলছে। এগারো নম্বর থেকে চৌদ্দ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছাকাছি দেখা যেত পাগলীটাকে। লোকজন খুব বিরক্ত ঐ পাগলীটার ওপর। ঐ পাগলীর জন্য দৌড়ে গিয়ে ট্রেন ধরতে অসুবিধা হতো। এভাবেই চলছিল প্রায় মাস ছয়েক। মাস ছয়েক পর হঠাৎই একদিন ঐ পাগলীকে আর দেখা গেল না।
পরদিন ডাউন মেছেদা লোকালের জন্য অপেক্ষা করছিল প্রায় জনা বিশেক সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশ। সবাই আগের রাতে দীপমালার নির্দেশে ছদ্মবেশে এসেছে। দেখে কেউ বলতে পারবে না ওরা পুলিশ । দীপমালাও ওদের সাথে ছদ্মবেশে এসেছে। তবে আজ আর পাগলের বেশে নয়।
স্টেশনের বাইরে একটা প্রিজন ভ্যান রাখা আছে। এছাড়াও আরও দুটি পুলিশের জীপ একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে। মেছেদা লোকাল চৌদ্দ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এলো আর লোকটিকে ধরা হলো।
“কি মিষ্টার আগরওয়াল আমাকে চিনতে পারছেন কি? সেদিন আমার দিকে একটা চিপসের প্যাকেট ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। তার আগেই আমি জেনে গেছিলাম আপনিই এই হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের ডন। কিন্তু আপনাকে আপনি কিছু বুঝতে দিই নি। চেয়েছিলাম আপনাকে হাতে নাতে ধরতে”।
একঢোক জল খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলেন দীপমালা।
আবার শুরু করলেন ” গতকাল যে পাঁচজন মেয়েকে মুম্বাই পাচার করতে চেয়েছিলেন তাদের মুম্বাই মেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই সাথে আপনার যারা শাকরেদ মুন্নাভাই, আসলাম ভাই, রেহেনা বেগম বা শঙ্কর সবাইকে ধরা হয়েছে তাদের গোপন আস্তানা থেকে। আমি জানতাম আপনি আজকে আসবেন। তাই পুলিশ এনে রেখে দিয়েছিলাম । এবার যা করবার আইন করবে”।
“হায় রে আমার সাজানো বাগান”!!!!!